আবদুল হামিদ খান
আবদুল হামিদ খান | |
---|---|
জন্ম | ১৯৩৫ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
আবদুল হামিদ খান (জন্ম: ১৯৩৫) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]আবদুল হামিদ খানের জন্ম বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার কবাই ইউনিয়নের দক্ষিণ কবাই গ্রামে। তার বাবার নাম আরেফিন খান এবং মায়ের নাম আজিতুন নেছা। তার স্ত্রীর নাম মনোয়ারা বেগম। তাদের তিন মেয়ে, দুই ছেলে। [২]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]ইপিআরে চাকুরি করতেন আবদুল হামিদ খান। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর সেক্টরের ১০ নম্বর উইংয়ের অধীন চিলমারিতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৬ নম্বর সেক্টরের পাটগ্রাম ও মোগলহাট সাব-সেক্টরে। মোগলহাট এলাকায় তিনি কয়েকবার অ্যামবুশ ও আকস্মিক আক্রমণেও অংশ নেন। এতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। একবার পাটেশ্বরীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে আকস্মিক আক্রমণ করে তিনজন পাকিস্তানি সেনাকে জীবন্ত বন্দী করে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যান আবদুল হামিদ খান।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধায় থানা সদরে থাকা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। হাতীবান্ধা কলেজ, সিও অফিস ও চিন্তাপাড় বরাবর বাংকারে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান। প্রতিরক্ষায় ছিল দুই কোম্পানি পাকিস্তানি সেনা, দুই কোম্পানি ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আমর্ড ফোর্স এবং বিপুলসংখ্যক রাজাকার। তাদের কাভারিংয়ে ছিল একটি আর্টিলারি ব্যাটারি। ২৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে পাকিস্তানি অবস্থানে আক্রমণ চালান। তখন পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ চালায়। সারা দিন যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের বিভ্রান্ত করার জন্য বিকেলে গোলাগুলি বন্ধ করে দেন। সন্ধ্যার পর মুক্তিযোদ্ধারা আবার আকস্মিক আক্রমণ শুরু করেন। এতে পাকিস্তানি সেনা, ইপিসিএএফ ও রাজাকাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। সাতটার পর থেকে যুদ্ধের গতি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানের একদম কাছে চলে যান। তখন পাকিস্তানি আর্টিলারি ব্যাটারি মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রগামী দলের ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে। ভোররাতে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল একযোগে আক্রমণ শুরু করল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে। একটি দলে ছিলেন আবদুল হামিদ খান। পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ চালাতে থাকল। যুদ্ধ চলে সারাদিন। বিকেলে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি ছোড়া বন্ধ রাখলেন। কিছুক্ষণ পর পাকিস্তানিদের দিক থেকেও গুলি বন্ধ হয়ে গেল। সন্ধ্যার পর অন্ধকারে মুক্তিযোদ্ধারা নিঃশব্দে আরও এগিয়ে আবার আকস্মিক আক্রমণ চালালেন। আবদুল হামিদ খানসহ বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলেন। তিন দিন একটানা যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে গেল। আবদুল হামিদ খান এ সময় সাহসী ভূমিকা পালন করেন। ব্যাপক গোলাবর্ষণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হন। তখন তিনি সাহসের সঙ্গে তার দলের সহযোদ্ধাদের ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেন। তিন দিন যুদ্ধের পর হাতীবান্ধা মুক্ত হয়। হাতীবান্ধার যুদ্ধ ছিল ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রায় ৩৫ থেকে ৩৬ জন শহীদ ও অনেকে আহত হন। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৭-০৩-২০১২"। ২০১৭-১০-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-৩১।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৫৩। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ১৮০। আইএসবিএন 9789849025375।