২০০১ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ
| ২০০১ বাংলাদেশ–ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ | |||||||
|---|---|---|---|---|---|---|---|
| |||||||
| বিবাদমান পক্ষ | |||||||
|
|
| ||||||
| সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
|
|
| ||||||
| জড়িত ইউনিট | |||||||
|
|
| ||||||
| শক্তি | |||||||
|
পদুয়া অনুপ্রবেশ: ৮০০ বিডিআর কর্মী[১] |
প্রাথমিক অনুপ্রবেশ: পদুয়াতে ৩১ জন সীমান্তরক্ষী, ৩০০ অতিরিক্ত বর্ডার গার্ড রিইনফোর্সমেন্ট বড়াইবাড়িতে যুদ্ধের জন্য পাঠানো হয়।[২][৫] মানকাচরে চূড়ান্ত সংঘর্ষ: ৫০-৬০[১] মোট শক্তি: ৩৯১ | ||||||
| হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
|
|
| ||||||
|
২৪ জন বেসামরিক নাগরিক আহত[১২] ১০,০০০ জন বেসামরিক নাগরিক সাময়িকভাবে বাস্তুচ্যুত[১২] | |||||||
২০০১ বাংলাদেশ–ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ ছিল ২০০১ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ধারাবাহিক সশস্ত্র সংঘর্ষ। দুই রাষ্ট্রের মধ্যে দুর্বলভাবে চিহ্নিত আন্তর্জাতিক সীমান্তে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষ ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই এপ্রিল শুরু হয়,[১৩] যখন প্রায় ৮০০ জন বাংলাদেশী আধাসামরিক সৈন্যের একটি বাহিনী পদুয়া গ্রামের বাংলাদেশ অংশে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি চৌকিতে হামলা করে। বাংলাদেশের দাবি, সিলেটের পদুয়াতে দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) একটি অবৈধ ক্যাম্প নির্মাণ করে রেখেছে। সেই চৌকিতে ৭০ জন বিএসএফ সৈন্য আটকা পড়েছিল। পরবর্তী তে তারা সকলে আত্মসমর্পণ করে ভারতে চলে যায়।
এই অচলাবস্থার পরে, বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ আধাসামরিক বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা এবং নিবিড় টহল শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কয়েকদিন পরে, ৩০০ জন বিএসএফ সৈন্যের একটি ছোট দল পদুয়া/পিরদিওয়াহ থেকে ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে বড়াইবাড়ি গ্রামের কাছে বাংলাদেশী ভূখণ্ডে প্রবেশ করে, পাড়ুয়ায় ঘটে যাওয়া আগের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ভারত পাল্টা আক্রমণ হিসেবে অনুপ্রবেশকে ব্যবহার করেছিল। ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনী ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল বাংলাদেশী ভূখণ্ডে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই ১১ জন বাংলাদেশী সীমান্ত রক্ষীদের দ্বারা অতর্কিত আক্রমণ করা হয় এবং বিডিআর ফাঁড়িতে হামলা প্রতিহত করা হয়েছে;[৬] বাংলাদেশী সীমান্ত রক্ষীদের শত শত গ্রামবাসী সাহায্য করেছিল।[৬]
আটকের পর, ভারতীয় সৈন্যদের মৃতদেহ ২০ই এপ্রিল ভারতে ফেরত পাঠানো হয়।[১০] উভয় পক্ষ অস্ত্র-সম্বরণে সম্মত হওয়ার পর, অবশেষে ২০০১ খ্রিস্টবাদে ২১শে এপ্রিল সংঘর্ষ শেষ হয়।[১০] সংঘর্ষে ১৬ জন ভারতীয় সৈন্য ও তিনজন বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষীসহ মোট ২১ জন নিহত হয়।
সংঘর্ষটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতির জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। দুই রাষ্ট্রের মধ্যে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে স্থল সীমানা চুক্তি সহ সংঘর্ষের বছরগুলিতে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, যা ভারত থেকে বাংলাদেশে ১১১ টি ছিটমহল (১৭,১৬০.৬৩ একর) বিনিময়ের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং পারস্পরিকভাবে, পরবর্তীতে ৫১ টি ছিটমহল (৭,১১০.০২ একর) ভারতে হস্তান্তর করেছিল।[১৪]
পটভূমি
[সম্পাদনা]১৯৪৭ সালের বঙ্গভঙ্গের সময় ভারতের রাজ্যসমূহ ও বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত কিছু স্থানে অমীমাংসিত থেকে যায়। কার্যত (ডি ফ্যাক্টো) সীমান্তের উভয় পাশে বেশ কয়েকটি গ্রামের মালিকানা বিতর্কিত এবং উভয় রাষ্ট্রই নিজেদের ভূখণ্ড হিসাবে দাবি করেছে। ইন্দো–বাংলাদেশি সীমান্তের অবস্থা ১৯০টি ছিটমহলের জন্য আরো খারাপের দিকে যেতে থাকে।
কারণসমূহ
[সম্পাদনা]বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলির মধ্যে একটি ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তে পদুয়া গ্রামের (পিরদিওয়াহ নামেও পরিচিত) নিকট একখন্ড ছোট ভূমি, যার পরিমাণ ২৩০ একর।[১৩] ভূখণ্ডটি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মুক্তিবাহিনী নামে পরিচিত জাতিগত বাঙালি গেরিলাদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করেছিল, যারা পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও পাকিস্তানপন্থী অনুগত মিলিশিয়াদের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। স্বাধীনতার পর, বাংলাদেশের ভারতের এই ভূমি তাদের বলে দাবি করে কিন্তু ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উক্ত স্থানে একটি ফাঁড়ি বা চৌকি স্থাপন করেছিল।[১৩][১৫][১৬] গ্রামটি বাংলাদেশ ও মেঘালয় সীমান্তে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলগুলির মধ্যে একটি।[১৭][১৮] সেই সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১ টি ছিটমহল ছিল ও ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫০টি ছিটমহল ছিল। পাদুয়া গ্রামটি ভারতীয় অধ্যুষিত ছিল, কিন্তু আইনতভাবে এটি ছিল বাংলাদেশের মালিকানাধীন ভূখণ্ড (নতুন সীমান্ত চুক্তি ও জনসংখ্যা বিনিময়ের পূর্ব পর্যন্ত)।[১][১২][১৯] জাতিগতভাবে খাসিয়ারা এখানে বসবাস করত।[৪]
অনেক পরে প্রকাশিত একটি সাক্ষাত্কারে, বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ.এল.এম ফজলুর রহমান, যাকে পরবর্তীতে একটি নির্বাচনের পর প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিল, দাবি করেছিলেন যে ভারতীয় বিএসএফ সে সময় পাদুয়ায় তাদের ক্যাম্প ও ১০ কিমি (৬.২ মা) দূরবর্তী অন্য একটি ক্যাম্পের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য ‘নো ম্যান’স ল্যান্ড’ ও বাংলাদেশি ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে একটি সড়ক নির্মাণ শুরু করেছিল।[২০][২১]
সংঘাত
[সম্পাদনা]
এই সংঘর্ষের সময় যে লড়াই সংঘটিত হয়েছিল, তা ছিল ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যুদ্ধের পর ঘটা সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত। এটি ভারতের মেঘালয়[১৩] রাজ্যের পদুয়া গ্রামের আশেপাশে সংঘটিত হয়েছিল, যা সিলেট জেলার বাংলাদেশী সীমান্তের তামাবিল এলাকা সংলগ্ন। যদিও এই এলাকায় একটি কার্যকর স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হয়েছিল, সীমান্তের প্রায় ৬.৫ কিলোমিটার (৪.০ মাইল) বিগত ৩০ বছর ধরে বিতর্কিত ছিল।
২০০১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই এপ্রিল, প্রায় ১০০০ জন বাংলাদেশী সৈন্যের একটি বাহিনী পদুয়া গ্রাম আক্রমণ করে ও দখল করে, স্থিতাবস্থা ভঙ্গ করে এবং সেখানকার বেসামরিক লোকদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। বাংলাদেশের দাবি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে গ্রামটি অবৈধভাবে ভারতের দখলে ছিল।[১৩] পদুয়া গ্রামে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ফাঁড়িটি ঘিরে ফেলা হয়েছিল, যার মধ্যে বেশ কিছু বিএসএফ সৈন্য আটকা পড়েছিল। তবে উভয় পক্ষই তাদের গোলাগুলি জারি রাখে এবং আলোচনা শুরু করে। পরবর্তী দিনগুলোতে, প্রায় তিনটি কোম্পানি বিএসএফ ফাঁড়িটিকে শক্তিশালী করার জন্য অগ্রসর হয়। পরে কোনো রক্তপাত ছাড়াই এই ঘটনার মীমাংসা হয়।
এই অচলাবস্থার পরে, ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ সৈন্যদের উচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছিল, এবং নিবিড় টহল শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কয়েকদিন পরে, বিএসএফ সৈন্যদের একটি ছোট দল পদুয়ার পশ্চিমে ২০০ কিলোমিটারেরর (১২০ মাইল) বেশি দূরে বড়াইবাড়ি গ্রামের কাছে বাংলাদেশী ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। পরের গ্রাম থেকে ভিন্ন, যেটি একটি অনুমতি ব্যতীত দখল, বড়াইবাড়ি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি বেড়া দিয়ে ঘেরা এলাকা। পদুয়ায় আগের ঘটনার পর, প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভারত "পাল্টা-আক্রমণ" হিসেবে অনুপ্রবেশকে ব্যবহার করেছিল। বাংলাদেশী সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় বাহিনী ভারতের আসাম রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত সীমান্তবর্তী কুড়িগ্রাম জেলায় তাদের চৌকিতে ভোরে হামলা চালায়।
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ১৬ জন ভারতীয় আধাসামরিক কর্মীকে বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষীরা অতর্কিত হামলায় হত্যা করে, যাদেরকে শত শত গ্রামবাসী সহায়তা করেছিল। মধ্যরাতের দিকে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব, চোকিলা আইয়ার, তার বাংলাদেশী প্রতিপক্ষ সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর কাছ থেকে একটি বার্তা পেয়েছিলেন, বলেছিলেন যে স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধার করার পাশাপাশি পদুয়া থেকে অবিলম্বে বাংলাদেশিদের প্রত্যাহারের জন্য আদেশ জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ রাইফেলসকে (বিডিআর) ১৯ এপ্রিল রাতে পদুয়া থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
সংঘর্ষে, ১৬ জন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী নিহত ও দুজন আহত হয়। হামলায় তিন বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী নিহত এবং আরও পাঁচজন আহত হয়। আন্তঃসীমান্ত সংঘর্ষে প্রায় ২৪ জন আহত হওয়ার পর, প্রায় ১০,০০০ জন বেসামরিক লোক এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
১৮ই এপ্রিল বড়াইবাড়ি অনুপ্রবেশের পর, ভারত অভিযোগ করে যে বিডিআর মানকাচর গ্রামে—এটি আরেকটি বিতর্কিত ভারতীয় ছিটমহল—৩ ইঞ্চি ও ৮ ইঞ্চি মর্টার শেল নিক্ষেপ শুরু করেছে।
ফলাফল
[সম্পাদনা]উভয় সরকার এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করার পরে উভয় পক্ষ তাদের মূল অবস্থানে ফিরে আসে এবং স্থিতাবস্থার পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করে। উভয় পক্ষ সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের জন্য আফসোস প্রকাশের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, কিন্তু ২০ এপ্রিলের মধ্যরাতের মধ্যে আবারও গুলি থামানো শুরু হয়েছিল। একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে ৬,০০০ ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকরা এই অঞ্চল ছেড়ে পালিয়ে এসেছিল এবং ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তারা গ্রামবাসীদের তাদের বাড়িতে ফিরে আসতে রাজি করার চেষ্টা করেছিলেন।[১৯] পরের দিন বাংলাদেশ ১৬ জন নিহত ভারতীয় সেনাকে ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়। নিহত সেনাদের লাশ খতিয়ে দেখে ভারত অভিযোগ করে যে গুলি করে হত্যা করার আগে বিএসএফ সদস্যদের নির্যাতন করা হয়েছিল।[২২][২৩] অন্যদিকে তিন বাংলাদেশি সেনাও মারা গিয়েছিলেন: দুজন যুদ্ধের সময় এবং অপর একজন যুদ্ধ চলাকালীন আহত অবস্থায় মারা যান।
পর্যবেক্ষকরা বিভিন্নভাবে এই ঘটনাটিকে বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে জাতীয়তাবাদী অনুরাগকে বাড়িয়ে তোলার রাজনৈতিক চক্র বলে আখ্যায়িত করেছেন (যা ঘটার সময় থেকে ২ মাস পরে ছিল) এবং বিডিআর কমান্ডারদের দুঃসাহসিকতা বলে অভিহিত করেছেন।[১][১৩] আনুষ্ঠানিকভাবে, বাংলাদেশ সরকার অস্বীকার করেছে যে তারা বিডিআর'র শত্রুতা শুরু করার পক্ষে সমর্থন করেছিল এবং এই ঘটনাটিকে "তার স্থানীয় কমান্ডারদের দুঃসাহসিকতা" হিসাবে অভিহিত করেছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী টেলিফোনের মাধ্যেম আলোচনায় নিযুক্ত হন এবং পরবর্তীতে এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিতে সম্মত হন।[১০][২০] ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রামিন্দর জাসাল জানান, ‘‘ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ই দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক যোগাযোগ উন্নত করবে এবং ভবিষ্যতে সংযম অনুশীলন করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে।’’ ভারত ও বাংলাদেশ ২০০২ সালের মার্চ মাসে তাদের সীমান্ত বিরোধ সমাধানের জন্য আলোচনা শুরু করে।[১৯] ২০০২ সালের জুলাই মাস নাগাদ, উভয় পক্ষই সীমান্তের অ-সীমাঙ্কিত অংশগুলিতে একমত হওয়ার জন্য যৌথ-কার্যক্রম দল গঠন করে।[১৮]
বাংলাদেশ কোনো স্থানীয় সামরিক কমান্ডারকে কোর্ট মার্শাল, স্থগিতাদেশ বা বদলির আদেশ দেয়নি।[২৪] এটি ছিল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম সশস্ত্র সংঘর্ষ। প্রতিবেশী রাষ্ট্র দুটি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল।[৭] সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষের অবসানে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে। ২০০১ সালের সংসদীয় নির্বাচনে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও জামায়াত-ই-ইসলামী বাংলাদেশের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ডানপন্থী জোট ৩০০ টির মধ্যে ১৯৬ টি আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
উভয় পক্ষই পরবর্তী কোনো প্রকার শত্রুতা থেকে বিরত থাকে এবং তাদের ৪,০০০ কিলোমিটার (২,৫০০ মাইল) সীমান্তে বিরোধ নিয়ে আলোচনা করতে সীমান্ত আলোচনা শুরু করে।[২৫] এরপরই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের অভিজ্ঞতা হয়। ভারত তখন থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে তার আন্তর্জাতিক সীমান্তের পুরো দৈর্ঘ্য বরাবর একটি আত্মরক্ষামূলক বেড়া নির্মাণ শুরু করেছে[২৬] এবং এখনও এটি নির্মাণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।[২৭] আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বেড়া নির্মাণকে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী, সহযোগিতা ও শান্তি চুক্তির চরম লঙ্ঘন বলে দাবি করে বাংলাদেশ আত্মরক্ষামূলক বেড়া নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়েছে।[২৮] বাংলাদেশ সরকার কথিত ঘন ঘন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের এবং আন্তঃসীমান্ত গুলিবর্ষণের প্রতিবাদ করেছে যার ফলে বাংলাদেশি ভূখণ্ডে বাংলাদেশিদের মৃত্যু হয়েছে।[২৯] ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল যে, পূর্ববর্তী ছয় মাসে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করার সময় ৯৭ জন নিহত হয়েছে (৬৯ বাংলাদেশি, ২৮ ভারতীয়; বাকি অজ্ঞাত)।[৩০][৩১]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- 1 2 3 4 5 "Barbaric killing of BSF jawans puts India-Bangladesh relations under severe strain"। India Today। ৭ মে ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৪।
- 1 2 Gokhale, Nitin (৩০ এপ্রিল ২০০১)। "A Tale Of Two Blunders"। Outlook। ১৪ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০১৪।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগ বৈধ নয়;withdrawlsনামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - 1 2 উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগ বৈধ নয়;flineনামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ "Experts against borderland handover sans reciprocity"। Bangladesh-web.com। ১৪ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০১৪।
- 1 2 3 "India-Bangladesh border battle"। BBC News। ১৮ এপ্রিল ২০০১। ২০ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০২৪।
- 1 2 "India accuses Bangladesh of war crimes"। CNN। ২৭ এপ্রিল ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Harding, Luke (২৩ এপ্রিল ২০০১)। "Army defiant as Bangladesh election looms"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Choudhury, Dutta (১০ ডিসেম্বর ২০১২)। "Area where 16 BSF men were killed to go to Bangladesh"। Assam Tribune। ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৪।
- 1 2 3 4 Nishanthi Priyangika (২১ মে ২০১২)। "India-Bangladesh border still tense after worst clash in 30 years"। World Socialist Web site। ২০ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৪।
- 1 2 "A report by the news.bbc.co.uk on 18 April 2001"। ১৮ এপ্রিল ২০০১।
- 1 2 3 van Schendel, Willem (২০০৭)। "The Wagah Syndrome: Territorial Roots of Contemporary violence in South Asia"। Basu, Amrita; Roy, Srirupa (সম্পাদকগণ)। Violence and Democracy in India। Calcutta: Seagull Books। পৃ. ৫৫–৫৭।
- 1 2 3 4 5 6 "Analysis: Surprising outbreak of hostilities"। বিবিসি নিউজ। ১২ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ "India and Bangladesh: Exchanging border enclaves & (re-)connecting with new citizens"। ব্রুকিংস (মার্কিন ইংরেজি ভাষায়)। ২৩ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ Outsourcing to India – By Mark Kobayashi-Hillary। Books.google.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ The Europa World Year Book 2003 – By Ed 2002 43rd, Taylor & Francis Group। Books.google.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ কোবায়শি-হিলারি, মার্ক (২০০৪)। Outsourcing to India: The Offshore Advantage। স্প্রিংগার সায়েন্স অ্যান্ড বিজনেস মিডিয়া। পৃ. ৬১–। আইএসবিএন ৯৭৮-৩-৫৪০-২০৮৫৫-৬।
- 1 2 The Europa World Year Book 2003। টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস। ২০০৩। পৃ. ৬৬২–। আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৫৭৪৩-২২৭-৫।
- 1 2 3 "South Asia Nuclear Dialogue"। nautilus.org। ৩ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
- 1 2 "A brush with Bangladesh"। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ "A country should have strength to implement its political plans"। New Age The Outspoken Daily। ২০ ডিসেম্বর ২০১৩। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "'Criminal adventurism' must not go unpunished: Jaswant"। ২২ জুলাই ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০০৯।
- ↑ "BSF men tortured, then shot dead"। The Tribune। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০১৪।
- ↑ "'Bangladesh used us as a punching bag"। Mea.gov.in। ৩০ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ "Bangladesh and India begin border talks"। BBC News। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ "Livelihoods on line at Indian border"। BBC News। ২৮ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ Nelson, Dean (১৩ নভেম্বর ২০০৫)। "India fences off Bangladesh to keep out Muslim terror"। The Times। London। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ "3 killed in Bangladesh-Indian border guards cross fire"। People's Daily। ১৭ এপ্রিল ২০০৫। ১২ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ "Border tension flares as BSF kills 2 more"। দ্য ডেইলি স্টার। ২৪ এপ্রিল ২০০৫। ১৭ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ "India says 59 killed over last six months on Bangladesh border"। Reuters। ২৪ আগস্ট ২০০৮। ২৬ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ "Three Bangladeshis killed in 'drunk shooting' by BSF man"। দ্য ডেইলি স্টার। ১৭ নভেম্বর ২০০৮। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।