গিয়াসউদ্দিন (বীর প্রতীক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গিয়াসউদ্দিন
মৃত্যু২০০৪
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক
একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন গিয়াসউদ্দিন

গিয়াসউদ্দিন (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০৪) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১][২]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

গিয়াসউদ্দিনের পৈতৃক বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার সিটি করপোরেশন এলাকায়। তার বাবার নাম সামসুদ্দীন আহমেদ এবং মায়ের নাম আম্বিয়া খাতুন। তার স্ত্রীর নাম খুরশিদা বেগম। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

গিয়াসউদ্দিন ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিদ্দিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন অপারেশন, লাঙ্গলবন্দের সেতু অপারেশন, ফতুল্লায় আক্রমণ। নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার অন্তর্গত লাঙ্গলবন্দের সেতুতে মুক্তিযুদ্ধকালে চারজন পাকিস্তানি ও দুইজন বাঙালি ইপিআর ওই সেতুতে পাহারা দিতেন। সেখানে গভীর রাতে গিয়াসউদ্দিন ২২ জন সহযোদ্ধা নিয়ে সেখানে আক্রমণ করেন। পাকিস্তানিরা পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় এবং এরপর মুক্তিযোদ্ধারা বিস্ফোরক দিয়ে সেতু ধ্বংস করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ২৬ অক্টোবর গিয়াসউদ্দিন খবর পান তাদের অবস্থানস্থলের দিকে নদীপথে এগিয়ে আসছে পাকিস্তানি গানবোট। সে সময়ে গিয়াসউদ্দিন ছিলেন নারায়ণগঞ্জ এলাকায় যুদ্ধরত মুক্তিবাহিনীর একটি গেরিলা দলের দলনেতা। এ দলের অবস্থান ছিল মেঘনা-শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনার কলাগাছিয়ায়। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গানবোট দিনে, রাতে ওই এলাকায় টহল দিত। সহযোদ্ধাদের নিয়ে এর আগেও পাকিস্তানি গানবোটে আক্রমণ করার চেষ্টা করেন গিয়াসউদ্দিন। ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যার পরও তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে সারা রাত নদীর তীরে অপেক্ষা করেন কিন্তু ওইদিন কোন গানবোট আসেনি। ভোরে গিয়াসউদ্দিন সহযোদ্ধাদের নিয়ে নিজেদের গোপন শিবিরে ফিরে যান এবং বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় এক কৃষক দৌড়ে এসে তাকে পাকিস্তানি গানবোট আসার খবর জানান। কৃষক তাকে জানান, তিনি নদীতে গানবোট আসতে দেখেছেন এবং সেটি কলাগাছিয়ার দিকে এগিয়ে আসছে। গিয়াসউদ্দিনসহ পরিশ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধারা ৩০ জন দ্রুত তৈরি হয়ে আরআর গানসহ পুনরায় অবস্থান নেন নদীর তীরের সুবিধাজনক স্থানে। কিছুক্ষণের মধ্যেই গানবোটটি তাদের অস্ত্রের আওতার মধ্যে চলে আসে আর সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে তাদের আরআর গানসহ সব অস্ত্র। গিয়াসউদ্দিন তিনজন সহযোদ্ধার সহযোগিতায় নিখুঁত নিশানায় গানবোট লক্ষ্য করে তিনটি আরআর গোলা নিক্ষেপ করেন। এতে গানবোটটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে একদিকে হেলে পড়ে। এ সময় তার দুঃসাহসী কয়েকজন সহযোদ্ধা এগিয়ে গিয়ে নিজ নিজ অস্ত্র দিয়ে গুলি শুরু করেন। তাদের গুলিতে নিহত হয় দুজন পাকিস্তানি সেনা। এরপর গিয়াসউদ্দিন আরআর গানের আরও কয়েকটি গোলা ছুড়ে গানবোটটি পুরোপুরি ধ্বংসের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু তার সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি কারণ তুমুল গোলাগুলির শব্দ শুনে মুন্সীগঞ্জ টার্মিনাল থেকে সেখানে আরেকটি গানবোট দ্রুত চলে আসে। এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর বৃষ্টির মতো গোলাগুলি শুরু করে। এরপর সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান করাটা ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক। সে জন্য বাধ্য হয়ে গিয়াসউদ্দিন সহযোদ্ধাদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২২-১০-২০১২"। ২০১৮-০৭-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 

পাদটীকা[সম্পাদনা]

এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতেতোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না” শিরোনামে প্রকাশিত ধারাবাহিক প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।