উৎসেচক

উৎসেচক বা এনজাইম হচ্ছে এক প্রকার জৈব অনুঘটক। গঠনগতভাবে এটি প্রোটিন জাতীয় পদার্থ। ব্যতিক্রম রাইবোজাইম এবং ডিএনএজাইম যেখানে যথাক্রমে আরএনএ ও ডিএনএ উৎসেচক (এনজাইম) হিসাবে কাজ করে। কোষের প্রায় সমস্ত বিপাকীয় প্রক্রিয়াগুলো জীবন বাঁচানোর রাখার জন্য যথেষ্ট দ্রুত হারে ঘটতে এনজাইম ক্যাটালাইসিস প্রয়োজন।[১]
আন্তর্জাতিক প্রাণরাসায়ন ও অণু জীববিজ্ঞান সম্মিলনের নামকরণ কমিটি উৎসেচকদের ছয়টি প্রধান ভাগে ভাগ করে ছটি ইসি নম্বর নির্দিষ্ট করেন ও প্রত্যক উৎসেচককে চারটি সংখ্যা দিয়ে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করার প্রথা প্রচলন করে। পরিমাণে পৃথিবীর অধিকতম প্রোটিন আরইউবিপি যার ডাকনাম রিউবিস্কো হলো সালোকসংশ্লেষে ব্যবহৃত একটি উৎসেচক: ইসি ৪.১.১.৩৯। দ্রততম উৎসেচকদের অন্যতম হল ট্রায়োজ ফসফেট আইসোমারেজ: ইসি ৫.৩.১.১
এই উৎসেচক প্রাণীদেহে নানাভাবে প্রভাব ফেলে। মানুষের মুখের মধ্যে যে লালারস তৈরি হয় তাতে টায়ালিন ও মলটেজ উৎসেচক থাকে। এটি খাদ্যবস্তুকে গলিয়ে হজমে সাহায্য করে। সাপের উৎসেচক সবচেয়ে বেশি থাকার কারণে সাপ অতি দ্রুত যেকোনো বড় খাবার সহজে গিলে হজম করে ফেলতে পারে তার এই ক্ষমতার মাধ্যমে। বিভিন্ন মৌল বা আয়ন উৎসেচকের কো-ফ্যাক্টর রূপে কাজ করে উৎসেচকের ক্রিয়াকে ত্বরাণ্বিত করে।[২][৩]
সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]যে জৈব অনুঘটক জীব দেহে উৎপন্ন হয়ে কোষের মধ্যে বা বাইরে উপযুক্ত পরিবেশে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে তাকে উৎসেচক বা এনজাইম বলে। ১৮৭৮ সালে বিজ্ঞানী কুহন 'এনজাইম' কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন।
রাসায়নিক প্রকৃতি
[সম্পাদনা]অধিকাংশ উৎসেচক প্রোটিন নিয়ে গঠিত। এই প্রোটিনের সাথে অপ্রোটিন কিছু অংশ থাকে যার নাম কো-এনজাইম। প্রকৃতপক্ষে একটি সম্পূর্ণ উৎসেচক বা হোলো-এনজাইম প্রোটিন অংশ অ্যাপো-এনজাইম এবং অপ্রোটিন অংশ কো-এনজাইম নিয়ে গঠিত হয়।
কয়েক প্রকার ভিটামিন, কয়েকটি মৌল, যেমন জিঙ্ক বা দস্তা, কোবাল্ট, কপার বা তামা ইত্যাদি এবং কয়েক রকম বিশেষ যৌগ, যেমন: নিকোটিন্যামাইড অ্যাডেনিন ডাইনিউক্লিওটাইড কো-এনজাইম হিসেবে উৎসেচকের সঙ্গে যুক্ত থেকে উৎসেচকের কর্মক্ষমতা যোগায়। এসব ক্ষেত্রে উৎসেচক থেকে কো-এনজাইম বাদ পড়লে উৎসেচকটি কর্মক্ষমতা হারায়।
অনুঘটক ও উৎসেচক
[সম্পাদনা]অনুঘটক অজৈব উপাদানে গঠিত কিন্তু উৎসেচক জৈব উপাদানে গঠিত। অনুঘটকের সক্রিয়তার জন্য কোন কো-ফ্যাক্টর থাকে না। উৎসেচকের সক্রিয়তার জন্য অনেক সময় কো-ফ্যাক্টর বা কো-এনজাইম প্রয়োজন হয়। অনুঘটক বেশি তাপে সহজে নষ্ট হয় না। কিন্তু নির্দিষ্ট তাপমাত্রার বেশি তাপে উৎসেচক নষ্ট হয়। অনুঘটক জীবদেহে উৎপন্ন হয় না।, অন্যদিকে জীবদেহে কোষের প্রোটোপ্লাজমে উৎসেচক উৎপন্ন হয়। অনুঘটক সহজেই ঝিল্লী ভেদ করে, কিন্তু উৎসেচক ঝিল্লি ভেদ করে না।
- অ্যাপো-এনজাইম ও কো-এনজাইম
অ্যাপো-এনজাইম উৎসেচকের প্রোটিনযুক্ত অংশ, কিন্তু কো- এনজাইম হলো এনজাইমের প্রোটিন বিহীন অংশ। অ্যাপো- এনজাইম বিভিন্ন পাচন ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। কো-এনজাইম বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। পেপসিন, ট্রিপসিন ইত্যাদি অ্যাপো-এনজাইমের উদাহরণ। এডিপি, এনএডিপি ইত্যাদি কো- এনজাইমের উদাহরণ।
বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]- অধিকাংশ উৎসেচক প্রোটিন দিয়ে গঠিত।
- এদের গঠনে কো-এনজাইম থাকে।
- উৎসেচক রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত বা মন্দীভূত করে।
- রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎসেচকের কোন পরিবর্তন হয় না।
- সামান্য পরিমাণ উৎসেচক বিপুল পরিমাণের পদার্থের রাসায়নিক পরিবর্তন করতে পারে।
- নির্দিষ্ট উৎসেচক নির্দিষ্ট বস্তুর ওপর কাজ করে।
- উৎসেচকের কার্যপ্রণালী দ্বিমুখী হতে পারে। সংশ্লেষণ এবং বিশ্লেষণে একই উৎসেচক অংশ নেয়।
- নির্দিষ্ট উষ্ণতা বা নির্দিষ্ট অম্ল-ক্ষার মাধ্যমে উৎসেচক কাজ করে।
নামকরণ
[সম্পাদনা]সাধারণভাবে নামকরণের সময় উৎসেচক যে বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে তার নামের শেষে এ এস ই বা 'এজ' যুক্ত করে উৎসেচকের নাম দেওয়া হয়। যেমন, লিপিডের ওপর কাজ করে যে উৎসেচক তার নাম লাইপেজ। সুক্রোজকে যে উৎসেচক ভেঙে দেয় তার নাম সুক্রেজ। অবশ্য এর ব্যতিক্রমও আছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Stryer L, Berg JM, Tymoczko JL (২০০২)। Biochemistry (5th সংস্করণ)। San Francisco: W.H. Freeman। আইএসবিএন 0-7167-4955-6।
- ↑ "enzyme" (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ Anatomy and Physiology for Nurses,Evelyn Pearce। পৃষ্ঠা ২২০। আইএসবিএন 0 571 04699 1।