বগলামুখী
বগলামুখী বা বগলা | |
---|---|
যিনি ভক্তের শত্রু বা মানসিক ভ্রান্তি নাশ করেন | |
অন্তর্ভুক্তি | দশমহাবিদ্যা |
মন্ত্র | ওঁ হ্লীঁ বগলামুখী সর্বদুষ্টানাং বাচং মুখং পদং স্তম্ভায় জিহ্বাং কীলয় বুদ্ধিং বিনাশয় হ্লীঁ ওঁ স্বাহা ।। |
অস্ত্র | মুগুর |
বাহন | মৃতদেহ বা প্রেত, স্বর্ণের সিংহাসন |
সঙ্গী | শিব |
বগলামুখী বা বগলা (দেবনাগরী: बगलामुखी) হলেন হিন্দু দশমহাবিদ্যা দেবমণ্ডলীর অন্তর্গত অন্যতম দেবী। তিনি ভক্তের মানসিক ভ্রান্তি নাশের (অথবা শত্রু নাশের) দেবী। তাঁর অস্ত্র মুগুর। উত্তর ভারতে তিনি পীতাম্বরী নামেও পরিচিত। দেবী বগলার ১০৮ নাম রয়েছে (কেউ কেউ দেবীর ১১০৮ টি নাম আছে বলে।)[১]
মূর্তিতত্ত্ব
[সম্পাদনা]"বগলামুখী" শব্দটি "বগলা" (অর্থাৎ, ধরা) এবং "মুখ" শব্দদুটি থেকে উৎপন্ন। এই শব্দটির অর্থ যিনি যাঁর মুখ কোনো কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিতে সমর্থ।[২] অন্য একটি অর্থে, যিনি মুখ তুলে ধরেছেন।
বগলামুখীর দ্বিভূজা মূর্তি পূজার প্রচলনই বেশি। এই মূর্তিটিকে সৌম্য মূর্তি ধরা হয়। এই মূর্তিতে তাঁর ডান হাতে থাকে গদা। এই গদা দিয়ে তিনি শত্রুকে প্রহার করেন। অন্যদিকে বাঁহাতে শত্রুর জিভটি টেনে ধরে থাকেন। এই মূর্তিটিকে অনেক সময় "স্তম্ভন" (শত্রুকে নিস্তব্ধ করে দিয়ে তাকে শক্তিহীন করা) প্রদর্শন হিসেবে ধরা হয়। এই বর লাভের জন্য ভক্তেরা তাঁর পূজা করে থাকে। অন্যান্য মহাবিদ্যাদেরও এই শক্তি আছে বলে ধরা হয়।
বগলামুখীকে" "পীতাম্বরা দেবী" বা "ব্রহ্মাস্ত্র-রূপিণী"ও বলা হয়। তিনি একটি গুণকে বিপরীত গুণে পরিবর্তন করে পারেন বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন। যেমন, তিনি বাক্যকে নিঃস্তব্ধতায়, জ্ঞানকে অজ্ঞানে, শক্তিকে শক্তিহীনতায়, পরাজয়কে জয়ে পরিবর্তন করেন।
কিংবদন্তি
[সম্পাদনা]বগলামুখী দেবী সম্পর্কে একটি গল্প প্রচলিত আছে : সড্যযুগে একসময় পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঝড় হয়। এই ঝড়ে যখন সকল সৃষ্টি ধ্বংসের সম্মুখীন হয়, তখন সকল দেবতা সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে একত্রিত হন। সেই সময় দেবী বগলামুখী হরিদ্রা সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়ে দেবতাদের স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে সেই ঝড় থামিয়ে দেন। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের দাতিয়া অঞ্চলের পীতাম্বরা পীঠমে হরিদ্রা সরোবরের অনুরূপ একটি হ্রদ রয়েছে।
পূজা
[সম্পাদনা]ভারতের অসম রাজ্যের গুয়াহাটিতে অবস্থিত কামাখ্যা মন্দির তন্ত্রবিদ্যার কেন্দ্রস্থল। এখানে দশমহাবিদ্যার মন্দির আছে। এই মন্দিরের কয়েক মাইল দূরেই বগলামুখী মন্দিরের অবস্থান। উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের বাণখণ্ডীতে, মধ্যভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের আগর মালব জেলার নলখেদা ও দাতিয়ার পীতাম্বরা পীঠে এবং দক্ষিণ ভারতের তামিল নাড়ু রাজ্যের তিরুনেলভেলি জেলার পাপানকুলাম জেলার কল্লাইদাইকুরিচিতে এবং পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাতেও বগলামুখীর মন্দির আছে।[৩] কলকাতার বরাহনগর অঞ্চলস্থিত বিটি রোডের কাছেই টবিন রোডে, মা বগলামুখী দেবীর একটি সুন্দর মন্দির আছে।।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ "1108 Names of Bagalamukhi Ma"। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ Frawley, p.130
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৫।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- David R. Kinsley (১৯৯৮)। Tantric Visions of the Divine Feminine: The Ten Mahāvidyās। Motilal Banarsidass Publ.। পৃষ্ঠা 196–207। আইএসবিএন 978-81-208-1522-3।
- David R. Kinsley (১৯৮৮)। Hindu Goddesses: Visions of the Divine Feminine in the Hindu Religious Tradition। University of California Press। পৃষ্ঠা 161–164। আইএসবিএন 978-0-520-90883-3।
- David Frawley (১৯৯৬)। Tantric Yoga and the Wisdom Goddesses: Spiritual Secrets of Ayurveda। Motilal Banarsidass Publ.। পৃষ্ঠা 130–135। আইএসবিএন 978-81-208-1357-1।