করিম ঘানি
করিম ঘানি (তামিল: கரீம் கனி) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে, করিম ঘানি বার্মায় ড.বা ম এর অধীনে একজন সংসদ সচিব ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ঘানি, মালয়ে, সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রী হন। তিনি মালয়েশিয়ান তামিল দৈনিক মালয়া নানবান এর সম্পাদক, "মুসলিম পাবলিশিং হাউস" এর ম্যানেজার ছিলেন। তিনি ডনের মালয় সংস্করণ সিনারান এর সম্পাদকও ছিলেন। ঘানি মুসলিম লীগের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন এবং মালালা মুসলিম মিশনারি সোসাইটি (এএমএমএমএস)এর সভাপতি ছিলেন। তিনি বিভিন্ন অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তাও ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ান মুসলিম রাজনীতিতে ঘনি জড়িয়ে পড়েন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৫০ সালে সিঙ্গাপুরে মারিয়া হার্টোগ দাঙ্গায় তার জড়িত থাকা।
বার্মা কার্যক্রম
[সম্পাদনা]করিম ঘানি বার্মার তামিল ও বার্মিজ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি চুলিয়া অ্যাসোসিয়েশনের যুব লীগের সভাপতি ছিলেন এবং ১৯৩২ সালে বার্মার আইনসভা পরিষদে নির্বাচিত হন, ১৯৩৬ সালে যান হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে।[১] ব্রিটিশ গোয়েন্দা রিপোর্টে তার নামটি "অবিলম্বে গ্রেফতার করা দরকার" ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।[২] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে, করিম ঘানি বার্মায় ড.বা ম এর অধীনে একজন সংসদ সচিব ছিলেন।
মালয়ায় কার্যক্রম
[সম্পাদনা]দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ঘানি, মালয়ে, সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রী হন। তিনি মালয়েশিয়ান তামিল দৈনিক মালয়া নানবান এর সম্পাদক, "মুসলিম পাবলিশিং হাউস" এর ম্যানেজার ছিলেন। তিনি ডনের মালয় সংস্করণ সিনারান এর সম্পাদকও ছিলেন। ঘানি মুসলিম লীগের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন এবং মালালা মুসলিম মিশনারি সোসাইটি (এএমএমএমএস)এর সভাপতি ছিলেন। তিনি বিভিন্ন অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তাও ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ান মুসলিম রাজনীতিতে ঘানি জড়িয়ে পড়েন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৫০ সালে সিঙ্গাপুরে মারিয়া হার্টোগ দাঙ্গায় তার জড়িত থাকা।
মারিয়া হার্টোগ দাঙ্গা
[সম্পাদনা]মারিয়া হার্টোগ দাঙ্গা বা নাটরা দাঙ্গা সিঙ্গাপুরে ১১ই ডিসেম্বর ১৯৫০ সালে শুরু হয়েছিল। আদালতের নির্দেশে ১৩ বছর বয়সী মারিয়া হার্টোগ (বার্থা হার্টোগ) এর হেফাজত তার জন্মদাতা ওলন্দাজ ক্যাথলিক বাবা-মাকে দেওয়ার পর এই দাঙ্গা শুরু হয়। এর আগে শিশুটি আমিনা বিনতে মোহামেদ নামক একজন মুসলিমের কাছে বড় হচ্ছিল এবং তাকেই মা বলে জানত। দাঙ্গা ১৩ই ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত চলে, ১৮ জন মারা যান, ১৭৩ জন আহত হন এবং এবং অনেক সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয় – এটি ছিল সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে খারাপ ঘটনাগুলির মধ্যে একটি। আগস্ট ১৯৫০ সালে আদালতের সিদ্ধান্ত এবং হেফাজতের জন্য আইনি যুদ্ধের বিস্তৃত সংবাদ প্রচারের ফলে মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম জনসংখ্যার মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। তারা মারিয়াকে, মুসলিম বিশ্বাসের অনুসারী বিশ্বাস করতেন এবং সংবাদপত্রগুলি মারিয়াকে ক্রিশ্চিয়ান হিসাবে চিহ্নিত করায় প্রতিবাদ জানাতে এসেছিলেন। নাদরা অ্যাকশন কমিটি নামক একটি সংগঠনকে, করিম ঘানি, আনুষ্ঠানিকভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। এই চরম সংগঠনটি তাদের ডন (পাকিস্তানে প্রকাশিত ইংরেজি কাগজ ডন নয়) সংবাদপত্রের কপি বিনামূল্যে বিতরণের মাধ্যমে স্থানীয় মুসলমানদের সমর্থন জানায়। ৮ই ডিসেম্বর সুলতান মসজিদে করিম ঘানিও খোলা বক্তব্য রাখেন, যেখানে তিনি বলেন জিহাদই হল একমাত্র উপায়। ঘানির বক্তব্যে ১১ই ডিসেম্বর দাঙ্গা ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৩ তারিখ পর্যন্ত চলে। মোট ১৮ জনের মৃত্যু হয়, এঁদের মধ্যে ৭জন ইউরোপীয় বা ইউরেশীয় ছিলেন, ছিলেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা, এবং নয়জন দাঙ্গাকারী যাদের পুলিশ বা মিলিটারির গুলিতে মৃত্যু হয়। ১৭৩ জন আহত হন, তাদের মধ্যে অনেকের আঘাত গুরুতর ছিল, ১১৯টি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং অন্তত দুটি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে দুই সপ্তাহের জন্য কারফিউ লাগানো হয়েছিল, এবং সম্পূর্ণ আইন-শৃঙ্খলা ফিরে আসতে অনেক সময় লেগেছিল।
দাঙ্গার পর পুলিশ একটি বিশেষ তদন্ত সংস্থা গঠন করে যারা ৭৭৮ জনকে আটক করেছিল, এদের মধ্যে করিম ঘনিও ছিলেন। নাদরা অ্যাকশন কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং সেন্ট জনস আইল্যান্ডের আটক শিবিরে, জরুরী নিয়ন্ত্রণ ২০এর অধীনে, দাঙ্গায় অংশগ্রহণের কারণে ১৫ মাসের জন্য আটকে রাখা হয়। পরে দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মারিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সিঙ্গাপুরের বিশিষ্ট আইনজীবী ডেভিড মার্শাল, যিনি পরে বলেছেন, "যদি এই মামলা অন্য কোন পরিস্থিতিতে শোনা হত, এর রায় অন্যরকম হত"। তিনি ব্রিটিশদের শেষ উল্লাসের উল্লেখ করেছিলেন, যাঁরা দুর্বল মালয় মুসলিম মানুষদের উপদেশ দিয়ে তাদের খ্রিস্টান গর্ব উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন।[নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি প্রশ্নবিদ্ধ]
দাঙ্গার ফলে বহু মানুষের মৃত্যু হয় এবং যে মুসলিমরা দাঙ্গাকারীদের দমন করতে গিয়েছিলেন, তাদের অভিযুক্ত করা হয়। এদের মধ্যে অনেক তামিল মুসলিম নেতাকে ফাঁসির দায়ে দণ্ডিত করা হয়েছিল। নতুন স্বাধীন মালয়ে এই তামিল মুসলিম ব্যবসায়ীরা ছিল ইসলামিক প্রতিমুর্তি।
সমস্ত অভিযুক্তকে মুক্তি দেওয়া হয়, কিন্তু মালয়ান সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘানির সম্মান ও সক্রিয়তা দেখে ব্রিটিশরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল, এবং চেয়েছিল তাকে ঔপনিবেশিক অঞ্চলের বাইরে পাঠাতে। বশির মল্লাল পাকিস্তানে তার কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পর বিশ্ব মুসলিম কংগ্রেসের মহাসচিব ইনামুল্লাহ খান, আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে করাচিতে আমন্ত্রণ জানালেন। তিনি করাচির একজন প্রকাশক হিসেবে তার কর্মজীবন পুনরায় শুরু করেন। তার সক্রিয়তা নেবার মত বেশি লোক সেই সময় সেই নতুন দেশে ছিলনা। তিনি ব্রিটিশ এবং তাদের নীতির সমালোচনা অব্যাহত রাখেন। বলা হয় এর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি পাকিস্তানে মারা যান। সঠিক তারিখ জানা যায়নি, কিন্তু হাজী মঈদেনের মতে তিনি ১৯৫২ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যেই মারা গেছেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- Malay press and Malay politics: The Hertogh Riots in Singapore.N Hussin - Asia Europe Journal, 2005.
- The End of Empire and the Making of Malaya By Timothy Norman Harper.
- Tangled Worlds: The Story of Maria Hertogh By Tom Eames Hughes.
- Unto Him a Witness: The Story of Netaji Subhas Chandra Bose in East Asia By S A Ayer.