শ্বসনতন্ত্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শ্বাস তন্ত্র
(Respiratory system)
একটি সম্পূর্ণ, মানুষের শ্বাস তন্ত্রের অংশ এবং কাজসহ রুপরৈখিক দৃশ্য
বিস্তারিত
শনাক্তকারী
লাতিনsystema respiratorium
মে-এসএইচD012137
টিএ৯৮A06.0.00.000
টিএ২3133
এফএমএFMA:7158
শারীরস্থান পরিভাষা

যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় দেহকর্তৃক গৃহীত খাদ্য অক্সিজেন সহযোগে জারিত হয়ে তাপ ও স্থিতিশক্তি উৎপন্ন করে তাকে শ্বসন বলে ৷ আর যে তন্ত্রের মাধ্যমে শ্বসনকার্য সম্পন্ন হয় তাকে শ্বসনতন্ত্র বলে ৷ শ্বসনের সাথে জড়িত অঙ্গসমূহ (নাসারন্ধ্র, গলবিল, ল্যারিংস, ট্রাকিয়া, ব্রঙ্কাস, ব্রঙ্কিওল, অ্যালভিওলাই, ফুসফুস) -কে শ্বসনিক অঙ্গ বলে । মানব শ্বসনতন্ত্র অক্সিজেন জীবনধারণের অপরিহার্য উপাদান। কোন প্রাণী অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারে না। মানব দেহে বাতাসের সাথে অক্সিজেন ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং রক্তের মাধ্যমে দেহের সব অঙ্গে পৌঁছায় পরিপাক হওয়া খাদ্যের সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়া ঘটে ফলে তাপ এবং শক্তি উৎপন্ন হয়, এইটা দেহকে উষ্ণ রাখে এবং প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়। অক্সিজেন এবং খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে বিক্রিয়ার ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও পানি উৎপন্ন হয়। রক্ত উক্ত উপাদান গুলোকে ফুসফুসে নিয়ে যায়। সেখানে অক্সিজেন শোষিত হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ছেড়ে দেওয়া হয় । যে প্রক্রিয়া দিয়ে অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিষ্কাশন করা হয় তাকে শ্বাসকার্য বলে। যে জৈবিক প্রক্রিয়া প্রাণীদেহের খাদ্য পুস্তকে বায়ুর অক্সিজেনের সাথে জারিত করে মজুদ শক্তিকে ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিষ্কাশন করে তাকে শোষণ বলে। দেহের ভিতর গ্যাসীয় আদান-প্রদান একবার ফুসফুসে এবং পরে দেহের প্রতিটি কোষে পর্যায়ক্রমে সম্পাদিত হয় শোষণের সরল বিক্রিয়াটি এরকম-

C6H12O6 + 6O2 = 6CO2 + 6H2O + ATP

প্রশ্বাসে অক্সিজেন গ্রহণ এবং নিঃশ্বাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড দেহ থেকে বের করতেই হয় তা না হলে আমাদের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, কারণ তিন চার মিনিটের বেশি দেহে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ থাকলে মৃত্যু অনিবার্য এবং অনিবার্য দেহের সচেতন অসচেতন অচেতন অক্সিজেন গ্রহণ অবিরাম এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নির্গমন চলে আর সাথে সাথে প্রতিনিয়ত দেহ রক্ষার নানাবিধ প্রক্রিয়াও চলতে থাকে যার ফলে প্রাণী বেঁচে থাকে।

১. নাসারন্ধ্র ও নাসাপথ শ্বসনতন্ত্রের প্রথম অংশের নাম নাসিকা বা নাক এটা মুখ্যহবরের উপরে অবস্থিত একটি ত্রিকণা কার গ্হবর নাগ বা নাসিকা সাহায্যে কোন বস্তুর সুগন্ধ বা দুর্গন্ধ বুঝা যায় এক বিশেষ ধরনের স্নায়ু এই অঙ্গ কে উদ্ধিত করে ফলে আমরা গন্ধ পাই নাসিকা এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যে এটি প্রশ্বাসের সময় বাতাসকে ফুসফুসে গ্রহণের উপযোগী করে দেয় । নাসা পথ সামনে নাসিকা চিত্র এবং পিছনে গলবিল পর্যন্ত বিস্তৃত একটি পাতলা প্রাচীর দিয়ে এটি দুই ভাগে বিভক্ত এর সামনের অংশ লোমাবৃত এবং পিছনের অংশ শে্লষয়মা প্রস্তুতকারী একটি পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বায়ুতে বিদ্যমান ধূলিকণা রোগ জীবাণু এবং আবর্জনা থাকলে তা এই লোম এবং পর্দাতে আটকে যায় এতে বায়ো ফুসফুসের প্রবেশ করার পূর্বে কিছু পরিমাণে নির্মল হয়ে যায় এছাড়া শোষণের জন্য গৃহীত বায়ু নাসা পদ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছুটা উষ্ণ এবং আদ্র হয় এর ফলে হঠাৎ ঠান্ডা বায়ো ফুসফুসে প্রবেশ করে সাধারণত কোনো ক্ষতি করতে পারে না। ২. গলবিল

মুখ হাঁ করলে মুখ গহবরের পিছনে যে অংশটি দেখা যায় সেটি গলবিল। নাসা পাতের পিছনের অংশ থেকে ষড়যন্ত্রের উপরিভাগ পর্যন্ত এটি বিস্তৃত। এর পিছনের অংশের বিপরীতলে একটি ছোট জিহ্বার মত অংশ থেকে এটাই আল জিব্বা । খাদ্য এবং পানীয় গলাধরকরণের সময় এটা নাসা পদের পশ্চাৎপদ বন্ধ করে দেয়। ফলে কোনো প্রকার খাদ্য নাসিকা পথে বাইরে আসতে পারে না। খাদ্য গ্রহণের সময় প্রচুর পরিমাণে পিচ্ছিল পদার্থ নিঃসরণ করাও এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সম্ভবত উন্নততর ষড়যন্ত্রের বিবর্তনের সাথে আলাজিব্বার উদ্ভবের একটা সম্পর্ক আছে যেটি কেবলই মানুষের সবচেয়ে বেশি বিকশিত।

৩. স্বরযন্ত্র

এটা গলবিদের নিচে এবং শ্বাসনালির উপরে অবস্থিত ।স্বরযন্ত্রের দুই ধারে দুটি পেশী থাকে এগুলোকে ভোকাল কর্ড বলে। স্বরযন্ত্রের উপরে একটা জিব্বা আকৃতির ঢাকনা রয়েছে। একে উপ জিব্বা বলে। শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার সময় এটি খোলা থাকে এবং এই পথে বাতাস ফুসফুসে যাতায়াত করতে পারে। খাবার সময় ওই ঢাকনাটা স্বরযন্ত্রের মুখ ঢেকেতে ফলে আহার্য দ্রব্যাদি সরাসরি খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে শ্বাস-প্রশ্বাসে এর কোন ভূমিকা নেই।

৪. শ্বাসনালি

এটি খাদ্যনালীর সামনে অবস্থিত একটি ফাপানল। এই নালিটির স্বরযন্ত্রের নিচের অংশ থেকে শুরু করে কিছুদূর গিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি বায়ু নলের সৃষ্টি করে এগুলো শ্বাসনালি। এর প্রাচীর কতগুলো অসম্পূর্ণ বলায়াকার তরুণাস্থি ও পেশী দিয়ে গঠিত। এর অন্তর্গত্র ঝিল্লি দিয়ে আবৃত। এ ঝিল্লিতে সুক্ষ লোমযুক্ত কোষ থাকে। এর ভিতর দিয়ে বায়ু আসা-যাওয়া করে শ্বাসনালীর ভেতর দিয়ে কোন অপ্রয়োজনীয় বস্তুকণা প্রবেশ করলে সুখ্য লোম যুক্ত সেগুলোকে শ্লেষ্মা এর সাথে বাইরে বের করে দে।

৫- ব্রংকাস

ব্রঙ্কাস স্বরযন্ত্রের নিম্নাংশ শুরু হয়ে ফুসফুসের নিকটবর্তী স্থানে গিয়ে ডান এবং বাম দিকে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। এ শাখা গুলো যথাক্রমে বাম ও ডান ফুসফুসের প্রবেশ করে। এগুলো ব্রঙ্কাই একবচনে ব্রংকাস নামে পরিচিত। ফুসফুসে প্রবেশ করার পর ব্রংকায় দুটি অসংখ্য শাখা প্রশাখার বিভক্ত হয়। এগুলোকে অনুক্রমশাখা বলে এদের গঠনশৈলী শ্বাসনালীর অনুরুপ।

৬- ফুসফুস

ফুসফুস শ্বসনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ। বক্ষ গহবরের ভিতর হৃদপিণ্ডে দুই পাশে দুটি ফুসফুস অবস্থিত। এটি স্পঞ্জ এর মত নরম এবং হালকা লাল রংয়ের। ডান ফুসফুস তিন খন্ডে এবং বাম ফুসফুস দুই খন্ডে বিভক্ত। ফুসফুস দুই ভাজ বিশিষ্ট প্লুরা নামক পর্দা দিয়ে আবৃত। ২ ভাঁজের মধ্যে এক প্রকার রস নির্গত হয়।ফলের শ্বাসকিয়া চলার সময় ফুসফুসের সাথে বক্ষবাত্রের কোন সংঘর্ষ হয় না। ফুসফুসে অসংখ্য বায়ুথলি এবং সুক্ষ সুক্ষ শ্বাসনালী ও রক্তনালী থাকে। বায়ুথলি গুলোকে বলে আলভিউলাস। বায়ুথলি গুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুক্রম শাখা প্রান্তে মৌচাকের মতো অবস্থিত। নাসাপথ দিয়ে বায়ু সরাসরি বায়ুথলিতে যাতায়াত করতে পারে। বায়ুথলি পাতলা আবরণী দিয়ে আবৃত এবং প্রতিটি বায়ুথলির কৈশিক নালিকা দিয়ে পরিবেশিত। বায়ু প্রবেশ করলে এগুলো বেলুনের মত ফুলে ওঠে এবং পরে আপনা আপনি সংকুচিত হয়। বায়ুথলি ও কৌশিক নালিকার গাত্র এত পাতলা যে এর ভিতর দিয়ে গ্যাসীয় আদান-প্রদান ঘটে।







৭. মধ্যচ্ছদা বক্ষ গহবর ও উদারগহ্বর পৃথক কারী পেশীবহুল পর্দাকে মদ্যচ্ছদা বলে। এটি দেখতে অনেকটা প্রসারিত ছাতার মত। মধ্যসদা সংকুচিত হলে নিচের দিকে নামে তখন বক্ষবহরের আয়তন বৃদ্ধি পায়। এটি প্রসারিত হলে উপরের দিকে উঠে এবং বক্ষ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। মধ্যসদা প্রশ্বাস গ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।২২বার /মিনিট (২২ Times/min)