গাছবাড়ি জামিউল উলুম কামিল মাদ্রাসা
![]() | এক বা একাধিক অবদানকারী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে এই নিবন্ধের বিষয়বস্তু উল্লেখযোগ্যতার সাধারণ নির্দেশাবলী অনুসরণ করে নাই। (আগস্ট ২০১৭) |
গাছবাড়ি জামিউল উলুম কামিল মাদরাসা | |
---|---|
ঠিকানা | |
গাছবাড়ি বাজার-৩১৮৩ সিলেট,বাংলাদেশ | |
তথ্য | |
নীতিবাক্য | শিক্ষাই শক্তি, জ্ঞানই আলো |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯০১ | খ্রিস্টাব্দ
প্রতিষ্ঠাতা | ক্বারী আতহার আলী |
অধ্যক্ষ | মাওলানা তাহির উদ্দীন |
শিক্ষার্থী সংখ্যা | ৭০০ (ছাত্র-ছাত্রী) |
ভাষার মাধ্যম | বাংলা এবং ইসলামিক |
ভাষা | বাংলা এবং আরবি |
আয়তন | ৮ একর |
ক্যাম্পাসের ধরন | শহুরে |
গাছবাড়ি জামিউল উলুম কামিল মাদরাসা (ইংরেজি: Gachbari Jamiul Ulum Kamil Madrasah) সিলেট জেলার কানাইঘাট থানার গাছবাড়ি বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই মাদ্রাসায় বর্তমানে ৭০০ এর ও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।
ইতিহাস ও পটভূমি[সম্পাদনা]
বিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে হিজরী ১৩১৮ মোতাবেক ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে গাছবাড়ি এলাকার এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিত্ব আগফৌদ নারাইনপুর নিবাসী মাওলানা ক্বারী আতহার আলী গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরামর্শে এলাকার মানুষকে অশিক্ষার অন্ধকার থেকে শিক্ষার আলো দিকে নিয়ে আসার লক্ষ্যে গাছবাড়ি বাজারে একটি মাদরাসার ভিত্তি স্থাপন করেন। এ মাদরাসাই হচ্ছে বর্তমান যুগশ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যবাহী 'গাছবাড়ি জামিউল উলুম কামিল মাদরাসা'। মাদরাসার প্রথম শিক্ষক হিসেবে নিযুক্তি পান সে যুগের শ্রেষ্ঠ আলেম নামা ঝিঙ্গাবাড়ি নিবাসী জনাব মাওলানা জামাল উদ্দিন । মাদরাসাটি তখন ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও আস্তে আস্তে উন্নতি লাভ করতে থাকে। ১৯০৪ সালে মতান্তরে ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে ক্বারী আতহার আলী সাহেব পবিত্র হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ গমন করেন। হজ্জ পালন শেষে তিনি মহানবী এর রওজা যিয়ারতের জন্য মদিনা শরীফে যান এবং সেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মাওলানা ক্বারী আতহার আলী সাহেবের মৃত্যুর পর দেশবাসী মাদরাসার দায়িত্বভার যার উপর ন্যস্ত করলেন, তিনি হলেন মাওলানা কামিল সাহেব (সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলিম শাইখুল হাদিস মাওলানা ফজলে হক ফাযিল সাহেবের পিতা)। তিনি সুষ্ঠুভাবে মাদরাসার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৯১৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার ইন্তেকালের পর আকুনী নিবাসী মাওলানা ইব্রাহীম আলী (মাওলানা শফিকুল হক আকুনী সাহেবের পিতা) সাহেবের হাতে মাদরাসার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এসময় নদী ভাঙনে মাদরাসা ঘর বিলীন হয়ে গেলে তিনি নিজস্ব জমি মাদরাসার নামে ওয়াক্বফ করে পুনরায় মাদরাসা ঘর নির্মাণ করেন। মাদরাসার ছাত্র বাণিগ্রাম নিবাসী মাওলানা আঞ্জব আলী শওক সাহেবের প্রস্তাব অনুযায়ী মাদরাসার নাম 'আইনে গুলজার' রাখা হয়। এ সময় মাদরাসা দ্রুত উন্নতি লাভ করে। ১৯১৯ সালে মাওলানা ইব্রাহীম আলী সাহেবের ওফাতের পর এলাকাবাসীর সর্বসম্মতিক্রমে ছত্রপুর নিবাসী মাওলানা আবু ইউসুফ মোঃ ইয়াকুব সাহেবকে মুহতামিম নিযুক্ত করক হয়। অল্প দিনের মধ্যেই যুগশ্রেষ্ঠ আলেম মাওলানা আব্দুস সামাদ (শেখ সাহেব) কে হেড মৌলবি পদে নিয়োগ করা হয়। ১৩৪০ হিজরী মোতাবেক ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ঢেউটিন দ্বারা মাদরাসা পুণঃনির্মাণ করা হয় এবং মাদরাসার নাম পরিবর্তন করে 'গাছবাড়ি জামিউল উলুম আলিয়া মাদরাসা ' রাখা হয়। হযরত মাওলানা ইয়াকুব সাহেবের সুযোগ্য নেতৃত্বে এবং শেখ সাহেবের নিরলস প্রচেষ্টায় মাদরাসার সুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং মাদরাসা দিন দিন উন্নতি লাভ করতে থাকে। ১৯২৩ সালে দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল জামাত) খোলা হয়। চতুল দুর্গাপুর নিবাসী মাওলানা আহমদ আলী (শাহ সাহেব) কে শায়খুল হাদিস নিযুক্ত করা হয়। ১৩৪৫ হিজরী মোতাবেক ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম মাদরাসা আসাম বোর্ডের অধীনে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং ফাযিল সাহেব প্রথম বৃত্তিপ্রাপ্ত হন। ১৩৪২ হিজরী সনে উপমহাদেশের বিশিষ্ট আলেম মাওলানা সহুল হোসাইন এবং ১৩৪৫ ও ১৩৪৭ হিজরী সনে মাওলানা সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানি পর পর দুবার গাছবাড়ি মাদরাসায় তাশরিফ আনয়ন করেন। ১৩৪৫ হিজরীর বার্ষিক জলসায় তিনি সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেন। ১৯২৯ সালে দাওরায়ে হাদিসের উন্নতির জন্য ভারতের রামপুরা থেকে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা ওয়াজিহ উদ্দিন -কে শায়খুল হাদিস নিযুক্ত করা হয়। এদেশের আবহাওয়া তার স্বাস্থ্যের অনুকূলে না হওয়ায় কিছুদিন পর তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। মাদরাসা সুষ্ঠু পরিচালনা, সুনাম ও ছাত্র সংখ্যার আধিক্যের কারণে ১৯৩৮ সালের পহেলা মার্চ হতে মাদরাসা আসাম বোর্ডের অধীনে ফাইনাল ক্লাস (ফাযিল স্তর) পর্যন্ত অনুমতি লাভ করে। ১৯৪০ সালে সর্বপ্রথম আসাম বোর্ডের অধীনে ফাযিল ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শতভাগ ছাত্র কৃতকার্য হন। মরহুম মাওলানা শহর উল্লাহ সাহেব (সাবেক মুহতামিম, দারুল উলুম কানাইঘাট) উক্ত পরীক্ষায় আসাম বোর্ডে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে মাদরাসার বর্তমান দালানের কাজ শুরু হয়। ১৯৪৬ সালে মাদরাসা দাওরায়ে হাদিসের উন্নতির জন্য উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দি মাওলানা মুশাহিদ বায়মপুরী কে শায়খুল হাদিস নিযুক্ত করা হয়। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের পহেলা জুন হতে মাদরাসা কামিল (হাদিস) স্তরে মাদরাসা বোর্ডের মঞ্জুরিপ্রাপ্ত হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের কামিল (হাদিস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শতভাগ পাশের সাফল্য অর্জন করে। হযরত মাওলানা আবু ইউসুফ মোঃ ইয়াকুব সুদীর্ঘ ৪৩ বছর পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মাদরাসা পরিচালনার পর ২৯/১২/১৯৬১ ইংরেজি সনে বার্ধক্যজনিত কারণে অবসর গ্রহণ করেন। তার যুগ ছিল গাছবাড়ি কামিল মাদরাসার স্বর্ণযুগ। মাদরাসার খেদমতে তিনি তার জীবনকে ওয়াক্বফ করে দিয়েছিলেন। তারই প্রচেষ্টায় মাদরাসা একটি অতি উন্নতমানের মাদরাসায় রুপলাভ করে। মাওলানা ইয়াকুব সাহেব -এর অবসর গ্রহণের পর তারই পরামর্শে দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে নারাইনপুর নিবাসী মাওলানা হরমুজ উল্লাহ সাহেবকে মাদরাসার এ গুরুদায়িত্ব গ্রহণে বাধ্য করেন।
অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন যারা[সম্পাদনা]
কারী আতহার আলি রঃ প্রতিষ্ঠাতা প্রেন্সিপাল আগফৌদ নারাইন পুর 1901 থেকে 1904 মতানতর1909সাল পর্যন্ত
2) মাওলানা কামিল আহমেদ রঃ 1904মতান্তর 1909থেকে 1913সাল পর্যন্ত
3) মাওলানা ইব্রাহিম আলি আকুনি 1913__1919ইংরেজি
4) মাওলানা আবু ইউসুফ মুহাম্মদ ইয়াকুব ছত্রপুর 1919_1961 ইংরেজি
5) পীরে কামিল হযরত মাওলানা হরমুজ উল্লাহ আগফৌদ নারাইন পুর 1961__1966 ইংরেজি
6) মাওলানা আব্দুস সালাম দলইকান্দী
7)
8)মাওলানা বশির আহমেদ
9)মাওলানা হাঃ আব্দুর রহিম সর্দারি পাড়া
10) মাওলানা আবু তাহির ব্রাহ্মণ গ্রাম বর্তমানে দ্বায়ত্বরত
শিক্ষা কার্যক্রম[সম্পাদনা]
শিক্ষক মণ্ডলী[সম্পাদনা]
লাইব্রেরি[সম্পাদনা]
গাছবাড়ি জামিউল উলূমের লাইব্রেরিতে সর্বপ্রথম ১৯২৩ সালে কানাইঘাট উপজেলার বড়বন্দ নিবাসী মাওলানা আরমান আলী আরবি ভাষার অভিধান 'আল ক্বামুস' নামক কিতাব ওয়াক্বফ করেন। এরপর কিতাব সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে ওয়াক্বফকৃত ও খরিদকৃত দশহাজারের উপর পাঠ্যবই, রেফারেন্স পুস্তকাদিসহ অনেক গবেষণামূলক গ্রন্থ রয়েছে। যার মূল্য প্রায় বিশ লক্ষ টাকা। মাদরাসা ছাত্রদেরকে নামমাত্র ফিসের বিনিময়ে প্রয়োজনীয় পুস্তক সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া রেফারেন্স বই বা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় গবেষণামূলক পুস্তকাদি জ্ঞান তাপসদের জন্য সর্বদা উন্মুক্ত।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
১.জামিউল উলুমঃ শতবার্ষিকী সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি ২০০১ যহির আল