উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা
উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা উত্তর ২৪ পরগনা | |
---|---|
পশ্চিমবঙ্গের জেলা | |
উপর থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে: ব্যারাকপুরের মঙ্গল পাণ্ডে পার্ক, ঠাকুরনগরে মতুয়া মহাসঙ্ঘের সদর দপ্তর, বেড়াচাঁপার লাল মসজিদ, বরানগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়, চন্দ্রকেতুগড়, দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি | |
পশ্চিমবঙ্গে উত্তর চব্বিশ পরগনার অবস্থান | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
প্রশাসনিক বিভাগ | প্রেসিডেন্সি |
প্রতিষ্ঠিত | ১ মার্চ ১৯৮৬ (১৭ ফাল্গুন ১৩৯২) |
সদরদপ্তর | বারাসত |
সরকার | |
• জেলাধ্যক্ষ | শ্রী শরদ কুমার দ্বিবেদী, আইএএস[১] |
• লোকসভা কেন্দ্র | ১. বনগাঁ, ২. ব্যারাকপুর, ৩. দমদম, ৪. বারাসত, ৫. বসিরহাট |
• বিধানসভা আসন | ১. বাগদা, ২. বনগাঁ উত্তর, ৩. বনগাঁ দক্ষিণ, ৪. গাইঘাটা, ৫. স্বরূপনগর, ৬. বাদুড়িয়া, ৭. হাবড়া, ৮. অশোকনগর, ৯. আমডাঙা, ১০. বীজপুর, ১১. নৈহাটি, ১২. ভাটপাড়া, ১৩. জগদ্দল, ১৪. নোয়াপাড়া, ১৫. ব্যারাকপুর, ১৬. খড়দহ, ১৭. দমদম উত্তর, ১৮. পানিহাটি, 19. কামারহাটি, ২০. বরানগর বিধানসভা কেন্দ্র, ২১. দমদম, ২২. রাজারহাট নিউটাউন, ২৩. বরানগর, ২৪. রাজারহাট গোপালপুর, ২৫. মধ্যমগ্রাম, ২৬. বারাসত, ২৭. দেগঙ্গা, ২৮. হাড়োয়া, ২৯. মিনাখাঁ, ৩০. সন্দেশখালি, ৩১. বসিরহাট দক্ষিণ, ৩২. বসিরহাট উত্তর, ৩৩. হিঙ্গলগঞ্জ |
আয়তন | |
• মোট | ৪,০৯৪ বর্গকিমি (১,৫৮১ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১,০০,০৯,৭৮১ |
• জনঘনত্ব | ২,৪০০/বর্গকিমি (৬,৩০০/বর্গমাইল) |
জনতাত্ত্বিক | |
• সাক্ষরতা | ৮৪.০৬ শতাংশ[২] |
• লিঙ্গানুপাত | ৯৫৫ |
প্রধান মহাসড়ক | এনএইচ ১২, এনএইচ ১১২ |
গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত | ১৫৭৯ মিমি |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা শহরের উত্তরপূর্ব দিকের সবচেয়ে জনবহুল জেলা। জেলাটি প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে (১৩৯০ বঙ্গাব্দে) ডা. অশোক মিত্রের প্রশাসনিক সংস্কার কমিটি এই জেলাকে বিভাজনের সুপারিশ করেন। ১ মার্চ ১৯৮৬-এ (১৭ ফাল্গুন ১৩৯২-এ) চব্বিশ পরগনা জেলাটিকে দ্বিখণ্ডিত করে ওই জেলার উত্তরাংশ নিয়ে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা স্থাপন করা হয়৷ এর প্রশাসনিক ভবন ও সদর দপ্তর বারাসত শহরে অবস্থিত৷ বারাসত, বারাকপুর, বনগাঁ, বসিরহাট, বিধাননগর এই পাঁচটি মহকুমা নিয়ে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা গঠিত।
নামকরণ
[সম্পাদনা]১৭৫৭ সালে বাংলার নবাব মীর জাফর কলকাতার দক্ষিণে কুলপি পর্যন্ত অঞ্চলে চব্বিশটি জংলীমহল বা পরগনার জমিদারি সত্ত্ব ভোগ করার অধিকার দেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে। এই চব্বিশটি পরগনা হলো:
- আকবরপুর
- আমীরপুর
- আজিমবাদ
- বালিয়া
- বাদিরহাটি
- ভবসনধারী
- কলিকাতা
- দক্ষিণ সাগর
- গড়
- হাতিয়াগড়
- ইখতিয়ারপুর
- খাড়িজুড়ি
- খাসপুর
- মেদনমল্ল
- মাগুরা
- মানপুর
- ময়দা
- মুড়াগাছা
- পাইকান
- পেচাকুলি
- সাতল
- শাহনগর
- শাহপুর
- উত্তর পরগনা
সেই থেকে জেলাটির নাম হয় চব্বিশ পরগনা। পরবর্তীকালে জেলাটির উত্তরাংশ নিয়ে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা গঠিত হয়।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]এই অনুচ্ছেদটিতে কোনো উৎস বা তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। |
প্রাচীন কাল
[সম্পাদনা]চব্বিশ পরগনা অঞ্চলটির অস্তিত্বের প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে গ্রিক ভুগোলবিদ টলেমির “ট্রিটিজ অন জিওগ্রাফি” গ্রন্থে৷ তার গ্রন্থে গঙ্গারিডি বা গঙ্গারিদাই নামক একটি অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে, যার বিস্তার ছিলো ভাগীরথী-হুগলি নদীর থেকে পূর্বে পদ্মা নদী অবধি। স্বভাবতই বর্তমান ২৪ পরগনা যে এই রাজ্যেরই দক্ষিণ-পশ্চিমে(নৈঋত কোণে) অবস্থিত ছিলো তা স্পষ্ট হয়৷ ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদদের উদ্দ্যোগে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা থানার অন্তর্গত বেড়াচাঁপা গ্রামে খনন করে পাওয়া বস্তুসমূহ প্রমাণ করে এই অঞ্চল সরাসরি গুপ্ত সাম্রাজ্যের অংশ না হলে গুপ্ত সাম্রাজ্যের সাংস্কৃৃতিক প্রভাব ছিল যথেষ্ট৷
হিউয়েন সাঙের (৬২৯-৬৮৫ খ্রিস্টাব্দ) ভারতভ্রমণকালে তিনি সমগ্র উত্তর ভারতে যে ১০০ টি মুল হিন্দু মন্দির ও ৩০ টি বৌদ্ধবিহারের উল্লেখ করেন তার বেশ কয়েকটির অবস্থান এই অঞ্চলকে নির্দেশ করে৷ গৌড়রাজ শশাঙ্ক এই অঞ্চলে নিজ শাসন কায়েম করতে পারেনি। পাল বংশের রাজা ধর্মপালের (৭৭০-৮১০ খ্রিস্টাব্দ) সময়ে এই অঞ্চল তার রাজ্যভুক্ত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তবে সেন যুগের বহু দেব-দেবীর মূর্তি জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আবিস্কৃত হয়েছে।
“মনসামঙ্গল” কাব্যে চব্বিশ পরগনা জেলার অনেক জায়গার নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। চাঁদ সওদাগর চম্পকনগরী থেকে যাত্রা শুরু করে তার তরী ভাসিয়েছিলেন ভাগীরথীর প্রবাহে।তিনি কুমারহট্ট, ভাটপাড়া,কাকিনাড়া,মুলাজোর,গারুলিয়া,ইছাপুর, দিগঙ্গা-চনক (ব্যারাকপুর),খড়দহ, চিৎপুর, কলিকাতা,কালীঘাট ইত্যাদি জায়গা পার হয়েছিলেন।তিনি চম্পকনগরী থেকে যাত্রা শুরু করে বারুইপুরে পৌছেছিলেন। কর্ণপুর রচিত “চৈতন্যচরিতামৃত” গ্রন্থে ও ২৪টি পরগনা জেলার অনেক জায়গার নামের উল্লেখ পাওয়া যায়।“মনসামঙ্গল” কাব্যে ও “চৈতন্যচরিতামৃত” গ্রন্থে পাওয়া বিভিন্ন জায়গার নাম ও বিবরণ তুলনা করলে দেখে যায় ২৪টি পরগনা জেলার উক্ত জায়গাগুলির অস্তিত্ব ছিল। চাঁদসওদাগর বারুইপুরে পৌছে আদি গঙ্গা তীরবর্তী মনসামন্দির লুঠ করেন। শ্রীচৈতন্যদেব বারুইপুরের কাছে অতিসরাতে অনন্ত পন্ডিতের আতিথ্য গ্রহণ করেন।মথুরাপুর থানা অঞ্চলে ছিল ছত্রভোগ বন্দর।
মধ্যযুগীয়
[সম্পাদনা]খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই অঞ্চলের নদীপথে পর্তুগিজ জলদস্যুদের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল৷ ১০০ বছর তাদের আদিপত্য বজায় ছিল উত্তর ২৪টি পরগনা ও দক্ষিণ ২৪টি পরগনার বসিরহাট অঞ্চলে। এই সময় পর্তুগিজ জলদস্যুদের অত্যাচারে অনেক সমৃদ্ধশালী জনপদ জনশূন্য হয়ে যায়। খ্রিস্টীয় শতাব্দীর শুরুতে মহারাজা প্রতাপাদিত্য সাগরদ্বীপ, সরসুনা ,জগদ্দল প্রভৃতি অঞ্চলে দুর্গ বানিয়ে এদের আটকাবার চেষ্টা করেন ও বিতাড়িত করতে সক্ষম হন৷ মহারাজা প্রতাপাদিত্য ছিলেন বাংলার বারো ভুঁইয়ার (১১ ভুঁইয়া ও ১ মুঘল সম্রাট) কজন, জলদস্যুদের পরাজিত করার পর তিনি যশোর,খুলনা, বরিশালসহ গোটা ২৪টি পরগনা জেলাতে আধিপত্য বিস্তার করেন৷ মহারাজা প্রতাপাদিত্য সলকা ও মগরাহাটের যুদ্ধে মুঘলসম্রাটের হাতে পরাজিত ও বন্দী হন৷ দিল্লি যাত্রাকালে কাশীর নিকট আততায়ী-এর হাতে তিনি নিহত হন৷ লক্ষ্মীকান্ত মজুমদাররে নাতি কেশবচন্দ্র মজুমদার মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে দক্ষিণ ২৪টি পরগনা ও খুলনার জমিদার নিযুক্ত হন।
১৬১০ খ্রিস্টাব্দে (১০১৭ বঙ্গাব্দে) মুঘলদের হাতে প্রতাপাদিত্য পরাজিত হয়৷ প্রতাপাদিত্যের পরাজয়ে বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী বংশের প্রতিষ্টাতা লক্ষ্মীকান্ত মজুমদার (গঙ্গোপাধ্যায়) বাংলার সুবেদার মানসিংহের পক্ষ নেন। এর প্রতিদানে ১৬১০ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীর তাকে মাগুরা,পাইকান, আনোয়ারপুর, কলকাতার জমিদারি স্বত্ত্ব দেন।
ব্রিটিশ শাসনকাল
[সম্পাদনা]একই সময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলাতে নিজের অবস্থান আরো শক্ত করতে থাকে৷ অতঃপর ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে (১১৬৪ বঙ্গাব্দে) ব্রিটিশ বাহিনী বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পলাশির যুদ্ধে পরাস্ত করেন ও বাংলায় ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়৷ যুদ্ধশেষে লর্ড ক্লাইভকে বাংলার প্রথম জায়গিরদার নিযুক্ত করা হয় ও তার মৃৃত্যুর পরে কোম্পানি সরাসরি এই শাসনভার নেয়৷ এরপর থেকে ব্যবসার আড়ালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য স্থাপনের সূত্রপাত ঘটে৷
১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে (১২০০ বঙ্গাব্দে) লর্ড কর্নওয়ালিসের সময়ে সমগ্র সুন্দরবন অঞ্চল চব্বিশ পরগনা অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল৷ ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে (১২০৯ বঙ্গাব্দে) নদিয়া আরও কিছু পরগনাকে চব্বিশ পরগনার অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে (১২২১ বঙ্গাব্দে) প্রশাসনিক সুবিধার্থে এই নবগঠিত জেলার জন্য আলাদা একজন কালেক্টর নিয়োগ করা হয়৷ পরে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে (১২২৪ বঙ্গাব্দে) পলতা ও বরাহনগর এবং নদীয়ার বলন্দা ও আনোয়ারপুর যথাক্রমে ১৮২০ ও ১৮২৪ সালে চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ আরো পরে খুলনার দক্ষিণাংশের বেশকিছু অঞ্চল ও বাখেরগঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিমে সামান্য অঞ্চলও এই জেলাটির সঙ্গে যুক্ত করা হয়৷ ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে (১২৩১ বঙ্গাব্দে) জেলাসদর কলকাতা থেকে বারুইপুরে স্থানান্তরিত করা হয় যা আবার ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে (১২৩৫ বঙ্গাব্দে) কলকাতারই দক্ষিণে আলিপুরে স্থানান্তরিত করা হয়৷ ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে (১২৪১ বঙ্গাব্দে) জেলাটিকে বারাসাত ও আলিপুর এই দুটি নতুনজেলাতে বিভক্ত করি হয়৷ পরে আবার নবনির্মিত জেলাদুটিকে একত্রিত করা হয়৷ পরে অবিভক্ত ২৪ টি পরগনা জেলা বিভিন্ন ব্রিটিশ বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়৷
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে (১৩১২ বঙ্গাব্দে) বঙ্গভঙ্গের সময়ে জেলা গঠন পুণর্বিশ্লেষ্য বিষয় হয়ে ওঠে৷ জেলাটির সুন্দরবন সংলগ্ন বেশ কিছু অঞ্চল পার্শ্ববর্তী খুলনা ও বাখেরগঞ্জ অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয় যা বর্তমানেও বাংলাদেশ মুল ভূখণ্ডের উক্ত অঞ্চলদুটিতে রয়েছে৷
স্বাধীনতা পরবর্তী
[সম্পাদনা]১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে (১৩৫৪ বঙ্গাব্দে) দেশভাগের সময় পূর্ববর্তী ২৪ পরগনা জেলার সম্পূর্ণ অংশ ভারতে যুক্ত হলেও যশোর জেলার বনগাঁ, বাগদা ও গাইঘাটা অঞ্চল এই জেলার সাথে যুক্ত করে স্বাধীন ভারতের ২৪ পরগনা জেলা গঠিত হয়৷ ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে (১৩৯০ বঙ্গাব্দে) ডা. অশোক মিত্রের প্রস্তাবনাতে ১৯৮৬ সালে জেলাটির উত্তর অংশ নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা গঠন করা হয় ও বিধাননগরকে এই জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
ঐতিহাসিক আন্দোলন
[সম্পাদনা]১২৩১ বঙ্গাব্দে(১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে) জেলাটি ব্রিটিশ বিরোধীতার মুলকেন্দ্র হয়ে ওঠে যখন বারাকপুর সেনানিবাসে বাসরত সিপাহীরা ইঙ্গ-বর্মা' যুদ্ধে ব্রিটিশদের পক্ষ নিয়ে লড়াই করতে মানা করে৷ এর কারণ ছিলো তৎকালীন ব্রাহ্মণ্যসমাজের মতে সমুদ্র পাড় করা ছিলো হিন্দুশাস্ত্র বিরূদ্ধ কাজ৷ ১১ই কার্তিক(২রা নভেম্বর) বিদ্রোহীদের ওপর আক্রমণ করা হয়, অনেকে পালিয়ে বাঁচলেও দলনেতাদের ব্রিটিশ বাহিনী ফাঁসি দেয়৷ কিছু ঐতিহাসিকদের মতে এটি ছিলো সিপাহী বিদ্রোহের সূত্রপাত৷
পরবর্তী পর্যায়ে ১২৬৩-৬৪ বঙ্গাব্দে(১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে) প্রেসিডেন্সি বিভাগের সদর দপ্তর বারাকপুরে সিপাহীদের বিদ্রোহ চরম আকার ধারণ করে৷ একে স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ বলেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে৷ বিদ্রোহ মুলত শুরু হয়েছিলো সেনানিবাসে আসা নতুন কার্তুজকে নিয়ে৷ সিপাহীরা সন্দেহ করেছিলো যে কার্তুজের কিছু অংশ সম্ভবতঃ এমন কিছু দিয়ে তৈরী যা ছিলো ধর্মবিরূদ্ধ৷ পরে তা প্রমাণ হয়ে যায় যে ঐগুলি গরু ও শুয়োরের চর্বি দিয়ে বানানো হয়েছিলো যা ভারতীয়দের জন্য অব্যবহার্য ছিলো কারণ এগুলিকে দাঁতে কেটে ভরতে হতো বন্দুকে৷ ফলস্বরূপ বারাকপুর সেনানিবাসে সিপাহী মঙ্গল পান্ডের অনুপ্রেরণায় সৈন্যদের তরফ থেকে ৪ঠা চৈত্র ১২৬৩ বঙ্গাব্দে(২০ মার্চ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে) বিদ্রোহ ঘোষিত হয়৷ এরপর থেকে ইংল্যাণ্ডের রাণীর প্রভাবে ভারতের শাসনভার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বদলে সরাসরি ইংল্যান্ড সাম্রাজ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে৷
নীলচাষীদের বিদ্রোহও জেলাটির ইতিহাসকে গৌরবান্বিত করেছে৷ ১১৮৪ বঙ্গাব্দে(১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে) লুইস বোনার্ড বাংলার ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগরের দুটি খামারে প্রথম নীলচাষ ও নীলের উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করেন৷ ফরাসিদের দৌলতে বয়নশিল্পে ও কাপড়ের রং ধরে রাখতে নীলের ব্যবহার ও চাহিদা ততদিনে ইউরোপে বৃৃদ্ধি পেয়েছিলো ফলে ব্রিটিশ কোম্পানিও এই নীলচাষকে বৃদ্ধি করতে চায়৷ এর ফলে পত্তনিপ্রথা চালু করে যেসব জমিতে নীলচাষ উৎকৃষ্ট সেখানের জমিদারদের থেকে কোম্পানি জমাগুলির মালিকানা দাবি করে৷ যদিও রাজা রামমোহন রায় ও দ্বারকানাথ ঠাকুরের মতো কিছু জমিদার এই ব্যবসার বিরোধিতা করছিলেন৷ এটি মুলত দু'ভাবে হতো, হয় ভুমিহীন শ্রমিকদের দ্বারা নীলকুঠির তত্ত্বাবধানে অথবা অন্যান্য চাষিদের নীলচাষে ঋণ দিয়ে৷ জমিদার ও পত্তনিদারদের হাতে সরাসরি এই দায়িত্ব থাকতো৷
১২৩৭ বঙ্গাব্দে(১৮৩০-৩১ খ্রিস্টাব্দে) বারাসাত, বনগাঁ, বসিরহাট অঞ্চলে নীলচাষে বিমুখ চাষীদের বিদ্রোহ দমন করতে কোম্পানি ও স্থানীয় জমিদাররা একীভূত হয়৷ পরিশেষে ১২৬৬ বঙ্গাব্দে(১৮৫৯-৬০) নাগাদ নীলকুঠিতে নীলচাষীদের প্রতি অত্যাচারকে কেন্দ্র করে নীলচাষীরা ও ২৪ পরগনার শ্রীরামপুর গ্রামের তালুকদার শিবনাথ ঘোষ সহ কিছু জমিদারগোষ্ঠীর সমর্থনে নীলবিদ্রোহ ২৪ পরগনা ও পার্শ্ববর্তী নদীয়া ও যশোর জেলাতে ব্যাপক আকার নেয়৷ নীলবিদ্রোহ সম্বন্ধীয় দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকটি বেশ উল্লেখযোগ্য৷
ভূপ্রকৃৃতি
[সম্পাদনা]উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলাটি নিম্ন গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত৷ গাঙ্গের ব-দ্বীপ বিশ্বের বৃৃহত্তম ব-দ্বীপ৷ জেলাটিতে কোনো উচ্চভূমি বা মালভূমির অস্তিত্ব নেই৷ এর ভূমিরূপকে মুলতঃ তিনভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে যথা-
- ১)ইছামতী-রায়মঙ্গল সমভূমি -
জেলাটির পূর্ব দিকে অবস্থিত বর্ষার জলে পুষ্ট বিভিন্ন ছোটো ছোটো নদী ও গঙ্গার শাখানদী দ্বারা বাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে এই সমভূমি গঠিত হয়েছে৷
- ২)উত্তর বিদ্যাধরী সমভূমি -
বিদ্যাধরী নদীর উত্তরাংশ প্রধানত বিভিন্ন নিকাশি নালা ও মজে যাওয়া নদীর দ্বারা পুষ্ট৷ এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট হলো লবনাক্ত ও অগভীর জলাভূমির উপস্থিতি৷
- ৩)হুগলি অববাহিকা -
হুগলি নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থিত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পশ্চিমাংশ হুগলি নদীর বাহিত পলি দ্বারা গঠিত৷ এই অঞ্চল বরাবর প্রাকৃৃতিক নদীর বাঁধ দেখা যায়৷
বনভূমি
[সম্পাদনা]উত্তর ২৪ পরগনার ৪৩ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল বনভূমি আচ্ছাদিত৷ পূর্ব প্রান্তে হিঙ্গলগঞ্জ, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি ও হাবড়া অঞ্চলে বনভূমির উপস্থিতি স্পষ্ট৷
কৃৃষিভূমি
[সম্পাদনা]উত্তর ২৪ পরগনা জেলাটি কৃৃষিকাজে উন্নত৷ বারাকপুর ও বারাসাত শিল্পাঞ্চল ও দক্ষিণের লবনাক্ত মৃৃত্তিকা বাদ দিলে প্রায় সর্বত্র চাষাবাদ করা হয়৷ ধান, গম, পাট, ইক্ষু, তৈলবীজ এ অঞ্চলের মুল ফসল৷
অর্থনীতি
[সম্পাদনা]এই অনুচ্ছেদটিতে কোনো উৎস বা তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। |
উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার গঙ্গাতীরবর্তী অঞ্চল কলকাতা মহানগর অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত৷ স্বভাবতই কলকাতা শহরের উত্তর শহরতলি শিল্পাঞ্চলটি শিল্প ও চাকরিবহুল৷ অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ কৃৃষিকাজ ছাড়াও খামার, কুটিরশিল্প, মাছচাষ ইত্যাদি জীবিকার সাথে জড়িত৷ কৃৃষিভিত্তিক ভূমি ব্যবহারের হার গড়ে ৩.২ হেক্টর৷ পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে অনগ্রসর নয় এমন জেলাগুলির মধ্যে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা অন্যতম
অপর একটি পুরাতন শিল্পোন্নত অঞ্চল হলো বারাকপুর মহকুমা ও বারাসত শহরাঞ্চল৷ এখানে মুলত কারখানা ও বেশ কিছু পুরোনো সংস্থার দপ্তর অবস্থিত, তাছাড়া কলকাতার সাথে পরিবহনের সুযোগ সুবিধা থাকার জন্য বারাকপুরে ও জেলাসদর বারাসাতে জেলা বিষয়ক দপ্তরগুলি অবস্থিত৷ গঙ্গা নদীর পাড়ের সৌন্দর্যায়নের সাথে বিভিন্ন শিশু উদ্যান, দর্শনোদ্যান ও উপস্থিত৷ ইতিহাস-সমৃৃদ্ধ স্থানগুলির উপস্থিতি ও ব্রিটিশ শাসনের কিছু ঐতিহ্যপুর্ণ স্থাপত্য সহ ধর্মীয় স্থলগুলি জেলার অর্থনীতিকে ক্রমোন্নত করছে৷
কলকাতার তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্রসমূহ এই জেলাতেই অবস্থিত, যা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে সিলিকন ভ্যালি নামে আখ্যায়িত হতে চলেছে৷ এটি কলকাতার জনপ্রিয় তথ্যপ্রযুক্তি ও বহুরাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলির অন্যতম আলোচনা ও আধিকারিক স্থান৷ ২০১৭ সালে আনুমানিক গণনা অনুযায়ী ৫.৮ লক্ষ চাকরির জোগান দিয়েছে এই কেন্দ্রগুলি যা বিধাননগরের মুলত সেক্টর ৫ ও সেক্টর ৩-এ কেন্দ্রীভুত৷
বিধাননগর ছাড়াও নিউ টাউন অঞ্চলটি দ্রুত উন্নতিশীল৷ সুযোগ সুবিধা, পরিবহণ ও সৌন্দর্যায়ন সহ পর্যটন ও এই অঞ্চলগুলির অর্থনীতির কাণ্ডারী।
- জেলাটির উত্তরে : বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলা
- জেলাটির উত্তর পূর্বে(ঈশান) : বাংলাদেশ রাষ্ট্র
- জেলাটির পূর্বে : বাংলাদেশ রাষ্ট্র
- জেলাটির দক্ষিণ পূর্বে(অগ্নি) : বাংলাদেশ রাষ্ট্র
- জেলাটির দক্ষিণে : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা
- জেলাটির দক্ষিণ পশ্চিমে(নৈঋত) : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা জেলা
- জেলাটির পশ্চিমে : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলা
- জেলাটির উত্তর পশ্চিমে(বায়ু) : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলা
- অক্ষাংশ: ২২ ডিগ্রী ১১' ০৬" উঃ থেকে ২৩ ডিগ্রী ১৫' ০২" উঃ
- দ্রাঘিমাংশ: ৮৮ ডিগ্রী ২০' পূঃ থেকে ৮৯ ডিগ্রী ০৫' পূঃ
- জেলার আয়তন: ৪০৯৪ বর্গ কিমি
- রাজ্যের জেলায়তনভিত্তিক ক্রমাঙ্ক : ২৩ টি জেলার মধ্যে ৯ম
- জেলার আয়তনের অনুপাত : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ৪.৬১% আয়তন
- মোট জনসংখ্যা (২০০১ জনগণনা): ৮৯৩৪২৮৬ (২০১১ জনগণনা): ১০০০৯৭৮১
- রাজ্যে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্রমাঙ্ক : ২৩ টি জেলার মধ্যে ১ম (ভারতে ২য়)
- জেলার জনসংখ্যার অনুপাত : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ১০.৯৭% লোক উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতে বাস করেন ৷
- জেলার জনঘনত্ব : ২০০১ সালে ২১৮২ এবং ২০১১ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২৪৪৫ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার হয়েছে
- জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার : ২০০১-২০১১ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃৃদ্ধির হার ১২.০৪% , যা ১৯৯১-২০১১ সালের ২২.৬৯% বৃদ্ধির হারের থেকে কম ৷
- লিঙ্গানুপাত : ২০১১
- সমগ্র : ৯৫৫
- শিশু(০-৬ বৎ) : ৯৫৬
- স্বাক্ষরতা : ৭৮.০৭%(২০০১) ৮৪.০৬%(২০১১)
- পুরুষ : ৮৩.৯২%(২০০১) ৮৭.৬১%(২০১১)
- নারী : ৭১.৭২%(২০০১) ৮০.৩৪% (২০১১)
- শিশুর(০-৬ বৎ) অনুপাত : সমগ্র জনসংখ্যার ৯.৫৭%
ধর্ম
[সম্পাদনা]উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ৫৩.৫% জনগণ সনাতনধর্মাবলম্বী ।৪৬% ইসলাম ধর্মাবলম্বী । অন্যান্য ০.৫% ।
জনসংখ্যার উপাত্ত
[সম্পাদনা]ভাষা
[সম্পাদনা]নদনদী
[সম্পাদনা]উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অবস্থান নিম্ন গঙ্গা-বদ্বীপ অঞ্চলে তাই এ জেলায় প্রবাহিত নদনদীগুলি গঙ্গা-পদ্মার শাখানদী ও মূলত জোয়ারের জলে পুষ্ট নদী৷ জেলাটিতে প্রবাহিত নদীগুলি নিম্নরূপ-
- ইছামতি নদী
- বেতনা নদী
- কপোতাক্ষ নদ
- কোদালিয়া নদী
- যমুনা নদী
- হুগলি নদী
- সোনাই খাল{পূর্বনাম সুবর্ণবতী জলাভাবে তা বর্তমানে খালে পরিণত হয়েছে}
- নোয়াই খাল{পূর্বনাম লাবণ্যবতী জলাভাবে তা বর্তমানে খালে পরিণত হয়েছে}
- বিদ্যাধরী নদী
- পদ্মা নদী
- চৈতা নদী
- চালুন্দিয়া নদী
- নাউভাঙা নদী
- ধানশা নদী
- বড় কলাগাছি নদী
- ছোট কলাগাছি নদী
- রায়মঙ্গল নদী
- ঝিল্লা নদী
- হাড়িয়াভাঙা নদী
- কাঠাখালি নদী
- সোনাই নদী
পরিবহণ ও যোগাযোগ
[সম্পাদনা]উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা হল রেলপথ। কলকাতা (শিয়ালদহ) থেকে নৈহাটি মেন লাইন, কলকাতা (শিয়ালদহ)থেকে বনগাঁ শাখা।এবং বারাসত থেকে হাসনাবাদ শাখা।
এছাড়াও বাস পরিষেবা খুবই উন্নত। জেলা সদর বারাসত তিতুমীর বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই বাস পরিষেবা অত্যন্ত দৃঢ়। বিধাননগর (করুণাময়ী), নিউ টাউন, বারাসত, বরাহনগর, হাবরা, বসিরহাট, বনগাঁ, কাকিনাড়া, নৈহাটি, দেগঙ্গা, স্বরূপনগর, মছলন্দপুর, ব্যারাকপুর, অশোকনগর, চাকলা (লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ধাম), হাসনাবাদ প্রভৃতি বাস টার্মিনালগুলি থেকে জেলা ও জেলার বাইরে বাস পরিষেবা চালু আছে।
পশ্চিমবঙ্গের ব্যস্ততম বিমানবন্দর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার দমদম শহরে অবস্থিত।
পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা]উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হল দক্ষিণেশ্বর, বিধাননগর, নিউ টাউন, ব্যারাকপুর, টাকি, চন্দ্রকেতুগড়, বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ইত্যাদি।
==ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি== পীর গোরাচাঁদ হজরত আব্বাস আলী রহঃ এর মাজার শরীফ ও চন্দ্রকেতু রাজার রাজগৃহের ধ্বংসাবলি অবশিষ্ট বেড়াচাঁপা গড়। মরহুম হজরত উম্মেদ আলী রহঃ হাতে গড়া হাদিপুর শাহ আনোয়ারুল উলুম ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা এক ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
[সম্পাদনা]বিদ্যালয়
[সম্পাদনা]- ঝুরুলী আদর্শ বিদ্যাপীঠ
- রাজবল্লভপুর উচ্চ বিদ্যালয়
- চৈতন্য উচ্চ বিদ্যালয়
- বরানগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়
- প্রফুল্ল নগর বালিকা বিদ্যালয়
- অশোকনগর বানীপিঠ গার্লস হাই স্কুল
- প্রফুল্ল নগর বিদ্যামন্দির
- হাবরা হাই স্কুল
- ভুদেব স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়
- আগরপাড়া মহাজাতি বিদ্যাপীঠ
- ইছাপুর বিভুকিঙ্কর উচ্চ বিদ্যালয়।
- চাঁদপড়া বাণী বিদ্যা বীথি
- গরিফা উচ্চ বিদ্যালয়
- বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়
- সোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়
- নহাটা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- বারাসাত গভ: হাই স্কুল
- বারাকপুর গভ: হাই স্কুল
- বিষ্ণুপুর স্যার রমেশ ইনস্টিটিউশন
- সপ্তগ্ৰাম সর্ব্বেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় (বাগু হাইস্কুল)
- শিখরপুর নিন্ম বুনিয়াদি বিদ্যালয়
- আড়িয়াদহ কালাচাঁদ উচ্চ বিদ্যালয়
- নৈহাটি নরেন্দ্র নিকেতন।
- দক্ষিণেশ্বর আদ্যাপীঠ অন্নদা বিদ্যামন্দির
- দোগাছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।
- নৈহাটি মহেন্দ্র বিদ্যালয়।
- নৈহাটি আদর্শ বিদ্যালয়।
- প্রফুল্ল সেন গার্লস
- দক্ষিণ চাতরা উচ্চ বিদ্যালয়।
- চাতারা নেতাজী বালিকা শিক্ষা নিকেতন।
- চারঘাট মিলন মন্দির বিদ্যাপীঠ,
- উষুমপুর আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়
- বেলঘরিয়া দেশপ্রিয় বিদ্যানিকেতন
- মধ্যমগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়
- বেড়াচাঁপা দেউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।
- বিরাটি মহাজাতি বিদ্যামন্দির
- ঠাকুরনগর উচ্চ বিদ্যালয়
- ঠাকুরনগর বালিকা বিদ্যালয়
- শিমুলপুর আনন্দপাড়া নরহরি বিদ্যাপীঠ
- রামচন্দ্রপুর পল্লীমঙ্গল বিদ্যাপীঠ
- কয়া পি এ এস হাইস্কুল
- গাইঘাটা উচ্চ বিদ্যালয়
- গোপালনগর গিরিবালা বালিকা বিদ্যালয়
- গাইঘাটা বেণীমাধব বালিকা বিদ্যা্লয়
- গোপালনগর হরিপদ ইনস্টিটিউশন
- অম্বিকাপুর আলতাফ হোসেন হাই স্কুল
- নিউ বনগাঁ হাই স্কুল
- চাঁদা ললিত মোহন উচ্চ বিদ্যালয়
- গাঁড়াপোতা উচ্চ বিদ্যালয়
- গাড়াকুপী হাইস্কুল
মহাবিদ্যালয়
[সম্পাদনা]- বসিরহাট কলেজ
- নারুলা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি[৬]
- বারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ
- টাকি সরকারি কলেজ
- বিধাননগর কলেজ
- গোবরডাঙ্গা হিন্দু কলেজ
- চন্দ্রকেতুগড় শহীদুল্লাহ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়
- শ্রীচৈতন্য কলেজ, হাবড়া
- বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ
- সারদা মা গার্লস কলেজ
- ডিরোজিও মেমোরিয়াল কলেজ
- পূর্ব কলকাতা গার্লস কলেজ
- মৃণালিনী দত্ত মহাবিদ্যাপীঠ
- প্রকৌশল ও চামড়া প্রযুক্তির সরকারি মহাবিদ্যালয়
- বারাসাত কলেজ
- সরোজিনী নাইডু কলেজ ফর উইমেন,
- পি আর ঠাকুর গভ. কলেজ
বিশ্ববিদ্যালয়
[সম্পাদনা]- হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়
- ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট
- মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়
- ভগিনী নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়
- অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়
- টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি
- নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
- ব্রেনওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়
- জেআইএস বিশ্ববিদ্যালয়
সীমান্ত
[সম্পাদনা]এই জেলার বেশ কিছুটা অংশ বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর রয়েছে
বিভাগ
[সম্পাদনা]প্রশাসনিক উপবিভাগ
[সম্পাদনা]ব্যারাকপুর মহকুমা
[সম্পাদনা]হুগলী নদীর পূর্ব পারে জুড়ে বারাকপুর মহকুমার প্রশাসনিক সদর দপ্তর বারাকপুর৷ প্রধানত শহরকেন্দ্রিক এই মহকুমা ইন্জিনিয়ারিং, পাটকল, রাসায়নিক শিল্পর জন্য বিখ্যাত৷ ভারতের প্রাচীনতম সেনানিবাস বারাকপুরে অবস্থিত৷ ইতিহাসগত ভাবে বারাকপুর মহকুমার গুরুত্ব অপরিসীম৷ ১৮৫৭র মহাবিদ্রোহর প্রথম শহীদ বারাকপুরের মঙ্গল পান্ডে৷ এছাড়া বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মস্থান বারাকপুর মহকুমা৷ হিন্দুতীর্থ দক্ষিণেশ্বর এই মহকুমায় অবস্থিত৷
অসংখ্য বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় সমৃদ্ধ বারাকপুর মহকুমা শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে৷ এখানে মেডিক্যাল কলেজ সহ একাধিক উন্নতমানের সরকারি ও বেসরকারী হাসপাতাল আছে৷
সড়কপথ, জলপথ ও রেলপথে বারাকপুর কলকাতা সহ সমগ্র রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত৷ মেট্রোরেল বারাকপুর মহকুমাকে নোয়াপাড়া ও দমদম স্টেশনের মাধ্যমে যুক্ত করেছে, যা অদূর ভবিষ্যতে আরো সম্প্রসারিত হবে৷ কলকাতা বিমানবন্দর প্রশাসনিক ভাবে বারাকপুর মহকুমার অন্তর্গত৷
বারাসত এই জেলার জেলাসদর৷ পাঁচটি পৌরসভা সমৃদ্ধ এই মহকুমায় ৭টি ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতি আছে৷ যশোহর রোড, ৩৪ নং জাতীয় সড়ক দ্বারা এই মহকুমা কলকাতার সঙ্গে যুক্ত৷ এছাড়া রেলপথে এই মহকুমা কলকাতাকে বসিরহাট ও বনগাঁ মহকুমাকে যুক্ত করেছে৷ শীঘ্রই মেট্রোরেলও এই মহকুমাকে কলকাতার সঙ্গে যুক্ত করবে
এই মহকুমাতেও অনেক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে৷ সরকারি বেসরকারী অনেকগুলি হাসপাতাল মহকুমা তথা রাজ্যের মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করছে৷
বনগাঁ মহকুমা
[সম্পাদনা]বনগাঁ মহকুমা বনগাঁ, গাইঘাটা ও বাগদা ব্লক ও বনগাঁ পৌরসভা নিয়ে গঠিত৷ সীমান্ত বাণিজ্য ও কৃষি এই মহকুমার প্রধান অর্থনৈতিক ভিত্তি৷ সড়কপথে যশোর রোডের মাধ্যমে মহকুমাটি কলকাতার সঙ্গে যুক্ত৷ রেলপথে বনগাঁ কলকাতা ও নদীয়ার রাণাঘাটের সঙ্গে যুক্ত৷
মতুয়া সম্প্রদায়ের পূণ্যতীর্থ ঠাকুরনগর এই মহকুমায় অবস্থিত৷
বসিরহাট এইজেলার বৃহত্তম মহকুমা৷ তিনটি পৌরসভা ১০টি ব্লক নিয়ে এই মহকুমা গঠিত৷ কৃষিভিত্তিক এই মহকুমার দক্ষিণ অংশ সুন্দরবনের অংশ৷
টাকী রোড এবং রেলপথে মহকুমাটি কলকাতার সঙ্গে যুক্ত৷
বিধাননগর মহকুমা
[সম্পাদনা]বিধাননগর মহকুমা বিধাননগর পৌরসংস্থা ও রাজারহাট সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক নিয়ে গঠিত৷ উন্নত আধুনিক নগরজীবনের সকল সুবিধা সম্পন্ন বিধাননগর রাজ্যের অন্যতম প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র৷ তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পর ক্ষেত্রে ভারতের অন্যতম কেন্দ্রস্থল বিধাননগর৷
বিধানসভা আসন
[সম্পাদনা]এই জেলায় ৩৩টি বিধানসভা কেন্দ্র আছে, যা রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ৷
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ
[সম্পাদনা]- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্যিক
- সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্যক, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সহোদর
- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্যিক
- বিমল কর, বাংলা সাহিত্যিক
- প্রমথনাথ বসু, বাঙালি ভূতত্ত্ববিদ, বিজ্ঞানী
- প্রমথনাথ মিত্র, বিপ্লবী
- তারকনাথ দাস, বিপ্লবী
- অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার, অধ্যাপক, গবেষক। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির প্রাক্তন সভাপতি।
- প্রভাস সরকার, বাঙালী বিপ্লবী
- উমাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঙালি কবি
- ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্যিক
- জিৎ গাঙ্গুলী
- শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
- অভিষেক চ্যাটার্জী
- মৃত্যুঞ্জয় বরাট সেনগুপ্ত
- মাখনলাল ঘোষ
- নলিনীরঞ্জন সেনগুপ্ত
- উমানাথ গুপ্ত, ধর্মপ্রচারক, লেখক
- পঞ্চানন ঘোষাল, অপরাধবিজ্ঞানী, লেখক
অণিমা মুখোপাধ্যায়, বাঙালি কবি, চিত্রকর (বিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে একবিংশ শতাব্দীর বর্তমান..) ।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "জেলাধ্যক্ষ"। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা, পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০২৪।
- ↑ "Provisional Population Totals Paper 1 of 2011 : West Bengal"। Census of India। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৬।
- ↑ https://www.census2011.co.in/census/district/11-north-twenty-four-parganas.html
- ↑ http://www.censusindia.gov.in/2011census/C-16.html
- ↑ "DISTRIBUTION OF THE 22 SCHEDULED LANGUAGES-INDIA/STATES/UNION TERRITORIES - 2011 CENSUS" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৬।
- ↑ "নারুলা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি"। NIT। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৮।