আবুল কালাম শামসুদ্দিন (সরকারি কর্মকর্তা)
আবুল কালাম শামসুদ্দিন | |
---|---|
জন্ম | টাঙ্গাইল | ২ আগস্ট ১৯৪৩
মৃত্যু | ১৯ মে ১৯৭১ ঢাকা | (বয়স ২৭)
মৃত্যুর কারণ | মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা |
সমাধি | বনানী সামরিক কবরস্থান |
অন্যান্য নাম | খোকা |
মাতৃশিক্ষায়তন | লাহোর গভর্নমেন্ট কলেজ |
পেশা | সরকারি কর্মকর্তা |
সন্তান | এ কে এম সালাহউদ্দীন |
পিতা-মাতা |
|
আত্মীয় | ইবরাহীম খাঁ (মাতামহ) |
পুরস্কার | স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১২) |
শহীদ আবুল কালাম শামসুদ্দিন (২ আগস্ট ১৯৪৩–১৯ মে ১৯৭১) হলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সংগঠক এবং বীর শহীদ।[১] এদেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানের অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য ২০১২ সালে তাকে “স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয়।[১][২]
জন্ম ও পারিবার
[সম্পাদনা]শামসুদ্দিন ১৯৪৩ সালের ২ আগস্ট টাঙ্গাইলে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার গয়হাটা গ্রামে। আফাজউদ্দিন আহমদ ও রাবেয়া খাতুনের ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড়। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ইবরাহীম খাঁ ছিলেন তার মাতামহ। শামসুদ্দিনের পিতা ডাক ও তার বিভাগে চাকরি করতেন।[৩]
শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]শামসুদ্দিনের শিক্ষা জীবন শুরু হয় গয়হাটা মাইনর স্কুলে। সেখান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি ঢাকার নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৫৮ সালে এ স্কুল থেকেই প্রথম বিভাগে ১৭তম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি নটর ডেম কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬০ সালে সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি পাকিস্তান সরকারের ইন্টার উইং স্কলারশিপ নিয়ে রসায়নে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য লাহোর গভর্নমেন্ট কলেজে (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) যান। সেখানে তিনি প্রথম বাঙালি শিক্ষার্থী হিসেবে "সায়গল স্কলারশিপ" পান। এ কলেজ থেকে স্নাতক (প্রথম শ্রেণিতে প্রথম) এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে তিনি কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন।[৩][৪]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]লেখাপড়া শেষে এ কে শামসুদ্দিনের আণবিক শক্তি কমিশনে যোগ দেন। পরবর্তীতে, ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় তিনি সমগ্র পাকিস্তানে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।[৩] ১৯৭১ সালে তিনি তদানীন্তন সিরাজগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) মহকুমা প্রশাসক হিসাবে কর্মরত ছিলেন।[১]
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
[সম্পাদনা]সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও আবুল কালাম শামসুদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে সিরাজগঞ্জে প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলায় বিশেষ অবদান রাখেন। ৮ এপ্রিল একদল পাকিস্তানি সেনা আরিচা ঘাটে পৌঁছালে তিনি সিরাজগঞ্জ কলেজে গিয়ে ট্রেজারিতে থাকা অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সরবরাহ করেন। পরে তার নেতৃত্বেই নগরবাড়ী ঘাট ও বাঘাবাড়ী ঘাটে মুক্তিযোদ্ধারা পাক সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শামসুদ্দিনের দলে স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের কয়েকজন বাঙালি সেনাও ছিল। যুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য এই সহযোদ্ধারা তাকে "কর্নেল" উপাধিতে ভূষিত করে। পরবর্তীতে তারই নেতৃত্বে পাবনা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের প্রতিরোধযোদ্ধারা কাশীনাথপুরের ডাব বাগানে, উল্লাপাড়ার ঘাটিনা সেতুর কাছে এবং বাঘাবাড়ী ঘাটে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।[৩][৪]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে সিরাজগঞ্জের প্রতিরোধ দুর্বল হয়ে পড়লে শামসুদ্দিন তার অধীনস্থদের ভারতে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু তিনি তার সন্তান-সম্ভবা স্ত্রীকে দেখতে গোপনে ঢাকার ফকিরাপুলে নিজ বাসভবনে চলে আসেন। পাক সেনারা খবর পেয়ে ১৭ মে তাকে আটক করে নিয়ে যায় এবং মেজর সরফরাজের নেতৃত্বে তার উপর অমানবিক নির্যাতন চালাতে শুরু করে। দুই দিন পর, ১৯৭১ সালের ১৯ মে পাকিস্তানি সেনারা তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরবর্তীকালে বনানী সামরিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।[১][৩][৪]
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসাধারণ আত্মত্যাগের জন্য ২০১২ সালে তাকে বাংলাদেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার”[৫] হিসাবে পরিচিত স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।[২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ "স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি"। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ "স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকা"। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ রহমান, রাশেদুর, সম্পাদক (৯ জানুয়ারি ২০১৫)। "এ কে শামসুদ্দিন"। প্রথম আলো। উদয়ের পথে শুনি কার বাণী—২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৯।
- ↑ ক খ গ "এ কে শামসুদ্দিন"। Martyred Intellectuals। ২০২০-১০-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৯।
- ↑ সানজিদা খান (২০১২)। "জাতীয় পুরস্কার"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।