স্নায়ুকোষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

নিউরন হল স্নায়ুতন্ত্রের গঠনমূলক ও কার্যকরী একক এবং স্নায়বিক কলার মৌলিক একক। তারা উদ্দীপনা সংবেদন, জীবের বিভিন্ন অংশ থেকে সংকেত প্রেরণের জন্য দায়ী। নিউরন ছাড়াও, গ্লিয়াল কোষ নামে পরিচিত বিশেষ কোষগুলি স্নায়ু কোষকে এই কাজে সাহায্য করে। স্নায়ু কোষের মধ্যে রাইবোনিউক্লিক প্রোটিন দ্বারা গঠিত কণিকা বিশেষ উপস্থিত যা ER এর অংশ, এগুলি হল নিজিল দানা। যেহেতু নিউরনের গঠন এবং কার্য জীববিজ্ঞানের মধ্যে খুব বেশিভাবে জড়িত, তাই একটি নিউরনের গঠন স্নায়বিক কলার মধ্যে তার কাজের জন্য অনন্যভাবে উপযুক্ত। এই স্নায়বিক কলা হল প্রাথমিক কলা যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম গঠন করে। যেমন, মস্তিষ্ক কোটি কোটি স্নায়ুকোষ (নিউরন) দিয়ে তৈরি। এই একটি মাত্র মানব মগজে রয়েছে ১,০০০ কোটি স্নায়ুকোষ বা নার্ভ সেল। আর এগুলো একটি আরেকটির সাথে সংযুক্ত রয়েছে তেমনি শত শত কোটি স্নায়ুতন্ত্র দিয়ে।

অংশ[সম্পাদনা]

Diagram of a typical myelinated vertebrate motoneuron

প্রতিটি নিউরনে দুটি অংশ থাকে। যথা : ১. কোষদেহ ও ২. প্রবর্ধক অংশ।

কোষদেহ[সম্পাদনা]

নিউরনের কোষ দেহকে নিউরোসাইটন বলে। এটি গোলাকার, ডিম্বাকার, শাঙ্কবাকার এবং নক্ষত্রাকার হতে পারে। কোষদেহে প্লাজমামেমব্রেন বা কোষপর্দা, সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াসসহ বিভিন্ন অঙ্গানু রয়েছে। এটা নিউরোনের মুখ্য অংশ এবং এটি গোলাকার, ডিম্বাকার, মোচাকার, সুঁচালো, তারকাকৃতি প্রভৃতি বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। কোষদেহের ব্যাস ৬ মাইক্রন থেকে ১২০ মাইক্রন পর্যন্ত হতে পারে। কোষে সেন্ট্রিওল থাকে, তবে তা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। তাই নিউরোনের কোষ বিভাজনও হয় না, যেহেতু সেন্ট্রোজোম কোষ বিভাজনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

প্রবর্ধক অংশ[সম্পাদনা]

কোষদেহ থেকে নির্গত বা বহির্গত শাখা-প্রশাখাকে প্রবর্ধক অংশ বলে। এটি দু’ধরনের যথা : ক. ডেনড্রাইট (Dendrite) ও খ.অ্যাক্সন (Axon)।

ডেনড্রাইট[সম্পাদনা]

কোষদেহের চারদিকে সৃষ্ট ক্ষুদ্র তন্তুময় শাখাবিশিষ্ট অংশকে ডেনড্রাইট বলে। একটি নিউরনে বহু ডেনড্রাইট থাকে।ডেনড্রাইটগুলোই আসলে সেই অংশ যা মানব দেহের বিভিন্ন ইন্দ্রিয় থেকে অথবা অন্য নিউরোন থেকে তথ্য গ্রহণ করে। ডেনড্রাইটের সংখ্যা যত বেশি হবে, একটি নিউরনের তথ্য গ্রহণের ক্ষমতাও তত বেশি হবে। একটি নিউরনের ডেন্ড্রাইটের সংখ্যা ৪,০০,০০০ পর্যন্তও হতে পারে।

অ্যাক্সন[সম্পাদনা]

কোষদেহ থেকে উৎপন্ন বেশ লম্বা ও শাখাবিহীন তন্তুটির নাম অ্যাক্সন। অ্যাক্সনের চারদিকে চ্যাপ্টা সোয়ান কোষ নির্মিত পাতলা আবরণকে নিউরিলেমা বলে। নিউরিলেমা পরিবেষ্টিত অ্যাক্সনকে স্নায়ুতন্তু বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিউরিলেমা ও অ্যাক্সনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে স্নেহপদার্থের একটি স্তর থাকে। এ স্তরটিকে মায়েলিন (Myelin sheath) আবরণ বলে। নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর অন্তর অ্যাক্সনে কিছু সংকুচিত অঞ্চল দেখতে পাওয়া যায়, একে র‌্যানভিয়ার-এর পর্ব (Node of Ranvier) বলে। অ্যাক্সনের মূল অক্ষের আবরণীকে এক্সোলেমা বলে। অ্যাক্সনের শেষ প্রান্ত বিভক্ত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শাখা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে টেলোডেনড্রিয়া বা প্রান্তবুরুশ বলে। টেলোডেনড্রিয়ার শেষ প্রান্তের স্ফীত অংশের নাম সাইন্যাপটিক নব। পরপর দুটো নিউরোনের প্রথমটার অ্যাক্সন এবং পরেরটার ডেনড্রাইটের মধ্যে একটি স্নায়ুসন্ধি গঠিত হয়, একে সাইন্যাপস বলে। অ্যাক্সন লম্বায় এক মিটারের বেশি হতে পারে। বহুসংখ্যক নিউরোন মিলিত হয়ে একটি স্নায়ুকলা (Nerve Tissue) গঠিত হয়।

নিউরন বা স্নায়ুকোষ তথা স্নায়ুকলার (Nervous Tissue) কাজ : ১. নিউরন বিভিন্ন উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং তদনুযায়ী প্রতিবেদন সৃষ্টি করে। ২. এটি মস্তিষ্কে যাবতীয় স্মৃতি সংরক্ষণ করে। ৩. এটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। ৪. এটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং তার বাস্তবায়ন করে।[১][২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পড়াশোনা : জীববিজ্ঞান ২য় পত্র
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১২ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]