ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা

স্থানাঙ্ক: ২৪°৪১′১২″ উত্তর ৯০°৩৭′৪৬″ পূর্ব / ২৪.৬৮৬৬৭° উত্তর ৯০.৬২৯৪৪° পূর্ব / 24.68667; 90.62944
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ঈশ্বরগঞ্জ
উপজেলা
মানচিত্রে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা
মানচিত্রে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৪°৪১′১২″ উত্তর ৯০°৩৭′৪৬″ পূর্ব / ২৪.৬৮৬৬৭° উত্তর ৯০.৬২৯৪৪° পূর্ব / 24.68667; 90.62944 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগময়মনসিংহ বিভাগ
জেলাময়মনসিংহ জেলা
আসন১৫৩, ময়মনসিংহ-৮
সরকার
আয়তন
 • মোট২৮৬.১৯ বর্গকিমি (১১০.৫০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[১]
 • মোট৩,৯১,০৭৮
 • জনঘনত্ব১,৪০০/বর্গকিমি (৩,৫০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৫১.৯৫%[২]
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড২২৮০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৬১ ৩১
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

ঈশ্বরগঞ্জ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। ১৯৮৩ সালের ১৫ নভেম্বর এটিকে উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১১ টি ইউনিয়ন নিয়ে ৭ নভেম্বর ১৯৮২ সালে ঈশ্বরগঞ্জ থানাকে আপগ্রেড করা হয়। পরবর্তীতে ১৫ নভেম্বর ১৯৮৩ সালে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কার্যক্রম চালু হয়।

নামকরণ[সম্পাদনা]

শুরুতেই ঈশ্বরগঞ্জের নাম ঈশ্বরগঞ্জ ছিলো না। ইংরেজ শাসন আমলে এর নামকরণ করা হয়েছিল পিতলগঞ্জ। পিতলগঞ্জ থেকে "ঈশ্বরগঞ্জ" নামকরণ হওয়ার পিছনেও রয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। ঈশ্বরপাটনী নামে এক খেয়ামাঝি ছিলো। তার কাজ ছিলো ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী অথচগভীর খরস্রোতা ‘কাঁচা মাটিয়া' নদীর বুক বেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ সদরের পাশেই দওপাড়া গ্রাম এলাকায় পিতলগঞ্জ বাজারের ঘাটে খেয়াপারাপার করা। পিতলগঞ্জ বাজারটি ছিলো ইংরেজদের স্থাপিত। ঈশ্বরগঞ্জ ছিলো গৌরীপুরের জমিদারদের পরগণা। খেয়ামাঝি ঈশ্বরপাটনীকে খেয়াপারাপারের জন্যে জমিদারের নায়েবকে নজরানা দিয়ে খেয়াপারাপার করতে হতো।ঈশ্বরপাটনী আস্তে আস্তে পরিচিত ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পিতলগঞ্জ হাটে খেয়াপারাপারের জন্যেই তার এই পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা। পণ্য বেচাকেনার জন্যে মানুষকে স্বাভাবিক ভাবেই খেয়াপারাপার করতে হতো। এক পর্যায়ে ইংরেজগণ নীলকুঠি স্থাপন করে এবং মানুষকে নীল চাষে বাধ্য করে। ইংরেজরা নির্বিচারে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বিশেষ করে পিতলগঞ্জের ব্যবসায়ীদের অতিষ্ঠ করে তোলে। অত্যাচারে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত অবস্থা। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হলেও মানুষ প্রতিবাদ করার মতো সাহসী ভূমিকা পালন করতে পারেনি। ঈশ্বরপাটনী মানুষের এই দুর্ভোগ ও দুর্দশার নীরব সাক্ষী। নীলকরদের অত্যাচার মেনে নিতে পারেনি ঈশ্বরপাটনী। সেক্ষুব্ধ ও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। প্রতিবাদী হয়ে ওঠে সে, হয় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। এক পর্যায়ে কোনো একদিন নীলকুঠির সাহেবগণ হাটে সমাগত মানুষদের নীলচাষ করতেবলে, ধমক দেয়, এমনকি চাবুক পর্যন্ত মারে। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে হাটে আসা মানুষগণ। চাবুকের আঘাতেজর্জরিত মানুষের হাহাকারে প্রকম্পিত হয় পিতলগঞ্জের আকাশ-বাতাস। ঈশ্বরপাটনী এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শাল কাঠের বৈঠা হাতে নিয়ে দৌড়ে যায় এবং চিৎকার করে বলতে থাকে ‘সাহেব চাবুক মারাবন্ধ কর'। ইংরেজ সাহেবগণ এতেক্ষুব্ধ হয় এবং ঈশ্বরপাটনীরগায়ে চাবুক চালাতে থাকে। ঈশ্বরপাটনীর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় এবং হাতের বৈঠা দিয়ে ইংরেজ সাহেবের মাথায় আঘাত করে। এতে করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নীলকুঠির সাহেব।রক্ত ঝরতে থাকে তার। রক্তক্ষরণে এক পর্যায়ে নীলকুঠির সাহেব মারা যায়। সৃষ্টি হয় ভীতসন্ত্রস্থ অবস্থা। পিতলগঞ্জের অবস্থা হয়ে পড়ে থমথমে। পিতলগঞ্জে যেনো ঝড় হইতে থাকে এই ঘটনায়।সমগ্র বাংলায়ও এর প্রভাব পড়ে। ঈশ্বরপাটনীও প্রাণে বাঁচতে পারেনি। ভেঙে যায় পিতলগঞ্জের হাট। তৎকালীন গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর চৌধুরী বর্তমান ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদরের জন্যে দত্তপাড়া চরনিখলা মৌজায় বাজার স্থাপনকরার জন্যে জমি দান করেন। তিনি ঈশ্বরপাটনীর নামের ঈশ্বরের সঙ্গে গঞ্জ যোগ করে বাজারের নাম দেন ঈশ্বরগঞ্জ।সেই থেকেই ঈশ্বরগঞ্জ নামের সূত্রপাত। যদিও অনেকে এই ইতিহাসের বিরোধিতা করেন।

মুক্তিযুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানা পাকিস্তানি সেনামুক্ত হয়েছিল। ১৬ অক্টোবর রাতে কাজী আলম, আলতাব ও হাবিবুল্লাহ খান এই তিন কোম্পানির যোদ্ধারা ময়মনসিংহ, ভৈরব রেল-লাইনে মাইজহাটি ব্রিজটি ডিনামাইট ছুড়ে বিধস্তসহ টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করার পর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের রামগোপালপুরের কটিয়াপুরি ব্রিজটি বিধস্ত করতেই ভোর হয়ে যায়। প্রত্যুষে যোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিলেও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক হাসিম উদ্দিন আহাম্মদের পরামর্শে থানা আক্রমণণের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই তিন কোম্পানির মুক্তিসেনারা সড়ক পথে অগ্রসর হয়ে ঈশ্বরগঞ্জের দত্তপাড়া শ্মশান ঘাটে এসে তিন ভাবে বিভক্ত হয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্লাটুন কমান্ডার কাজী হাসানুজ্জামান হীরুর গ্রুপ সোনালি ব্যাংক সম্মুখে, হাবিবুর রহমান হলুদের গ্রুপ চরহোসেনপুর নলুয়া পাড়া মসজিদের পাশ থেকে, আব্দুস ছাওার ও মতিউর রহমানের গ্রুপ থানার পেছন থেকে থানা আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে শুরু হয় তুমুলযুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পনায় ত্রুটির কারণে ভেঙে পড়ে যুদ্ধের চেইন অব কমান্ড। ফলে তাদের যুদ্ধ অভিযান ব্যর্থ হয়। এ সময় সম্মুখযুদ্ধে পাকবাহিনী ও রাজাকার আলসামসদের হাতে নিহত হন ৭ যোদ্ধা। এ যুদ্ধে মারা যান শামসুল হক, আব্দুল মান্নান, আব্দুল খালেক, দুলাল, মতিউর রহমান, আবু তাহের ও হাতেম আলী। পাল্টা আক্রমণ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধারা ৮ ডিসেম্বর পুনরায় সুসংগঠিত হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। এই আক্রমণের মুখে পাকবাহিনী ভীত হয়ে গভীর রাতে ঈশ্বরগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যায়। যুদ্ধ ছাড়াই মুক্ত হয় ৯ ডিসেম্বর ঈশ্বরগঞ্জ।

প্রশাসনিক এলাকা[সম্পাদনা]

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মোট আয়তন ২৮৬.১৯ বর্গ কিলোমিটার। এ উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম ঈশ্বরগঞ্জ থানার আওতাধীন।[৩]

পৌরসভা:
ইউনিয়নসমূহ:

এ উপজেলায় মোট ২৯৩টি মৌজা ও ৩০৪টি গ্রাম রয়েছে।

ভূপ্রকৃতি[সম্পাদনা]

ভৌগোলিক অবস্থান[সম্পাদনা]

২৪°৩৩´ থেকে ২৪°৪৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৮´ থেকে ৯০°৪৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। এই উপজেলার উত্তরে গৌরীপুর উপজেলা, দক্ষিণে নান্দাইল উপজেলা, পূর্বে নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা, পশ্চিমে ময়মনসিংহ সদর উপজেলাত্রিশাল উপজেলা

জলবায়ু[সম্পাদনা]

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা[৪]
জলবায়ু লেখচিত্র
জাফেমামেজুজুসেডি
 
 
১২
 
২২
১৮
 
 
১৮
 
২৫
২১
 
 
৫৫
 
৩০
২৫
 
 
১৩০
 
৩২
২৮
 
 
৩০৭
 
৩২
২৮
 
 
৫০৬
 
৩২
২৮
 
 
৪৩২
 
৩২
২৮
 
 
৩৯৯
 
৩২
২৮
 
 
৩১৩
 
৩২
২৮
 
 
১৮২
 
৩০
২৭
 
 
২১
 
২৭
২৩
 
 
 
২৪
২০
সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সর্বোচ্চ এবং সর্বোনিম্ন গড়
মিলিমিটারে বৃষ্টিপাতের মোট পরিমাণ
উৎস: [৫][৬]

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জলবায়ু গ্রীষ্মমণ্ডলীয়। বছরের বেশিরভাগ মাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়। সংক্ষিপ্ত শুকনো মওসুম সামগ্রিক আবহাওয়ার উপর খুব একটা প্রভাব ফেলে না। কপেন এবং গিজারের মতানুসারে, এই জলবায়ুটিকে Aw হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। ঈশ্বরগঞ্জের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ২৫.৩° সেলসিয়াস (৭৭.৫° ফারেনহাইট)। গড় বৃষ্টিপাত ২৩৭৭ মিমি (৯৩.৬ ইঞ্চি)।[৪]
এই উপজেলায় শুষ্কতম মাস হচ্ছে ডিসেম্বর। ডিসেম্বর মাসে ১৯ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জুলাই মাসে গড়ে ৪৩২ মিমি গড় বৃষ্টিপাত হয়।[৪]

গড়ে ২৮.৫° সেলসিয়াস (৮৩.৩ ফা) তাপমাত্রা নিয়ে বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস হচ্ছে আগস্ট। জানুয়ারিতে বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে যা গড়ে ১৮.৪° সেলসিয়াস (৬৫.১ ফা) হয়।[৪]

সবচেয়ে শুষ্কতম এবং আদ্রতাপূর্ণ মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০৬ মিমি হয়ে থাকে। বছরের গড় তাপমাত্রা ১০.১° সেলসিয়াস (৫০.২ ফা) পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়।[৪]

জনসংখ্যার উপাত্ত[সম্পাদনা]

  • মোট জনসংখ্যা ৩,৯১,০৭৮ জন (২০১১)
    • পুরুষ ১,৯৪,৫৫০ জন
    • মহিলা ১,৯৬,৫২৮ জন
  • জনসংখ্যার ঘনত্ব: ১,৩৪২ জন/প্রতি বর্গকিলোমিটারে
  • মোট পরিবারের সংখ্যা: ৮১,০৭০ টি
  • জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার: ১.০৬%

নির্বাচনিক পরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

  • নির্বাচনী এলাকা: ১৫৩, ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ)
  • মোট ভোটার সংখ্যা: ৪,০০,৮১৮ জন (২০১১)
    • পুরুষ ভোটার সংখ্যা - ২,০০,২৭২ জন
    • মহিলা ভোটার সংখ্যা - ২,০০,৫৪২ জন

শিক্ষা[সম্পাদনা]

শিক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী উপজেলায় শিক্ষার হার ৪৯.৯%। যার মধ্যে পুরুষের শিক্ষার হার ৫৩.৪% এবং মহিলাদের ৪৬.১%।

১৯১৬ সালে থানা রোডে প্রতিষ্ঠিত ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্বেশ্বরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ময়মনসিংহ জেলা এবং ময়মনসিংহ (পূর্বে ঢাকা) শিক্ষা বোর্ডের অন্যতম সেরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়।[৭] উপজেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্বেশ্বরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, আঠারবাড়ী ডিগ্রি কলেজ, জাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ঈশ্বরগঞ্জ কলেজ, মল্লিকপুর লক্ষীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়চরনিখলা উচ্চ বিদ্যালয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের অন্য সব শহরের মতই। সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রধানত পাঁচটি ধাপ রয়েছে: প্রাথমিক (১ থেকে ৫), নিম্ন মাধ্যমিক (৬ থেকে ৮), মাধ্যমিক (৯ থেকে ১০), উচ্চ মাধ্যমিক (১১ থেকে ১২) এবং উচ্চ শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা সাধারণত ৫ বছর মেয়াদী হয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় সমাপনী পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হয়, ৩ বছর মেয়াদী নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা সাধারণত নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), ২ বছর মেয়াদী মাধ্যমিক শিক্ষা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি), ২ বছর মেয়াদী উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হয়।

মূলত বাংলা ভাষায় পাঠদান করা হয় তবে ইংরেজিতে পাঠদানের সুবিধা রয়েছে। অনেক মুসলমান পরিবার তাদের সন্তানদের বিশেষায়িত ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন মাদ্রাসাতে প্রেরণ করেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে অমুসলিম শিক্ষার্থীরাও মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। মাদ্রাসাগুলোতেও প্রায় একই ধরনের ধাপ উত্তীর্ণ হতে হয়। উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোন শিক্ষার্থী সাধারণত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। উচ্চ মাধ্যমিকের পর উচ্চ শিক্ষার জন্য ঈশ্বরগঞ্জ কলেজ রয়েছে যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করে।

প্রাতিষ্ঠানিক পরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

  • মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭৩টি
  • কমিউনিটি প্রাথঃ বিদ্যালয় ৭টি
  • কিন্ডার গার্ডেন ১২টি
  • স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা ৩২টি
    • উচ্চ মাদ্রাসা সংলগ্ন ২০টি
  • কমিউনিটি ৫টি
  • এনজিও ২টি
  • নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪টি
  • ৯ম শ্রেণীর অণুমতি প্রাপ্ত বিদ্যালয় ২টি
  • মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৬টি
    • সহশিক্ষা ২৩টি
    • বালিকা ৩টি
  • স্কুল এন্ড কলেজ ৩টি
  • কলেজ ৭টি
    • সরকারী ২টি
    • বেসরকারি ৩ টি (সর্বশেষ: ঈশ্বরগঞ্জ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ)
    • টেকনিক্যাল ১টি (আলীনগর)
    • কারিগরি ১ টি
  • কামিল মাদ্রাসা ১টি
    • ফাযিল মাদ্রাসা ১টি
    • আলিম মাদ্রাসা ৩টি
    • দাখিল মাদ্রাসা ২৩টি

উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী[সম্পাদনা]

শিল্প-সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

শিল্প[সম্পাদনা]

এই উপজেলায় ৫৩৪ ধরনের লোকশিল্প রয়েছে। তন্মধ্যে কুটিরশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, ওয়েল্ডিং কারখানা, বাঁশ ও কাঠের কাজ উল্লেখযোগ্য। জারিগান এ অঞ্চলের অতি কাছের যা দেশখ্যাত। এছাড়া বাউল ও যাত্রাগানও প্রচলিত।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]

ঈশ্বরগঞ্জ থিয়েটার

  • পাঠাগার - ১০+
  • ক্লাব - ২১+
  • সিনেমা হল - ৩
  • খেলার মাঠ - ১৫+

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাই চার্ট[২]

  কৃষি (৭০.৫২%)
  অকৃষি শ্রমিক (৩.৩৮%)
  ব্যবসা (১০.২২%)
  চাকুরি (৩.৮৪%)
  শিল্প (০.৪১%)
  নির্মাণ (০.৮৭%)
  ধর্মীয় সেবা (০.৩২%)
  পরিবহন ও যোগাযোগ (২.৯০%)
  রেন্ট আন্ড রেমিটেন্স (০.১৮%)
  অন্যান্য (৭.৩৬%)

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মূলত মৎস্য উৎপাদন ও কৃষি নির্ভর। উপজেলার প্রধান রপ্তানিদ্রব্য হচ্ছে ধান, মাছ ও পাট। এ উপজেলা আলু, বেগুন, শশা, মরিচ, কপি জাতীয় ফসলের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফসলাদি রপ্তানি হয়।[৮]

বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, উপজেলার ৭০.৫২ শতাংশ জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে অকৃষি শ্রমিক ৩.৩৮%, ব্যবসা ১০.২২%, চাকরি ৩.৮৪%, নির্মাণ ০.৮৭%, ধর্মীয় সেবা ০.৩২%, শিল্প ০.৪১%, রেন্ট আন্ড রেমিটেন্স ০.১৮%, পরিবহন ও যোগাযোগ ২.৯০% অন্যান্য ৭.৩৬%। গ্রামীণ ও পৌর মিলিয়ে এ অঞ্চলে ৪৭টি হাটবাজার রয়েছে।

কৃষিভূমির মালিকানা[সম্পাদনা]

ভূমিমালিক ৬৪.৪২%, ভূমিহীন ৩৫.৫৮%। শহরে ৫৩.৮৭% এবং গ্রামে ৬৫.৪২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

নদীনালা ও পানিসম্পদ[সম্পাদনা]

নদীসমূহ[সম্পাদনা]

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় অনেকগুলো নদী আছে। উল্লেখযোগ্য নদী হচ্ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী, কাঁচামাটিয়া নদী, মঘা নদী এবং সোয়াইন নদী[৯][১০] বর্তমানে সীমিত আকারে ব্রহ্মপূত্র নদীর মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে মালামাল পার করা হয় এবং ব্রহ্মপূত্র নদীর পানি দ্বারা কৃষিকাজ করা হয়। অধিকন্তু এই নদীতে অনেক মাছ পাওয়া যায়।

হাওর ও খালবিল[সম্পাদনা]

  • দীঘা বিল
  • সিন্নি বিল
  • কাৎলা
  • কুমুরিয়া
  • ধুবদোল
  • হিংগা
  • বোউয়ালী
  • খৈলাহুরী
  • কাইমা বিল

আইন ও বিচারকার্য[সম্পাদনা]

থানা[সম্পাদনা]

২জন ইন্সপেক্টর, ৬জন এসআই, ৫জন এএসআই, ১৮জন পুরুষ কনস্টেবল, ৫জন নারী কনস্টেবল, ১জন কনস্টেবল সিডিএমস (কম্পিউটার) অপারেটর, ২জন বেতার কনস্টেবল (অপারেটর), ৪জন ড্রাইভার কনস্টেবল ও ১জন ঝাড়ুদার নিয়ে থানা কার্যালয় পরিচালিত হয়ে আসছে।

উল্লেখিত সময়ে থানায় রুজু হওয়া ০৭টি হত্যা মামলার মধ্যে সব কয়টি মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটন, মাদক উদ্ধার সংক্রান্তে ১২৩টি মামলায় ১৪৩ জন মাদক বিক্রতাকে গ্রেফতার, জঙ্গি দমন, ইভটিজিংবাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং জুয়া প্রতিরোধের মতো ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশের অসংখ্য সফলতা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের গুজব প্রতিরোধে পুলিশ সার্বক্ষণিক ভূমকিা পালন করে যাচ্ছে।

আদালত[সম্পাদনা]

এখানে রয়েছে ঈশ্বরগঞ্জ চৌকি আদালত। বৃহত্তর ঈশ্বরগঞ্জ (ঈশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুর, নান্দাইল ও নেত্রকোণা জেলার অংশবিশেষ) উপজেলার ফৌজদারি মামলা কার্যক্রম পরিচালনা করে। ঈশ্বরগঞ্জ পৌর সদর দত্তপাড়া গ্রামে ১৮৮০ সালে ২ একর ৪২ শতাংশ জমির ওপর তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার এই আদালত স্থাপিত হশ। আদালতে তৎকালীন বৃহত্তর ঈশ্বরগঞ্জ (গৌরীপুর ও নান্দাইল), ফুলপুর ও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের কিছু অংশের দেওয়ানি মোকদ্দমার জন্য চালু হয়। সিনিয়র সহকারী জজ আদালতকে ২০১২ সালে তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী যুগ্ম জেলা জজ আদালতে উন্নীত করার ঘোষণা দেন।

ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ঐতিহ্য[সম্পাদনা]

  • আঠারবাড়ী জমিদার বাড়ি, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে ভ্রমণ করেছিলেন। আঠারোবাড়ীর তৎকালীন জমিদার প্রমোদ চন্দ্র রায় চৌধুরীর আমন্ত্রণে ১৯২৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে তিনি ময়মনসিংহ থেকে ট্রেনে করে জমিদার বাড়ি পৌঁছান।
  • ভোলশোমা মসজিদ (১৬০০)
  • নালুয়া মসজিদ, (১৬২৫)
  • রাণী মা এর দিঘি উল্লেখযোগ্য
  • জিগাতলা মুন্সী বাড়ি জামে গুল মসজিদ।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব[সম্পাদনা]

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা[সম্পাদনা]

এ উপজেলায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের মঞ্জুরীকৃত পদ সংখ্যা ৩২ টি। কিন্তু ৩৪ জন বর্তমানে কর্মরত আছেন। হাসপাতালের আউটডোর, ইনডোর এবং বহির্বিভাগ চালু রয়েছে। ইমারজেন্সী বিভাগ সার্বক্ষণিক চালু আছে।

উপজেলার ৯৮ ভাগ শিশুকে টিকাদান এবং যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ রোগীকে সেবা বিনামুল্যে ঔষদধ প্রদানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।

প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারী বৃদ্ধি করা, হাসপাতালের সেবার মান বুদ্ধি করা ও উপজেলা সকল মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও এখানে ৬টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ৯টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৫২ টি কমিউনিটি চিকিৎসাকেন্দ্র ও ৩টি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে।[২]

ব্যাংক-বীমা ও সমবায়[সম্পাদনা]

ব্যাংক-বীমা[সম্পাদনা]

উপজেলাটিতে ব্র্যাক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক সহ সরকারি-বেসরকারি মিলে ১০টিরও বেশি ব্যাংকশাখা রয়েছে। এছাড়াও কারিতাস , পিপিপি ইত্যাদির শাখা রয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ[সম্পাদনা]

  • পুকুর ১৭১০টি
  • মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার
    • সরকারি - ১টি
    • বেসরকারি - ৬টি
  • বাৎসরিক মৎস্যচাহিদা - ৬১৮০ মে.টন
  • বাৎসরিক মৎস্য উৎপাদন - ৫৫১৩ মে.টন
  • উন্নত মুরগির খামার - ১১টি
  • গবাদি পশুর খামার - ৯০টি
  • কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র- ১টি

ধর্ম[সম্পাদনা]

এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। সুন্নি, ওয়াহাবি ও আহমাদিয়া মুসলিম বিদ্যমান। হিন্দুধর্ম এখানে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম। এছাড়াও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়েরও বসবাস রয়েছে এখান। সাম্প্রতিক সময়ে অনিশ্বরবাদীতাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

  • মসজিদ - ১,০৩৬ টি
  • মন্দির - ১২টি
  • গীর্জা - ২টি

ডাক ও যোগাযোগব্যবস্থা[সম্পাদনা]

পোস্ট অফিস: ৩৩টি, পাকা রাস্তা: ১৪৭ কি.মি., অর্ধপাকা রাস্তা: ৮ কি.মি., কাঁচা রাস্তা: ৩৩৪ কি.মি., ব্রিজ/কালভার্ট: ৪৬৬টি, রেল স্টপেজ : ৩টি, ঈশ্বরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন, সোহাগি রেলওয়ে স্টেশন, আঠারবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন,ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে ঈশ্বরগঞ্জ"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২৮ 
  3. "ইউনিয়নসমূহ - ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা"iswarganj.mymensingh.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ৯ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ 
  4. "Ishwarganj climate: Average Temperature, weather by month, Ishwarganj weather averages - Climate-Data.org"en.climate-data.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২৮ 
  5. "NASA Earth Observations: Rainfall (1 month - TRMM)"। NASA/Tropical Rainfall Monitoring Mission। ১৯ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  6. "NASA Earth Observations Data Set Index"। NASA। ১০ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. "বিশ্বেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্‌যাপন"সমকাল (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১১ 
  8. "ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)http (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  9. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৯৯, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯
  10. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬০৬। আইএসবিএন 984-70120-0436-4