মাদারগঞ্জ থানা
মাদারগঞ্জ | |
---|---|
থানা | |
মাদারগঞ্জ থানা | |
বাংলাদেশে মাদারগঞ্জ থানার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৩′৪৭″ উত্তর ৮৯°৪৫′৭″ পূর্ব / ২৪.৮৯৬৩৯° উত্তর ৮৯.৭৫১৯৪° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ময়মনসিংহ বিভাগ |
জেলা | জামালপুর জেলা |
উপজেলা | মাদারগঞ্জ উপজেলা |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৫ জুন, ১৯০৬ |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
মাদারগঞ্জ থানা বাংলাদেশের জামালপুর জেলার অন্তর্গত মাদারগঞ্জ উপজেলার একটি থানা।
প্রতিষ্ঠাকাল[সম্পাদনা]
১৯০৬ সালের ১৫ জুন মাদারগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠিত হয়।[১]
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ[সম্পাদনা]
মাদারগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রম মাদারগঞ্জ থানার আওতাধীন।[২]
উল্লেখযোগ্য স্থান[সম্পাদনা]
- খরকা বিল: উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে কোনো এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে এই বিলের উৎপত্তি হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। উপজেলা পরিষদ ঘেঁষে জোনাইল বাজার পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এর বিস্তৃতি ছিল। পরবর্তীতে ভূমিধ্বসের ফলে এটি পূর্ব পাশের চতলা বিলের সাথে মিশে বিশাল আকার ধারণ করে। বিলটির গভীরতা ও মাছের প্রাচুর্যতার কারণে মাদারগঞ্জের মাছের আড়ৎ নামে পরিচিত ছিল। খরকা বিল নিয়ে রচিত হয়েছে বিভিন্ন সাহিত্য গল্প ও কবিতা। যা পড়লে সহজেই এর হারানো রূপ ও বৈচিত্র উপলব্ধি করা যায়। এখন এই বিলের পাশ দিয়ে স্থাপিত হয়েছে হাইওয়ে রোড।
- ঝাড়কাটা নদী: মাদারগঞ্জ উপজেলার অন্যতম শাখা নদী। এটি মাদারগঞ্জ উপজেলার উত্তর পার্শ্ব দিয়ে ঝাড়কাটা গ্রামে অবস্থিত। এই নদী নিয়ে প্রচলিত আছে রূপকথা, ভূতের গল্প ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
- মালিপাড়া: জোরখালী গ্রামের প্রসস্থ অঞ্চলজুড়ে অবস্থিত মালি, চং, পাঠুনিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আদিনিবাস। মালিপাড়া একসময় ছিল তাবু, ছোন ও খড়ের তৈরি ঘরে পূর্ণ কোলাহলযুক্ত একটি ঘন আবাসস্থল। দেশের বিভিন্ন স্থান হতে বণিকেরা এখানে বাণিজ্যিক কাজে আসতো। ১৯৪৬ সালে হিন্দু মুসলমান ভয়াবহ দাঙ্গার সময় প্রায় নৃগোষ্ঠীর লোকেরা ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে চলে যায়। পরবর্তীকালে আবার (পাকিস্তানি সরকারের ক্রোধের সময়) বাকি লোকেরাও ভারতসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেন। দীর্ঘকালব্যাপী এই অঞ্চলটি খরগোশ, শিয়াল, সজারু, নেকড়ে, বন্যশুকর, কচ্ছপসহ বিভিন্ন পশু, সরিসৃপ ও পাখিদের আবাসস্থল হিসাবে পড়ে থাকতো। কিন্তু পরবর্তীতে দিনে দিনে এইসব জমি স্থানীয় লোকদের বাসস্থান ও আবাদী জমিতে পরিণত হয়েছে।[৩]
- তারতাপাড়া নীলকুঠি: মাদারগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নীলকুঠি। এটি তারতাপাড়া গ্রামের দক্ষিণ পাশে কুঠিবন্দ নামক স্থানে অবস্থিত। যেখানে বৃটিশ আমলে ইংরেজরা নীল জাল করার চুল্লি ও কুঠি স্থাপন করেছিল। বর্তমানে এটি পরিতেক্ত ভূমি হিসেবে পড়ে আছে।[৪]
- শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট: জোরখালী গ্রামে অবস্থিত মাদারগঞ্জ উপজেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অত্র প্রতিষ্ঠানটি কইয়ের বিল ও কাছিমগড় বিলের মনোরম পরিবেশে জামালপুর-মাদারগঞ্জ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। বিলগুলোর অনেকাংশ বিলুপ্ত হয়ে গেলেও বর্ষাকাল ও বন্যার সময় তাদের হারানো রূপ-বৈচিত্র্য কিছুটা ফিরে পায়। যা সহজেই প্রকৃতি প্রেমিদের দৃষ্টি ও মন কেড়ে নেয়। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে এতটুকুও হয়তো একদিন হারিয়ে যাবে।[৩]
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি[সম্পাদনা]
- আশেক মাহমুদ তালুকদার (১৮৭০ - ১৯৬০ ) সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠার মধ্যে এস,এম ফাযিল সিনিয়র মাদরাসা ও মাদারগঞ্জ এ,এইচ,জেড কলেজ অন্যতম।
চিত্র:Photo of Ashek Mahmood Talukdar.jpg
আশেক মাহমুদ তালুকদার
- নজরুল ইসলাম বাবু (১৭ জুলাই ১৯৪৯ - ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯০) একজন গীতিকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। "সব কটা জানালা খুলে দাও না", "একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার" গানের গীতিকার তিনি। ১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পদ্মা মেঘনা যমুনা চলচ্চিত্রের গীত রচনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
- আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান তাঁরা (২৪ জানুয়ারী ১৯৪৯ চরপাকেরদহ ইউনিয়ন - ২৭ এপ্রিল ২০১২) আহলে হাদীস আন্দোলন বাংলাদেশ এর উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি। বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে মাদারগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভুমিকা রাখেন। কহল-দুর্নীতিবিহীন সমাজ ও কুসংস্কার বিহীন ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ক্রমাগত সংগ্রাম করেছেন। তিনি ছিলেন একাধারে ন্যায়বিচারক, ধর্মসংস্কারক ও রাজনীতিবিদ।
- গিয়াস উদ্দিন আহমদ (১৮৮৯- ২৯ জুলাই ১৯৬৫) ১৯২১ সালে অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে যোগ দিয়ে প্রেসিডেন্সী কলেজ ত্যাগ করে প্রথম কারাবরণ করেন। জেল-মুক্ত হয়ে জামালপুরে এসে শক্তিশালী কংগ্রেস সংগঠন গড়ে তুলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে এম.এল.এ নির্বাচিত হন এবং খাদ্যমন্ত্রী হন।[৫]
- সৈয়দ করিমুজ্জামান তালুকদার নেতাজী সুভাষ বসুর অনুসারী একজন নেতৃস্থানীয় কংগ্রেস কর্মী ছিলেন। কলকাতা জেলা কংগ্রেস কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৪০ সালে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সাংগঠনিক সফরে জামালপুরে এসে সৈয়দ করিমুজ্জামানের চন্দ্রার বাড়িতে উঠেছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ এলাকা থেকে এম.এন.এ নির্বাচিত হন।[৫]
- ডা. মুনির উদ্দিন আহমদ (জন্ম: ১৯০০ সালে সিধুলী ইউনিয়নের চর নান্দিনায়) ময়মনসিংহ মেডিকের কলেজ থেকে পাশ করে কলকাতায় চলে যান। কলকাতা থাকাকালীন কৃষক প্রজা পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৪৩ সালে জামালপুরের দুর্ভিক্ষ-পীগিত হাজার হাজার মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেন। ১৯৬৬ সারে ৬ দফা, ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।[৫]
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "মাদারগঞ্জ উপজেলার পটভূমি"। madarganj.jamalpur.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২৫ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০২১।
- ↑ "ইউনিয়নসমূহ - মাদারগঞ্জ উপজেলা"। madarganj.jamalpur.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২৫ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০২১।
- ↑ ক খ সংকলিত
- ↑ ক খ গ বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা, জামালপুর। বাংলা একাডেমী। ২০১৩। পৃষ্ঠা ৭৪। আইএসবিএন 984-07-5178-6।