রক্ত
রক্ত | |
---|---|
![]() শিরাস্থ (গাঢ়) এবং ধামনিক (উজ্জ্বল) রক্ত | |
বিস্তারিত | |
শনাক্তকারী | |
লাতিন | haema |
মে-এসএইচ | D001769 |
টিএ৯৮ | A12.0.00.009 |
টিএ২ | 3892 |
এফএমএ | FMA:9670 |
শারীরস্থান পরিভাষা |
রক্ত হল মানুষের এবং উচ্চশ্রেণীর মেরুদন্ডী প্রাণিদেহের এক প্রকার তরল সংবহনতন্ত্র যা কোষে প্রয়োজনীয় পদার্থ যেমন পুষ্টি এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্যপদার্থ গুলোকে একই কোষ থেকে দূরীভূত করে। রক্ত জৈব ও অজৈব পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত সামান্য লবণাক্ত, আঠালো, ক্ষারধর্মী ও লালবর্ণের ঘন তরল পদার্থ যা হৃৎপিণ্ড, ধমনী, শিরা ও কৈশিক জালিকার মধ্য দিয়ে নিয়মিত প্রবাহিত হয়। রক্ত একধরনের তরল যোজক কলা। রক্ত প্রধানত দেহে অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ পরিবাহিত করে। রক্ত হল আমাদেরে দেহের জ্বালানি স্বরূপ।[১] রক্ত রক্তরসে অবস্থিত রক্ত কণিকা দিয়ে গঠিত।রক্তের তরলের ৫৫% রক্তরস এবং বেশির ভাগই পানি(৯২%) এবং এতে আরও আছে আয়ন , হরমোন , কার্বন ডাই অক্সাইড (মলত্যাগকারী পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে রক্তরস) এবং রক্ত কণিকা। মানবদেহে মোট ওজনের শতকরা ৭ ভাগ রক্ত থাকে (গড়ে মানবদেহে ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে)। [২] অ্যালবুমিন হলো রক্তরসের প্রধান প্রোটিন এবং এটি রক্তের কোলয়েডাল অসমোটিক চাপ কে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।রক্ত কণিকা প্রধানত লোহিত রক্তকণিকা (একে RBC বা এরিথ্রোসাইট বলা হয), শ্বেত রক্তকণিকা (একে WBC বা লিউকোসাইটও বলা হয়) এবং অনুচক্রিকা (একে প্লেটলেট বা থ্রম্বোসাইটও বলা হয়)। মেরুদন্ডী প্রাণীদের রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ সবচাইতে বেশি থাকে। এর মধ্যে রয়েছে হিমোগ্লোবিন, এটি একটি আয়রন যুক্ত প্রোটিন, যা শ্বাসযন্ত্রের গ্যাসের সাথে বিপরীতভাবে আবদ্ধ হয়ে অক্সিজেনকে পরিবহন করে এবং রক্তে দ্রবণীয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে। বিপরীত, বেশিরভাগ কার্বন ডাই অক্সাইড বহিরাগত ভাবে পরিবাহিত হয়ে বাই কার্বনেট আয়ন হিসেবে রক্তরসে পরিবাহিত হয়। মেরুদন্ডী প্রাণীদের রক্ত যখন উজ্জ্বল লাল হয় তখন এর হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন যুক্ত হয় এবং যখন এটি অক্সিজেন মুক্ত হয় তখন গাড় লাল হয়ে যায়। কিছু প্রাণ, যেমন ক্রাস্টেসিয়ান এবং মলাস্ক, হিমোগ্লোবিন এর পরিবর্তে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য হিমোসায়ানিন জাতীয় পদার্থ ব্যবহার কর। পোকামাকড় এবং কিছু মলাস্কা রক্তের পরিবর্তে হিমোলিম্ফ নামক একটি তরল ব্যবহার করে, পার্থক্য হল হিমোলিম্ফে কোন বদ্ধ সংবহন তন্ত্র থাকেনা। বেশিরভাগ পোকামাকড়ের মধ্যে, এই ধরনের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মধ্যে অক্সিজেন পরিবহনকারী অনু থাকেনা কারণ তাদের দেহে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য শ্বাসনালী সিস্টেম যথেষ্ট ছোট। চোয়াল যুক্ত মেরুদন্ডী প্রাণীদের একটি অভিযোজিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে, যা মূলত শ্বেতরক্তকণিকার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। শ্বেত রক্তকণিকা সমূহ সংক্রমণ এবং পরজীবী প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অনুচক্রিকা গুলো জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর্থোপোডায় অন্তর্ভুক্ত প্রাণীরা হিমোলিম্ফ ব্যবহার করে এবং তাদের ইমিউন সিস্টেম এর অংশ হিসেবে হিমোসাইট থাকে। হৃদপিন্ডের পাম্পিং ক্রিয়ার দ্বারা রক্তনালীর মাধ্যমে মাধ্যমে শরীরের চারপাশে রক্ত সঞ্চালিত হয়।ফুসফুসের মাধ্যমে ধমনীর রক্ত শ্বাস নেওয়া বাতাস থেকে শরীরের টিস্যুতে অক্সিজেন বহন করে এবং শিরার রক্ত কার্বণ-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে, কোষ দ্বারা উৎপাদিত একটি বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থ যা ফুসফুসের শ্বাস ছাড়ার সময় দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। রক্তের পিএইচ সামান্য ক্ষারীয় অর্থাৎ ৭.৩৫-৭.৪৫ (গড়ে ৭.৪০)। মানুষের রক্তের তাপমাত্রা ৩৬ - ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (গড়ে ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড)।[৩][৪] রক্তের আপেক্ষিক ঘনত্ব পানির চেয়ে বেশি, প্রায় ১.০৬৫ । অজৈব লবণের উপস্থিতির জন্য রক্তের স্বাদ নোনতা। সুনির্দিষ্ট বাহিকার মাধ্যমে রক্ত দেহের সবখানে সঞ্চালিত হয়।
রক্তের অংশ[সম্পাদনা]
রক্তের মূল অংশ দুইটি। যথা:
রক্তরস[সম্পাদনা]
রক্তের তরল, হালকা হলুদাভ অংশকে রক্তরস (plasma) বলে। রক্তকণিকা ব্যতীত রক্তের বাকি অংশই রক্ত রস। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের রক্তের প্রায় ৫৫% রক্তরস।
রক্তের প্রধান উপাদান দুইটি। যথা: (ক) অজৈব পদার্থ (খ) জৈব পদার্থ
(ক) অজৈব পদার্থ: রক্তরসে ৪ ধরনের অজৈব পদার্থ দেখা যায়।এগুলো হল: জল ৯১%-৯২%, কঠিন পদার্থ ৭%-৮% যার মধ্যে আছে ক্যাটায়ন ( Na+, K+, Ca++, Mg++, P+++, Fe++, Cu+, Mn++, Zn++, Pb++ ইত্যাদি ) ও অ্যনায়ন (Cl-, HCO-, PO43-, SO42-, ইত্যাদি) এবং ০.৯% গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে আছে কার্বন ডাই অক্সাইড, অক্সিজেন, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
(খ) জৈব পদার্থ: রক্ত রসে মাত্র ৭.১%-৮.১% জৈব পদার্থ থাকে। এর মধ্যে অধিক পরিমাণে থাকে প্লাজমা প্রোটিন- গড়ে ৬-৮ গ্রাম/ডেসি লি.। প্লাজমা প্রোটিনগুলো হচ্ছে - অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, ফিব্রিনোজেন। এছাড়াও অন্যান্য জৈব পদার্থগুলো হল: স্নেহ দ্রব্য (নিউট্রাল ফ্যাট, কোলেস্টেরল, ফসফোলিপিড, লেসিথিন ইত্যাদি), কার্বোহাইড্রেট (গ্লুকোজ), অপ্রোটিন নাইট্রোজেন দ্রব্য (অ্যামাইনো এসিড, ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিন, ক্রিয়েটিনিন, জ্যানথিন ইত্যাদি), রঞ্জক দ্রব্য (বিলিরুবিন, বিলিভার্ডিন), বিভিন্ন ধরনের এসিড (যেমন:- সাইট্রিক এসিড, ল্যাকটিক এসিড), হরমোন, ভিটামিন, এনজাইম, মিউসিন ও অ্যান্টিবডি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
কাজ[সম্পাদনা]
- মানবদেহে রক্তরসের মাধ্যমে পাচিত খাদ্যবস্তু, হরমোন, উৎসেচক ইত্যাদি দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়।
- রক্তরসের প্রোটিনের পরিমাণ রক্তের সান্দ্রতা (ঘনত্ব), তারল্য (fluidity), প্রবাহধর্ম (rheology) বজায় রাখে এবং পানির অভিস্রবণিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- অ্যান্টিবডি, কম্প্লিমেন্টস ইত্যাদি প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ উপকরণ রক্ত ধারণ করে।
- রক্তের তরল ভাবের প্রধান কারণ রক্ত রস।
- বাফার হিসেবে কাজ করে এতে বিদ্যমান প্রোটিন।
- দেহের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করে।
- দেহে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে।
মানব রক্তরসের কিছু প্রোটিন এবং অন্যান্য উপাদানসমূহ[সম্পাদনা]
- রক্তের অ্যালবুমিন
- গ্লোবিউলিন (অ্যান্টিবডি গামা/ইম্যুনো গ্লোব্যুলিন)
- প্রতঞ্চক ও প্রতিতঞ্চক উপাদান সমূহ
- ফাইব্রিনোজেন ও ভিট্রোনেক্টিন
- কম্প্লিমেন্টস (২০টির বেশি)
- সি আর পি
- ট্রান্সফেরিন
- ট্রান্সথাইরেটিন
- সেরুলোপ্লাজমিন
- হ্যাপ্টোগ্লোবিন
- হিমোপেক্সিন
- সাইটোকাইনস
- লাইপোপ্রোটিন ও কাইলোমাইক্রন
- এল বি পি
- গ্লুকোজ
- ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চর্বিকণা
- খনিজ লবণ
- ভিটামিন
- হরমোন
- এন্টিবডি
- বর্জ্যপদার্থ যেমন :- কার্বন ডাই অক্সাইড , ইউরিয়া , ইউরিক এসিড
- সোডিয়াম ক্লোরাইড খুবই অল্প ৷
রক্তকণিকা[সম্পাদনা]
রক্তের প্লাজমার মধ্যে নির্দিষ্ট আকার ও গঠন বিশিষ্ট উপাদান বা রক্ত কোষসমূহকে রক্ত কণিকা বলে। রক্তে প্রায় তিন ধরনের কণিকা পাওয়া যায়। যথা:
- লোহিত রক্তকণিকা (Erythorcytes), মানুষের শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এটি শাসনকার্যে আগত অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লোহিত রক্তকণিকা লাল অস্থিমজ্জা, প্লীহা ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন হয়। এর গড় আয়ু ১২০ দিন। মানুষের লোহিত রক্ত কণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না এবং দেখতে অনেকটা দ্বিঅবতল বৃত্তের মত। লোহিত রক্ত কণিকার হিমোগ্লোবিন অক্সিহিমোগ্লোবিন হিসেবে অক্সিজেন দেহকোষে পরিবহন করে এবং দেহকোষ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে ফুসফুসে নিয়ে আসে।
- শ্বেত রক্তকণিকা (Leucocytes) মানব দেহে শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা তুলনায় অনেক কম। হিমোগ্লোবিন না থাকার কারণে একে শ্বেত রক্তকণিকা বলা হয। এর গড় আয়ু ১-১৫ দিন। শ্বেত রক্তকণিকার নির্দিষ্ট কোন আকার নেই এগুলো হিমোগ্লোবিনবিহীন এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকারের কোষ।এরা অ্যামিবার মতো দেহের আকার পরিবর্তন করতে পারে এবং ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় এটি জীবাণুকে ধ্বংস করে। দেহ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে দ্রুত শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। প্রকারভেদঃ সাইটোপ্লাজমের দানার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি উপর ভিত্তি করে শ্বেত রক্তকণিকা কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
এদের সাইটোপ্লাজম দানাহীন ও স্বচ্ছ।এরা সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে যথা- লিম্ফোসাইট ও মনোসাইট। লিম্ফোসাইট গুলো বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ছোট কণিকা এবং এরা অ্যান্টিবডি গঠন করে এবং অ্যান্টিবডির মাধ্যমে দেহে প্রকৃত রোগজীবাণু ধ্বংস করে দেহকে সুরক্ষা দেয়।মনোসাইট ছোট ও বৃক্কাকার নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট বড় কণিকা, এরা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণু ধ্বংস করে।
এদের সাইটোপ্লাজম সখ্য দানাযুক্ত। নিউক্লিয়াস এর আকার এর উপর ভিত্তি করে এরা প্রধানত তিন প্রকার যথা-
- নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ভক্ষণ করে।
- ইওসিনোফিল হিস্টামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে দেহে অ্যালার্জি প্রতিরোধ কর।
বেসোফিল হেপারিন নিঃসৃত করে রক্ত বাহিকা ভেতর রক্তকে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।
৩.অণুচক্রিকা (Thrombocytes) এগুলো দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকার অথবা রড আকারের হতে পারে। এদের সাইটোপ্লাজম দানাদার এবং সাইটোপ্লাজমে বিভিন্ন অঙ্গানু যেমন মাইট্রোকন্ডিয়া গলগি বস্তু থাকে কিন্তু কোন নিউক্লিয়াস থাকে না।অনুচক্রিকা গুলোর গড় আয়ু ৫-১০ দিন। অনুচক্রিকার প্রধান কাজ হল রক্ত তঞ্চন বা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা। যখন দেহের কোন রক্ত বাহিকা বা কোন টিস্যু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কেটে যায় তখন সেখানকার অনুচক্রিকা গুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
রক্ত কনিকার বিভিন্ন রোগ[সম্পাদনা]
- পলিসাইথিমিয়া :— লোহিত রক্তকণিকা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গেলে ৷ লোহিত রক্তকণিকার পরিমান প্রতি ঘন মিলিলিটারে ৬৫ লাখের বেশি হয়ে যায় এই রোগে।
- এনিমিয়া :— লোহিত রক্তকণিকা কমে গেলে ৷ সাধারনত স্বাভাবিকের তুলনায় ২৫% লোহিত রক্তকণিকা কমে গেলে এই রোগ হয় ।
- লিউকোমিয়া :— শ্বেত রক্তকণিকা অত্যধিক বেড়ে গেলে যদি ৫০০০০ -১০০০০০০ হয় ৷
- লিউকোসাইটোসিস :— শ্বেত রক্তকণিকা বেড়ে যদি ২০০০০-৩০০০০ হয় ৷
- থ্রম্বোসাইটোসিস :— অণুচক্রিকার সংখা বেড়ে গেলে ৷
- পারপুরা / থ্রোম্বোসাইটোপিনিয়া :— অণুচক্রিকা কমে গেলে ৷
- থ্যালাসেমিয়া :— বংশগত রোগ। হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়। বিভিন্ন ধরনের অণুচক্রিকার সংখ্যা বেড়ে গেলে ৷
রক্তের ধরন[সম্পাদনা]
রক্তের ধরন (রক্তের গ্রুপ হিসাবেও পরিচিত) যা অ্যান্টিবডিগুলির উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতির ভিত্তিতে এবং রক্তের লোহিত রক্তকণিকার (Red Blood Corpuscles) পৃষ্ঠে প্রাপ্ত অ্যান্টিজেনিক পদার্থগুলির উপর ভিত্তি করে। এই অ্যান্টিজেনগুলি রক্তের গ্রুপ সিস্টেমের উপর নির্ভর করে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, গ্লাইকোপ্রোটিন বা গ্লাইকোলিপিড হতে পারে। এর মধ্যে কিছু অ্যান্টিজেন অন্যান্য টিস্যুগুলির অন্যান্য ধরনের কোষের পৃষ্ঠেও উপস্থিত রয়েছে। এই লাল রক্ত কোষের পৃষ্ঠের বেশিরভাগ অ্যান্টিজেনগুলি একটি অ্যালিল (জিনের বিকল্প সংস্করণ) থেকে উদ্ভূত হতে পারে এবং সম্মিলিতভাবে রক্তের গ্রুপ সিস্টেম গঠন করতে পারে।রক্তের ধরন (বা রক্তের গ্রুপ) নির্ধারিত হয় লাল রক্ত কোষে উপস্থিত ABO রক্ত গ্রুপ অ্যান্টিজেন দ্বারা। রক্তের ধরনগুলি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এবং পিতামাতার উভয়ের অবদানের প্রতিনিধিত্ব করে। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন (আইএসবিটি) দ্বারা মোট ৩৬ টি মানব রক্তের গ্রুপ সিস্টেম এবং ৩৪৬ অ্যান্টিজেনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রক্তের গ্রুপ সিস্টেমগুলি হল ABO এবং Rh।লােহিত রত্ত কণিকায় A এবং B নামক দুই ধরনের অ্যান্টিজেন (antigens) থাকে এবং রস্তুরসে a ও b দুই ধরনের অ্যান্টিবডি (antibody) থাকে। কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার ১৯০১ সালে মানুষের রক্তের শ্রেণিবিন্যাস করেন এবং A, B, AB এবং O এ চারটি গ্রুপের নামকরণ করেন। আর রেসাস (Rh) ফ্যাক্টর আন্টিজেন রক্তে উপস্থিত থাকলে রক্ত পজিটিভ না থাকলে রক্ত নেগেটিভ। তাই ABO গ্রুপের পাশাপাশি রেসাস ফ্যাক্টরও পরীক্ষা করে মিলিয়ে দেখাতে হবে। অর্থাৎ রেসাস ফ্যাক্টর বিবেচনায় নেওয়া হলে রক্ত গ্রুপ গুলা হবে A+, A-, B+ B-, AB+, AB-,O+ এবং O-। সাধারণত একজন মানুষের রক্তের গ্রুপ আজীবন একই রকম থাকে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
রক্তচাপ[সম্পাদনা]
হৃৎপিণ্ডের সংকোচন-প্রসারণের কারণে মানুষের ধমনী ও শিরায় রক্তের চাপ সৃষ্টি হয়। হৃৎপিণ্ডের সংকোচন এর ফলে যে চাপ অনুভূত হয় তাকে সিস্টোলিক চাপ বলে।হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের ফলে যে চাপ অনুভূত হয় তাকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে। মানুষের শরীরে ৮০/১২০ হলো আদর্শ রক্তচাপ, ৮০/১৩০ হলো সবচেয়ে অনুকূল রক্তচাপ এবং ৮৫/১৪০ হলো সর্বোচ্চ রক্তচাপ।আর রক্তচাপ নির্ণয়ের যন্ত্রের নাম হলো-স্ফিগমোম্যানোমিটার (Sphygmomanometer)
রক্তচাপের গুরুত্ব[সম্পাদনা]
রক্তচাপ রক্তসংবহনে এবং জালকতন্ত্রে পরিস্রাবণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এই পরিস্রাবণ প্রক্রিয়া রক্ত থেকে কোষে পুষ্টি সরবরাহ করা, মূত্র উৎপাদন করা প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় কাজের সঙ্গে জড়িত।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী কারণসমূহ[সম্পাদনা]
- হৃৎপিণ্ডের সংকোচন করার ক্ষমতা।
- রক্তবাহের স্থিতিস্থাপকতা।
- হরমোন।
- খাদ্য গ্রহণ।
- ঘুমানো।
- দৈহিক পরিশ্রম।
রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মান[সম্পাদনা]
- লোহিত রক্তকণিকা:
- পুরুষ :প্রতি ঘনমিলিমিটারে ৫০ লক্ষ
- মহিলা : প্রতি ঘনমিলিমিটারে ৪৫ লক্ষ
২. শ্বেতরক্তকণিকা: ৪-১১ /৫-৮ হাজার / ঘন মিলিলিটার
৩. অনুচক্রিকা - ২.৫ - ৫ লক্ষ / ঘন মিলিলিটার
অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এবং এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যে কোনো ব্যক্তি মারা যেতে পারে ।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "Definition of BLOOD"। ২৩ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৭।
- ↑ Alberts, Bruce (২০১২)। "Table 22-1 Blood Cells"। Molecular Biology of the Cell। NCBI Bookshelf। ২৭ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১২। অজানা প্যারামিটার
|name-list-style=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Hoffman, Matthew; MD। "Human Anatomy: Blood - Red and White Cells, Plasma, Circulation, and More"। WebMD (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৯।
- ↑ "Body temperature norms: MedlinePlus Medical Encyclopedia"। medlineplus.gov (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৯।