বিষয়বস্তুতে চলুন

তারা মন্দির, তারাপীঠ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তারা মন্দির
তারাপীঠের তারা মন্দির
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাবীরভুম
ঈশ্বরকালী
উৎসবসমূহকালী পূজা
অবস্থান
অবস্থানতারাপীঠ
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
দেশভারত
স্থাপত্য
ধরনআটচালা,গৌড়ীয় স্থাপত্য

তারাপীঠের তারা মন্দির প্রাচীন বঙ্গ তথা রাঢ় বাংলার এক সাধন পীঠ বা সিদ্ধপীঠ;[][] মতান্তরে, জাগ্রত শক্তিপীঠ এবং উপপীঠ।[] এখানে দেবী উগ্রতাঁরার শিলারূপ প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। তারাপীঠ ভারতের অত্যন্ত জনপ্রিয় সাধন ক্ষেত্র ও তন্ত্রের অভীষ্ট স্থান।[]

ইতিহাস ও জনশ্রুতি

[সম্পাদনা]

ব্রহ্মার মানসপুত্র বশিষ্টদেব সাধন ক্রিয়ার জন্য কামরূপে পাড়ি দেন কিন্তু কামরূপ রাজ্য কামাক্ষায় ম্লেচ্ছাচারে ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি আসামদেশ ত্যাগ করেন। এরপর তিনি সাধন পদ্ধতির জন্য রাঢ় বাংলায় পাড়ি দেন। রাঢ়দেশে অন্তর্গত বক্রেশ্বরের ঈশান কোন অবস্থিত দ্বারকা নদীর পূর্ব তীরে শ্মশানে প্রতিষ্ঠিত এক পঞ্চমুন্ডির আসনে তিনি গভীর তপস্যায় বসেন এবং সিদ্ধিলাভ করেন। তিনি দেবী উগ্রতাঁরার মাতৃরূপ দর্শন করেন। পরে একই আসনে সিদ্ধিলাভ করেন সাধক বামাক্ষ্যাপা[][]

মন্দিরের গঠন

[সম্পাদনা]
তারাপীঠের তারামূর্তি

উত্তরমুখী আটচালা মন্দিরটি লাল ইঁটে নির্মিত। এর ভিতের দেওয়াল বেশ মোটা। উপরিভাগে শিখর পর্যন্ত একাধিক ধনুকাকৃতি খিলান উঠেছে। চারচালার ওপরে চার কোণে চারটি ছোট ছোট চূড়া অবস্থিত। মন্দিরের চূড়ায় একটি তামার পত্তাকাসহ ত্রিশীল তিনটি পদ্ম ভেদ করে উঠেছে। মন্দিরের প্রবেশপথের মধ্য খিলানের ওপর দুর্গার প্রতিকৃতি রয়েছে। উত্তরদিকে বামপাশের খিলানের ওপর কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ঘটনা, ভীষ্মের শরশয্যা, অশ্বত্থমা হত প্রভৃতি মহাভারতের কাহিনী উৎকীর্ণ রয়েছে। মন্দিরের উত্তর ভিতের পূর্বদিকে সীতাহরণ, অকালবোধন, রামরাবণের যুদ্ধের দৃশ্য এবং পশ্চিমদিকে কৃষ্ণলীলার চিত্র খোদিত। ১২ ফুট X ৬ ফুট মাপের মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবীমূর্তি সংস্থাপিত।[]

মূর্তির বর্ণনা

[সম্পাদনা]

শিবের একটি লীলাস্বরূপ শিশুরূপ হল সদ্যোজাত। সেই সদ্যোজাতকে স্তন্যপানরতা তারার মূল প্রস্তরমূর্তিটি একটি তিন ফুট উঁচু ধাতব মূর্তির মধ্যে রাখা থাকে। দর্শনার্থীরা সাধারণত ধাতব মূর্তিটিই দর্শন করে থাকেন। এই মূর্তিটি তারা দেবীর ভীষণা চতুর্ভূজা, মুণ্ডমালাধারিণী এবং লোলজিহ্বা মূর্তি। এলোকেশী দেবীর মস্তকে রৌপ্যমুকুট থাকে। বহির্মূর্তিটি সাধারণট শাড়ি-জড়ানো অবস্থায় গাঁদা ফুলের মালায় ঢাকা অবস্থায় থাকে। মূর্তির মাথার উপরে থাকে একটি রূপোর ছাতা। মূর্তিটির কপালে সিঁদুর লেপা থাকে। পুরোহিতেরা সেই সিঁদুরের টীকা পরিয়ে দেন দর্শনার্থীদের। প্রতিকৃতি বিগ্রহের নিচে গোল্কার বেদীতে দুটি রূপোর পাদপদ্ম থাকে। ভক্তরা নারকেল, কলা বা রেশমি শাড়ি দিয়ে দেবীর পূজা দেন। তারাদেবীর মূল মূর্তিটিকে "তারার কোমল রূপের একটি নাটকীয় হিন্দু প্রতিমা" বলে অভিহিত করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Tarapith"birbhum.gov.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-১৮ 
  2. বিনয় ঘোষ। পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি। কলকাতা: প্রকাশ ভবন। 
  3. Dr.S.N.Pandey (২০১০)। West Bengal General Knowledge Digest (ইংরেজি ভাষায়)। উপকার প্রকাশন। আইএসবিএন 9788174822826 
  4. নিগুরানন্দ (১৯৭৯)। সতীক্ষেত্র ছব্বিশ উপপীঠের সন্ধানে। শরত পাবলিশিং হাউস। 
  5. "তারাপীঠ মন্দির স্থাপনের ইতিহাস"RarhBangla। ২০১৮-০৬-১১। ২০১৯-০৩-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-১৮ 
  6. রায়, দীপ্তিময় (১৯৮৪)। পশ্চিমবঙ্গের কালী ও কালীক্ষেত্র। মন্ডল বুক হাউজ। 
  7. শিবশঙ্কর ভারতী (১৮ জানুয়ারী ২০০১)। তিন তীর্থে। ১৮বি, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিট, কলকাতা-৭৩: সাহিত্যম্‌।