মফিজুর রহমান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মফিজুর রহমান
মৃত্যু২০০৫
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

মফিজুর রহমান (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০৫) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মফিজুর রহমানের জন্ম ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের নোয়াদ্দা গ্রামে। তার বাবার নাম নেয়ামতউল্লা ফরাজী এবং মায়ের নাম রাহাতুনের নেছা। তার স্ত্রীর নাম ফজিলতের নেছা। তাঁদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। [২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ইপিআরে চাকরি করতেন মফিজুর রহমান। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ঢাকার পিলখানা সদর দপ্তরে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বালুচ রেজিমেন্ট তাঁদের আক্রমণ করে। তারা সেই আক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়ে তাঁদের প্রতিরোধ। বেশির ভাগ ইপিআর সদস্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন। তিনিসহ অল্প কিছুসংখ্যক পিলখানা থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হন। পরে তারা সমবেত হন বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে। সেখান থেকে তারা নরসিংদীর পাঁচদোনায় যান। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে তিনি যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টরে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ১৩-১৪ এপ্রিল ভৈরব-নরসিংদীর মাঝে রামনগর রেলসেতুতে সকালে মফিজুর রহমান দেখতে পেলেন দূরে একদল পাকিস্তানি সেনা। তিনি তার দলের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে দ্রুত প্রতিরক্ষা অবস্থান নিলেন। এর মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা চলে এল তাঁদের প্রতিরক্ষা অবস্থানের কাছে। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল তাঁদের সবার অস্ত্র। পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ করল। যুদ্ধ চলতে থাকল। মফিজুর রহমান তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করলেন। সারা রাত গোলাগুলি চলল। পরদিন সকাল থেকে শুরু হলো তাঁদের ওপর বিমান হামলা। চারদিকে বাড়িঘর-গাছপালা দাউ দাউ আগুনে জ্বলতে থাকল। একটু পর হেলিকপ্টার থেকে নামল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল। মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় অবরুদ্ধ। এদিকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো গোলাবারুদ তাঁদের হাতে নেই। ক্ষুধায়ও তারা বেশ কাতর। গত তিন-চার দিন সামান্য খাবার খেয়েছেন। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও তারা বিচলিত হলেন না। এর আগে ২৬ মার্চ ঢাকার পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর থেকে পালিয়ে যাওয়া একদল সৈনিক সমবেত হয়েছিলেন নরসিংদীর পাঁচদোনায়। সেখানে তারা যোগ দেন ময়মনসিংহ থেকে আসা মতিউর রহমানের (বীর প্রতীক) নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে। ঢাকা-নরসিংদী সড়কের করইতনী, বাবুরহাট, পাঁচদোনাসহ আরও কয়েক স্থানে যুদ্ধের পর তারা প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। ভৈরব-নরসিংদীর মাঝের রামনগর এলাকায়। ১৩ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেখানে তাঁদের আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা বিশেষত ইপিআর সৈনিকরা সুলতান আহমেদ (বীর বিক্রম), আবদুল মালেক ও মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করেন। সারা দিন ও রাত সেখানে যুদ্ধ চলে। যুদ্ধ চলা অবস্থায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী কয়েকবার ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে সামনে এগোতে চেষ্টা করে। প্রতিবারই মুক্তিযোদ্ধারা তা প্রতিহত করেন। পরদিন সকাল থেকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বিমান মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী একপর্যায়ে পাঁচ-ছয়টি হেলিকপ্টার দিযে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের চারপাশে কমান্ডো নামায়। এতে মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি প্রায় নিঃশেষিত। ফলে তারা জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়ে যান। শেষ পর্যন্ত তারা অনেক কষ্টে পশ্চাদপসারণ করে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে সমবেত হন। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২২-১১-২০১১"। ২০১৯-১০-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৫-০২ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884 

পাদটীকা[সম্পাদনা]

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]