নিয়াজ মোরশেদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিয়াজ মোরশেদ
পূর্ণ নামনিয়াজ মোরশেদ
দেশ বাংলাদেশ
জন্ম১৩ মে ১৯৬৬
ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)
খেতাবগ্র্যান্ড মাস্টার

নিয়াজ মোরশেদ (জন্ম: ১৩ মে ১৯৬৬), যিনি মোর্শেদ নামে পরিচিত, হলেন বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুপরিচিত দাবাড়ুদক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে ১ম গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাবধারী হবার বিরল কৃতিত্বের দাবীদার তিনি। ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে ভূষিত হন।[১]

শৈশবকাল[সম্পাদনা]

মঞ্জুর মোর্শেদ এবং নাজমা আহমেদের গর্বিত সন্তান নিয়াজ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। খুব ছোটবেলা থেকেই অগ্রজের সাহচর্যে দাবার প্রতি তার গভীর অনুরাগ জন্মে। প্রতিবেশী ও তৎকালীন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন জামিলুর রহমানও তাকে দাবা শিক্ষার উপযোগী আনুকূল্য পরিবেশ ও সাহচর্য দেন। আহমেদ ছফার রচনা থেকে জানা যায়, ছোটবেলায় নিয়াজ মোরশেদ অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গেও দাবা খেলতেন। ১৯৮৩ সালে সেন্ট জোসেফ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস,এস,সি এবং ‘৮৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচ,এস,সি) পরীক্ষায় কৃতকার্য হন।

প্রারম্ভিক সাফল্য[সম্পাদনা]

নিয়াজ মোর্শেদ নয় বছর বয়সে জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। যদিও ঐ প্রতিযোগিতায় প্রাথমিক পর্ব অতিক্রম করতে পারেননি, তবুও তিনি উপস্থিত সকলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন ও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১২ বছর বয়সেই তিনি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দাবাড়ুদের একজনে পরিণত হন। ১৯৭৮ সালে তিনি যৌথভাবে ১ম হলেও টাইব্রেকারে ৩য় হন। পরবর্তীতে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত একাধারে ৪ বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন।[২]

আন্তর্জাতিক সাফল্য[সম্পাদনা]

১৯৭৯ সালে ভারতের কোলকাতায় ১ম বারের মতো যে-কোন পর্যায়ের আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় নিয়াজ অংশ নেন। ‘৮১-তে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশীপে যুগ্মভাবে ১ম হলেও টাইব্রেকে ২য় হন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায়ও তিনি ২য় হন। ঐ বছরই আইএম (ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার) নর্ম অর্জন করেন। নিয়াজ ১৯৮২ সালে বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশীপে অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হলেও ডেনমার্কের লার্স স্কানডর্ফের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠেয় খেলাটি টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সেরা খেলা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তিনি ১৯৮৪, ১৯৯০, ১৯৯৪, ১৯৯৬, ২০০২ এবং ২০০৪ সালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবা অলিম্পিয়াডে প্রতিনিধিত্ব করেন।[৩]

গ্র্যান্ড মাস্টার[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের গর্ব ও অহঙ্কার নিয়াজ মোর্শেদ গ্র্যান্ড মাস্টারের ১ম নর্ম অর্জন করেন ১৯৮৪ সালে সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় অনুষ্ঠিত বেলা ক্রোভা ওপেনে। তিনি ২য় নর্ম অর্জন করেন ১৯৮৬ সালে। ধারাবাহিকভাবে সাফল্য অর্জন করেন ‘৮৫-তে ঢাকায় আয়োজিত ক্যাপস্টেন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ও ‘৮৬-তে কোলকাতা গ্র্যান্ড মাস্টার্স টুর্নামেন্টে। ১৯৮৭ সালে বিশ্ব দাবা সংস্থা (ফিদে) নিয়াজ মোর্শেদকে মাত্র ২১ বছর বয়সে গ্র্যান্ড মাস্টারের (জিএম) মর্যাদা দেয় যা তাকে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার ১ম গ্র্যান্ড মাস্টার এবং এশিয়ার ৫ম গ্র্যান্ড মাস্টার হিসেবে খ্যাতি প্রদান করে।[৪]

সাময়িক বিরতি[সম্পাদনা]

গ্র্যান্ড মাস্টারের খেতাব অর্জনের পর নিয়াজ মোর্শেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার পেনসালভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এ অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ঐ সময়ে তিনি কেবল কাছাকাছি থাকা প্রতিযোগিতাগুলোয় অংশ নেন। স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর নিয়াজ পুনরায় দাবা খেলায় মনোনিবেশ করেন। নতুন প্রজন্মের দাবাড়ুদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েও ’৯১-এ ভারতের গোডরিকে ১ম, ‘৯২-এ ফিলিপাইনের সেবু’তে গ্র্যান্ড মাস্টার টুর্নামেন্টে ২য়, ‘৯৩-এ কাতারের দোহা দাবা উৎসবে ৩য়, ‘৯৩-এ আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় ১ম এবং ২০০৪ সালের কমনওয়েলথ দাবা প্রতিযোগিতায় টাইব্রেকারে ২য় স্থান দখল করেন।

নিজস্ব কৌশল[সম্পাদনা]

গ্র্যান্ড মাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ সাধারণতঃ প্রাথমিক পর্যায়ের দাবা পদ্ধতিতে অগ্রসর হন। তিনি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ছোট ছোট সুবিধা নিয়ে নিজেকে বিজয়ের পরিবেশ তৈরী করেন ও অবশ্যম্ভাবীভাবেই এগিয়ে থেকে জয়ী হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:বাংলাদেশী দাবাড়ু