সুলতানা কামাল খুকী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(সুলতানা কামাল (খেলোয়াড়) থেকে পুনর্নির্দেশিত)
সুলতানা কামাল খুকী
(সুলতানা আহমেদ)
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম নামসুলতানা আহমেদ
ডাকনামখুকি
জাতীয়তাবাংলাদেশি
জন্ম(১৯৫২-১২-১০)১০ ডিসেম্বর ১৯৫২
বকশীবাজারে, ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান
(বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৫ আগস্ট ১৯৭৫(1975-08-15) (বয়স ২২)
ঢাকা, বাংলাদেশ
মাতৃ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুসলিম গার্লস স্কুল
গভ: ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দাম্পত্য সঙ্গীশেখ কামাল
ক্রীড়া
দেশবাংলাদেশ
ক্রীড়াহার্ডলস, হাইজাম্প, ব্রডজাম্প
দলবাংলাদেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সুলতানা আহমেদ খুকী (১০ ডিসেম্বর ১৯৫২ - ১৫ আগস্ট ১৯৭৫) হলেন বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য ক্রীড়াবিদ। হার্ডলস, উচ্চলাফ এবং বিস্তৃত লাফ — এই তিন ক্ষেত্রেই স্বাধীনতার আগে এবং পরে তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকে তিনি সাধারণ্যে সুলতানা কামাল নামে পরিচিত লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে তাকে ঘাতকরা গুলি করে হত্যা করে।[১] ঢাকার ডেমরা-তারব সংযোগকারী ব্রিজটিকে সুলতানা কামাল ব্রিজ নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ধানমণ্ডির মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সটিও সুলতানা কামালের নামে।

জন্ম ও শিক্ষা[সম্পাদনা]

সুলতানা কামালের জন্ম ১৯৫২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বকশীবাজারে। তার বাবা দবিরউদ্দিন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চীফ ইঞ্জিনিয়র। ১৯৬৭ সালে তিনি মুসলিম গার্লস স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তৎকালীন গভ: ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ) ভর্তি হন। ১৯৬৯ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। এরপর অনার্স পাশ করে ভর্তি হন এমএ ক্লাসে। এমএতে লিখিত পরীক্ষা দেন। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই ঘাতকদের বুলেটে তিনি নিহত হন।[২]

ক্রীড়াবিদ জীবন[সম্পাদনা]

স্কুল ও কলেজ পর্যায় বিভিন্ন আন্তঃস্কুল ও কলেজ প্রতিযোগিতায় তিনি শীর্ষস্থান অধিকার করেন। পুরান ঢাকার বকশীবাজার মুসলিম গার্লস স্কুলে শিক্ষার্থী থাকাকালীন সময় ১৯৬২-৬৩ সালে আন্তবিদ্যালয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা দিয়ে তার পুরষ্কারপ্রাপ্তি শুরু।[৩] স্কুল অ্যাথলেটিকসে সবার দৃষ্টি কেড়ে পরে জাতীয় পর্যায়ে ডাক পান। ১৯৬৮ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তৎকালীন পাকিস্তান অলিম্পিকে নতুন রেকর্ড স্থাপন করে স্বর্ণপদক জয়লাভ করেছিলেন।[২][৪] পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হার্ডলসে নিজেই নিজের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড স্থাপন করে স্বর্ণপদক লাভ করেন।[২]

স্বাধীনতার পর প্রথম ১৯৭৩ সালে ঢাকা স্টেডিয়ামে জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার প্রথম আসর বসে। এই আসরে মেয়েদের বিভাগে মোট নয়টি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে এই প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো এককভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ১০০ মিটার হার্ডলস, হাই জাম্প এবং ব্রড জাম্পে তিনি প্রথম হন। এ ছাড়া ১০০ মিটার স্প্রিন্টারে অংশ নিয়ে তিনি দ্বিতীয় হন।

১০০ মিটার হার্ডলস প্রতিযোগিতায় সুলতানা আহমেদ খুকী আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের কাজী লুৎফুন্নেসা এবং দিনাজপুর জেলা একাদশের শামীমা আরা মিমুকে (বর্তমানে শামীমা সাত্তার) পেছনে ফেলে প্রথম হন। হাইজাম্পে দিনাজপুর জেলা একাদশের ফরিদা বেগম লিলি এবং মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের সুমিত্রা রায়কে পেছনে ফেলে প্রথম হন। লংজাম্পেও সুলতানা আহমেদ প্রথম হন। তার পেছনে থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হন দিনাজপুর জেলা একাদশের শামীমা আক্তার মিমু এবং মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের মিস হামিদা। ১০০ মিটার স্প্রিন্টারে তিনি দ্বিতীয় হন আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের শামীম আরা টলির পেছনে থেকে।

৭৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতাতে ব্রড জাম্পে দিনাজপুর জেলা একাদশের শামীমা আরা মিমু এবং সুফিয়াকে পেছনে ফেলে প্রথম হন সুলতানা আহমেদ। হাইজাম্পে খুলনা জেলা একাদশের মেরিনা খানমের কাছে হেরে গিয়ে দ্বিতীয় হন। এই ইভেন্টে তৃতীয় হন সিলেট জেলা একাদশের আবেদা চৌধুরী। এ বছর ১০০ মিটার হার্ডলসে অপ্রত্যাশিতভাবে শ্রেষ্ঠত্ব হারান সুলতানা কামাল। কুমিল্লা জেলা একাদশের রোকেয়া বেগমের কাছে পরাজিত হন। এই ইভেন্টে তৃতীয় হন বিটিএমসির শামীম আরা টলি।[২] ধারণা করা হয় সে সময় স্নাতক পরীক্ষা ছিল বলে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে পারেননি।[৩]

৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা। ১০০ মিটার হার্ডলসে ১৭.০৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে তিনি নতুন রেকর্ড গড়ে প্রথম হন। তার পেছনে থেকে দ্বিতীয় হন কুমিল্লা জেলা একাদশের রোকেয়া বেগম খুকী এবং চট্টগ্রাম জেলা একাদশের রওশন আরা রেশমি। ব্রডজাম্পে বিটিএমসির শামীম আরা মিমু এবং কুমিল্লা জেলা একাদশের আনারকলিকে পেছনে ফেলে প্রথম হন।[২]

স্মরণ[সম্পাদনা]

২০১১ সালে, বাংলাদেশ উইমেন্স স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের নারীদের খেলাধূলায় অবদানের জন্য সুলতানা কামাল স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রবর্তন করে।[৫]

নামকরণ[সম্পাদনা]

বিয়ে[সম্পাদনা]

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম ফরিদপুরের জনৈক পার্লামেন্ট সদস্যকে দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠান সুলতানার বাবা দবিরউদ্দিনের কাছে। তারপর দুই পরিবারের সম্মতিতে কামাল ও সুলতানার বিয়ে সম্পন্ন হয়। সুলতানা আহমেদ, ১৯৭৫ এর ১৪ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বড় ছেলে শেখ কামালের বউ হয়ে আসেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারে। এরপর থেকেই তিনি সুলতানা কামাল নামে পরিচিত।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সালে সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সদস্যের হাতে স্বামী শেখ কামালসহ পরিবারের অন্যান্য ১৭ সদস্যদের সাথে খুন হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. In Memoriam: The victims of August 15 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে (ইংরেজি)
  2. "সুলতানা কামাল: বুলেটবিদ্ধ এক প্রিয়দর্শিনী অ্যাথলেট"। ২১ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  3. সুলতানা কামাল—এক অনন্য অ্যাথলেট
  4. "সুলতানা কামাল, বন্ধুদের খুকি"। ১৪ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  5. Reporter, Sports (২০১১-০৪-০১)। "Sultana Kamal awards given"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-০৭ 
  6. Reporter, Sports (২০১৫-০৯-১০)। "Nat'l athletics from today"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-০৭ 
  7. "Home :: Dhaka University Halls"du.ac.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-০৭ 
  8. Unb, Dhaka (২০১০-০৬-২৭)। "PM opens Sultana Kamal Bridge"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-০৭ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]