বেগুন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বেগুন / Eggplant / Aubergine
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: Eudicots
শ্রেণীবিহীন: Asterids
বর্গ: Solanales
পরিবার: Solanaceae
গণ: Solanum
প্রজাতি: S. melongena
দ্বিপদী নাম
Solanum melongena
L.
প্রতিশব্দ

Solanum ovigerum Dunal
Solanum trongum Poir.
and see text

বেগুন ফুল

বেগুন এক প্রকারের ফল যা সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেকের ধারণা এই উদ্ভিদের প্রজাতিগুলির উদ্ভব ভারতে হয়েছিল, যেখানে এটির ব্যপক বৃদ্ধি হতে থাকে।[১] আবার অনেকের মতে এর বৃদ্ধি আফ্রিকাতেও হতে পারে।[২]

বেগুন গাছ প্রায় ৪০ থেকে ১৫০ সেমি দীর্ঘ হয়। পাতাগুলো ঘন এবং প্রায় ১০ থেকে ২০ সেমি দীর্ঘ ও ৫ থেকে ১০ সেমি প্রশস্ত হয়। বুনো বেগুন গাছ আরো বড় হতে পারে। বেগুনের ফুল সাদা হতে গোলাপী বর্ণের হয়। পাঁচটি পাপড়ি থাকে। বেগুনের ফল বেগুনী বা সাদা বর্ণের হয়। ফল অনেকটা লম্বাটে নলাকৃতির হয়ে থাকে। ফলের ভিতরে অনেকগুলো নরম বীজ থাকে।

বেগুনের ব্যবহার ও গুনাগুণ[সম্পাদনা]

সদ্য ফলে পরিণত হওয়া বেগুন

ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন রান্নায় বেগুনের ফল ব্যবহার করা হয়। বেগুন মধুর, তীক্ষ্ণ ও উষ্ণ। পিত্তনাশক, জ্বর কমায়, খিদে বাড়ায় এবং পরিপাক করা সহজ। বেগুন ভর্তা, বেগুন পোড়া, এবং বেগুনী বানাতে এর ব্যবহার রয়েছে। বিশেষত বাংলাদেশে ইফতারের জন্য বেগুনী একটি জনপ্রিয় খাবার। বেগুন এর ভর্তা অনেক জনপ্রিয়। এটি গ্রামবাংলার অনেক সুস্বাদু খাবার।

বেগুন, কাঁচা
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান
শক্তি১০৪ কিজু (২৫ kcal)
৫.৮৮ g
চিনি৩.৫৩ g
খাদ্য আঁশ৩ g
০.১৮ g
০.৯৮ g
ভিটামিনপরিমাণ দৈপ%
থায়ামিন (বি)
৩%
০.০৩৯ মিগ্রা
রিবোফ্লাভিন (বি)
৩%
০.০৩৭ মিগ্রা
নায়াসিন (বি)
৪%
০.৬৪৯ মিগ্রা
প্যানটোথেনিক
অ্যাসিড (বি)
৬%
০.২৮১ মিগ্রা
ভিটামিন বি
৬%
০.০৮৪ মিগ্রা
ফোলেট (বি)
৬%
২২ μg
ভিটামিন সি
৩%
২.২ মিগ্রা
ভিটামিন ই
২%
০.৩ মিগ্রা
ভিটামিন কে
৩%
৩.৫ μg
খনিজপরিমাণ দৈপ%
ক্যালসিয়াম
১%
৯ মিগ্রা
লৌহ
২%
০.২৩ মিগ্রা
ম্যাগনেসিয়াম
৪%
১৪ মিগ্রা
ম্যাঙ্গানিজ
১১%
০.২৩২ মিগ্রা
ফসফরাস
৩%
২৪ মিগ্রা
পটাশিয়াম
৫%
২২৯ মিগ্রা
জিংক
২%
০.১৬ মিগ্রা
অন্যান্য উপাদানপরিমাণ
পানি৯২ g

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে।
উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল

বীজতলা তৈরি[সম্পাদনা]

বেগুনের চাষাবাদ প্রধানত পলি মাটিতে বেশি হয়। বেগুন চাষের জন্য প্রথমে বীজতলায় চারা তৈরি করে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। বীজতলা তৈরির সময় কয়েকটি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন-

  • বীজতলায় যেন পানি না জমে।
  • ঐ স্থানে সব সময় আলো-বাতাস থাকে।
  • বীজতলার কাছাকাছি সেচের ব্যবস্থা থাকলে ভালো।
  • রোগমুক্ত সবল চারা পেতে হলে বীজতলার মাটি শোধন করে নিতে হবে।

চারা উৎপাদন[সম্পাদনা]

বেগুন চাষের জন্য চারা উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শীতকালীন বেগুন চাষের জন্য শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি হতে আশ্বিন মাস এবং বর্ষাকালীন বেগুন চাষের জন্য চৈত্র মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়। বালি, কমপোষ্ট ও মাটি সমপরিমাণে মিশিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়। সবল চারা পাওয়ার জন্য প্রথমে একটি বীজতলায় বীজ বুনতে হয়। গাছ গজানোর ৮-১০ দিন পর চারা তুলে দ্বিতীয় বীজতলায় রোপণ করতে হয়। এতে চারা স্বাস্থ্যবান হয়। অতিরিক্ত পানিতে বীজ নষ্ট হয়ে যায়।

জমি তৈরি ও চারা রোপণ[সম্পাদনা]

  • বেগুন বেশ কয়েক মাস ধরে মাঠে থাকে। তাই ভালো ফলন পেতে জমি ভালোভাবে তৈরি করতে হবে।
  • সাধারণত মাঠের জমি তৈরির জন্য ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
  • ৩৫-৪৫ দিন বয়সের চারা রোপণের উপযোগী হয়। এ সময়ে চারাতে ৫-৬ টি পাতা গজায় এবং চারা প্রায় ১৫ সে.মি. লম্বা হয়।
  • চারা তোলার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শেকড় নষ্ট না হয়।
  • চারা তোলার ১-২ ঘণ্টা আগে বীজতলায় পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে নিলে শেকড় নষ্ট হয় না।
  • বীজতলায় চারা তৈরি করে ৫-৬ সপ্তাহ বয়সের চারা ৭৫ সে.মি. দূরত্বে সারি করে ৬০ সে.মি. দূরে দূরে লাগাতে হয়। বেগুনের জাতের গাছের আকার অনুয়ায়ী এ দূরত্ব ১০-১৫ সে.মি. কম-বেশি করা যেতে পারে।
  • ১মিটার আকারের বীজতলায় প্রায় ৮-১০ গ্রাম বীজ বপন করতে হয়। চারার বয়স ৩৫-৪০ দিন হলে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়।

সার প্রয়োগ[সম্পাদনা]

কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে বেগুন চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরন অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশী যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদি স্তূপ করে রেখে পচা সার তৈরি করা সম্ভব।

রোগ-বালাই[সম্পাদনা]

প্রভাব

ফিউজিয়াম ছত্রাক দ্বারা বেগুনের ঢলে পড়া রোগ হয়। গাছের গোড়া ও শেকড় বিবর্ণ হয়ে যায়। এ রোগ হলে পাতা নেতিয়ে পড়ে ও গাছ ঢলে পড়ে। পরবর্তীতে গাছ মারা যায়।

প্রতিকার

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণের অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।

সেচ ও নিষ্কাশন[সম্পাদনা]

  • শীতকালীন ও আগাম লাগানো বর্ষাকালীন ফসলের জন্য বেগুনে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়।
  • বেলে মাটিতে ১০-১৫ দিন পরপর সেচ দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে।
  • বর্ষাকালীন ও বারমাসী বেগুনের ক্ষেত্রে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

চাষের সময় পরিচর্যা[সম্পাদনা]

  • গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য মাঝে মাঝে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে।
  • জমিতে আগাছা দেখা দিলে মাঝে মাঝে তা পরিষ্কার করতে হবে।
  • খরকুটো অথবা শুকনো কচুরিপানা দিয়ে মাটি ঢেকে দিলে মাটিতে রস অনেক দিন থাকবে।
  • বয়স্ক গাছে ফল উৎপাদন কমে গেলে গাছের প্রধান কাণ্ড গোড়ার দিকে ২০ সে.মি. রেখে গাছের বাকি অংশ কেটে দিতে হবে। এরপর সার ও সেচ দিলে কাণ্ডের কেটে দেওয়া জায়গা থেকে দ্রুত শাখা-প্রশাখা বেরিয়ে ফল দেওয়া শুরু করবে।

বেগুন সংগ্রহ[সম্পাদনা]

খাওয়ার উপযোগী বেগুন ক্ষেত থেকে তোলার সময় সাবধানে সংগ্রহ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে গাছের গায়ে যেন আঘাত না লাগে বা ক্ষত সৃষ্টি না হয়। গাছ থেকে তোলা বেগুন কাঁচা পাতা অথবা খড়ের উপর রাখতে হবে যেন বেগুনে আঘাত না লাগে; এটা অতি প্রয়োজনীয়।

উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ[সম্পাদনা]

এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করলে গড়ে প্রায় ১০০-১২০ মণ বেগুন পাওয়া যায়।

বিপণন[সম্পাদনা]

বেগুন ফসল সংগ্রহের পর ঠান্ডা ও খোলা জায়গায় কয়েক দিন সংরক্ষণ করা যায়। তাই সংগ্রহের পরপরই ঝুড়িতে বা বস্তায় বাজারে পাঠান যেতে পারে। তবে বস্তায় বেশিক্ষণ রাখা ঠিক নয়।

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Trujilo, Linda (২৫ জানুয়ারি ২০০৩), "The Elegant Eggplant", Master Gardener Journal, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  2. Matthee, Rudolph (২০১৬-০২-১১)। "Patterns of Food Consumption in Early Modern Iran" (ইংরেজি ভাষায়)। ডিওআই:10.1093/oxfordhb/9780199935369.013.13Eggplant, which originated in Africa, first shows up in history in Southeast Asia, and it was possibly brought to Iran in the same period from India via the Turks of Central Asia.