রাসনৃত্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মণিপুরী নৃত্যশৈলীতে রাসলীলা

রাসলীলায় যে নৃত্য পরিবেশন করা হয় সেটাই রাসনৃত্য নামে পরিচিতি। রাসপূর্ণিমা উৎসব বাংলাদেশের মনিপুরী আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী উৎসব। প্রতি বছর কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করা হয়। রাস উৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয় রাসনৃত্যের। রাসনৃত্য মনিপুরী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধ্রুপদী ধারার এক অপূর্ব শৈল্পিক সৃষ্টি। অদৃশ্য রসের দৃশ্যমান রূপই হলো রাস।

পটভূমি[সম্পাদনা]

রাসনৃত্য পাঁচ ভাগে বিভক্ত ; যথাঃ "মহারাস", "বসন্ত রাস", "কুঞ্জরাস", "দিব্যরাস" ও "নিত্যরাস"। এর মধ্যে "মহারাস" জাঁকজমকপূর্ণ। ভগবত পুরাণের পঞ্চম অধ্যায়ে বর্ণিত কৃষ্ণ অভিসারে রাধা, গোষ্ঠী অভিসার, গোপীগণের রাগ আলাপ, কৃষ্ণর্তন, রাধানর্তন, গোপীদিগের নর্তন, শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান, প্রত্যাবর্তন, পুষ্পাঞ্জলি, গৃহগমন প্রভৃতি পর্যায়ে মহারাস অনুষ্ঠিত হয়। রাসনৃত্যে সাধারণত রাধা ও কৃষ্ণের ভূমিকা দেয়া হয় শিশুদের, যাদের বয়স পাঁচের কম। মনিপুরীদের বিশ্বাস, এই বয়সের পর শিশুদের দৈবশক্তি লোপ পেয়ে যায়। তবে প্রকৃত নাটনৃত্য ও গীত পরিবেশন করে তরুণীরা, যারা রাধার সহচরী হিসাবে মঞ্চে আসে। রাসনৃত্যের কেন্দ্রবিন্দু ভঙ্গি পরেং অর্থাৎ নৃত্যমালিকা। রাসলীলা শুরু হয় নট সঙ্কীর্তন দিয়ে। গোবিন্দজীর মন্দিরের বিশাল মণ্ডপে আরাধ্য দেবতার মূর্তির সামনে শিল্পীরা মৃদঙ্গ ও করতাল সহযোগে সঙ্কীর্তন করে। বিশেষ পোশাকে সাজেন শিল্পীরা। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বন্দনা দিয়ে শুরু হয়ে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ব্যাপী রাসসঙ্গীত অনুষ্ঠিত হয়। রাসনৃত্যের মাধ্যমে ভক্ত-শিল্পীরা শ্রীকৃষ্ণের সাথে আবেগসূত্রে মিলিত হয়। বাংলা, মৈথিলী, ব্রজবুলিমৈতৈ কবিদের পদাবলি থেকে রাসনৃত্যের গীত গাওয়া হয়।

পরিচিতি[সম্পাদনা]

মনিপুরী নৃত্যকে বাইরের জগতের সাথে পরিচয় করে দেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে সিলেটে বেড়াতে এসে এ নাচের কোমল আঙ্গিক দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে এর বীজ তিনি তার নৃত্যনাট্যে বপন করেন।[১] মনিপুরী আদিবাসীরা নট সঙ্কীর্তন ও রাস আজও প্রতি বছর যথানিয়মে উৎসব ও ভক্তিসহকারে উদ্‌যাপন করে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "আগামী ২ নভেম্বর কমলগঞ্জে মনিপুরীদের মহারাসলীলা"। ২০০৯-১০-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-২২