মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন
মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন | |
---|---|
মৃত্যু | ১৯৮১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন (জন্ম: অজানা, মৃত্যু: ১৯৮১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১][২]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]
মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেনের জন্ম ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামে। তার বাবার নাম সিকান্দার আলী এবং মায়ের নাম মকিমুন নেছা। তার স্ত্রীর নাম নূরজাহান দেলাওয়ার। তাদের তিন মেয়ে।
কর্মজীবন[সম্পাদনা]
মো. দেলাওয়ার হোসেন চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অর্ডন্যান্স কোরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানে (তখন পশ্চিম পাকিস্তান)। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আগস্ট মাসে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। প্রথমে কিছুদিন সেক্টর হেডকোয়ার্টারে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে মোগলহাট সাবসেক্টরের অধিনায়কের দায়িত্ব পান। এই সাবসেক্টর আওতাধীন এলাকা ছিল লালমনিরহাট জেলার দক্ষিণ অংশ। লালমনিরহাট সদর, রায়গঞ্জ, কাউনিয়া ও আদিতমারিসহ বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান। মো. দেলাওয়ার হোসেন অনেক যুদ্ধ ও গেরিলা অপারেশনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাগেশ্বরীতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ, কম্বলপুর সেতু অপারেশন, কুলাহাট পাকিস্তানি সেনা অবস্থানে হামলা, পাটেশ্বরীতে পাকিস্তানি গোলন্দাজ অবস্থানে আকস্মিক আক্রমণ প্রভৃতি।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধে একদল মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা অপারেশন করে মোগলহাট রেললাইনে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন মো. দেলাওয়ার হোসেন। ১৫ সেপ্টেম্বর লালমনিরহাট থেকে মোগলহাটে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের জন্য ট্রেনে করে রসদ ও সেনা আসছিলো। ভোর পাঁচটায় ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে মোগলহাট রেললাইনের কাছে অবস্থান নেন দেলাওয়ার হোসেন। রেললাইনের ওপর অ্যান্টিট্যাংক মাইন বসানো হয়। গ্যালাটিন ও পিইকে ঠিকমতো বসিয়ে দূরে সুইচ লাগিয়ে শত্রুট্রেন আসার অপেক্ষায় অবস্থান নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা। ঠিক সময়েই ট্রেনটি সামনের কয়েকটি বগিতে বালু এবং অন্যান্য জিনিস ভর্তি করে আসে। পেছনের বগিতে ছিল পাকিস্তানি সেনারা। অ্যান্টিট্যাংক মাইনের আঘাতে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ সামনের কয়েকটি বগি ধ্বংস হয়। পাকিস্তানি সেনারা সঙ্গে সঙ্গে তাদের অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আমাদের গোলাগুলির জবাব দিতে শুরু করে। তারা ট্রেন থেকে নেমে তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে মুক্তিযোদ্ধাদের পেছনে সরে যেতে নির্দেশ দেন দেলাওয়ার হোসেন। তার কাছে একটা হালকা মেশিনগান ছিল। সেটা দিয়ে তিনি শত্রুসেনাদের ওপর আক্রমণ চালান। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা পেছনে সরে যেতে সক্ষম হয়। এই অপারেশনে দুজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও চারজন আহত হন। দেলাওয়ার হোসেন নিজেও বাঁ হাতে সামান্য আঘাত পান। শত্রুদের পাঁচজন নিহত ও অনেকে আহত হয়।
পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ০২-০৭-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
পাদটীকা[সম্পাদনা]
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।