কলা (জীববিজ্ঞান)
কলা (Tissue) একই উৎস থেকে উৎপত্তি এবং একই আকৃতি বা ভিন্ন আকৃতিবিশিষ্ট কতগুলো কোষগুচ্ছ যখন নির্দিষ্ট জৈবনিক কাজ সম্পাদনে নিয়োজিত থাকে তখন ঐ কোষ সমষ্টি এবং তাদের নিঃসৃত আন্তঃকোষীয় পদার্থ বা মাতৃকা বা ধাত্রই টিস্যু বা কলা। অন্যভাবে একই গঠন বিশিষ্ট এক গুচ্ছ কোষ একত্রিত হয়ে যদি একই কাজ করে এবং উৎপত্তি যদি অভিন্ন হয় তাদের টিস্যু বলে। একই উৎস থেকে সৃষ্ট,একই ধরণের কাজ সম্পন্নকারী সমধর্মী একটি অবিছিন্ন কোষগুচ্ছকে বলা হয় টিস্যু। উৎপত্তিগতভাবে এক, একই প্রকার অথবা একাধিক ধরনের কিছু কোষ সমষ্টি যারা একই স্থানে অবস্থান করে, একটি সাধারণ কাজে নিয়োজিত থাকে তাদেরকেই টিস্যু বা কলা বলা হয়।
প্রকারভেদ[সম্পাদনা]
কলার গঠন, সংখ্যা বৈশিষ্ট্য এবং মাতৃকার পরিমাণ, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে প্রাণী কলা প্রধানত চার প্রকার:
- আবরণী কলা (Epithelial tissue)
- যোজক কলা (connective tissue)
- পেশী কলা (Muscular tissue)
- স্নায়ুকলা (Nervous tissue)
- ((ভাজক কলা))
- ((স্থায়ী কলা))
উদ্ভিদ কলা[সম্পাদনা]
উদ্ভিদ কলা প্রধানত দুুুই প্রকার। যথা: স্থায়ী কলা ও ভাজক কলা।
স্থায়ী কলা[সম্পাদনা]
স্থায়ী টিস্যু বিভাজনে সক্ষম নয় এবং এর উৎপত্তি ভাজক টিস্যু হতে ঘটে। স্থায়ী টিস্যু ৩ প্রকার।
- সরল টিস্যু
- জটিল টিস্যু
- নিঃস্রাবী বা ক্ষরণকারী টিস্যু
সরল টিস্যু[সম্পাদনা]
যে স্থায়ী টিস্যুর প্রতিটি কোষ আকার, আকৃতি ও গঠনের দিক থেকে অভিন্ন তাকে সরল টিস্যু বলে। কোষের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে সরল টিস্যুকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
জটিল টিস্যু[সম্পাদনা]
যে স্থায়ী কলা একাধিক প্রকার কোষ দিয়ে গঠিত এবং সম্মলিতভাবে একই ধরনের কাজ সম্পন্ন করে তাকে জটিল কলা বলে। কাজ,অবস্থান ও গঠন প্রকৃতি অনুযায়ী জটিল কলা দুই প্রকার। যথাঃ ক)জাইলেম কলা খ) ফ্লোয়েম কলা
জাইলেম কলা[সম্পাদনা]
জাইলেম শব্দের উদ্ভব হয়েছে গ্রিক শব্দ Xylos থেকে যার ইংরেজি প্রতিশব্দ wood, বাংলায় যাকে বলা হয় কাঠ। বিজ্ঞানী নাগালি ১৮৫৮ সালে এ শব্দের প্রচলন করেন। কাঠ তথা জাইলেমই হল উদ্ভিদের দৃঢ়তা প্রদানকারী অন্যতম প্রধান অংশ। বিভিন্ন কাজকর্মে যে কাঠ পাওয়া যায় তাকে সেকেন্ডারি জাইলেম বলে।
উপাদানসমূহ[সম্পাদনা]
একাধিক প্রকার উপাদান নিয়ে গঠিত বলে জাইলেম একটি জটিল কলা । নিম্নলিখিত চার প্রকার উপাদান নিয়ে জাইলেম কলা গঠিত।
- ট্রাকিড
- ভেসেল
- জাইলেম ফাইবার/উড ফাইবার
- জাইলেম প্যারেনকাইমা
ভাজক টিস্যু: যে টিস্যুর কোষগুলো বারবার বিভক্ত হয়, ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি হয়, তাকে ভাজক টিস্যু বলে।
স্থায়ী টিস্যু: যে টিস্যুর কোষগুলো পূর্ণভাবে বিকশিত ও কোষবিভাজনে অক্ষম হয় তাকে স্থায়ী টিস্যু বলে।
প্যারেনকাইমা টিস্যু: যেসব স্থায়ী টিস্যু সেলুলোজ নির্মিত পাতলা কোষপ্রাচীরযুক্ত সজীব কোষ সমন্বয়ে গঠিত হয় তাকে প্যারেনকাইমা টিস্যু বলে।
ক্লোরেনকাইমা টিস্যু: প্যারেনকাইমা টিস্যুতে ক্লোরোফিল থাকলে তাকে ক্লোরেনকাইমা বলা হয়।
কোলেনকাইমা : যে সরল স্থায়ী টিস্যু অসমস্থূল(অসমান,uneven) কোষপ্রাচীরযুক্ত সজীব কোষ দ্বারা গঠিত, তাকে কোলেনকাইমা টিস্যু বলে।
স্ক্লেরেনকাইমা: প্রোটোপ্লাজম বিহীন,লিগনিনযুক্ত এবং যান্ত্রিক কাজের জন্য নির্দিষ্ট কোষ দিয়ে গঠিত টিস্যুকে স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু বলে।
এ্যরেনকাইমা :জলজ উদ্ভিদের বড় বড় বায়ু কুঠুরীযুক্ত প্যারেনকাইমাকে এ্যারেনকাইমা বলে।
জটিল টিস্যু: যে স্থায়ী টিস্যু একাধিক প্রকার কোষ দিয়ে গঠিত হলেও সম্মিলিতভাবে একই ধরণের কাজে লিপ্ত থাকে, তাকে জটিল টিস্যু বলে।
সরল টিস্যু: যে টিস্যুর উৎপত্তি এবং গঠন, আকৃতি ও কাজ একই রকম, তাকে সরল টিস্যু বলে।
জাইলেম টিস্যু: ট্রাকিড, ভেসেল, জাইলেম ফাইবার এবঙ জাইলেম প্যারেনকাইমা নিয়ে যে টিস্যু গঠিত তাকে জাইলেম টিস্যু বলে।
ফ্লোয়েম টিস্যু: কাজ ও জন্মসূত্রে অভিন্ন কিন্তু আকৃতি ও প্রকৃতিতে ভিন্ন যে টিস্যু সমষ্টি নিয়ে উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রীকে উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন অঞ্চলে সংবহনের দায়িত্ব পালন করে সে টিস্যু সমষ্টিকে ফ্লোয়েম টিস্যু বলে।
ভিত্তি টিস্যু: মূল বা কান্ডের প্রধান টিস্যুতন্ত্রকে ভিত্তি টিস্যু বলে।
পরিবহন টিস্যু: জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যুর সমন্বয়ে যে টিস্যু গঠিত তাকে পরিবহন টিস্যু বলে।
বাস্ট ফাইবার: উদ্ভিদের অঙ্গের গৌণবৃদ্ধির সময় স্ক্লেরেনকাইমা কোষের সমন্বয়ে ফ্লোয়েম ফাইবার নামে এক প্রকার দীর্ঘ কোষ গঠিত হয় যাদের প্রান্তদেশ পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। এদেরকে বাস্ট ফাইবার বলে।
ক্ষরণকারী টিস্যু: তরুক্ষীর, মধু, গঁদ, রেজিন প্রভৃতি যেসব টিস্যু হতে নি:সৃত বা ক্ষরিত হয় তাকে ক্ষরণকারী টিস্যু বলে।
ত্বকীয় টিস্যু: যে টিস্যুতন্ত্র উদ্ভিদের অঙ্গের প্রাথমিক গঠন সৃষ্টিতে অংশ নেয় এবং উদ্ভিদ অঙ্গের বহিরাবরণ সৃষ্টি করে, তাকে ত্বকীয় টিস্যু বলে।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]
- Roeckelein, Jon E. (১৯৯৮)। Dictionary of Theories, Laws, and Concepts in Psychology। Greenwood Publishing Group। আইএসবিএন 978-0-313-30460-6। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৩।
বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]
