সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল, কলকাতা
সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল St. Paul's Cathedral | |
---|---|
অবস্থান | ১এ, ক্যাথিড্রাল রোড, কলকাতা – ৭০০ ০৭১ |
দেশ | ভারত |
মণ্ডলী | চার্চ অফ নর্থ ইন্ডিয়া (অ্যাংলিক্যান) |
ইতিহাস | |
যার জন্য উৎসর্গিত | সেন্ট পল |
স্থাপত্য | |
মর্যাদা | ক্যাথিড্রাল |
সক্রিয়তা | সক্রিয় |
মনোনয়নের তারিখ | ১৮৪৭ |
স্থপতি | মেজর উইলিয়াম নেইন ফোর্বস, সি. কে. রবিনসন |
স্থাপত্যশৈলী | ইন্দো-গথিক |
শৈলী | গথিক নবজাগরণ |
ভূমিখননের তারিখ | ১৮৩৯ |
নির্মাণকাজ সমাপ্তির তারিখ | ১৮৪৭ |
নির্মাণ ব্যয় | ৪,৩৫,৬৬৯ টাকা |
বৈশিষ্ট্য | |
দৈর্ঘ্য | ২৪৭ ফুট (৭৫ মি) |
প্রস্থ | ৮১ ফুট (২৫ মি) |
গির্জাশিখরের উচ্চতা | ২০১ ফুট (৬১ মি) |
নির্মাণ-সামগ্রী | বিশেষ ইঁট, ইস্পাতের ট্রাস ও চুনের সূক্ষ্ম প্লাস্টার |
প্রশাসন | |
ধর্মপাল রাজ্য | ক্যালকাটা |
সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল (ইংরেজি: St. Paul's Cathedral) হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় অবস্থিত একটি অ্যাংলিকান ক্যাথিড্রাল। গির্জাটি গথিক স্থাপত্যের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এই গির্জা অ্যাংলিকান ডায়োসিস অফ ক্যালকাটার কেন্দ্র। গির্জাটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ১৮৩৯ সালে এবং নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয় ১৮৪৭ সালে।[১] কথিত আছে, এটি কলকাতার বৃহত্তম ক্যাথিড্রাল এবং এশিয়ার প্রথম এপিস্কোপ্যাল চার্চ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রগুলিতে যে সকল ক্যাথিড্রাল গঠিত হয়, সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল সেগুলির মধ্যে প্রথম। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলকাতায় ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে ক্যাথিড্রাল রোডে গির্জার অট্টালিকাটি একটি "আকর্ষণীয় দ্বীপে" ("island of attractions") গড়ে তোলা হয়।
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প এবং তারপর ১৯৩৪ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে কলকাতা উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর একটি সংশোধিত নকশা অনুসারে গির্জাটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। এই গির্জার স্থাপত্যশৈলীটি "ইন্দো-গথিক" (গথিক স্থাপত্যশৈলীর একটি বিশেষ নকশা, যেটি ভারতের জলবায়ুগত পরিস্থিত সঙ্গে সাযুজ্য রেখে অঙ্কিত হয়) স্থাপত্যশৈলী নামে পরিচিত। ক্যাথিড্রাল চত্বরের পশ্চিম দেহলির পাশে একটি গ্রন্থাগার এবং প্লাস্টিক শিল্পকলা ও স্মারক দ্রব্যের একটি প্রদর্শশালা রয়েছে।
ক্যাথিড্রালের প্রতিষ্ঠাতা বিশপ ড্যানিয়েল উইলসন ছাড়াও গির্জা-সংলগ্ন সমাধিস্থলে ১৮৭১ সালে নিহত অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি জন প্যাক্সটন নরম্যানের সমাধি অবস্থিত।
অবস্থান
[সম্পাদনা]সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল চৌরঙ্গী রোডে বিশপ’স প্যালেসের ঠিক উল্টোদিকে অবস্থিত।[২] ময়দানের দক্ষিণ প্রান্তে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল এই ক্যাথিড্রালের পশ্চিম দিকে[৩] ক্যাথিড্রাল রোডে[৪] এবং এম. পি. বিড়লা তারামণ্ডল ও নন্দন-রবীন্দ্র সদন চত্বর এটির দক্ষিণ দিকে অবস্থিত।[৫]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৮১০ সালে বাংলায় ৪,০০০ ব্রিটিশ পুরুষ ও ৩০০ ব্রিটিশ মহিলা বাস করতেন। কিন্তু কলকাতায় ইউরোপীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সেন্ট জন’স চার্চে স্থানাভাবের কারণে সেই গির্জাটির পরিবর্তে সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল নির্মিত হয়।[৪]
১৮১৯ সালে বাংলার তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল মার্কুইস অফ হেস্টিংসের অনুরোধে স্থপতি উইলিয়াম নেইন ফোর্বস প্রস্তাবিত ক্যাথিড্রালটির নকশা প্রস্তুত করেন। তবে সেই নকশা অনুযায়ী ক্যাথিড্রাল নির্মাণ যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ ছিল বলে সেটি পরিত্যক্ত হয়।[৪] শহরের যে অংশটি এখন "ফাইভস কোর্ট" নামে পরিচিত সেই অংশে ক্যাথিড্রালটি নির্মাণের প্রস্তাব রাখেন টমাস মিডলটন। এখানেই বর্তমানে ক্যাথিড্রালটি অবস্থিত। ১৭৬২ সালে এই অঞ্চলটিকে ব্যাঘ্রসংকুল অরণ্য বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। প্রথম দিকে মনে করা হয়েছিল, এই জায়গাটি "একটু বেশি দক্ষিণে" অবস্থিত।[৬] নির্মাণ পরিকল্পনা রূপায়িত হওয়ার আগেই ১৮২২ সালে মিডলটন মারা যান। পরবর্তী তিন বিশপ রেজিনাল্ড হিবার, টমাস জেমস ও জন টার্নার অল্পকাল পদে আসীন থেকে মারা যান। ১৮৩২ সালে বিশপ ড্যানিয়েল উইলসনের উদ্যোগে ক্যাথিড্রাল নির্মাণের প্রকল্পটি পুনরায় গৃহীত হয়।[৬]
ক্যাথিড্রাল নির্মাণের জন্য ৭ একর (৩ হেক্টর) জমি অধিগ্রহণের পর একটি ক্যাথিড্রাল কমিটি গঠিত হয়।[৪] সামরিক ইঞ্জিনিয়ার উইলিয়াম নেইন ফোর্বস (১৭৯৬ – ১৮৫৫) (ইনি পরবর্তীকালে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ার্সের একজন মেজর জেনারেল হয়েছিলেন) বিশপ উইলসনের অনুরোধে ক্যাথিড্রালটির নকশা প্রস্তুত করেন। নরউইচ ক্যাথিড্রালের আদলে এই ক্যাথিড্রালের টাওয়ার ও মোচাকৃতি চূড়াটির রূপদানে তাকে সাহায্য করেন স্থপতি সি. কে. রবিনসন। ১৮৩৯ সালের ৮ অক্টোবর ক্যাথিড্রালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় এবং আট বছর পর নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয়। এরপর ১৮৪৭ সালের ৮ অক্টোবর ক্যাথিড্রালটিকে যথাবিধি উপাসনার জন্য উৎসর্গ করা হয়।[১][৪][৬] উৎসর্গ অনুষ্ঠানটিকে চিহ্নিত করে রাখার জন্য রানি ভিক্টোরিয়া "রুপোর গিলটি-করা দশটি পাত" পাঠিয়েছিলেন। মূলত ইউরোপীয় ও স্থানীয় অধিবাসীরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।[৪] ক্যাথিড্রালটি নির্মিত হয়েছিল গথিক নবজাগরণ শৈলীতে। তবে নির্মাণের ক্ষেত্রে আধুনিক উপাদান ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে ছিল একটি লৌহ নির্মাণ-কাঠামো। ক্যাথিড্রালে ছিল একটি চ্যানসল, একটি স্যাংচুয়ারি, চ্যাপেল ও ২০১ ফুট (৬১ মি) উঁচু একটি মোচাকৃতি চূড়া। নির্মাণকার্যে মোট ব্যয়িত হয় ৪,৩৫,৬৬৯ টাকা। বর্তমানে ক্যাথিড্রালে ৮০০ থেকে ১,০০০ লোকের উপাসনার স্থান রয়েছে।[১][২][৪][৬][৭][৮][৯][১০] নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ হওয়ারপ পর সেন্ট জন’স চার্চের পরিবর্তে সেন্ট পল’স গির্জাটি ক্যাথিড্রালের মর্যাদা লাভ করে।[৩]
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ক্যাথিড্রালটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সেটিকে আবার সংস্কার করা হয়। ১৯৩৪ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে কলকাতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। এই সময় ক্যাথিড্রালটির সুউচ্চ চূড়াটি ভেঙে পড়ে।[২][১১] তারপর একটি বিকল্প নকশা অনুযায়ী এটিকে পুনর্নির্মাণ করা হয়[৩] এবং ক্যান্টারবেরি ক্যাথিড্রালের কেন্দ্রীয় বেল হ্যারি টাওয়ারের অনুসরণে টাওয়ারটি পুনরায় নির্মিত হয়।[৩][১০]
এই ক্যাথিড্রালে বিশপ হিবারের (১৭৮৩ – ১৮২৬) একটি মূর্তি আছে। তিনি ছিলেন সেকেন্ড বিশপ অফ ক্যালকাটা। ফ্রান্সিস লেগেট চ্যান্ট্রি এই মূর্তির ভাস্কর। ক্যাথিড্রালের পাশে রাস্তার উল্টোদিকে অবস্থিতে বিশপ’স হাউসও স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[৭]
ক্যাথিড্রালটিকে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। সকল ধর্মের মানুষের এখানে প্রবেশাধিকার রয়েছে। এখানে নিয়মিত উপাসনাকার্য চলে। বড়দিন এখানে একটি বিশেষ উৎসব। এই সময় প্রচুর মানুষ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসেন।[১০]
আলোকচিত্র প্রদর্শনী
[সম্পাদনা]-
সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল, ১৮৬৫
-
সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল, ১৯০৫
-
সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল, ১৯০৬
-
রাতের আলোকসজ্জায় সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল, ২০০৭
-
সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রালের চার্চ টাওয়ার, ২০১৩
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ "Bishops of our Diocese"। Ashoke Biswas (Bishop of Calcutta), CNI 2008 – till date। Diocese of Calcutta CNI। ১ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ ক খ গ Chakraborti, Manish। "The Historic Anglican Churches of Kolkata" (পিডিএফ)। continuityarchitects.com। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ "St. Pauls Cathedral"। Official website of Westengal Toiursim Department। ৮ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ Banerjee, Jacqueline। "St Paul's Cathedral, Kolkata, India, by William Nairn Forbes: The First Victorian Cathedral"। The Victorian Web।
- ↑ "Place"। St. Paul's Cathedral। Kednriya Vidya Sangathan:An autonomous organizatiomn of theGovernment of India। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ "St. Pauls Cathedral"। The Diocese of Calcutta, CNI। ৬ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ ক খ Riddick 2006, পৃ. 175।
- ↑ Earth 2011, পৃ. 64।
- ↑ 100 Cities of the World। Parragon Publishing India। ২০১০। পৃষ্ঠা 57–। আইএসবিএন 978-1-4454-0665-7।
- ↑ ক খ গ Saran 2014, পৃ. 252।
- ↑ "Saint Pauls Cathedral"। Kolkta Irganization। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৫।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Bateman, Josiah (১৮৬০)। The Life of Daniel Wilson, D. D. Bishop of Calcutta and Metropolitan of India। Gould and Lincoln।
- Dutta, Krishna (৩ জুন ২০১১)। Calcutta: A Cultural and Literary History। Andrews UK Limited। আইএসবিএন 978-1-904955-87-0।
- Riddick, John F. (১ জানুয়ারি ২০০৬)। The History of British India: A Chronology। Greenwood Publishing Group। আইএসবিএন 978-0-313-32280-8।
- Saran, Renu (১৯ আগস্ট ২০১৪)। Monuments of India। Diamond Pocket Books Pvt Ltd। আইএসবিএন 978-93-5165-298-4।
- Betts, Vanessa; McCulloch, Victoria (৩০ অক্টোবর ২০১৩)। Delhi to Kolkata Footprint Focus Guide। Footprint Travel Guides। আইএসবিএন 978-1-909268-40-1।
- Earth, Good (২০১১)। Kolkata: City Guide। Goodearth Publications। আইএসবিএন 978-93-80262-15-4।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিমিডিয়া কমন্সে সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল, কলকাতা সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।