নলহাটেশ্বরী মন্দির

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নলহাটেশ্বরী মন্দির

দেবী নলহাটেশ্বরীর মন্দির হল ৫১ সতীপীঠের অন্যতম। বীরভূম জেলার এই অঞ্চলে সতীর কণ্ঠনালী বা গলার নলি পড়েছিল, সেই থেকেই নলহাটিরও নামকরণ হয়েছে|[১]

দেবী ও ভৈরব[সম্পাদনা]

নলহাটেশ্বরী মা

পীঠনির্ণয় তন্ত্রের মতে চতুশ্চত্বারিশৎ পীঠ হল বীরভূমের নলহাটি।

" নলহাট্যাং নলাপাতো যোগী শো ভৈরবস্তুথা।

তত্র সা কালিকা দেবী সর্বসিদ্ধি প্রদায়িকা । ।"

সংস্কৃত ' নলক ' শব্দের অর্থ ' নলের মতো লম্বা অস্থি ' যার মানে নুলো বা কনুইয়ের নিম্নভাগ। আবার শিবচরিত মতে এটি উপপীঠ। এখানে সতীর কন্ঠনালী পতিত হয়েছিল। এখানে দেবীর নাম শেফালিকা ও ভৈরব যোগীশ। [২]

মূর্তি ও পুজা[সম্পাদনা]

মা ত্রিনয়নী ও তার স্বর্ণের জিভ।[৩] মন্দিরে দেবীর কন্ঠনালী রক্ষিত আছে। ( প্রস্তুরীভূতঃ ) প্রত্যহ দেবীর স্নানের পর ও মঙ্গলারতির পূর্বে উক্ত দেবী অঙ্গ ভক্তদের প্রদর্শিত হয়। তবে শাস্ত্রে দেবীকে কালিকা বা শেফালিকা যাই বলা হোক না কেন স্থানীয়রা দেবীকে নলাটেশ্বরী বলে থাকেন। ভৈরব অবশ্য সর্বত্র যোগীশ নামেই উক্ত। প্রনাম মন্ত্রে দেবীকে নলাটেশ্বরী বলে সম্বোধন করা হয় --------

" মঙ্গলাং শোভনাং শুদ্ধাং নিস্কলং পরমম্ কলাং।

নলাটেশ্বরী বিশ্বমাতা চণ্ডিকাং প্রণমাম্যহম্ । ।"

নলাটেশ্বরী মায়ের অঙ্গশিলা উদ্ধারের সময় একটি অলৌকিক কাণ্ড হয়। যেটা বোধহয় অপর কোন শক্তিপীঠে হয়নি। যিনি সতীর দেহ তার সুদর্শন চক্র দ্বারা খণ্ড খণ্ড করেছিলেন সেই অনাদির আদি গোবিন্দের চরণ চিহ্নিত একটি শিলা পাওয়া যায়। ভগবান নারায়ণের সেই চরণ চিহ্নিত শিলা পূজিত হন এখানে দেবীর সাথে। প্রথমে ভগবান বিষ্ণুকে প্রনাম জানানোর পরই ভৈরব ও দেবীর অর্চনা হয়ে থাকে। আষাঢ় মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবীর বার্ষিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। শিবরাত্রির দিন দেবী ও ভৈরবের মন্দির এর সঙ্গে হলুদ সুত্র দ্বারা যোগসূত্র স্থাপিত হয়।

পুরাণ ও ইতিকথা[সম্পাদনা]

স্বপ্নাদেশে কামদেব উদ্ধার করেন সতীর কণ্ঠনালী। ব্রাহ্মণী নদী তীরে ললাট পাহাড়ের নিচে সেই কণ্ঠনালীর ওপর বেদি করে প্রতিষ্ঠিত হন দেবী নলাটেশ্বরী। স্থানটি রামায়ণ কাহিনীর সঙ্গেও কিংবদন্তি দ্বারা যুক্ত। টিলাতে সীতার চুল আঁচড়ানোর দাগ আছে ও ও কড়ি খেলার গর্ত আছে। তাই বলা যায় নলহাটি হিন্দু, মুসলমান, শাক্ত, শৈব ও ও বৈষ্ণব ধর্মের এক আশ্চর্য সমন্বয় ও সম্প্রীতির এক মিলন ভূমি। গোটা ভারতের সার্বিক ঐক্যচিত্র এই পীঠে দেখা যায়। যেখানে একসাথে মা কালী, ভৈরব শিব আর ভগবান বিষ্ণুর একসাথে পূজা হচ্ছে। একসময়ে এই জায়গাতে মানুষ আসতো না , পাহাড়ের ওপরে এমনকি আশেপাশে ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছিলো। দিনের বেলাতেও অন্ধকার হয়ে থাকতো এই স্থান। মায়ের পীঠে কেবল যেতেন নির্ভয় বীরাচারী তান্ত্রিকেরা। তন্ত্র সাধনা করতেন। বীরাচারে দেবীর প্রসন্নতার জন্য পূজা করতেন। কাপালিকরাও আসতেন। বশিষ্ঠ, রামশরন, দেবশর্মা, কুশলানন্দ আদি মুনি সন্ন্যাসীরা এখানে এসে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন। বর্গি সর্দার ভাস্কর পণ্ডিত এখানে পূজা দিতে আসতেন। তবে বর্তমানে জঙ্গল, জংলী পশু একটাও নেই। খালি টিলার ওপর সেই মন্দিরটি আছে। বর্তমানে নন্দীপুরের দেবোত্তর ট্রাষ্ট থেকে মন্দির পরিচালনা করা হয়ে থাকে।মা নলাটেশ্বরীর নিত্য অন্নভোগ হয়। ভক্তেরা চাইলে সেখানে পান্ডাদের সাথে কথা বলে অন্নপ্রসাদ পেতে পারেন। মন্দির রাত আটটা অবধি উন্মোচন থাকে। বিশেষ তিথিতে সারারাত।নিশি অমাবস্যায় মায়ের মন্দিরে হোম যজ্ঞ করা হয়।[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. rarhbangla (২০১৮-০৬-২৯)। "নলাটেশ্বরী মন্দিরের পৌরাণিক কাহিনী"RarhBangla (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৩-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-২৮ 
  2. পীঠনির্ণয় তন্ত্র
  3. Says, Minecraft (২০১৮-০৬-২৮)। "বীরভূমের দুই বিখ্যাত কালীতীর্থ"Exclusive Adhirath (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৯-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-২৮