মানিকগঞ্জ জেলা
মানিকগঞ্জ | |
---|---|
জেলা | |
বাংলাদেশে মানিকগঞ্জ জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°৫১′০″ উত্তর ৯০°০′৩৬″ পূর্ব / ২৩.৮৫০০০° উত্তর ৯০.০১০০০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ঢাকা বিভাগ |
আয়তন | |
• মোট | ১,৩৭৮.৯৯ বর্গকিমি (৫৩২.৪৩ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ১৩,৯২,৮৬৭ |
• জনঘনত্ব | ১,০০০/বর্গকিমি (২,৬০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬৬.০০% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৫৬ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
মানিকগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।
ব্যুৎপত্তি ও নামকরণ
[সম্পাদনা]মূলত সংস্কৃত ’মানিক্য’ শব্দ থেকে মানিক শব্দটি এসেছে। মানিক অর্থ হচ্ছে চুনি পদ্মরাগ। গঞ্জ শব্দটি ফারসি। মানিকগঞ্জ নামে কোনো গ্রাম বা মৌজার অস্তিত্ব নেই। ১৮৪৫ সাল মহুকুমা সৃষ্টির আগে কোনো ঐতিহাসিক বিবরণে বা সরকারী নথিপত্রে মানিকগঞ্জের নাম পাওয়া যায়নি। তবে এক্ষেত্রে তিনটি মত জনশ্রুতি রয়েছে-
- অনেকের মতে, অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে মানিক শাহ নামক এক সুফি দরবেশ সিংগাইর উপজেলার মানিকনগর গ্রামে আগমন করেন এবং খানকা প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। পরবর্তীকালে, তিনি এ খানকা ছেড়ে হরিরামপুর উপজেলায় দরবেশ হায়দার শেখের মাজারে গমন করেন এবং ইছামতি নদীর তীরবর্তী জনশূন্য চরাভূমি বর্তমান মানিকনগরে এসে খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। এ খানকাকে কেন্দ্র করে এখানে জনবসতি গড়ে উঠে।
- কেউ বলেন দুর্ধর্ষ পাঠান সরদার মানিক ঢালীর নামানুসারে মানিকগঞ্জ নামের উৎপত্তি হয় ।
উক্ত জনবসতি মানিক শাহ’র পূণ্য স্মৃতি ধারণ করে হয়েছে মানিকনগর। মানিক শাহ শেষ জীবনে ধামরাইতে অবস্থিত আধ্যাত্নিক গুরুর দরবার শরীফে ফিরে যাবার মানসে পূনরায় দ্বিতীয় খানকা ছেড়ে ধলেশ্বরীর তীরে পৌঁছেন। জায়গাটির নৈসর্গিক দৃশ্য তার পছন্দ হয়। তিনি এখানে খানকা স্থাপন করেন । প্রথম ও দ্বিতীয় খানকার ভক্তবৃন্দও এখানে এসে দীক্ষা নিতো। মানিক শাহ'র অলৌকিক গুনাবলীর জন্য জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই তাকে শ্রদ্ধা করতেন। এমনকি দস্যূ তস্করগণও কোন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে খানকার ধারে কাছে আসতো না । তাই ভক্তবৃন্দ ছাড়া বণিকগণও এখানে বিশ্রাম নিতো এবং রাত্রি যাপন করত। এভাবেই ধলেশ্বরীর তীরে মানিক শাহ’র খানকাকে কেন্দ্র করে জনবসতি ও মোকাম প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]বাংলার মধ্য-ভাটি অঞ্চলভূক্ত মানিকগঞ্জ জেলার ভূ-ভাগ নদীবাহিত পলি দ্বারা গঠিত। বিশেষত: পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ইছামতি, করতোয়া, তিস্তা ও ব্রক্ষ্মপুত্র প্রভৃতি নদনদী যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলের ভূমি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। গাজীখালি, ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গার তীরে গড়ে উঠেছে বন্দর মানিকগঞ্জ। এ জেলার নৈসর্গিক দৃশ্যে মন হারিয়ে যায় প্রকৃতির সাথে।
মানিকগঞ্জ মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪৫ সালের মে মাসে। মানিকগঞ্জ মহকুমা প্রথমে ফরিদপুর জেলার (১৮১১ সালে সৃষ্ট) অধীন ছিল। প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনকল্পে ১৮৫৬ সালে মানিকগঞ্জ মহকুমাকে ফরিদপুর জেলা থেকে ঢাকা জেলায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়। মানিকগঞ্জ জেলার উত্তর সীমান্তে টাঙ্গাইল জেলা। পশ্চিম এবং দক্ষিণ সীমান্তে যমুনা ও পদ্মা নদী পাবনা ও ফরিদপুর জেলাকে বিচ্ছিন্ন করেছে। পূর্ব, উত্তরপূর্ব এবং দক্ষিণে রয়েছে, ধামরাই , সাভার ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা।
অবস্থান ও আয়তন
[সম্পাদনা]মানিকগঞ্জ ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একটি জেলা। উত্তরে টাঙ্গাইল জেলা, দক্ষিণে ফরিদপুর জেলা এবং ঢাকা জেলা, পূর্বে ঢাকা জেলা, পশ্চিমে পাবনা জেলা, সিরাজগঞ্জ জেলা ও রাজবাড়ী জেলা। এটি ২৩°৫২'৪৫" উত্তর অক্ষাংশ ও ৯০˚৪'১৫" পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। মানিকগঞ্জ জেলার আয়তন ১৩৭৮.৯৯ বর্গ কিলোমিটার।
প্রশাসন
[সম্পাদনা]মানিকগঞ্জ জেলা ৭টি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত।
- সিঙ্গাইর উপজেলা
- মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা
- সাটুরিয়া উপজেলা
- ঘিওর উপজেলা
- শিবালয় উপজেলা
- দৌলতপুর উপজেলা
- হরিরামপুর উপজেলা
ভূগোল
[সম্পাদনা]মানিকগঞ্জ জেলায় বেশ কয়েকটি নদী রয়েছে। এই জেলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নদী হল:
জনসংখ্যা
[সম্পাদনা]মানিকগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা প্রায় ১৬,৭১,৯৮৫ জন, যার মধ্যে ৫২.০২% পুরুষ এবং ৪৭.৯৮% মহিলা। জনসংখ্যার ঘনত্ব ১২১২ জন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
অর্থনীতি
[সম্পাদনা]মানিকগঞ্জে মোট ১৬৬ টি হাটবাজার রয়েছে। এছাড়াও বছরে এখানে প্রায় ৫৪ টি মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]মানিকগঞ্জ ঢাকার পার্শ্ববর্তী বা বৃহত্তর ঢাকার অংশ হলেও এর শিক্ষাব্যবস্থা এখনো উন্নত নয়। বর্তমান ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী ডিগ্রী কলেজ এই জেলার প্রথম উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারী দেবেন্দ্র কলেজ এই জেলার অন্যতম বিদ্যায়তন। বাংলাদেশে ৫২টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও এ জেলায় এখনো কোন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠেনি। এ জেলার শিক্ষার হার ৬৬.০০%।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
- বিদ্যালয়
- দক্ষিণ জামশা উচ্চ বিদ্যালয়
- কল্তা অভয়াচরণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
- বালিয়াটী ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়
- মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
- মানিকগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ
- সাহরাইল উচ্চ বিদ্যালয়
- বিষ্ণুপুর জিএম উচ্চ বিদ্যালয়
- কলেজ
- কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ
- সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ।
- এম. এ রউফ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, কৌড়ী।
- ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজ
- মানিকগঞ্জ ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা
- মানিকগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ
- মানিকগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ
- মুন্নু মেডিকেল কলেজ
- সিংগাইর সরকারি কলেজ
উল্লেখযোগ্য স্থান
[সম্পাদনা]- মানিকগঞ্জ জেলার আরিচা ঘাট এই এলাকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। যমুনা সেতুর আগে এই ঘাট দিয়েই যানবাহন পারাপার করা হতো।
- বালিয়াটি জমিদার বাড়ি, মানিকগঞ্জ জেলার পুরাকীর্তির ইতিহাসে বালিয়াটির জমিদারদের অবদান উল্লেখ যোগ্য। বালিয়াটির জমিদারেরা উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে আরম্ভ করে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বছর বহুকীর্তি রেখে গেছেন যা জেলার পুরাকীর্তিকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে। বর্তমানে সরকারিভাবে সংরক্ষিত জমিদারবাড়িগুলোর মধ্যে এটিই বাংলাদেশের বৃহত্তম জমিদারবাড়ি। স্থানীয় বালিয়াটী ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়), কে এল জুবিলী হাইস্কুল এই জমিদার পরিবারদের সদস্যদের হাতে গড়ে ওঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলও এই জমিদার পরিবারের এক সদস্যের নামে হয়েছে।
- তেওতা জমিদার বাড়ি , শিবালয়ঃ মানিকগঞ্জ উপজেলাধীন শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়িটি বাবু হেমশংকর রায় চৌধুরী, বাবু জয় শংকর রায় চৌধুরী পিং দুই সহোদর ভ্রাতার নিজ বসতবাড়ী ছিল। তেওতা অবস্থান করে তারা জমিদারি পরিচালনা করতেন।
- ধানকোড়া জমিদার বাড়ি
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
[সম্পাদনা]- রফিকউদ্দিন আহমদ, ভাষা শহীদ
- হারুনার রশীদ খান মুন্নু, সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী, বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক
- খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন , ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য, চীফহুইপ। সাবেক মহাসচিব, বিএনপি
- মীর কাসেম আলী, শিল্পপতি এবং রাজনীতিবিদ
- জাহিদ মালেক স্বপন, সংসদ সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- আনন জামান, নাট্যকার
- অমর্ত্য সেন, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক
- বিচারপতি এ কে এম নূরুল ইসলাম, বাংলাদেশের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান বিচারপতি
- হীরালাল সেন, উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের জনক, চিত্রগ্রাহক
- খান আতাউর রহমান, সুরকার, গায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সংগীত পরিচালক, গীতিকার, প্রযোজক
- মাসুদ আলি খান, অভিনেতা
- মমতাজ বেগম, সংগীত শিল্পী, সংসদ সদস্য
- কিশোরীলাল রায় চৌধুরী
- দীনেশচন্দ্র সেন, প্রাচীন পুঁথি সংগ্রাহক, সাহিত্যিক, গবেষক
- ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক
- মুনীর চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী
- শামসুজ্জামান খান, সাবেক মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি
- মাহবুবা রহমান
- ফারুক আহমেদ, জনপ্রিয় নাট্যভিনেতা
- নীনা হামিদ, প্রখ্যাত লোকশিল্পী
- নাইমুর রহমান দুর্জয়, বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক, সংসদ সদস্য
- অমলেন্দু বিশ্বাস, বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি যাত্রাপালার পথিকৃৎ, প্রখ্যাত যাত্রাভিনেতা
- সৈয়দ আবুল মকসুদ, সাহিত্যিক এবং প্রথম আলোর নিয়মিত কলাম লেখক
- কিরণ চন্দ্র রায়, বাউল সংগীত শিল্পী
মুক্তিযুদ্ধ
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালে মানিকগঞ্জ জেলায় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম চৌধুরী এবং আবদুল মতিন চৌধুরী। মানিকগঞ্জ জেলায় খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিলো চার জন। ১.বদরুল আলম (বীর উত্তম) ২.শহীদ মাহফুজুর রহমান (বীর প্রতীক) ৩.ইব্রাহিম খান (বীর প্রতীক) ৪.আতাহার আলী খান (বীর প্রতীক)। ২৫ শে মার্চে ঢাকায় পাকবাহিনীর বর্বরতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গভীর রাতে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে সে বার্তা দ্রুত মানিকগঞ্জেও পৌঁছে। এরপর মানিকগঞ্জের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই বিপুল সংখ্যক ছাত্র-জনতা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে আরম্ভ করে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের পর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে তারা পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে শুরু করে। ২ নং সেক্টরের অধীনে মানিকগঞ্জ জেলা, ধামরাই, নবাবগঞ্জ, সাভার সহ ২২টি থানার প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম চৌধুরী।
১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসটি মানিকগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পাকবাহিনীর সাথে সংঘর্ষের জন্য উল্লেখযোগ্য হয়ে রয়েছে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সিংগাইরের পাকবাহিনীর ক্যাম্প থেকে একটি সেনাদল নৌকাযোগে খাদ্য সমগ্রী সংগ্রহের জন্য মানিকগঞ্জ সদরে আসে। সংবাদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বায়রা গ্রামের কাছে ওৎ পেতে থাকে এবং বিকালের দিকে খাদ্য সমগ্রী নিয়ে পাকসেনারা ফিরে আসার সময় ধলেশ্বরী নদীর উভয় তীর থেকে একযোগে আক্রমণ করে পাকবাহিনীর নৌকাগুলো ধ্বংস করে দেয়। সেখানে বেশ কিছু পাক সেনা হতাহত হয়। ১৩ই অক্টোবর পাকবাহিনীর প্রবল বাধার মুখে মুক্তিযোদ্ধারা হরিরামপুর সি.ও অফিসে অবস্থিত পাকবাহিনীর ক্যাম্প দখল করে নেয়। ১৫ অক্টোবর রাতে পাকবাহিনী সুতালড়ী গ্রাম আক্রমণ করে। সারা রাত এবং পরদিন সকাল দশটা পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর সাথে তাদের তুমুল যুদ্ধ হয় এবং পাক সেনারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখে সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের গোলাইডাঙ্গা গ্রামের উত্তর-পশ্চিম কোণে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারী সৈন্যদের বহনকারী বেশ কয়েকটি নৌকা আক্রমণ করে এবং নুরুনি গাঙ্গায় (কালীগঙ্গা নদীর খাল) একটি ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে ২৫ জন পাকসেনা নিহত এবং অনেক আহত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার তবারক হোসেন লুডু এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন, তিনি মুক্তিবাহিনীর লুডু গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন। গোলাইডাঙ্গার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কেউই নিহত হয়নি, যা মানিকগঞ্জের পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা যখন অন্যত্র চলে যায় তখন পাক সৈন্যরা আরও সৈন্য নিয়ে এসে গ্রামের আশেপাশের প্রায় ১৬০০ বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং স্থানীয় ৯৯ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে, যাদের বেশিরভাগ ছিলো বয়স্ক পুরুষ, নারী এবং শিশু। লড়াইয়ের পরে ১৩ নভেম্বর সিঙ্গাইর উপজেলা পাক অধিকৃত সেনাবাহিনী থেকে মুক্ত হয়। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন দলগুলি মানিকগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং কয়েকটি যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত করে। ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর ঢাকার দিকে অগ্রসর হওয়া পাক বাহিনীর একটি দল মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বরুন্ডি গ্রামে প্রবেশ করে, শাহাদাত হোসেন বিশ্বাস বাদলের নেতৃত্বে একদল মুক্তি বাহিনী (মুজিব বাহিনী) একটি উপযুক্ত জায়গায় তাদের আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, এটি বুঝতে পেরে পাক সৈন্যদের দল গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। ১৪ই ডিসেম্বর তৎকালীন মানিকগঞ্জ মহকুমা (বর্তমানে মানিকগঞ্জ জেলা) হানাদার মুক্ত হয়।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]-
বালিরটেকে মৃৎশিল্পের কাজ
-
স্বাগতম ঢাকা জেলা, মানিকগঞ্জ, বাংলাদেশ।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে মানিকগঞ্জ"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১১ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |