আশরাফ আলী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শায়খুল হাদিস, আল্লামা

আশরাফ আলী
আশরাফ আলী
মহাপরিচালক, জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা
অফিসে
২০১৩ – ২০২০
পূর্বসূরীকাজী মুতাসিম বিল্লাহ
সহ-সভাপতি, আল হাইআতুল উলয়া
অফিসে
২০১৮ – ২০২০
উত্তরসূরীআব্দুল কুদ্দুস
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১ মার্চ ১৯৪০
মৃত্যু৩১ ডিসেম্বর ২০১৯(2019-12-31) (বয়স ৭৯)
আসগর আলী হাসপাতাল, ঢাকা
ধর্মইসলাম
জাতীয়তাবাংলাদেশি
সন্তান৭ জন
পিতামাতা
  • মফিজ উদ্দিন (পিতা)
জাতিসত্তাবাঙালি
যুগআধুনিক
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
প্রধান আগ্রহহাদিস, ফিকহ, তাসাউফ, শিক্ষা
যেখানের শিক্ষার্থীজামিয়া আশরাফিয়া, লাহোর
মুসলিম নেতা
যাদের প্রভাবিত করেন

আশরাফ আলী (১ মার্চ ১৯৪০ — ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯) ছিলেন একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। জাতীয় পর্যায়ে তিনি বাংলাদেশের আলেম সমাজের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তিনি একাধারে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সংস্থা আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি, সর্ববৃহৎ শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ সভাপতি, জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকার মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও তিনি অসংখ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। ‘কুমিল্লার হুজুর’ নামেও তার পরিচিতি ছিল।[১]

জন্ম ও বংশ[সম্পাদনা]

আশরাফ আলী ১৯৪১ সালের ১ মার্চ কুমিল্লার বিজয়পুরস্থ রামচন্দ্রপুর (ইসলামপুর) গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মফিজউদ্দিন।[২][৩]

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

পরিবারের মধ্যেই তার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। তারপর ভর্তি হন মাজহারুল উলুম যশপুর মাদ্রাসায়৷ এই মাদ্রাসায় দুই বছর অধ্যয়নের পর ভর্তি হন কুমিল্লা শহরে অবস্থিত জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসায়৷ এরপর তিনি ঢাকার হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম বড়কাটারা মাদ্রাসায় চলে আসেন এবং এখান থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সমাপ্ত করেন৷ দাওরায়ে হাদিস পরবর্তী উচ্চতর পড়াশোনার জন্য তিনি পাকিস্তানের জামিয়া আশরাফিয়া, লাহোর গমন করেন এবং সেখানে ধারাবাহিকভাবে দুই বছর অধ্যয়ন করেন৷[৪]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর পাকিস্তান থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করে শিক্ষকদের পরামর্শক্রমে তিনি আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া, কিশোরগঞ্জে যোগ দেন এবং সহীহ মুসলিমের প্রথম খণ্ডের শিক্ষাদানের মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়৷ এখানে ৯ বছর শিক্ষকতা করার পর তিনি ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদে চলে আসেন এবং ৮ বছর শায়খে ছানী ও শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন৷ মধ্যখানে তিনি ১৯৭৪ — ৭৫ সালে বড়কাটারা মাদ্রাসাতে অধ্যাপনা করেন এবং সুনান আত-তিরমিজীর শিক্ষাদান করেন৷[৪]

এরপর জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কুমিল্লার প্রতিষ্ঠাতা জাফর আহমদের অনুরোধে তিনি অত্র মাদ্রাসায় যোগ দেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ বছর শায়খুল হাদিস ও সদরুল মুদাররিসীনের দায়িত্ব পালন করেন৷ কাজী মুতাসিম বিল্লাহর মৃত্যুর পর ২০১৩ সালে তিনি জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালে আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ গঠিত হলে তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে সংস্থাটির সহ-সভাপতি মনোনীত হন।[৫] এছাড়াও তিনি জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া ঢাকা, জামিয়া আরাবিয়া লালমাটিয়া, দারুল উলুম মিরপুর-৬, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া বাইতুল ফালাহ ঢাকা, বনানী টিএন্ডটি মাদ্রাসা ও মিরপুর দারুস সালাম সহ দেশের আরো অনেক উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি সহীহ বুখারীর শিক্ষাদান করেন৷[৪]

রাজনীতি[সম্পাদনা]

ছাত্রজীবন থেকে তিনি রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন৷ কাসেমুল উলুম কুমিল্লায় লেখাপড়ার সময় থেকেই তিনি আতাহার আলীর নেজামে ইসলাম পার্টির জেলা সেক্রেটারি ছিলেন এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নেজামে ইসলাম পার্টিকে সংগঠিত করেন ও কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নিযুক্ত হন৷ পরে মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জীর সম্মিলিত জোটে যোগদান করেন৷ তারপর কিছুদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকার পর আজিজুল হকের দাওয়াতে সাড়া দিয়ে তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি দলটির অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যান হন এবং আমৃত্যু এই পদে সক্রিয় থাকেন৷ ১৯৭৯ সালে তিনি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন৷[৪][৬]

তাসাউফ[সম্পাদনা]

তিনি ছাত্রজীবন থেকেই তাসাউফ চর্চা করতেন৷ তিনি থানভীর খলিফা রসূল খানের হাতে বায়আত গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে তার থেকে খেলাফত লাভ করেন৷ তারপর দারুল উলুম দেওবন্দের কারী মুহাম্মদ তৈয়বের হাতে বাইআত গ্রহণ করেন৷ তার মৃত্যুর পর পাকিস্তানের হাকিম মুহাম্মদ আখতারের হাতে বাইআত গ্রহণ করেন এবং খেলাফত লাভ করেন৷ ২০১০ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের শায়খুল হাদিস আব্দুল হক আজমিহেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফী তাকে খেলাফত দান করেন৷[৪]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

তিনি ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন৷ শাহ আহমদ শফীর ইমামতিতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার আলিবাজার মাঠে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে তার অসিয়ত অনুযায়ী নিজ বাবার কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী সহ প্রমুখ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ শোক প্রকাশ করেছেন।[৭]

২০২০ সালের ৮ মার্চ তার স্মরণে জাতীয় কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।[৮]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. উল্লাহ, মুহাম্মদ আহসান (২০২১)। বাংলা ভাষায় হাদিস চর্চা (১৯৫২-২০১৫) (পিএইচডি)। বাংলাদেশ: ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৪২২–৪২৩। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. হুসাইন, বেলায়েত (৩১ ডিসেম্বর ২০২০)। "২০২০ সালে ইসলামী অঙ্গনে যত শোক"কালের কণ্ঠ 
  3. ডেস্ক, ওয়েব (৩১ ডিসেম্বর ২০২০)। "বিদায়ী বছরে চিরবিদায়ী আলেমরা"সময় টিভি। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০২০ 
  4. রহমান, ওলিউর (৩ জানুয়ারি ২০২০)। "আল্লামা আশরাফ আলী রহ.: পরিবারের সদস্যদের স্মরণে"ইসলাম টাইমস 
  5. আজাদ, আবুল কালাম (২০ এপ্রিল ২০১৭)। "বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসায় কী পড়ানো হয়?"বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০২১ 
  6. মামুন, সাদিক (৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০)। "আল্লামা আশরাফ আলী (রহ.) ছিলেন দ্বীনের নিবেদিতপ্রাণ"ইনকিলাব 
  7. প্রতিবেদক, নিজস্ব (১ জানুয়ারি ২০২০)। "আল্লামা আশরাফ আলীর ইন্তেকাল"নয়া দিগন্ত 
  8. প্রতিবেদক, নিজস্ব (৮ মার্চ ২০২০)। "আল্লামা আশরাফ স্মরণে খেলাফত মজলিসের কনফারেন্স"বাংলাদেশ প্রতিদিন 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]