শ্রেয়া ঘোষাল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শ্রেয়া ঘোষাল
২০১৫ সালে দক্ষিণ ভারতীয় ৬২তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অনুষ্ঠানে শ্রেয়া ঘোষাল
জন্ম (1984-03-12) মার্চ ১২, ১৯৮৪ (বয়স ৪০)
জাতীয়তাভারতীয়
শিক্ষাইংরেজি
মাতৃশিক্ষায়তনএসআইইএস কলেজ অব আর্টস, সায়েন্স অ্যান্ড কমার্স
পেশা
কর্মজীবন১৯৯৭–বর্তমান
দাম্পত্য সঙ্গীশিলাদিত্য মুখোপাধ্যায় (বি. ২০১৫)
পুরস্কারপূর্ণ তালিকা
সঙ্গীত কর্মজীবন
ধরন
বাদ্যযন্ত্রকণ্ঠ
লেবেলসাগরিকা
ওয়েবসাইটshreyaghoshal.com

শ্রেয়া ঘোষাল (জন্ম: ১২ই মার্চ ১৯৮৪) হলেন একজন ভারতীয় বাঙালি নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী। তিনি বলিউডের অসংখ্য চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন।তাঁর সমকালীন তাঁকে শ্রেষ্ঠ এবং সর্বকালের সেরা ভারতীয় শিল্পীদের মধ্যে তাঁকে অন্যতম মনে করা হয়। শ্রেয়া ঘোষাল গত দুই দশক ধরে উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী। তাঁর ব্যক্তিত্বের জন্যও তিনি সর্বজন প্রশংসিত। উল্লেখ্য, শ্রেয়া ঘোষাল ভারতের সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন পাওয়া ও পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। হিন্দি ভাষা ছাড়াও তিনি বাংলা, নেপালি, তামিল, ভোজপুরি, তেলুগু, ওড়িয়া, গুজরাতি, মালয়ালম, মারাঠি, কন্নড়, পাঞ্জাবিঅসমীয়া ভাষায় গান গেয়েছেন এবং নিজেকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, চারবার কেরালা রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার, দুইবার তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার, সাতবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ও দশবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দক্ষিণ অর্জন করেছেন।

ঘোষাল শৈশব থেকেই নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হওয়ার ইচ্ছাপোষণ করেন এবং মাত্র চার বছর বয়স থেকেই সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। ছয় বছর বয়সে তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন। ষোল বছর বয়সে তিনি জিটিভির সা রে গা মা পা সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং বিজয়ী হন। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর মায়ের নজর কাড়েন। এই প্রতিযোগিতা জয়ের পর ২০০২ সালে ভন্সালীর প্রণয়মূলক নাট্যধর্মী দেবদাস চলচ্চিত্রে নেপথ্য কণ্ঠদানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তার বলিউডে অভিষেক ঘটে। এ চলচ্চিত্রের গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়ে তিনি শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারফিল্মফেয়ার পুরস্কার, এবং নতুন সঙ্গীত প্রতিভা বিভাগে ফিল্মফেয়ার আরডি বর্মণ পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার অর্জন করেন।[২]

চলচ্চিত্রের গানে নেপথ্য কণ্ঠদানের পাশাপাশি ঘোষাল কয়েকটি টেলিভিশন সঙ্গীত অনুষ্ঠানে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছেন। তিনি বিশ্বজুড়ে সঙ্গীত কনসার্টে গান পরিবেশন করে থাকেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও রাজ্য তাকে সম্মাননা প্রদান করে এবং সেখানকার গভর্নর টেড স্ট্রিকল্যান্ড ২০১০ সালের ২৬শে জুনকে "শ্রেয়া ঘোষাল দিবস" বলে ঘোষণা দেয়। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তিনি লন্ডনে যুক্তরাজ্যের হাউজ অব কমন্সের সদস্যদের নিকট থেকে সম্মাননা লাভ করেন। তিনি পাঁচবার ফোর্বস-এর ভারতের শীর্ষ ১০০ তারকা তালিকায় স্থান করে নেন। ২০১৭ সালে প্রথম ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে মাদাম তুসো জাদুঘরে ঘোষালের মোমের মূর্তি স্থাপিত হয়।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

শ্রেয়া ঘোষাল ১৯৮৪ সালের ১২ই মার্চ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে এক বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পূর্বপুরুষেরা বাংলাদেশের বিক্রমপুরের হাসাড়া গ্রামের অধিবাসী। তিনি রাজস্থানের কোটার নিকটবর্তী রাওয়াতভাতা শহরে বেড়ে ওঠেন।[৩] তার পিতা বিশ্বজিৎ ঘোষাল ভারতীয় পারমাণবিক শক্তি নিগমের একজন ত্বড়িৎ প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন। তার মাতা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।[৪][৫] তার কনিষ্ঠ ভাই সৌম্যদীপ ঘোষাল।[৬][৭]

শ্রেয়া ঘোষাল রাওয়াতভাতার পরমাণু শক্তি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।[৩] ১৯৯৫ সালে তিনি নতুন দিল্লিতে সঙ্গম কলা গ্রুপ কর্তৃক আয়োজিত অল ইন্ডিয়া লাইট ভোকাল সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ১৯৯৭ সালে তার পিতা ভাভা পরমাণু অনুসন্ধান কেন্দ্রে স্থানান্তরিত হলে তিনি তার পরিবারের সাথে মুম্বই চলে যান ও অণুশক্তি নগরে পরমাণু শক্তি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।[৮] তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য পরমাণু শক্তি জুনিয়র কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি জুনিয়র কলেজ থেকে ঝড়ে পড়েন এবং মুম্বইয়ের এসআইইএস কলেজ অব আর্টস, সায়েন্স অ্যান্ড কমার্সে ভর্তি হন এবং ইংরেজি বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।[৩][৫][৯]

চার বছর বয়স থেকেই ঘোষাল সঙ্গীত শেখা শুরু করেন। তার মাতা তাকে তালিমে সহায়তা করতেন এবং তানপুরা বাজানোয় সঙ্গ দিতেন। শুরুতে তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলা গান গাইতেন। ছয় বছর বয়সে তিনি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন।[৩] ২০০০ সালে ষোল বছর বয়সে তিনি জিটিভির সা রে গা মা পা সঙ্গীত প্রতিযোগিতার শিশুদের বিশেষ পর্বে অংশগ্রহণ করেন এবং বিজয়ী হন।[১০][১১][১২] এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকালে তিনি এই প্রতিযোগিতার বিচারক ও সুরকার কল্যাণজী বীরজী শাহের নজর কাড়েন। কল্যাণজীর পরামর্শেই তার পরিবার মুম্বইয়ে চলে আসে। শ্রেয়া কল্যাণজীর কাছে দেড় বছর তালিম গ্রহণ করেন এবং পরে মুক্তা ভিড়ের নিকট শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম চালিয়ে যান।[৯][১৩][১৪] তার প্রথম মঞ্চ পরিবেশনা ছিল একটি ক্লাবের বার্ষিক অনুষ্ঠানে। কোটাতেই তিনি ভারতীয় আধুনিক সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নেন।[১৫]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

প্রারম্ভিক অ্যালবামসমূহ[সম্পাদনা]

শ্রেয়া ঘোষালের রেকর্ডকৃত প্রথম গান হল "গানরাজ রাঙ্গি নাচাতো", এটি লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া একটি মারাঠি গানের কভার সংস্করণ।[১৬] তার প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম হল বেঁধেছি বীণা, যা ১৯৯৮ সালের ১লা জানুয়ারি প্রকাশিত হয়েছিল। এতে ১৪টি গান রয়েছে।[১৭] তার শুরুর সময়ের আরও কয়েকটি গানের অ্যালবাম হল ও তোতা পাখি রে, একটি কথা (১৯৯৯),[১৮] এবং মুখর পরাগ (২০০০)।[১৯] ২০০২ সালে তিনি রূপসী রাতে নামে একটি বাংলা স্টুডিও অ্যালবামের রেকর্ড করেন।[২০] এছাড়া তিনি বনমালী রে (২০০২),[২১] এবং পরে কৃষ্ণ বিনা আছে কে (২০০৭) নামে দুটি ভক্তিমূলক গানের অ্যালবাম প্রকাশ করেন।[২২]

২০০২-২০০৪: নেপথ্য শিল্পী হিসেবে অভিষেক ও আলোচিত সাফল্য[সম্পাদনা]

ঘোষাল ব্যায়রি পিয়া গানের জন্য রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের নিকট থেকে তার ১ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করছেন।

শ্রেয়া ঘোষাল দ্বিতীয়বারের মতো জিটিভির সা রে গা মা পা সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সময় বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর নজর কাড়েন। ভন্সালীর মা এই অনুষ্ঠান দেখছিলেন এবং ঘোষালের গান পরিবেশনার সময় ভন্সালীকে তার পরিবেশনা দেখার জন্য ডাকেন। তার পরিবেশনা দেখার পর ভন্সালী তাকে তার পরবর্তী চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।[৯] ভন্সালী বলেন ঘোষালের কণ্ঠে নিষ্পাপতা ছিল যা দেবদাস (২০০২) চলচ্চিত্রের পারো চরিত্রের জন্য প্রয়োজন ছিল।[৮][২৩]