রাসবিহারী বসু: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{Infobox revolution biography
{{Infobox person
|name=রাসবিহারী বসু
| name = রাসবিহারী বসু
|lived=[[মে ২৫]], ১৮৮৬<ref name="Bose"/><ref name="samsad486"/><ref name="Bosu"/>–[[জানুয়ারি ২১]], ১৯৪৫
| birth_date = ২৫ মে, ১৮৮৬<ref name="Bose"/><ref name="samsad486"/><ref name="Bosu"/>
|placeofbirth=সুবলদহ, [[বর্ধমান জেলা|পূর্ব বর্ধমান জেলা]], [[পশ্চিমবঙ্গ]], [[ভারত]] (পৈতৃক নিবাস)<ref name="Bose">{{Cite book |last=বসু|first=শ্রীবিজনবিহারী|title=কর্ম্মবীর রাসবিহারী|date=১৯৫৯|publisher=শ্রীমতি ইলা বসু|page=৪৮|quote=''রাসবিহারীর জন্ম হয় ২৫শে মে, ১৮৮৬ খৃষ্টাব্দে সুবলদহ গ্রামে কালীচরণ বসুর পর্ণ কুটীরের সংলগ্ন গোশালায়৷''}}</ref><ref name="samsad486">{{Cite book|last1=সেনগুপ্ত|first1=সুবোধচন্দ্র|last2=বসু|first2=অঞ্জলি|title=সংসদ বাঙালী চরিতাভিধান|date=১৯৭৬|location=কলিকাতা|publisher=শিশু সাহিত্য সংসদ|page=৪৮৬}}</ref>
| birth_place = সুবলদহ, [[বর্ধমান জেলা|পূর্ব বর্ধমান জেলা]], [[পশ্চিমবঙ্গ]], [[ভারত]] (পৈতৃক নিবাস)<ref name="Bose">{{Cite book |last=বসু|first=শ্রীবিজনবিহারী|title=কর্ম্মবীর রাসবিহারী|date=১৯৫৯|publisher=শ্রীমতি ইলা বসু|page=৪৮|quote=''রাসবিহারীর জন্ম হয় ২৫শে মে, ১৮৮৬ খৃষ্টাব্দে সুবলদহ গ্রামে কালীচরণ বসুর পর্ণ কুটীরের সংলগ্ন গোশালায়৷''}}</ref><ref name="samsad486">{{Cite book|last1=সেনগুপ্ত|first1=সুবোধচন্দ্র|last2=বসু|first2=অঞ্জলি|title=সংসদ বাঙালী চরিতাভিধান|date=১৯৭৬|location=কলিকাতা|publisher=শিশু সাহিত্য সংসদ|page=৪৮৬}}</ref><br/>মতান্তরে, পাড়েলা-বিঘাটি, [[হুগলি জেলা]], [[পশ্চিমবঙ্গ]], [[ভারত]] (মাতুলালয়)<ref name="Bosu">{{Cite book |last=Mukherjee|first=Uma|title=Two Great Indian Revolutionaries|date=1966|publisher=Firma K. L. Mukhopadhyay|location=Calcutta|page=97|quote=''Born in the village of Parala-Bighati near Bhadreswar in the district of Hooghly in the house of his maternal uncle on May 25, 1886, Rash Behari Bose passed his childhood in his paternal home at the village of Subaldaha in the Burdwan district under the care of his grandfather Kali Charan Bose.''}}</ref>
| death_place = [[টোকিও]], [[জাপান]]
মতান্তরে, পাড়েলা-বিঘাটি, [[হুগলি জেলা]], [[পশ্চিমবঙ্গ]], [[ভারত]] (মাতুলালয়)<ref name="Bosu">{{Cite book |last=Mukherjee|first=Uma|title=Two Great Indian Revolutionaries|date=1966|publisher=Firma K. L. Mukhopadhyay|location=Calcutta|page=97|quote=''Born in the village of Parala-Bighati near Bhadreswar in the district of Hooghly in the house of his maternal uncle on May 25, 1886, Rash Behari Bose passed his childhood in his paternal home at the village of Subaldaha in the Burdwan district under the care of his grandfather Kali Charan Bose.''}}</ref>
| image = [[চিত্র:Rash bihari bose.jpg|200px]]
|placeofdeath= [[টোকিও]], [[জাপান]]
| caption = ফাইল চিত্র রাসবিহারী বসু
|image=[[চিত্র:Rash bihari bose.jpg|200px]]
| movement = [[ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন]], [[গদর ষড়যন্ত্র]], [[ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী]]
|caption=ফাইল চিত্র রাসবিহারী বসু
|movement=[[ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন]], [[গদর ষড়যন্ত্র]], [[ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী]]
|organizations=[[যুগান্তর]], [[ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ]], [[আজাদ হিন্দ ফৌজ]]
|organizations=[[যুগান্তর]], [[ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ]], [[আজাদ হিন্দ ফৌজ]]
| spouse = তোশিকো বসু (সোমা)
|relatives = কালীচরণ বসু (পিতামহ)<br/>নবীন চন্দ্র সিংহ (মাতামহ)<br/>বিনোদবিহারী বসু (পিতা)<br/>ভুবনেশ্বরী দেবী (মাতা)<br/>সুশীলা দেবী (ভগিনী)<br/>বিজনবিহারী বসু (ভ্রাতা)<br/>তোষিকো সোমা বসু (স্ত্রী)<br/>মাসাহিদে বসু (ভারতচন্দ্র) (পুত্র)<br/>তেতেকু বসু (কন্যা)
| children = মাশাহিদে বসু (পুত্র)<br/>তেৎসুকো বসু (কন্যা)
| nationality = [[ভারতীয়]]
| citizenship =
|relatives = কালীচরণ বসু (পিতামহ)<br/>নবীন চন্দ্র সিংহ (মাতামহ)<br/>বিনোদবিহারী বসু (পিতা)<br/>ভুবনেশ্বরী দেবী (মাতা)<br/>সুশীলা দেবী (ভগিনী)<br/>বিজনবিহারী বসু (ভ্রাতা)
}}
}}

[[File:Revolutionary Rasbehari Basu.jpg|থাম্ব|300px|কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ পার্কে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর মূর্তি]]
[[File:Revolutionary Rasbehari Basu.jpg|থাম্ব|300px|কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ পার্কে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর মূর্তি]]
'''রাসবিহারী বসু''' ([[মে ২৫]], ১৮৮৬–[[জানুয়ারি ২১]], ১৯৪৫) ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন বিপ্লবী নেতা এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সংগঠক।
'''রাসবিহারী বসু''' ([[মে ২৫]], ১৮৮৬–[[জানুয়ারি ২১]], ১৯৪৫) ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন বিপ্লবী নেতা এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সংগঠক।
তিনি ভারতের বাইরে [[সিঙ্গাপুর|সিঙ্গাপুরে]] [[আজাদ হিন্দ ফৌজ]] গঠন করেন |রাসবিহারী বসু [[নেতাজির]] হাতে তুলে দেন ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর ভার৷ দিল্লিতে [[গভর্নর জেনারেল]] ও ভাইসরয় [[লর্ড হার্ডিঞ্জ|লর্ড হার্ডিঞ্জের]] ওপর এক বোমা হামলায় নেতৃত্ব দানের কারণে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে। তিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার নজর এড়াতে সক্ষম হন এবং ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানে পালিয়ে যান।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=রাসবিহারী বোস: ইতিহাসে উপেক্ষিত বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী |ইউআরএল=https://bengali.indianexpress.com/feature/independence-day-rashbehari-bose-bengali-revolutionary-131491/# |ওয়েবসাইট=Indian Express Bangla |সংগ্রহের-তারিখ=৩০ জুলাই ২০২০ |তারিখ=১৫ আগস্ট ২০১৯}}</ref>
তিনি ভারতের বাইরে [[সিঙ্গাপুর|সিঙ্গাপুরে]] [[আজাদ হিন্দ ফৌজ]] গঠন করেন৷ রাসবিহারী বসু [[সুভাষচন্দ্র বসু|নেতাজির]] হাতে তুলে দেন ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর ভার৷ দিল্লিতে [[গভর্নর জেনারেল]] ও ভাইসরয় [[লর্ড হার্ডিঞ্জ|লর্ড হার্ডিঞ্জের]] ওপর এক বোমা হামলায় নেতৃত্ব দানের কারণে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে। তিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার নজর এড়াতে সক্ষম হন এবং ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানে পালিয়ে যান।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=রাসবিহারী বোস: ইতিহাসে উপেক্ষিত বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী |ইউআরএল=https://bengali.indianexpress.com/feature/independence-day-rashbehari-bose-bengali-revolutionary-131491/# |ওয়েবসাইট=Indian Express Bangla |সংগ্রহের-তারিখ=৩০ জুলাই ২০২০ |তারিখ=১৫ আগস্ট ২০১৯}}</ref>


==জন্ম ও বংশ-পরিচয়==
==জন্ম ও বংশ-পরিচয়==

১৫:৪৫, ১৩ অক্টোবর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

রাসবিহারী বসু
ফাইল চিত্র রাসবিহারী বসু
জন্ম২৫ মে, ১৮৮৬[১][২][৩]
সুবলদহ, পূর্ব বর্ধমান জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত (পৈতৃক নিবাস)[১][২]
মতান্তরে, পাড়েলা-বিঘাটি, হুগলি জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত (মাতুলালয়)[৩]
মৃত্যু
জাতীয়তাভারতীয়
প্রতিষ্ঠানযুগান্তর, ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ, আজাদ হিন্দ ফৌজ
আন্দোলনভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, গদর ষড়যন্ত্র, ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী
দাম্পত্য সঙ্গীতোশিকো বসু (সোমা)
সন্তানমাশাহিদে বসু (পুত্র)
তেৎসুকো বসু (কন্যা)
আত্মীয়কালীচরণ বসু (পিতামহ)
নবীন চন্দ্র সিংহ (মাতামহ)
বিনোদবিহারী বসু (পিতা)
ভুবনেশ্বরী দেবী (মাতা)
সুশীলা দেবী (ভগিনী)
বিজনবিহারী বসু (ভ্রাতা)
কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ পার্কে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর মূর্তি

রাসবিহারী বসু (মে ২৫, ১৮৮৬–জানুয়ারি ২১, ১৯৪৫) ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন বিপ্লবী নেতা এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সংগঠক। তিনি ভারতের বাইরে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন৷ রাসবিহারী বসু নেতাজির হাতে তুলে দেন ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর ভার৷ দিল্লিতে গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের ওপর এক বোমা হামলায় নেতৃত্ব দানের কারণে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে। তিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার নজর এড়াতে সক্ষম হন এবং ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানে পালিয়ে যান।[৪]

জন্ম ও বংশ-পরিচয়

রাসবিহারী বসু ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৫ শে মে জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷ প্রচলিত মতানুযায়ী তিনি অধুনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলায় অবস্থিত তাঁর পৈতৃক গ্রাম সুবলদহে জন্মগ্রহণ করেন৷[১][২] অপর মতানুযায়ী, তিনি অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার ভদ্রেশ্বরের সন্নিকটস্থ পাড়েলা-বিঘাটি গ্রামে তাঁর মাতামহ নবীন চন্দ্র সিংহের[৫] বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন৷[টীকা ১] তাঁর পিতা বিনোদবিহারী বসু এবং তাঁর মায়ের নাম ভুবনেশ্বরী দেবী। তিনকড়ি দাসী ছিলেন তার ধাত্রী মাতা৷ তাঁর পিতামহের নাম ছিল কালীচরণ বসু৷

এই বসু পরিবারের আদিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বৈঁচীতে৷[৬] পরবর্তীকালে এই পরিবার বৈঁচী থেকে প্রথমে হুগলি জেলারই সিঙ্গুরে এবং পরবর্তীকালে পূর্ব বর্ধমান জেলার সুবলদহে চলে আসে৷ তাঁদের পূর্বপুরুষ নিধিরাম বসুই সর্বপ্রথম সুবলদহে বাস করেন৷[৬]

প্রাথমিক জীবন

রাসবিহারী বসুকে তাঁর নামটি দিয়েছিলেন পিতামহ কালীচরণ বসু। রাসবীহারী বসুর মা যখন গর্ভবতী ছিলেন তখন তার কঠিন অসুখ হয়েছিল। তাই সুবলদহ গ্রামের পশ্চিম পাড়াতে অবস্থিত বিষ্ণুমন্দির বা কৃষ্ণ মন্দিরে মানত করা হয়েছিল যাতে সুস্থভাবে সন্তানের জন্ম দেন, তাই পরবর্তীকালে তার নাতির নাম রেখেছিলেন কৃষ্ণের অপর নাম রাসবিহারী। রাসবিহারী বসু এবং সুশীলা সরকারের শৈশবের বেশির ভাগ সময় কেটেছিল সুবলদহ গ্রামে। তারা সুবলদহ গ্রামে বিধুমুখী দিদিমণির ঘরে বসবাস করতেন। বিধুমুখী ছিলেন একজন বাল্যবিধবা, তিনি ছিলেন কালিচরণ বসুর ভ্রাতৃবধূ। রাসবিহারী বসুর শৈশবের পড়াশোনা সুবলদহের গ্রাম্য পাঠশালায় (বর্তমানে সুবলদহ রাসবিহারী বসু প্রাথমিক বিদ্যালয়) দাদুর সহচর্যে সম্পন্ন হয়েছিল। রাসবিহারী বসু শৈশবে লাঠিখেলা শিখেছিলেন সুবলদহ গ্রামের শুরিপুকুর ডাঙায়। তিনি সুবলদহ গ্রামে তাঁর দাদু কালিচরণ বসু এবং তার শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী গল্প শুনে তার বিপ্লবী আন্দোলনের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন গ্রামবাসীদের নয়নের মণি। শোনা যায় যে, তিনি ইংরেজদের মূর্তি তৈরি করতেন এবং লাঠি খেলার কৌশলে সেই মূর্তিগুলোকে ভেঙে ফেলতেন। তিনি ডাংগুলি খেলতে খুব ভালোবাসতেন। তিনি শৈশবে সুবলদহ গ্রামে ১২ থেকে ১৪ বছর ছিলেন, এছাড়াও তিনি পরবর্তীকালে ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে সুবলদহ গ্রামে এসে গা-ঢাকা দিতেন। পিতা বিনোদবিহারী বসুর কর্মক্ষেত্র ছিল হিমাচল প্রদেশের শিমলা। তিনি সুবলদহ পাঠশালা, মর্টন স্কুল ও ডুপ্লে কলেজের ছাত্র ছিলেন। জীবনের প্রথম দিকে তিনি নানা বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং আলিপুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে অভিযুক্ত হন। পর তিনি দেরাদুনে যান এবং সেখানে বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে হেড ক্লার্ক হিসেবে কাজ করেন। দেরাদুনে তিনি গোপনে বাংলা, উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন। তার অন্যতম কৃতিত্ব বড়লাট হার্ডিঞ্জের ওপর প্রাণঘাতী হামলা। বিপ্লবী কিশোর বসন্ত বিশ্বাস তাঁর নির্দেশে ও পরিকল্পনায় দিল্লিতে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে বোমা ছোড়েন হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে। এই ঘটনায় পুলিশ তাঁকে কখোনোই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ভারতজোড়া সশস্ত্র সেনা ও গণ অভ্যুত্থানের বিরাট প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন রাসবিহারী। বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে সেই কর্মকান্ড ফাঁস হয়ে যায়। বহু বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্ট থাকায় সরকারের সন্দেহের উদ্রেক হয় এবং শেষ পর্যন্ত তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বন্যা বিধ্বস্ত সুবলদহ গ্রামে আসেন এবং ত্রাণ বিলি করেন।[৭] ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ মে কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে জাপানি জাহাজ 'সানুকি-মারু' সহযোগে তিনি ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন। তার আগে নিজেই পাসপোর্ট অফিস থেকে রবীন্দ্রনাথের আত্মীয় রাজা প্রিয়নাথ ঠাকুর ছদ্মনামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন।

বিপ্লবী জীবন

তারই তৎপরতায় জাপানি কর্তৃপক্ষ ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের পাশে দাঁড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সমর্থন যোগায়। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৮-২৯ মার্চ টোকিওতে তার ডাকে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ বা ভারতীয় স্বাধীনতা লীগ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে তিনি সেই সম্মেলনে একটি সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব দেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুন ব্যাংককে তিনি লীগের দ্বিতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র বসু কে লীগে যোগদান ও এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়। যেসব ভারতীয় যুদ্ধবন্দি মালয় ও বার্মা ফ্রন্টে জাপানিদের হাতে আটক হয়েছিল তাদেরকে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগে ও লীগের সশস্ত্র শাখা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগদানে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জাপানি সেনাকর্তৃপক্ষের একটি পদক্ষেপে তার প্রকৃত ক্ষমতায় উত্তরণ ও সাফল্য ব্যাহত হয়। তার সেনাপতি মোহন সিংকে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু তার সাংগঠনিক কাঠামোটি থেকে যায়। রাসবিহারী বসু ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি ( আজাদ হিন্দ ফৌজ নামেও পরিচিত) গঠন করেন। জাপানে সোমা নামে এক পরিবার তাঁকে আশ্রয় দেয়। ওই পরিবারেরই তোশিকা সোমাকে তিনি বিবাহ করেন। রাসবিহারী বসুকে জাপান সরকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘সেকেন্ড অর্ডার অব দি মেরিট অব দি রাইজিং সান’ খেতাবে ভূষিত করে। জানুয়ারি ২১, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানে রাসবিহারী বসুর মৃত্যু হয়।[৮]

ব্যক্তিগত জীবন

রাসবিহারী বসু ও তাঁর স্ত্রী তোশিকো বসু সোমা

জাপানে অবস্থানকালে ১৯১৮ খ্রীষ্টাব্দের ৯ জুলাই রাসবিহারী বসু জাপানি সোমা পরিবারের কন্যা তোশিকো সোমাকে গোপনে বিবাহ করেন৷ তাঁদের দুই সন্তানের নাম হল তেৎসুকো হিগুচি বসু ও মাশাহিদে বসু (ভারতীয় নাম ভারতচন্দ্র)৷ মাশাহিদের জন্ম ১৯২০ খ্রীষ্টাব্দের ১৩ আগস্ট ও তেৎসুকোর জন্ম ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মাত্র ২৪ বছর বয়সে যুদ্ধক্ষেত্রে মাশাহিদের মৃত্যু ঘটে৷[৯]

টীকা

  1. It is mentioned in a footnote in Uma Mukherjee's book "Two Great Indian Revolutionaries", Rash Behari's own sister Sushila Devi, at present aged about seventy-eight, has recently informed the present writer when she met her at Benares that both her elder brother and herself were born in their maternal uncle's house at the village of Parala-Bighati in the Hooghly district. This view fits in also with the findings of Sri Harihar Sett of Chandernagore.[৩]

তথ্যসূত্র

"কর্মবীর রাসবিহারী" -লেখক বিজন বিহারী বসু; radical প্রকাশনী উইকিমিডিয়া কমন্সে রাসবিহারী বসু সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।

  1. বসু, শ্রীবিজনবিহারী (১৯৫৯)। কর্ম্মবীর রাসবিহারী। শ্রীমতি ইলা বসু। পৃষ্ঠা ৪৮। রাসবিহারীর জন্ম হয় ২৫শে মে, ১৮৮৬ খৃষ্টাব্দে সুবলদহ গ্রামে কালীচরণ বসুর পর্ণ কুটীরের সংলগ্ন গোশালায়৷ 
  2. সেনগুপ্ত, সুবোধচন্দ্র; বসু, অঞ্জলি (১৯৭৬)। সংসদ বাঙালী চরিতাভিধান। কলিকাতা: শিশু সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৪৮৬। 
  3. Mukherjee, Uma (১৯৬৬)। Two Great Indian Revolutionaries। Calcutta: Firma K. L. Mukhopadhyay। পৃষ্ঠা 97। Born in the village of Parala-Bighati near Bhadreswar in the district of Hooghly in the house of his maternal uncle on May 25, 1886, Rash Behari Bose passed his childhood in his paternal home at the village of Subaldaha in the Burdwan district under the care of his grandfather Kali Charan Bose. 
  4. "রাসবিহারী বোস: ইতিহাসে উপেক্ষিত বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী"Indian Express Bangla। ১৫ আগস্ট ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০২০ 
  5. বসু, শ্রীবিজনবিহারী (১৯৫৯)। কর্ম্মবীর রাসবিহারী। শ্রীমতি ইলা বসু। পৃষ্ঠা ৫৬। বিনোদবিহারীর প্রথম শ্বশুরালয় ছিল সিঙ্গুরের নিকটবর্তী পাড়েলা গ্রাম৷ নবীন চন্দ্র সিংহ মহাশয় ছিলেন তাহার শ্বশুর ও রাসবিহারীর মাতামহ৷ 
  6. বসু, শ্রীবিজনবিহারী (১৯৫৯)। কর্ম্মবীর রাসবিহারী। শ্রীমতি ইলা বসু। পৃষ্ঠা ৫০। এই বসুবংশ প্রথমে বৈঁচীতে, পরে সিঙ্গুরে ও তারপরে সুবলদহে সরিয়া আসেন৷..নিধিরাম বসু সর্ব্বপ্রথম এই গ্রামে বাস করেন বলিয়া শুনিয়াছি৷ 
  7. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৬৭১-৬৭২, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  8. "১৩৪-এ 'সব্যসাচী' রাসবিহারী বসু... ফিরে দেখা"EI Samay। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০২০ 
  9. বন্দ্যোপাধ্যায়, পারিজাত। "বাংলা থেকে রান্না-শাড়ি পরা, জাপানি বউকে শিখিয়েছিলেন রাসবিহারী বসু"Anandabazar Patrika। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০২০