বিষয়বস্তুতে চলুন

রাণাঘাট

স্থানাঙ্ক: ২৩°১১′ উত্তর ৮৮°৩৫′ পূর্ব / ২৩.১৮° উত্তর ৮৮.৫৮° পূর্ব / 23.18; 88.58
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাণাঘাট
শহর
রাণাঘাট জংশন রেলস্টেশন
রাণাঘাট জংশন রেলস্টেশন
রাণাঘাট পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
রাণাঘাট
রাণাঘাট
পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে রাণাঘাটের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°১১′ উত্তর ৮৮°৩৫′ পূর্ব / ২৩.১৮° উত্তর ৮৮.৫৮° পূর্ব / 23.18; 88.58
দেশ ভারত
Stateপশ্চিমবঙ্গ
জেলানদিয়া
সরকার
 • ধরনপশ্চিমবঙ্গ সরকার
 • শাসকSub-Divisional Officer, Ranaghat
 • পৌরপ্রধানকোশলদেব বন্দোপাধ্যায় (তৃণমূল কংগ্রেস)
 • উপ পৌরপ্রধানআনন্দ দে
আয়তন
 • মোট৭.৭২ বর্গকিমি (২.৯৮ বর্গমাইল)
উচ্চতা৮ মিটার (২৬ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট২,৩৫,৫৮৩ (suburban only)
ভাষা
 • সরকারিবাংলা, ইংরাজি
সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০)
ডাক সূচক সংখ্যা৭৪১২০১
Telephone code91-3473-2xxxxx
যানবাহন নিবন্ধনWB-52
লোকসভা কেন্দ্ররানাঘাট
বিধানসভা কেন্দ্ররাণাঘাট উত্তর-পূর্ব
ওয়েবসাইটwww.ranaghat.org
রাণাঘাট টাউন হল "নজরুল মঞ্চ" ও অতিথি নিলয় "আহেলী"

রাণাঘাট, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়া জেলার একটি মহকুমা শহর ও পৌরসভা এলাকা। এটি শিয়ালদহ - লালগোলা সেকশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন স্টেশন। রাণাঘাট স্টেশনে মোট ৬ টি প্ল্যাটফর্ম আছে। এই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন ও তার সন্নিকটে পাঁচটি পায়ে হাঁটা ওভারব্রিজ এবং একটি সাবওয়ে আছে।

নামকরণ

[সম্পাদনা]

বর্তমানে রাণাঘাট নামটি সবাই জানলেও এই নামকরণের পশ্চাতে একাধিক মতামত পাওয়া যায়। কিছু কিছু ইতিহাসবেত্তাদের মতানুসারে, রাণাঘাটের পূর্বনাম ছিল ব্রহ্মডাঙা। চূর্ণী নদীর তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন জনপদে রনা বা রানা নামে এক ডাকাতের মূল ঘাঁটি ছিল। তার ভয়ে আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দারা কাঁপত। চূর্ণী নদীতে যাত্রী ও পণ্য নিয়ে তখন বড়ো বড়ো নৌকা চলত। তবে রানার ভয়ে সবাই দলবদ্ধ ভাবে যেত। এই ভয়ের কারণেই বাসিন্দারা ব্রহ্মডাঙাকে আর ব্রহ্মডাঙা বলত না। বলত রানার ডাকাতের ঘাঁটি বা রানার ঘাট। এই ভাবেই ব্রহ্মডাঙা হয়ে গেল রাণাঘাট।
রাণাঘাটের নামকরণের উৎপত্তি হিসাবে কিছু ঐতিহাসিক ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, কোনো রানি বা রানার (রাজপুতের যোদ্ধা) নাম এবং ঘাট (নদীর পাড়) একত্রিত হয়ে রাণাঘাট হয়েছে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

রাণাঘাট চূর্ণী নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ। রাণাঘাটের রেল জংশনটি দেশভাগের পূর্বে অতি গুরুত্ববাহী ছিল। এই শহরে পৌরসভা তৈরি হয় ১৮৬৪ সালে। মহকুমা শাসক হিসেবে আসেন বিখ্যাত কবি নবীনচন্দ্র সেন। শহরের প্রথিতযশা মানুষদের মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্র জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কালীময় ঘটক, নদিয়া কাহিনীর রচয়িতা কুমুদনাথ মল্লিক, শোক কাব্য 'অশ্রু'-র কবি ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, নাট্যকার দেবনারায়ণ গুপ্ত, কবি গোবিন্দ চক্রবর্তী, কবি নিজন দে চৌধুরী, শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী নগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, নগেন্দ্রনাথ দত্ত, শিবকুমার চট্টোপাধ্যায়, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র সন্তোষকুমার বোস, অলিম্পিয়ান ফুটবলার নিখিল নন্দী, অনিল নন্দী, অজিত নন্দী প্রমুখ। সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন কবি কার্তিক মোদক ( সাহিত্য পত্রিকা - 'সীমান্ত সাহিত্য' )[], কবি সাধনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ( সাহিত্য পত্র - 'আমরা পদাতিক' )[]। শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় রাণাঘাটের জমিদার পালচৌধুরীদের বড় অবদান আছে। খেলাধুলা, নাটক, সাহিত্য পত্রিকা, বিজ্ঞান আন্দোলন এবং সংগীত জগতের নিজস্ব ঘরানাতে রাণাঘাটের মানুষ বাংলার সংস্কৃতি জগতে অবদান রেখেছেন[]

দেবী সিদ্ধেশ্বরী

[সম্পাদনা]

রানাঘাটের সিদ্ধেশ্বরী মাকে চিহ্নিত করা হয় সেদিনের ব্রহ্মডাঙ্গা, আজকের রানাঘাটের গ্রামদেবী হিসেবে। রণা ডাকাত এই কালীর পূজা করতেন বলে জনশ্রুতিতে এই কালী রণা ডাকাতের কালী নামেও পরিচিত।

জনশ্রুতিতে এই ডাকাত দল এবং মা সিদ্ধেশ্বরীর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন মহাসাধক রামপ্রসাদ সেন :

"কথিত আছে, সাধক রামপ্রসাদ এক বার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁকেও বন্দি হতে হয় রণের হাতে। ডাকাত সর্দার সাধককে বলি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়। শেষ পর্যন্ত মা কালীর উদ্দেশ্যে গান গেয়েছিলেন সাধক। সেই গানের সুর ডাকাত সর্দারকে মুগ্ধ করেছিল। প্রাণরক্ষা হয় রামপ্রসাদের।"

[]

শোনা যায় ডাকাত সর্দারের মৃত্যুর পর দেবীর পুজো বন্ধ হয়ে যায়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র আবার এই দেবীর পুজো চালু করেন :

"জানা যায়, কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নাদেশ পান রন ডাকাতের পূজিতা দেবী অনাবৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। তারপর রাজার উদ্যোগে মূর্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুজোর্চনার জন্য বাংলাদেশের যশোহর থেকে আনা হয় সেবাইতদের।"

[]

জনশ্রুতি - প্রথমদিকে দেবীর মূর্তিতে পুজো হতো না। ঘটে অথবা বেদিতে পুজো হতো। ডাকাত সর্দারের শেষ জীবনে অথবা মৃত্যুর পর প্রথম কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়।[]

কথিত আছে - মূল মূর্তিটি বিসর্জিত হয়। পরে নতুন মূর্তি স্থাপন করা হয় :

"ব্রিটিশ জমানায় কোনও এক সাহেব একবার প্রাণভয়ে মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দেবালয়ে বিধর্মী প্রবেশের কারণে সংস্কারাচ্ছন্ন সাধারণ মানুষ দেবীমূর্তি বিসর্জন দিয়ে দেয় এবং মন্দির ভেঙে ফেলা হয়। মন্দিরের ইতিহাস বলে ভোলানাথ ভট্টাচার্য ছিলেন প্রথম সেবাইত। বালানন্দ স্বামী মহারাজের শিষ্য ছিলেন ভোলানাথ। গুরুর আদেশে তিনি মায়ের পাথরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এর জন্য ভোলানাথ বারাণসী থেকে পাথরের মূর্তি এনে পুজো শুরু করেন। নতুন করে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়। মাঘ মাসের ২৯ তারিখ নবকলেবরে সূচনা হয়েছিল মন্দিরের।"

[]

রানাঘাটের প্রাচীন দুর্গাপুজো

[সম্পাদনা]

রানাঘাটের প্রাচীনতম দুর্গা পূজাগুলির কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় রানাঘাট শর্মা পাড়ার শর্মা চৌধুরী বাড়ির দুর্গা পূজার কথা। দেবী দুর্গা এখানে "বুড়ো মা’'।[] এই পরিবার দাবি করেন - ১২৬২ সালে ব্রহ্মডাঙায় (বর্তমানে রানাঘাট শহরে) এসে রামকুমার চক্রবর্তী এই দুর্গাপুজোর পত্তন করেন।[] বলা হয় দেবী দুর্গার এই প্রাচীন পুজোর প্রথম প্রচলন হয়েছিল ঘটে, প্রতিমা আসে এর অনেক পরে।[১০]

এই প্রাচীন পুজোর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে আছে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কথা :

"কৃষ্ণনগরের প্রাসাদে শুয়ে পালঙ্কে শুয়ে কৃষ্ণচন্দ্র এক দিন স্বপ্নে দেখলেন— স্বয়ং দুর্গা এসে বলছেন, “রানাঘাটের মুখোপাধ্যায় বাড়িতে গেলে তুই আমার দেখা পাবি।” রাজা এলেন, মৃন্ময়ী মূর্তির মধ্যে দেখলেন দুর্গার চিন্ময়ী রূপ। তা দেখে আপ্লুত হয়ে মুখোপাধ্যায়দের ‘শর্মা চৌধুরী’ উপাধি দিয়ে গেলেন রাজা। সেই থেকে রানাঘাটের সেই মুখোপাধ্যায় বাড়ি ‘শর্মাবাড়ি’ বলে পরিচিতি পেল। এবং সেই বাড়ির সদস্যদের মুখে-মুখেই বংশ পরম্পরায় চলে আসছে এই ‘কৃষ্ণচন্দ্রের আখ্যান’।"

[১১]

এখানে মাতৃ আরাধনা হয় তালপাতার প্রাচীন পুঁথি অনুসারে :

“বাংলায় লেখা প্রাচীন তালপাতার পুঁথি মতে এই বাড়ির পুজো হয়ে আসছে। ওই পুঁথি অন্তত সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো হবে। মূল যে পুঁথি ছিল তা নষ্ট হয়ে যাওয়ায়, তার অনুলিপি করেই এই পুঁথি লেখা হয়।”

[১২]

মূল প্রাচীন প্রতিটি অবশ্য পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেলে যে তার ঐতিহাসিক মূল্য আলাদা তাৎপর্য বহন করত তা বলার অপেক্ষা রাখে না :

“প্রাচীন মূল পুঁথিটি থাকলে তা মধ্যযুগের বাংলা লিপির নিদর্শন হিসেবে গ্রাহ্য হতে পারত। সেটির তো দেখা মেলেনি। তবে পুজোর জন্য এখনও যে পুঁথিটি ব্যবহৃত হয়, সেটিও যথেষ্ট প্রাচীন।”

[১৩]

শোনা যায়, পুজোর প্রচলনের সময়ে ভিক্ষা করেই তার সংস্থান হত।[১৪] সেই রীতি আজও আছে।[১৫] প্রাচীন প্রথা মেনে আজও এখানে নবমীতে হয় কাদা খেলা।[১৬] দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন হয় সেই পুরনো সময় থেকে চলে আসা নির্দিষ্ট পথ ধরেই।[১৭]

রানাঘাটের অন্যতম প্রাচীন দুর্গাপুজো পালচৌধুরী জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো। দুই ভাই কৃষ্ণপান্তি পাল এবং শম্ভুপান্তি পাল এখানে জমিদারির পত্তন করেন।[১৮] এখানে একের পর এক প্রাসাদ, নাটমন্দির গড়ে উঠতে থাকলে শুরু হয় দুর্গাপুজো।[১৯] এঁদের বাণিজ্য ও জমিদারির শ্রীবৃদ্ধি দেখে চৌধুরী উপাধি দিয়েছিলেন ব্রিটিশরা।[২০] কৃষ্ণপান্তিকে 'রাজা' উপাধিও দিতে চেয়েছিলেন ব্রিটিশরা। কিন্তু সে সময় নদিয়ারাজ ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র। তাই রাজা উপাধি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন কৃষ্ণপান্তি।[২১] একটা সময় মহালয়ার পর দিন অর্থাৎ প্রতি পদে শুরু হত দেবীর আরাধনা। ১৯৯৩ সাল থেকে অবশ্য ষষ্ঠী থেকেই শুরু হয় পুজো।[২২] পালচৌধুরী বাড়ির পুজোয় পশুবলি প্রথা নেই। তবে রীতি মেনে চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়।[২৩] অষ্টমীতে হয় কুমারী পুজো।[২৪]

পাঁচশ বছর অতিক্রান্ত রানাঘাট ঘোষ বাড়ির দুর্গাপুজোয়।[২৫] এখানে দেবীর নাম দেবীমা। তখন সালটা ছিল ১৫২০। রানাঘাটের নাম তখন ছিল ব্রহ্মডাঙা। এই ঘোষ পরিবারের পৈতৃক জমিদারি ছিল হুগলি জেলার আখনা গ্রামে। সম্পত্তি নিয়ে শরিকি বিবাদের মনক্ষুণ্ণ কারণে জমিদার চৈতন্যচরণ ঘোষ তাঁর পরিবারের সকলকে নিয়ে চলে আসেন নদিয়ার ব্রহ্মডাঙায়। গৃহদেবতা লক্ষ্মী-জনার্দনকে সঙ্গে নিয়ে এসে ব্রহ্মডাঙায় মন্দির নির্মাণ করেন। সেই বছরেই বাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপুজো।[২৬] এক সময় নবমীতে ৫১টি পাঁঠা বলি দেওয়া হত। অষ্টমীর দিন সন্ধিপুজোর সময় দেওয়া হত মোষবলি।[২৭] ১৫৩০ সালে এক স্বপ্নাদেশে বলিপ্রথা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।[২৮] পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাস - দেবীমা এখানে নিজের হাতে রান্না করে নেন। সেই বিশ্বাসে আজও দুর্গাপ্রতিমার সামনে দেওয়া হয়, ঘি মাখানো আতপ চাল, কাঁচা সবজি এবং বিভিন্নরকম মশলাপাতি।[২৯]

১৭৭৯ সালে রানাঘাট পালবাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপুজো।[৩০] অবিভক্ত বাংলার খুলনা থেকে বাণিজ্যের কারণে রানাঘাটে আসেন সাগরেশ্বর পাল। ক্রমে ক্রমে ব্যবসার শ্রী বৃদ্ধি হতে থাকলে শুরু হয় মাতৃ আরাধনা।[৩১] শুরুর থেকেই এখানে পশুবলির প্রচলন নেই।[৩২] তবে চালকুমড়ো, শশা, আখ বলি দেওয়া হয়।[৩৩] আয়োজন করা হয় কুমারী পুজোও।[৩৪]

রাণাঘাটের ময়ূরপঙ্খী

[সম্পাদনা]

রাণাঘাট-এর গোপালক সম্প্রদায়ের গোষ্ঠ বিহার যাত্রা এবং ময়ূরপঙ্খী নদিয়ার ঐতিহ্য, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আলাদা তাৎপর্য বহন করে। বছরের শেষ দিন এবং নববর্ষের প্রথম দিনে রাণাঘাট -এর স্থানীয় গো-পালক সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাঁদের গৃহপালিত গোরুদের বিকেল বেলায় সাজিয়ে এলাকায় বের করতেন শোভাযাত্রা। একে বলা হত ‘গোষ্ঠ বিহার যাত্রা’। এখন নববর্ষের প্রথম দিনে বের হয় ময়ূরপঙ্খী সহযোগে শোভাযাত্রা। এইরকম নামকরণের কারণ শোভাযাত্রার বিশেষ সজ্জা :

"অনেকেই বলেন, শোভাযাত্রার শুরুতে সুসজ্জিত যে গরুর গাড়িটি রাখা হয়, তার ওপর কৃত্রিম পেখম মেলা ময়ূরের অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়। আর এর থেকেই শোভাযাত্রার নামকরণ ‘ময়ূরপঙ্খী’।"

[৩৫]

এক সময় এই শোভাযাত্রায় কবিগান, তরজা গান থাকতো।[৩৬] রানাঘাটের দক্ষিণপাড়া এবং আনুলিয়া পঞ্চায়েতের সদগোপ পাড়া থেকে এই ধরনের শোভাযাত্রা বা ময়ূরপঙ্খী বের হয়।[৩৭]

রানাঘাটের এই ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযুক্ত তৎকালীন পালচৌধুরী জমিদার পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতা। তবে এর অন্য তাৎপর্যও আছে :

"রানাঘাটে প্রচলিত ময়ূরপঙ্খী পুরাকালের যে ঐতিহ্য বহন করে, তা সম্ভবত সরাসরি সংযুক্ত ছিল গো-প্রতিপালক সম্প্রদায়ের দলপতিদের ময়ূরপঙ্খী নৌকায় ভ্রমণের সঙ্গে। ঐতিহাসিক ভাবে সরাসরি এর সম্পর্ক পালচৌধুরী জমিদার পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতার সঙ্গে। অন্য দিকে, আধ্যাত্মিক অর্থে গো-এর সঙ্গে ময়ূরের সম্পর্ক দেহতত্ত্বের এক বিশেষ প্রসঙ্গ নির্দেশ করে। সব মিলিয়েই আজকের ময়ূরপঙ্খী অতীতের অনেকগুলি ধারা এবং বিশ্বাসের সহাবস্থান।"

[৩৮]

ভৌগোলিক উপাত্ত

[সম্পাদনা]

শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা হল ২৩°১১′ উত্তর ৮৮°৩৫′ পূর্ব / ২৩.১৮° উত্তর ৮৮.৫৮° পূর্ব / 23.18; 88.58[৩৯] সমুদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ৭ মিটার (২২ ফুট)।

জনসংখ্যার উপাত্ত

[সম্পাদনা]

ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে রাণাঘাট শহরের জনসংখ্যা হল ৬৮,৭৫৪ জন।[৪০] এর মধ্যে পুরুষ ৫১% এবং নারী ৪৯%।

এখানে সাক্ষরতার হার ৮৪%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮৭% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৮০%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে রাণাঘাটের সাক্ষরতার হার বেশি। এই শহরের জনসংখ্যার ৮% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

[সম্পাদনা]
রাণাঘাট কলেজ

রাণাঘাট কলেজ এখানকার প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও বহু বিখ্যাত বিদ্যালয়ও এখানে আছে। যেমন– রাণাঘাট পালচৌধুরী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, রাণাঘাট ব্রজবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, রাণাঘাট লালগোপাল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, রাণাঘাট ভারতী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, আনুলিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

পরিবহণ

[সম্পাদনা]

রাণাঘাট জংশন রেলওয়ে স্টেশন শিয়ালদহ – কৃষ্ণনগর সিটি জংশন শাখার একটি প্রধান রেলওয়ে স্টেশন। এছাড়াও রাণাঘাট জংশন – গেদে শাখারাণাঘাট জংশন – বনগাঁ জংশন শাখার সর্বশেষ স্টেশন। যদিও, গুরুত্বপূর্ণ এই স্টেশনটি এখনও পুরোপুরি উন্নতমানের হয়ে ওঠেনি। ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক (পূর্বতন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক) শহরের পাশ দিয়ে গিয়েছে। রাণাঘাটের পূর্বপাড়ে রথতলায় একটি বাসস্ট্যান্ড আছে, যেখান থেকে ধানতলা, পানিখালি, দত্তপুলিয়া, বগুলা, হাঁসখালি, কৃষ্ণনগর ইত্যাদি স্থানে যাওয়া যায়। অপর একটি বাসস্ট্যান্ড কোর্ট মোড়ের পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে অবস্থান করে, যেখান থেকে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কৃষ্ণনগর (হবিবপুর, ফুলিয়া, শান্তিপুর, চক দিগনগর হয়ে) যাওয়া যায়। কোর্ট মোড়ের উত্তরদিকে প্রামাণিক মোড় রাণাঘাট শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বাসস্টপ। এখানে কলকাতা, কল্যাণী, করিমপুর, বহরমপুর-সহ পথিমধ্যে নানান গ্রাম-শহরে যাওয়ার সরকারি বা বেসরকারি নানা বাস দাঁড়ায়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. হাসান, জাহিরুল (জানুয়ারি ২০১৫)। সাহিত্যের ইয়ারবুক ঠিকানাপঞ্জি ২০১৫। বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, ২০৪/ ১এ লিন্টন স্ট্রিট, কলকাতা ১৪। পৃষ্ঠা ২১৪। আইএসবিএন 978-81-7694-103-7 
  2. হাসান, জাহিরুল (জানুয়ারি ২০১৫)। সাহিত্যের ইয়ারবুক ঠিকানাপঞ্জি ২০১৫। বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, ২০৪/ ১এ লিন্টন স্ট্রিট, কলকাতা ১৪। পৃষ্ঠা ১৩০। আইএসবিএন 978-81-7694-103-7 
  3. "বহু ইতিহাসের সাক্ষী রানাঘাট" (ইংরেজি ভাষায়)। আনন্দবাজার পত্রিকা। ২৩ ২ অক্টোবর ০১৪।  অজানা প্যারামিটার |রাণাঘাটের আরেকজন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব হলেন রেলওয়ে উনিয়নের সর্বভারতীয় নেতা সুকুমার লাহিড়ী মহাশয় যিনি সারা দেশে অজস্র মানুষের কর্মসংস্থান সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে আন্দোলন সংঘটিত করেছেন। একদা ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী বাংলাদেশে যাওয়ার পথে এখানে এসেছিলেন। এই শহরের "পান্তুয়া" নামক মিষ্টি সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিখ্যাত।= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য);
  4. "রণ ডাকাতের সঙ্গে জড়িয়ে কালীপুজো" 
  5. "দস্যুর তেজ আর রাজার ইচ্ছে, দুইয়ের যোগসূত্রে এই কালীক্ষেত্রর প্রতিষ্ঠা" 
  6. "অনাদরে ছিলেন রানা ডাকাতের কালী, স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠা কৃষ্ণচন্দ্রের" 
  7. "দস্যুর তেজ আর রাজার ইচ্ছে, দুইয়ের যোগসূত্রে এই কালীক্ষেত্রর প্রতিষ্ঠা" 
  8. "কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্ন আর প্রাচীন পুঁথির আখ্যান" 
  9. "কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্ন আর প্রাচীন পুঁথির আখ্যান" 
  10. "কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্ন আর প্রাচীন পুঁথির আখ্যান" 
  11. "কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্ন আর প্রাচীন পুঁথির আখ্যান" 
  12. "কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্ন আর প্রাচীন পুঁথির আখ্যান" 
  13. "কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্ন আর প্রাচীন পুঁথির আখ্যান" 
  14. "কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্ন আর প্রাচীন পুঁথির আখ্যান" 
  15. "কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্ন আর প্রাচীন পুঁথির আখ্যান" 
  16. "কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্ন আর প্রাচীন পুঁথির আখ্যান" 
  17. "কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্ন আর প্রাচীন পুঁথির আখ্যান" 
  18. "পালচৌধুরীদের ঠাকুরদালানে জীবন্ত হয়ে ওঠেন দুর্গা" 
  19. "পালচৌধুরীদের ঠাকুরদালানে জীবন্ত হয়ে ওঠেন দুর্গা" 
  20. "পালচৌধুরীদের ঠাকুরদালানে জীবন্ত হয়ে ওঠেন দুর্গা" 
  21. "পালচৌধুরীদের ঠাকুরদালানে জীবন্ত হয়ে ওঠেন দুর্গা" 
  22. "পালচৌধুরীদের ঠাকুরদালানে জীবন্ত হয়ে ওঠেন দুর্গা" 
  23. "পালচৌধুরীদের ঠাকুরদালানে জীবন্ত হয়ে ওঠেন দুর্গা" 
  24. "পালচৌধুরীদের ঠাকুরদালানে জীবন্ত হয়ে ওঠেন দুর্গা" 
  25. "নিজের ভোগ নিজেই রাঁধেন মা দুর্গা, রানাঘাটের ঘোষবাড়িতে আজও অটুট ৫০০ বছরের পুরনো রীতি" 
  26. "নিজের ভোগ নিজেই রাঁধেন মা দুর্গা, রানাঘাটের ঘোষবাড়িতে আজও অটুট ৫০০ বছরের পুরনো রীতি" 
  27. "নিজের ভোগ নিজেই রাঁধেন মা দুর্গা, রানাঘাটের ঘোষবাড়িতে আজও অটুট ৫০০ বছরের পুরনো রীতি" 
  28. "নিজের ভোগ নিজেই রাঁধেন মা দুর্গা, রানাঘাটের ঘোষবাড়িতে আজও অটুট ৫০০ বছরের পুরনো রীতি" 
  29. "নিজের ভোগ নিজেই রাঁধেন মা দুর্গা, রানাঘাটের ঘোষবাড়িতে আজও অটুট ৫০০ বছরের পুরনো রীতি" 
  30. "ব্যবসার বাড়বাড়ন্তে পত্তন হয় পালবাড়ির পুজোর" 
  31. "ব্যবসার বাড়বাড়ন্তে পত্তন হয় পালবাড়ির পুজোর" 
  32. "ব্যবসার বাড়বাড়ন্তে পত্তন হয় পালবাড়ির পুজোর" 
  33. "ব্যবসার বাড়বাড়ন্তে পত্তন হয় পালবাড়ির পুজোর" 
  34. "ব্যবসার বাড়বাড়ন্তে পত্তন হয় পালবাড়ির পুজোর" 
  35. "নতুন বছরে ময়ূরপঙ্খী সহযোগে শোভাযাত্রা" 
  36. "নতুন বছরে ময়ূরপঙ্খী সহযোগে শোভাযাত্রা" 
  37. "নতুন বছরে ময়ূরপঙ্খী সহযোগে শোভাযাত্রা" 
  38. "নতুন বছরে ময়ূরপঙ্খী সহযোগে শোভাযাত্রা" 
  39. "Ranaghat"Falling Rain Genomics, Inc (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৫, ২০০৬ 
  40. "ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি" (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ জুন ২০০৪ তারিখে আসল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৫, ২০০৬ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]