বিষয়বস্তুতে চলুন

সরিষাবাড়ী উপজেলা

স্থানাঙ্ক: ২৪°৪৪′১৬″ উত্তর ৮৯°৪৯′৫২″ পূর্ব / ২৪.৭৩৭৭৮° উত্তর ৮৯.৮৩১১১° পূর্ব / 24.73778; 89.83111
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সরিষাবাড়ী
উপজেলা
মানচিত্রে সরিষাবাড়ী উপজেলা
মানচিত্রে সরিষাবাড়ী উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৪°৪৪′১৬″ উত্তর ৮৯°৪৯′৫২″ পূর্ব / ২৪.৭৩৭৭৮° উত্তর ৮৯.৮৩১১১° পূর্ব / 24.73778; 89.83111 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগময়মনসিংহ বিভাগ
জেলাজামালপুর জেলা
আয়তন
 • মোট২৬৩.৫০ বর্গকিমি (১০১.৭৪ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[]
 • মোট৩,২৫,৩২০
 • জনঘনত্ব১,২০০/বর্গকিমি (৩,২০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৪৪.৬%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড২০৫০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৩৯ ৮৫
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

সরিষাবাড়ী বাংলাদেশের জামালপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি ৮টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এটি ময়মনসিংহ বিভাগের অধীন জামালপুর জেলার ৭ টি উপজেলার একটি এবং এটি জেলার দক্ষিণভাগে অবস্থিত। এ উপজেলার উত্তরে মাদারগঞ্জ উপজেলাজামালপুর সদর উপজেলা উপজেলা, দক্ষিণে টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলা, পূর্বে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলাধনবাড়ী উপজেলা উপজেলা, পশ্চিমে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলাসিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা অবস্থিত। এটি একটি গুরত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা। এখানে দেশের সবচেয়ে বড় সার কারখানা 'যমুনা সার কারখানা' অবস্থিত।

পাকিস্তান শাসনামলে ১৯৬০ সালে সরিষাবাড়ী থানা গঠিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৩ সালে সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরিষাবাড়ী উপজেলা জামালপুর-৪ সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত। এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৪১ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।

সরিষাবাড়ী উপজেলার আয়তন ২৬৩.৫০ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ২০১১ সনের আদম শুমারী অনুযায়ী ৩,২৫,৩২০ জন। পুরষ ও নারীর অনুপাত ১০০ঃ৯৬, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১২৩৫ জন, শিক্ষার হার ৪৪.৬%।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]
  1. তদানিন্তর বৃটিশ শাসনামলে বর্তমান চর সরিষাবাড়ী ছিল আদি সরিষাবাড়ী। খরস্রোতা যমুনার কড়াল গ্রাসে আদি সরিষাবাড়ী বিলুপ্ত। তখন নদীর নাব্যতা ছিল, চলাচল করতো ষ্টীমার, জলজাহাজ। নদী বিধৌত চার ইউনিয়নের পিংনা, পোগলদিঘা, আওনা, কামরাবাদ এর অধিকাংশ ভূমিতেই সরিষা আবাদ হতো। বীর অঞ্চলের  চারটি ইউনিয়নেও প্রচুর সরিষা আবাদ হতো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে বানিজ্য করার লক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা সরিষা কিনতে আসত। সে সময়কাল হতেই এই স্থানটির নাম রাখা হয় সরিষাবাড়ী। তবে -কে কবে, কোথায়, কোন সময়ে ও কোন তারিখে এই স্থানটির নামকরণ করেন তার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
  2. যমুনা বিধৌত ঝিনাই, সুবর্নখালী বেষ্টিত এই সরিষাবাড়ী পূর্বে কাগমারী পরগনায় অবস্থিত ছিল।
  3. পাটশিল্প সমৃদ্ধ সরিষাবাড়ীতে ২২টি পাটের কুঠি ছিল। প্রায় ২২,০০০ বাইশ হাজার শ্রমিক পাটের কুঠিগুলোতে কর্মরত ছিল। বাংলাদেশের পাট ব্যবসায়ী কেন্দ্র হিসেবে নারায়নগঞ্জের পরই সরিষাবাড়ীর স্থান ছিল। আজ তা বিলুপ্তির পথে।
  4. বৃটিশ শাসনামলে সরিষাবাড়ীর ৫নং পিংনা ইউনিয়নে ফৌজদারী আদালত ছিল। কুম্ভকার সম্প্রদায় এর মাটির হাড়ি-পাতিল তৈরীতে পিংনা ইউনিয়ন এখনো বিখ্যাত। ১৮৯৬ সালে পিংনা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। মহাকবি কায়কোবাদ, পিংনাতে পোস্টমাস্টার পদে থাকাকালীন অবস্থায় আযান কবিতা রচনা করেন।
  5. ডোয়াইল ইউনিয়নে প্রচুর হিন্দুদের বসবাস ছিল। ডোয়াইলের চরের মুগ ডাল ছিল প্রসিদ্ধ। বৃহত্তর ময়মনসিংহে ডোয়াইলের মুগ ডাল সোনামুগ হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল।
  6. পোগলদিঘা সরিষাবাড়ী উপজেলার সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন। এশিয়ার সর্ববৃহৎ ইউরিয়া সারকারখানা সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত।
  7. মহাদান ইউনিয়নের খাগুড়িয়া গ্রামের নামানুসারে ঐতিহ্যবাহী খাগুরিয়া কালী মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে। সুদূর ভারত হতে এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন উপাসনার জন্য আসে এবং তিনদিনব্যাপী মেলা বসে। এই মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে শ্রী শ্রী খাগড়িয়া কালী মাতা মন্দির।  এছাড়া বছরে আরো ৪টি মাঝারী হিন্দুধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়।
  8. পুরাতন জগন্নাথগঞ্জ ঘাট ষ্টীমার ষ্টেশন ছিল। নদীর নাব্যতা হারানোর ফলে ষ্টীমার ঘাটটি বিলুপ্ত। এটি আওনা ইউনিয়নের অন্তর্গত ছিল।
  9. রাজনৈতিক বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ১৩৩৫ বাংলা সনে প্রতিষ্ঠিত শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময় স্থানান্তরিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরিষাবাড়ী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। বাংলাদেশের ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি একটি মানব সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান।
  10. সরিষাবাড়ী সদরে দুটি বাজার দু‌ই দিকে অবস্থিত।একটি শিমলা বাজার ও অপরটি রামনগর বাজার (বর্তমানে আরামনগর বাজার)। পাকিস্তান আমলের শেষের দিকে মরহুম রিয়াজউদ্দিন তালুকদার রামনগরের নাম পরিবর্তন করে আরামনগর বাজার নামকরণ করেন।

পটভূমি

[সম্পাদনা]

ব্রহ্মপুত্র, ঝিনাই ও যমুনা নদীর পলল দ্বারা গড়ে উঠেছে সরিষাবাড়ীর ভূঅঞ্চল। প্রাচীনকালে এ এলাকায় প্রচুর পরিমানে সরিষা উৎপন্ন হতো। উৎপন্ন সরিষা বিক্রির জন্য কালক্রমে এখানে গড়ে উঠে বাজার। ধারণা করা হয় এই সরিষা থেকেই এই অঞ্চলের নামকরণ হয় সরিষাবাড়ী। সরিষাবাড়ী নামকরণের বিষয়ে আর কোন তথ্য জানা যায় না।

একসময় সরিষাবাড়ী পুখরিয়া ও জাফরশাহি পরগনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ব্রিটিশ আমলে সরিষাবাড়ীতে গুরুত্বপূর্ণ নদী বন্দর ছিল। এখানে ব্রিটিশ ও মারোয়াড়ীদের বেলিং কুটির ছিল। সে সময় সরিষাবাড়ী ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। সরিষাবাড়ীকে বলা হতো দ্বিতীয় নারায়ণগঞ্জ। সরিষাবাড়ীর ইউনিয়ন পিংনা একসময় নাটোরের মহারাণীর শাসনাধীনে ছিল। ব্রিটিশ আমলে পিংনা নদীবন্দর থেকে সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও কলকাতার সাথে নৌপথে ব্যবসা-বাণিজ্য হতো। সে সময় পিংনায় ফৌজদারি ও মুনসেফ কোর্ট ছিল। মহাকবি কায়কোবাদ পিংনায় পোস্টমাস্টার থাকাকালে “মহাশশ্মান” কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেন।

উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে জামালপুর মহকুমার সর্বত্র কৃষক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়লে ঐ সময় সরিষাবাড়ী অঞ্চলে জাহেদ খাঁ কৃষকদের সংগঠিত করে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। কৃষক নেতা জাহেদ খাঁ জমিদার-জোতদারদের অবৈধ কর ও খাজনা আরোপের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান। ব্রিটিশ সরকারের জেল-জুলুম উপেক্ষা করে কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করেন।

পূর্বে সরিষাবাড়ী টাঙ্গাইল মহকুমার অধীনে ছিল। ১৯২০ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা থেকে জামালপুর মহকুমাধীনে আসে সরিষাবাড়ী। ১৯৬০ সালের ২৯শে আগস্ট সরিষাবাড়ী থানা গঠিত হয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ২৪ এপ্রিল পাকিস্তান বাহিনী সরিষাবাড়ীতে প্রবেশ করে।[] ১২ ডিসেম্বর সরিষাবাড়ী হানাদার মুক্ত হয়।[] ১৯৮৩ সারে সরিষাবাড়ী উপজেলায় উন্নীত হয়। ১৯৯০ সালে সরিষাবাড়ী পৌরসভা গঠিত হয়।

ভৌগোলিক অবস্থান

[সম্পাদনা]

সরিষাবাড়ী উপজেলা ২৪°৩৪´ থেকে ২৪°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৩´ থেকে ৮৯°৫৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।[] এর উত্তরে মাদারগঞ্জজামালপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে ভূঞাপুর উপজেলা, পূর্বে গোপালপুরধনবাড়ী উপজেলা, পশ্চিমে সারিয়াকান্দি, কাজীপুরসিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা অবস্থিত।[]

এখানকার মাটি বেলে-দোআঁশ ও এঁটেল-দোআঁশ। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। শীতকালে ঘন কুয়াশা হয়। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৩০° থেকে ৩৬° সেলসিয়াস থাকে, শীতকালে ২০° থেকে ২৪° সেলসিয়াস। গড় বৃষ্টিপাত ৮৫৩ সে.মি.। মোট কৃষিজমির পরিমাণ ৬৯২২৯ একর, আবাদি জমির পরিমাণ ৪৯৭৫২ একর।[]

প্রশাসন

[সম্পাদনা]

সরিষাবাড়ী উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম সরিষাবাড়ী থানার আওতাধীন।[]

পৌরসভা:
ইউনিয়নসমূহ:

জামালপুর জেলার একটি সমৃদ্ধ জনপদের নাম সরিষাবাড়ী। ‍ব্রিটিশ আমলে এ অঞ্চলটি ১৯২০ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা থেকে জামালপুর মহকুমাধীনে আসে এবং ১৯৬০ সালের ২৯শে আগস্ট থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। ১৯৮৩ সালে সরিষাবাড়ী থানা উপজেলায় উন্নীত হয়।

১৯৯০ সালে পৌরসভা গঠিত হয়। পৌরসভার আয়তন ২১.১০ বর্গ কিলোমিটার, ওয়ার্ডের সংখ্যা ৯টি।

জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ি উপজেলা) সংসদীয় আসন

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরিষাবাড়ী উপজেলা এবং জামালপুর সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়ন ও মেষ্টা ইউনিয়ন নিয়ে জামালপুর-৪ সংসদীয় আসন গঠিত।[] এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৪১ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।

নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ:

নির্বাচন সদস্য দল
১৯৭৩ আব্দুল মালেক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ[]
১৯৭৯ মোহাম্মদ আব্দুস সালাম তালুকদার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
১৯৮৬ শাহ নেওয়াজ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি[১০]
১৯৮৮ শামসুল ইসলাম
১৯৯১ মোঃ আব্দুস সালাম তালুকদার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল[১১]
ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ - বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল[১২]
জুন ১৯৯৬ মৌঃ মোঃ নুরুল ইসলাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ[১৩]
২০০১ আনোয়ারুল কবির তালুকদার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল[১৪]
২০০৮ মোঃ মুরাদ হাসান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ[১৫]
২০১৪ মোহাঃ মামুনুর রশিদ জাতীয় পার্টি (এরশাদ)[১৬]
২০১৮ মোঃ মুরাদ হাসান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ[১৭]
২০২৪ অধ্যক্ষ আব্দুর রশীদ স্বতন্ত্র (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ)

জনসংখ্যার উপাত্ত

[সম্পাদনা]

২০১১ সনের আদম শুমারী অনুযায়ী সরিষাবাড়ী উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৩,২৫,৩২০ জন। পুরষ ও নারীর অনুপাত ১০০ঃ৯৬, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১২৩৫ জন, শিক্ষার হার ৪৪.১৬%।[] এ উপজেলায় প্রধানত মুসলমানহিন্দু এই দুই সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। অন্যান্য ধর্মের লোকসংখ্যা একেবারেই কম। এর মধ্যে মুসলমান জনগোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ। জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম ৩,১৬,৭৭৪, হিন্দু ৮,৪০৮, খ্রিস্টান ৯০, বৌদ্ধ ৫ এবং অন্যান্য ৪৩ জন।[]

শিক্ষা

[সম্পাদনা]

সরিষাবাড়ী উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো হলো- পিংনা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৬), ডোয়াইল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), চাপারকোনা মহেষচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), সরিষাবাড়ী আর.ডি.এম. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), রিয়াজউদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৯), ভাটারা হাইস্কুল ইত্যাদি।

পিংনা উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৮৯৬ সালে। ১৯০৭ সালে শশীমোহন চৌধুরী স্কুলটি বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করেন। প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ এই স্কুলে পড়েছেন। ১৯৩৯ সালে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক এই স্কুল পরিদর্শন করেন। তার সফরসঙ্গী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিম উদ্দিন ও মৌলবি তমিজ উদ্দিন খান প্রমুখ। সরিষাবাড়ী আর.ডি.এম. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন রানী দিনমনি চৌধুরানী। মৌলবি মোতাহের আলী খানের পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠিত হয় ভাটারা হাই স্কুল। তিনি দূরদূরান্তের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল সংলগ্ন একটি ছাত্রাবাসও স্থাপন করেন।

উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো- আলহাজ্ব রিয়াজউদ্দিন তালুকদার ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৭), পোগলদিঘা কলেজ, মাহমুদা সালাম মহিলা কলেজ, পিংনা সুজাত আলী কলেজ, এডভোকেট মতিউর রহমান কলেজ, সরিষাবাড়ী কলেজ, সানাকৈর আইডিয়াল কলেজ, বঙ্গবন্ধু কলেজ ইত্যাদি। সরিষাবাড়ীর উল্লেখযোগ্য ফাজিল মাদ্রাসা হলো সেঙ্গুয়া দারুল হুদা ফাজিল মাদ্রাসা, দৌলতপুর ফাজিল মাদ্রাসা।

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে সরিষাবাড়ী উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮৫টি, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৪টি, বেসরাকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭টি, কিন্ডার গার্টেন ৬৩টি, এনজিও স্কুল ২৮টি; বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ৩৬টি, স্কুল এন্ড কলেজ ৩টি; বেসরকারি কলেজ ৮টি; মাদ্রাসা ২২টি, কওমি মাদ্রাসা ২টি, এবতেদায়ি মাদ্রাসা ১৭টি; টেকনিক্যাল এবং ভোকেশনাল ইন্সিটিটিউট ৩টি, এগ্রিকালচারাল ও ভেটেনারি কলেজ ১টি, দেশের অন্যতম হোমিওপ্যাথি কলেজ ১টি।

স্বাস্থ্য

[সম্পাদনা]

উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৮টি উপ-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ৩৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে সরিষাবাড়ী উপজেলায় ১টি বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক এবং ১২টি ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, ৭টি মিশনারি হাসপাতাল রয়েছে।[]

অর্থনীতি

[সম্পাদনা]

সরিষাবাড়ী ‍উপজেলা মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। সব ধরনের ফসলই এখানে উৎপন্ন হয়। চরাঞ্চলে  ধান, আলু, পাট, তামাক, বেগুন, মরিচ, সরিষা, ভুট্টা, গম এবং বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপন্ন হয়। এখানকার মাটি যে কোন ফসলের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সরিষাবাড়ী উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক দ্রব্য পাট। সরিষাবাড়ী উপজেলায় প্রচুর পরিমানে পাট উৎপাদিত হয়ে থাকে। এই পাটকেই কেন্দ্র করে সরিষাবাড়ীর পাটকলগুলো পরিচালিত হয়।

  • বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি হলো- চিনা, কাউন, তিল, তিসি।
  • প্রধান ফল-ফলাদির মধ্যে আছে আম, নারিকেল, সুপারি, কলা, পেঁপে।

শিল্পের মধ্যে রয়েছে যমুনা সারকারখানা। যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানী লিঃ নামের কারখানাটি যমুনা নদী হতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্বে ১৯৯২ সালে সরিষাবাড়ির তারাকান্দিতে স্থাপিত হয়। এ ফ্যাক্টরীর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৫,৬১,০০০ মেট্রিক টন।[১৮] ১৯৬৭ সালে সরিষাবাড়ীতে আলহাজ্ব জুটমিল স্থাপিত হয়। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য জুটমিল হলো এ.আর.এ জুট মিল, পপুলার জুটমিল। বর্তমানে সরিষাবাড়ীতে ৬ টি পাটকল আছে। এছাড়া বাংলাদেশের বৃহত্তম সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট সরিষাবাড়ীতে স্থাপন করা হয়েছে।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস- কৃষি ৬৩.৮৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.৭৬%, শিল্প ১.৩১%, ব্যবসা ১২.২৯%, পরিবহন ও যোগাযোগ ২.৯১%, চাকরি ৮.০৬%, নির্মাণ ১.২৮%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩৬% এবং অন্যান্য ৬.৯৭%।[১৯]

যোগাযোগ

[সম্পাদনা]

সরিষাবাড়ী উপজেলার যোগাযোগ সড়ক ও রেল এই দুইভাবেই আছে। এছাড়া সীমিতভাবে নৌপথে চলাচল করা যায়। উপজেলার মোট সড়ক পথের দৈর্ঘ্য ৫৩২.৩৩ কিলোমিটার; এর মধ্যে পাকা রাস্তা ১৬৮.৩৮ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তা ৩৬৩.৯৫ কিলোমিটার।[২০] এ উপজেলায় রেলপথ আছে ১৭ কিলোমিটার এবং নৌপথ আছে ১৬ নটিক্যাল মাইল[]

১৮৮৫ সালে ময়মনসিংহের সঙ্গে ঢাকার সংযোগ স্থাপন করে রেলপথ স্থাপিত হয়। এই রেলপথ ১৮৯৪ সালে জামালপুর পর্যন্ত, ১৮৯৯ সালে সরিষাবাড়ী উপজেলার জগন্নাথগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।[২১] সরিষাবাড়ি থেকে চলাচলকারী তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন হল অগ্নিবীণা,জামালপুর এক্সপ্রেসযমুনা এক্সপ্রেস। এছাড়া ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ও ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস নামে একটি লোকাল ও মেইল ট্রেন চলাচল করে। রেলপথ এই উপজেলাকে জামালপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেণী, চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইল জেলার সাথে যুক্ত করেছে। সরিষাবাড়ী উপজেলার অন্তর্গত রেল স্টেশন সমূহ হলো:

নদ-নদী ও খাল-বিল

[সম্পাদনা]

সরিষাবাড়ী উপজেলার প্রধান নদ-নদী ৬টি। এ নদীগুলো ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর শাখা নদী। নদীগুলো হলো যমুনা, ঝিনাই, জলগতিনাথ, পেরুয়া রৌহা, খালিশাকুড়ি ও শিশুয়া নদী। এ উপজেলায় বেশ কিছু খাল-বিল রয়েছে। এর মধ্যে কাওয়ামারা বিল ও বালাকুড়িয়া বিল উল্লেখযোগ্য।

উল্লেখযোগ্য স্থান

[সম্পাদনা]
  • যমুনা সারকারখানা: এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম সার কারখানা জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে অবস্থিত। তারাকান্দি রেল স্টেশনের সাথেই এটি অবস্থিত।
  • তালুকদার বাড়ি জামে মসজিদ: তালুকদার বাড়ি জামে মসজিদ সরিষাবাড়ী উপজেলার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। মসজিদটির স্থাপত্য রীতি খুবই নান্দনিক। সরিষাবাড়ী উপজেলার আরামনগর বাজার থেকে খুব সহজেই এখানে আসা যায়।
  • যমুনা গার্ডেন সিটি: সার কারখানার আধা কিলোমিটার দূরে পোগলদিঘা ইউনিয়নে যমুনা গার্ডেন সিটি বিনোদন কেন্দ্রটি অবস্থিত।
  • জেটি ঘাট: তারাকান্দির যমুনা সারকারখানা গেট থেকে দুই কিমি দূরেই জেটি ঘাট অবস্থিত।
  • জগন্নাথগঞ্জঘাট।
  • প্রজাপতি পার্ক ও দ্বিজেন শর্মা উদ্ভিদ উদ্যান, দৌলতপুর।
  • বিন্ন্যাফৈর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: প্রায় ২০০ বছর পূর্বে ১৮৮১ সালে বিদ্যালয়টি তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে স্থাপিত হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যালয়টির পুনঃ নির্মাণ বাস্তবায়ন করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২০ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৫ 
  2. "জেলা পরিসংখ্যান ২০১১, জামালপুর" (পিডিএফ)বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। ১৫ মে ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  3. মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস, ময়মনসিংহ। বাংলা একাডেমী। জুন ২০১১। পৃষ্ঠা ১০৯। আইএসবিএন 984-07-4996-X 
  4. মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস, ময়মনসিংহ। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। জুন ২০১১। পৃষ্ঠা ২৫৫। আইএসবিএন 984-07-4996-X 
  5. "সরিষাবাড়ী উপজেলা"বাংলাপিডিয়া। ১৯ মার্চ ২০১৫। ২৮ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  6. "জেলা পরিসংখ্যান ২০১১, জামালপুর" (পিডিএফ)বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। ১৫ মে ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. "ইউনিয়নসমূহ - সরিষাবাড়ী উপজেলা"sarishabari.jamalpur.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ১৮ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০২১ 
  8. "জাতীয় সংসদীয় আসনবিন্যাস (২০১৩) গেজেট" (পিডিএফ)বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। জুলাই ৩, ২০১৩। Archived from the original on ১৬ জুন ২০১৫। 
  9. "প্রথম জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ। ১ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  10. "তৃতীয় জাতীয় সংসদ" (পিডিএফ)বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  11. "পঞ্চম জাতীয় সংসদ" (পিডিএফ)বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  12. "ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ" (পিডিএফ)বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  13. "৭ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যগণের তালিকা" (পিডিএফ)বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  14. "অষ্টম জাতীয় সংসদ"বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ। ২০২০-০১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  15. "৯ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা"বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ। ২০২০-০২-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  16. "দশম জাতীয় সংসদ"বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ। ২০২০-০২-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  17. "List of 11th Parliament Members Bangla"বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  18. "সার কারখানাসমূহ"বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন। ৩০ জুলাই ২০১৮। ২৯ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  19. "সরিষাবাড়ী উপজেলা"বাংলাপিডিয়া। ১৯ মার্চ ২০১৫। ২৮ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  20. "রোড ডাটাবেস"এলজিইডি। ডিসেম্বর ২০১৮। ২২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  21. বাংলাদেশ জেলা গেজেটীয়ার বৃহত্তর ময়মনসিংহ। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, গণপ্রতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৯৯২। পৃষ্ঠা ২৩৭। 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]