হামিদুল হক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হামিদুল হক
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

হামিদুল হক (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ৫ এপ্রিল ২০১৮) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১][২]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

হামিদুল হকের জন্ম টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামে। তার বাবার নাম হাবিল উদ্দিন এবং মায়ের নাম কছিরন নেসা। তার স্ত্রীর নাম রোমেচা বেগম। তাদের চার মেয়ে, এক ছেলে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

হামিদুল হক ১৯৭১ সালে উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। দেশের অভ্যন্তরে টাঙ্গাইলে গঠিত কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে বল্লাসহ আরও কয়েক স্থানে যুদ্ধ করেন। পাশাপাশি কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক বিভাগেরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়ে তিনি পাঁচ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি উপজেলার বল্লা গ্রামে কয়েক দিন ধরে অবস্থান করছিলেন হামিদুল হকসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা। এমন সময় মুক্তিযোদ্ধারা খবর পেলেন ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একদল পাকিস্তানি সেনা কালিহাতী থেকে এগিয়ে আসছে বল্লার দিকে। পাকিস্তানি সেনারা যে পথে আসছে, সে পথে আছে নদী। পারাপারের জন্য আছে ঘাট। পাকিস্তানি সেনাদের বল্লায় আসতে হলে এই ঘাট দিয়েই আসতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত তৈরি হয়ে রওনা হলেন সেদিক। ওই জায়গাটা আক্রমণের জন্য উপযুক্ত স্থান। পাকিস্তানি সেনারা আসার আগেই গোপনে তারা অবস্থান নিলেন নদীর এপারে। হামিদুল হকসহ মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিলেন আড়ালে। নদীর ওপার থেকে তাদের দেখা যায় না। মুক্তিযোদ্ধারা বসে আছেন টানটান উত্তেজনা নিয়ে। সবার চোখ নদীর ওপারে। একটু পর সেখানে হাজির হলো পাকিস্তানি সেনারা। মুক্তিযোদ্ধারা সবাই নিশ্চুপ। পাকিস্তানি সেনারা কোথাও কোনো বাধা পায়নি। ঘাটে তারা কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে নৌকায় উঠল। তারপর নৌকা চলতে শুরু করল। সেনারা সবাই নৌকায় নিশ্চিত মনে দাঁড়িয়ে। নৌকা নদীর এপারে আসামাত্র গর্জে উঠল মুক্তিযোদ্ধা কয়েকজনের অস্ত্র। সবাই গুলি করলেন না। তাদের ওপর নির্দেশ, এমনভাবে গুলি করতে হবে যাতে সব নিশানাই সঠিক হয়। এলোপাতাড়ি গুলি করে গুলির অপচয় করা যাবে না। কারণ তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের অভাব প্রকট। আক্রমণের প্রথম ধাক্কাতেই সেনাদের ছোটাছুটিতে ডুবে গেল দুটি নৌকা। ঝাঁপাঝাঁপি করে পানি থেকে উঠে তারা অবস্থান নিল বিভিন্ন স্থানে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের গুলিতে নিহত হয়েছে চারজন পাকিস্তানি সেনা। কয়েকজন নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছে। একটু পর শুরু হলো পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণ। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের তুলনায় অনেক শক্তিশালী ও প্রশিক্ষিত। অন্যদিকে হামিদুল হক ও তার বেশির ভাগ সঙ্গী মাত্র কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণ বেশ বেপরোয়া ধরনের। এতে মুক্তিযোদ্ধারা বিচলিত হলেন না। স্বল্প প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র গোলাবারুদ সম্বল করেই সাহসিকতার সঙ্গে তারা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকলেন। হামিদুল হক ও তার সহযোদ্ধাদের বীরত্বে পাকিস্তানি সেনারা ভরকে গেল। অবস্থা বেগতিক বুঝে তারা পিছু হটতে শুরু করল। পিছু হটার আগে তারা চেষ্টা করল নিহত সহযোদ্ধাদের লাশ উদ্ধারে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের ত্বরিত তৎপরতায় তাদের সে প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হলো। পাঁচ ঘণ্টা যুদ্ধের পর তারা শেষ পর্যন্ত পালিয়ে গেল।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

২০১৮ সালের ২৭ মার্চ অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হামিদুল হককে। ২৮ মার্চ হামিদুল হকের শারীরিক পরীক্ষা করা হলে ধরা পড়ে নানা ধরনের রোগ। তার শরীরে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিজনিত সমস্যা, পটাশিয়ামের পরিমাণ কম থাকা, ফুসফুসে পানি জমে ঠাণ্ডা লাগা, শ্বাস-কষ্টজনিত রোগ ও ফুসফুস ইনফেকশনের সমস্যা ছিল। ১ এপ্রিল হামিদুল হকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে (ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়। তাকে কৃত্রিম শ্বাসনালি দেওয়া হয়েছিল। ৫ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার ভোর সোয়া ৪টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ০১-০৫-২০১২"। ২০১৪-০৮-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. বাংলাট্রিবিউন ৫ এপ্রিল ২০১৮[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  • এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]