দিরাই উপজেলা

স্থানাঙ্ক: ২৪°৪৭′২৪.০০০″ উত্তর ৯১°২১′০.০০০″ পূর্ব / ২৪.৭৯০০০০০০° উত্তর ৯১.৩৫০০০০০০° পূর্ব / 24.79000000; 91.35000000
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দিরাই
উপজেলা
মানচিত্রে দিরাই উপজেলা
মানচিত্রে দিরাই উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৪°৪৭′২৪.০০০″ উত্তর ৯১°২১′০.০০০″ পূর্ব / ২৪.৭৯০০০০০০° উত্তর ৯১.৩৫০০০০০০° পূর্ব / 24.79000000; 91.35000000 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগসিলেট বিভাগ
জেলাসুনামগঞ্জ জেলা
আসনসুনামগঞ্জ-২
সরকার
আয়তন
 • মোট৪২০.৯৩ বর্গকিমি (১৬২.৫২ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[১]
 • মোট২,৪৩,৬৯০
 • জনঘনত্ব৫৮০/বর্গকিমি (১,৫০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৩৭.১০%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৩০৪০-৪১ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৬০ ৯০ ২৯
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
কালনী নদী

দিরাই বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। দিরাই অঞ্চলে বয়ে গেছে কালনী নদীসুরমা নদী । এই অঞ্চলটি সুনামগঞ্জের ভাটি অঞ্চল নামেও পরিচিত।

অবস্থান ও আয়তন[সম্পাদনা]

দিরাই উপজেলা ২৪°৩৯' থেকে ২৪°৫৩' উত্তর অক্ষাংশ এবং  ৯১°১০' থেকে ৯১°২৮'পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এর আয়তন ৪২০.৯৩ বর্গ কিলোমিটার। সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে প্রায় ৪২০.৯৩ বর্গ কি.মি. এলাকা জুড়ে উপজেলাটি বিস্তৃত। এই উপজেলার উত্তরে শান্তিগঞ্জ উপজেলাজামালগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে শাল্লা উপজেলা হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলানবীগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে জগন্নাথপুর উপজেলা, পশ্চিমে শাল্লা উপজেলা, নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলাজামালগঞ্জ উপজেলা

প্রশাসনিক এলাকা[সম্পাদনা]

দিরাই উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম দিরাই থানার আওতাধীন।[২]

পৌরসভা:
ইউনিয়নসমূহ:

আয়তনের দিক থেকে রফিনগর ইউনিয়ন দিরাই উপজেলার বৃহত্তম ইউনিয়ন এবং উপজেলা সদর থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত; নৌকাযোগে প্রায় ৩০ কিলোমিটার৷ এই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের কৃষি মূলত কালিয়াকোটা হাওড়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়।

ইতিহাস-ঐতিহ্য[সম্পাদনা]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

কালনী নদীর তীরে অবস্থিত এই উপজেলার নাম দিরাই। অতীতে দিরাইয়ের নাম ছিল বাবাগঞ্জ বাজার। জিতরাম ও দ্বিদরাম নামক দু’জন প্রভাবশালী ব্যক্তি এই এলাকায় প্রথমদিকে বসবাস করতেন, তাঁদের নামের উপর ভিত্তি করে বাবাগঞ্জ বাজারের নাম "দিরাই বাজার" হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর তারিখে প্রকাশিত আসাম গেজেট নোটিফিকেশন নং-৫৯৫৪ মূলে এই উপজেলার নামকরণ করা হয় "দিরাই"।

ভাষা ও সংষ্কৃতি[সম্পাদনা]

হাওরবেষ্টিত ভাটি অঞ্চলের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য এখানে বিদ্যমান। এই জনপদের অধিকাংশ মানুষ সুদীর্ঘ সময় ধরে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। তাই এদের দৈনন্দিন জীবন ও কৃষ্টি ওতপ্রোতভাবে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। অত্র এলাকার জনগণ সাধারণত সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন, তবে পশ্চিম দিরাইয়ে নেত্রকোনার আঞ্চলিক ভাষার প্রভাব রয়েছে। যেসব সরকারি সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা দিরাইয়ে কাজ করছে সেগুলো হল:

  • উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি, দিরাই
  • গণগ্রন্থাগার, দিরাই

এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি শিল্পসংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

দর্শনীয় স্থান[সম্পাদনা]

দিরাইয়ের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • ধল রোড (বর্ষকালের মিনি কক্সবাজার)
  • রাজানগর নারকেল বাগান
  • পীর লেংটা শাহ এর মাজার শরীফ (মাতার গাঁও)
  • বাবা শাহ এর মাজার শরীফ (গচিয়া)
  • পীর আকিল শাহের মাজার শরীফ
  • বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের বাড়ি
  • হযরত ইসহাক শাহ (মামু শাহ)'র মাজার, নগদীপুর
  • কল্যাণী কালীমন্দির
  • ভাটিপাড়া জমিদার বাড়ি
  • খাগাউড়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
  • কালিয়াগুটা হাওর ও কলকলিয়া স্লুইসগেট
  • চিতলিয়া ছায়ামন্দির
  • জগদল ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল
  • কালনী সেতু
  • চাপাতির হাওর
  • বদলপুর সেতু
  • বলনপুর শ্রীশ্রী গৌরনিতাই আশ্রম
  • পদ্মকানন পর্যটন কেন্দ্র
  • পদ্ম বিল
  • শ্যামারচর আখড়া
  • সিকন্দর পুর জামে মসজিদ
  • গ্রীনল্যান্ড, ভরারগাও

খেলাধুলা ও বিনোদন[সম্পাদনা]

প্রচলিত সকল খেলাধুলাই এখানে হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় খেলা ফুটবল এবং ক্রিকেট। এছাড়াও বিনোদনের মধ্যে যাত্রা, নাটক ও বাউলগান ইত্যাদি খুব জনপ্রিয় । প্রায় সময় গ্রামীন মানুষরা ষাঁড়ের লড়াই,মোরগের লড়াই,গাজীর গান ইত্যাদির আয়োজন ও করে থাকে।

ভূগোল ও অর্থনীতি[সম্পাদনা]

প্রাকৃতিক সম্পদ[সম্পাদনা]

উল্লেখযোগ্য কোনও প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। তবে হাওরবেষ্টিত অঞ্চল হওয়াতে এখানে প্রচুর পরিমাণ ধান উৎপন্ন হয়, যা অত্র এলাকার চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলাগুলোর ঘাটতি পূরণেও ভূমিকা রাখে। জলমহাল বেশি হওয়াতে এখানে প্রচুর পরিমাণ মৎস্য সম্পদ রয়েছে।

নদ-নদী[সম্পাদনা]

দিরাই উপজেলায় মোট নদ-নদীর সংখ্যা ২৪টি। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কালনী, কুশিয়ারা, পিয়াইন, মরা সুরমা, ডাহুক ইত্যাদি। এছাড়াও দিরাই উপজেলা হাওরবেষ্টিত। এখানকার উল্লেখযোগ্য হাওড়সমূহ হল চাপতি, বরাম, কালিয়াকোটা ইত্যাদি। সুরমা ও কুশিয়ারার মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী যে নদীটি, তার নাম কালনী। দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের মার্কুলি নামক স্থান থেকে কুশিয়ারার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে কালনী নদী উত্তরে অবস্থিত দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কিছু অংশ ঘেঁষে সুরমায় পতিত হয়েছে। তবে দিরাই উপজেলার মার্কুলি থেকে রজনীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত নদীকে মূলত কালনী বলে, আর রজনীগঞ্জ থেকে সদর উপজেলার পাঁচহাত ধনপুর গ্রাম হয়ে সুরমায় পতিত হওয়া অংশকে শাখা সুরমা বলে।

ব্যবসা-বাণিজ্য[সম্পাদনা]

দিরাই উপজেলায় অনেক রকমের ব্যবসা রয়েছে। তম্মধ্যে  মাছ, ধান-চাল, বালু-পাথর ও কাঠের ব্যবসা অন্যতম।

হাট-বাজার[সম্পাদনা]

দিরাই উপজেলার উল্লেখযোগ্য বাজারগুলো হল;

ধল বাজার, রজনীগঞ্জ বাজার, শ্যামারচর বাজার, আকিলশাহ বাজার, মিলনগঞ্জ বাজার, নাচনী বাজার, বোয়ালিয়া বাজার, হাতিয়া বড় বসজার, মধুপুর নয়া বাজার, গচিয়া বাজার, চক বাজার, রাজানগর বাজার, শাহজালাল বাজার, জগদল বাজার, কলিয়ার কাপন বাজার, রতনগঞ্জ বাজার, ছয়হারা নগদিপুর বাজার, বড়নগদিপুর বসুন্ধরা বাজার, বাংলা বাজার, চরনারচর বাজার, কল্যাণী বাজার, কর্ণগাঁও বাজার, টেলিফোন বাজার,নয়াগাঁও বাজার ইত্যাদি।

হোটেল ও আবাসন[সম্পাদনা]

উল্লেখযোগ্য হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে হোটেল নাদের রিয়াজ ম্যানশন, হোটেল আলী ব্রাদার্স, হোটেল রাজধানী ইত্যাদি।

জনসংখ্যার উপাত্ত[সম্পাদনা]

১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দিরাইয়ের জনসংখ্যা ১,৮৫,২৮৪। তন্মধ্যে পুরুষ ৫১.৩৮% ও নারী ৪৮.৬২%। দিরাইয়ের গড় সাক্ষরতার হার ২৫.৩% ও সাক্ষরতার জাতীয় গড় ৩২.৪%।

২০১১ সালের আদমশুমারি রিপোর্ট অনুযায়ী-

  • মোট জনসংখ্যা ২,৪৩,৬৯০ জন।
  • মোট ভোটার সংখ্যা ১,৬৮,২৯৯ জন।
  • মোট জনসংখ্যার ৬৮% মুসলমান,৩১% সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং বাকি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
  • মোট পরিবারের সংখ্যা ৪৫,০৪০ টি।
  • সাক্ষরতার হার ৩৭.১০%।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব[সম্পাদনা]

বিবিধ[সম্পাদনা]

দিরাই উপজেলার সাথে খালিয়াজুড়ি উপজেলার সীমানা নির্ধারিত হয়েছে পিয়াইন নদী দ্বারা। খালিয়াজুড়ি উপজেলার সীমান্তে দিরাই উপজেলার আলীপুর,দুর্লভপুর ও পুরন্দরপুর গ্রাম তিনটি অবস্থিত। কালিয়াকোটা হাওড়ের প্রান্ত ঘেঁষে পিয়াইন নদী খালিয়াজুড়ি উপজেলায় প্রবেশ করেছে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে দিরাই"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ৯ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৫ 
  2. "এক নজরে দিরাই"derai.sunamganj.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২২ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০২০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]