আব্দুল গফফার মামরখানী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আব্দুল গফফার মামরখানী
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৯০৮
মামরখানী, জকিগঞ্জ, সিলেট, পূর্ব বাংলা ও আসাম
মৃত্যু১৮ জুন ২০০২(2002-06-18) (বয়স ৯৩–৯৪)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
রাজনৈতিক দলজমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
প্রাক্তন শিক্ষার্থীমুন্সীবাজার মাদ্রাসা
হাইলাকান্দী মাদ্রাসা
গাছবাড়ি জামিউল উলুম কামিল মাদ্রাসা
দারুল উলুম দেওবন্দ
ব্যক্তিগত তথ্য
পিতামাতা
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
ঊর্ধ্বতন পদ
এর শিষ্যহুসাইন আহমদ মাদানী

আব্দুল গফফার মামরখানী (আরবি: عبد الغفار المامرخانوي; ১৯০৮ – ১৮ জুন ২০০২) একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত ও রাজনীতিবিদ। তিনি সিলেট খেলাফত মজলিসের সভাপতি ছিলেন। আধ্যাত্মিক জীবনে তিনি হুসাইন আহমদ মাদানির খলিফা।[১] তাছাড়া মামরখানী সাহেব জামেয়া ইসলামিয়া ফয়জে আম মুন্সীবাজার মাদ্রাসার মশহুর সাবেক মুহতামিম।[২]

প্রারম্ভিক জিন্দেগী ও খান্দান[সম্পাদনা]

আব্দুল গফফার ১৯০৮ সালে সিলেটের জকিগঞ্জ থানার মুন্সীবাজারের নিকট মামরখানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । তাঁর আব্বা ক্বারী আব্দুল মজিদ ও আম্মা রহিমা খাঁতুন। ক্বারী আব্দুস সামাদ হলেন তাঁর বড় ভাই।[৩]

শায়খে মামরখানীর ৪জন স্ত্রী ছিল যাদের নাম হাবিবা খাঁনম, রহমতুন্নেসা, আয়েশা খাঁনম এবং রোকেয়া খাঁনম। উনি ১৮ সন্তানের আব্বা, উনার সন্তানদের নাম হলোঃ মাওলানা আব্দুস সাত্তার, ক্বারী আব্দুল জলীল, মাওলানা আব্দুল জব্বার, মাওলানা আব্দুর রহীম, মাওলানা আব্দুল করীম,[৪] মুহম্মদ আব্দুল হালীম, মুফতি আব্দুর রাযযাক,[৫] মাওলানা আব্দুল কাহ্হার, মাওলানা আব্দুল হান্নান কাসেমী,[৬] মাওলানা ইয়াকুব হোসাইন জাকির,[৭] খালেদা খাঁনম, আসিয়া খাঁনম, খাদীজা খাঁনম, রাজিয়া খাঁনম, ফাতেমা খাঁনম,[৮] রাকিয়া খাঁনম, সালেহা খাঁনম এবং তাহেরা খাঁনম।[৩][৯]

তালিম[সম্পাদনা]

আব্দুল গফফার ১৯১৬ সালে​ মামরখানী মক্তবে (বাড়ীর পাশে ক্বারী আব্দুল মজিদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত) তালিম শুরু করেন। তিন বছর তিনি মুন্সীবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩রা শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে দুই বছর পর বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। ১৯২০ সালে উনার আব্বার ইন্তেকালের পর তাঁর আম্মা তাঁকে মুন্সীবাজার মাদ্রাসায় ভর্তি করান যেখানে চার বছরের মধ্যে বাংলা, আরবী, ফার্সী ও উর্দু ভাষা আয়ত্ত করেন।[১০]

উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য তিনি এক বছর হাইলাকান্দী জেলার (তখন কাছাড় জেলার অন্তর্গত) হাইলাকান্দী মাদ্রাসায় কাটিয়ে গাছবাড়ি জামিউল উলুম কামিল মাদ্রাসায় দাখিল হন যেখানে আট বছর ধরে আরবী ভাষা-সাহিত্য, মন্তেক, আকিদা, তফসীর ফিকাহ, হাদীছ ইত্যাদির তালীম নেন। তিনি ছিলেন গাছবাড়ী মাদ্রাসার "শাগরেদ আঞ্জুমানের" সাধারণ সম্পাদক। ১৯৩৫ তিনি দারুল উলুম দেওবন্দ গমন করেন যেখানে তালিম নিয়ে দাওরায়ে হাদিস খতম করেন। দেওবন্দে তার ওস্তাদদের মধ্যে রয়েছেন: হুসাইন আহমদ মাদানি, সৈয়দ আসগর হোসেন, এজাজ আলীশফি উসমানি। ১৯৩৮ সালে তিনি মাদানির কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেন।[৩]

কর্মজিন্দেগী[সম্পাদনা]

তিনি কর্মজিন্দেগীতে ঢাকাউত্তর রানাপিং আরবিয়া হোসেনিয়া মাদ্রাসায় ২ বছর এরপর করিমগঞ্জের ভাঙ্গা ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ২ বছর শিক্ষকতা করেন। তিনি হাইলাকান্দী টাইটেল মাদ্রাসার তালিম পরিচালকের জিম্মাদারী পালন করেন। দেশভাগের পর তিনি জকিগঞ্জে ফিরে আসেন যেখানে গঙ্গাজল হাসানিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় ৯ বছর তালিম পরিচালক ও ওস্তাদ হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ইতিমধ্যে জকিগঞ্জের মুন্সীবাজার মাদ্রাসায় বহুকাল ধরে একজন যোগ্য মুহতামিমের অভাবে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে সেই এলাকার জনগণের অনুরোধে ১৯৫৭ সালে শায়খে মামরখানী জামেয়া ইসলামিয়া ফয়জে আম মুন্সীবাজার মাদ্রাসার মুহতামিমের জিম্মাদারী কবুল করে নেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত এই পদে থাকেন।[৩][১১]

ওস্তাদগিরি ছাড়া শায়খে মামরখানী সিলেট বিভাগের সকল উপজেলায় সফর করেছেন। তাছাড়া ১৩ বছরকাল প্রতি রমজানে খোদ-মুর্শিদ হুসাইন আহমদ মাদানির সাথে নয়াসড়ক মসজিদে কেটেছেন।[৩]

শায়খে মামরখানীর নামদার শাগরেদ ও মুরীদানের মধে রয়েছেঃ

রাজনৈতিক কাজ[সম্পাদনা]

দেওবন্দ থাকাকালে আব্দুল গফফার মামরখানী​ আসাম প্রাদেশিক ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। হুসাইন আহমদ মাদানির নেতৃত্ত্বে ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং হিন্দুস্তানের বহুৎ এলাকা সফর করেছিলেন। মামরখানী তখন জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের জনৈক নামদার নেতা হিসাবে মশহুর হন। জমহুরিয়তে পাকিস্তান কায়েমের বাদেই শায়খে মামরখানী নবগঠিত জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের সিলেট শাখার সংগঠক হন এবং আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে শায়খে মামরখানী হাফেজ্জী হুজুরের বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন দলে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে আজিজুল হকের নেতৃত্ত্বে খেলাফত মজলিস সংগঠনের কেন্দ্রীয় অবিভাবক মজলিসের সদস্য ও মজলিসের সিলেট শাখার সভাপতি হন এবং মৃত্যু পর্যন্ত এই পদদ্বয়ে থাকেন।[৩]

ইন্তেকাল[সম্পাদনা]

শায়খে মামরখানী ১৮ জুন ২০০২ সালে মঙ্গলবার ১ঃ১৫ দুপুরে ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছিলেন।[১৪] পরের দিন উনার জানাযা পড়ানো হয়েছিল মুন্সীবাজার মাদ্রাসার ময়দানে ও সাহেবজাদা মওলানা আব্দুস সাত্তারের ইমামতিতে। তারপর মুন্সীবাজার মসজিদের সামনে তাঁকে দাফন করা হয়েছিল।[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. রহমত আলী হেলালী (৯ এপ্রিল ২০২২)। "জকিগঞ্জের মুনশীবাজার খানক্বায়ে মাদানিয়া গাফফারিয়া'র নতুন আমীর মাওলানা শায়েখ আব্দুল জলিল"। জকিগঞ্জ সংবাদ। 
  2. "মুফতি আব্দুল মুনতাকিম মুনশিবাজার মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল,বিভিন্ন মহলের অভিনন্দন"সিলেট রিপোর্ট। ৩০ জুলাই ২০১৭। 
  3. মুখলিসুর রহমান (১১ নভেম্বর ২০১৯)। খলীফায়ে মাদানী মাওলানা আব্দুল গফফার শাইখে মামরখানী রহ.আল্লামা আব্দুল গফফার (রহঃ) ফাউন্ডেশন 
  4. "মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওত লন্ডন এর নতুন কার্যকরী কমিটি গঠিত"জনমত। ২২ ডিসেম্বর ২০২১। 
  5. "জামেয়াতুল খাইর এর ফান্ডরাইজিং সফল করার আহ্বান"দা সানরাইজ টুডে। ১ আগস্ট ২০১৩। 
  6. "ফ্রান্সে নবী (স.) কে অবমাননার প্রতিবাদে সিলেটে গাছবাড়ী হুজুরের ডাকে মহাসমাবেশ কাল : সফলে সিলেটের শীর্ষ ১০১ আলেমের বিবৃতি"দৈনিক ইনকিলাব। ৩ নভেম্বর ২০২০। 
  7. "ওমান ফেরা হলোনা জকিগঞ্জের নাজিমের"সিলেট প্রতিদিন ২৪। ২০ অক্টোবর ২০২২। 
  8. "লন্ডনে আজান দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন বাংলাদেশি শফিক"প্রতিদিনের সংবাদ। ৮ মে ২০২১। 
  9. "গুণীজনকে সংবর্ধনা দিল জকিগঞ্জ গুণীজন সংবর্ধনা পরিষদ"দৈনিক সিলেট। ২ মার্চ ২০২০। ২৪ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০২২ 
  10. ইয়াকুব হোসাইন জাকির (২ ডিসেম্বর ২০১৫)। "আধ্যাত্মিক রাহবার আল্লামা আবদুল গাফফার শায়খে মামরখানী রাহ."। কমাশিসা। 
  11. "জকিগঞ্জের মুন্সিবাজার মাদরাসায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত"সীমান্তের আহ্বান। ২১ জুন ২০২০। ২৪ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০২২ 
  12. শামসুল আদনান (১৪ নভেম্বর ২০১৮)। মাওলানা জমশেদ আলী চেয়ারম্যান হুযুর রহ. 
  13. পরিচালক সম্পর্কেজামেয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদ সিলেট। ২৪ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০২২ 
  14. শায়খে মামরখানীর ইন্তেকালদৈনিক জালালাবাদ। ১৮ অক্টোবর ২০২১। ২৪ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০২২