দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর
জন্ম১১ মার্চ, ১৮৪০
মৃত্যু১৯ জানুয়ারি, ১৯২৬ (বয়স ৮৬)
পেশাকবি, সঙ্গীতকার, দার্শনিক
দাম্পত্য সঙ্গীসর্বসুন্দরী দেবী
সন্তানদীপেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অরুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নীতিন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কৃপেন্দ্রনাথ ঠাকুর
আত্মীয়দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর (পৌত্র)

দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর (জন্ম: ১১ মার্চ, ১৮৪০ – মৃত্যু: ১৯ জানুয়ারি, ১৯২৬) ছিলেন বিশিষ্ট বাঙালি কবি, সঙ্গীতকার, দার্শনিক, গণিতজ্ঞ ও চিত্রশিল্পী। তিনি বাংলা সংকেত লিপি (শর্ট হ্যাণ্ড) ও স্বরলিপি রচনার অন্যতম অগ্রপথিক ছিলেন।[১] পারিবারিক পরিচয়ে তিনি ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা[২]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ঠাকুর পরিবারের জোড়াসাঁকো শাখার দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্র এবং দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তার বাল্যশিক্ষা মূলত গৃহশিক্ষকের নিকট। যদিও তিনি কলকাতার সেন্ট পল’স স্কুল ও হিন্দু কলেজেও (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) কিছুকাল পড়াশোনা করেছিলেন।[৩] দ্বিজেন্দ্রনাথ তার পরের ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। যদিও দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রকৃতিগত কিছু পার্থক্য ছিল। দ্বিজেন্দ্রনাথ ছিলেন সমাজের প্রচলিত সংস্কারগুলির একনিষ্ঠ অনুগামী। অন্যদিকে সত্যেন্দ্রনাথ এই সংস্কারগুলিকে ভেঙে নব্য আধুনিক সমাজ গঠনের পক্ষপাতী ছিলেন।[৪] অনাড়ম্বর সহজ সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত দ্বিজেন্দ্রনাথ ছিলেন কাব্যামোদী, জ্ঞানতাপস ও পরীক্ষানিরীক্ষা-প্রিয় মানুষ।[১] যৌবনেই তার স্ত্রীবিয়োগ ঘটেছিল। অবশিষ্ট জীবন দ্বিজেন্দ্রনাথ বিপত্নীক অবস্থাতেই অতিবাহিত করেছিলেন।[১]

কাব্যচর্চা[সম্পাদনা]

বাংলা সাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রনাথের প্রথম অবদান ছিল ধ্রুপদি সংস্কৃত ভাষায় রচিত কালিদাসের মেঘদূত কাব্যের বঙ্গানুবাদ। ১৮৬০ সালে, নোবেল পুরস্কার-বিজয়ী কনিষ্ঠ ভ্রাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের ঠিক এক বছর আগে, এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল। গ্রন্থ প্রকাশকালে দ্বিজেন্দ্রনাথের বয়স ছিল মাত্র কুড়ি বছর। এই অনুবাদটিই ছিল মেঘদূতের প্রথম বাংলা অনুবাদ। দ্বিজেন্দ্রনাথ এই গ্রন্থ অনুবাদকালে দু-টি ভিন্ন বাংলা ছন্দশৈলী ব্যবহার করেছিলেন।[১]

তার দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ স্বপ্নপ্রয়াণ প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৭৫ সালে। এই গ্রন্থ প্রকাশকালে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কিশোর মাত্র। এই কাব্যে এক যুবকের ভ্রমণবৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে। এই গ্রন্থে বিভিন্ন ছন্দশৈলীর প্রয়োগের উপর তার আশ্চর্য নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়। গ্রন্থটি সেই যুগের বাংলা কাব্যের এক দিকনির্দেশক এবং সেই কারণে এর ঐতিহাসিক মূল্যও অনস্বীকার্য।[১]

দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন কাব্যচর্চা শুরু করেন, তখন মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন স্বীয় সাফল্যের শীর্ষদেশে। ১৮৫৬ সালে মাদ্রাজ (অধুনা চেন্নাই) থেকে কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করার পর থেকে ইউরোপ যাত্রার পূর্বে ছয় বছর মাইকেল মধুসূদন একাগ্রতার সহিত তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য (১৮৫৯), পদ্মাবতী (১৮৬০), মেঘনাদবধ কাব্য (১৮৬১), ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১), কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১), বীরাঙ্গনা কাব্য (১৮৬২) ইত্যাদি কাব্য ও নাটকের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য জগৎকে সমৃদ্ধ ও প্রভাবিত করেন। দ্বিজেন্দ্রনাথের জীবদ্দশাতেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বলিষ্ঠ লেখনী বাংলা সাহিত্যকে গৌরবের শিখরদেশে স্থাপন করে’।[৫] সেই যুগে বাংলার প্রত্যেক কবিই অল্পবিস্তর মধুসূদন দ্বারা প্রভাবিত হলেও, দ্বিজেন্দ্রনাথ ছিলেন এই প্রভাবের ঊর্ধ্বে।[১] বরং মধুসূদনই দ্বিজেন্দ্রনাথকে ভবিষ্যতের কবি হিসাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন।[৬]

উচ্চ প্রতিভাবান কবি হওয়া সত্ত্বেও ব্যক্তি দ্বিজেন্দ্রনাথ ছিলেন অত্যন্ত অগোছালো মানুষ। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, স্বপ্নপ্রয়াণ কাব্যের ছেঁড়া পাণ্ডুলিপির পাতা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির যেখানে সেখানে ছড়িয়ে পড়ে থাকত। এগুলি সংগ্রহ করে প্রকাশ করা গেলে তা উক্ত গ্রন্থের একটি মূল্যবান সংস্করণ হত।[১]

দর্শনচর্চা[সম্পাদনা]

দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ‘এক সত্যকারের দার্শনিক’। তিনি ‘ন্যাশানাল সোসাইটি’ ও ‘বিদ্বজ্জন সমাগম’ নামে দুটি দর্শনচর্চাকারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় সহায়তা করেছিলেন। গীতা-দর্শনের প্রতিও তার গভীর আগ্রহ ছিল।[৭]

তার প্রধান দর্শনগ্রন্থ হল তত্ত্ববিদ্যা (তিন খণ্ডে, ১৮৬৬-৬৮)। এই বইটি বাংলা দর্শনচর্চার ইতিহাসে একটি পথপ্রদর্শক গ্রন্থ। বাংলা ভাষায় এই জাতীয় বই পূর্বে প্রকাশিত হয়নি। তার অপর দু-টি দর্শন গ্রন্থ হল অদ্বৈত মতের সমালোচনা (১৮৯৬) ও আর্যধর্ম ও বৌদ্ধধর্মের ঘাত-প্রতিঘাত (১৮৯৯)।[১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৮৮৪ সাল থেকে সুদীর্ঘ ২৫ বছর তিনি তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি হিতবাদী পত্রিকাটিও প্রতিষ্ঠা করেন।[২] দ্বিজেন্দ্রনাথ তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা প্রকাশ অব্যাহত রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার অপর ভ্রাতা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতী নামে একটি নতুন পত্রিকা চালু করার প্রস্তাব দেন। দ্বিজেন্দ্রনাথ এই পত্রিকার সম্পাদনার ভার গ্রহণ করলেও, পত্রিকাটি চালাতেন মূলত জ্যোতিরিন্দ্রনাথই।[১]

বাংলা সাহিত্যে তার অনবদ্য অবদানের জন্য ১৮৯৭ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত মেয়াদে তাকে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছিল। ১৯১৪ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের অধিবেশনে তিনিই পৌরোহিত্য করেছিলেন।[১]

১৮৭৩ সালে পাবনা বিদ্রোহের সময় তার জমিদারির আয় হ্রাস পেলে, তিনি কৃষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে “শান্তিশৃঙ্খলা পুনঃসংস্থাপন” করার সুপারিশ করেছিলেন।[৮]

দ্বিজেন্দ্রনাথ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা করতেন। তিনি ছিলেন বাংলা সংকেত লিপি বা শর্ট হ্যান্ড প্রবর্তনের এক অগ্রপথিক। তিনি কবিতার আকারে সংকেত লিপিও চালু করেন।[১] বাংলা গানে স্বরলিপির ব্যবহার প্রবর্তনের ক্ষেত্রেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেযুগে রাজা সৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের সহকারী ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী ছাড়া আর কেউ এই কাজ করেননি।[৪] ১৯১৩ সালে বাক্সের গঠন বিষয়ে বাক্সমিতি নামে একটি পুস্তকও রচনা করেছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ।[৩] কাগজ মুড়ে নানা রকম আকৃতি দেওয়া ছিল তার শখ।[৪]

১৮৬৬ থেকে ১৮৭১ সাল পর্যন্ত তিনি আদি ব্রাহ্মসমাজের আচার্যের পদ অলংকৃত করেন। ব্রজসুন্দর মিত্রের তত্ত্বাবধানে ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের সূচনাপর্বে তিনি পিতা দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে ঢাকা পরিভ্রমণ করেছিলেন।[৯]

দ্বিজেন্দ্রনাথ হিন্দুমেলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। হিন্দুমেলার জন্য তিনি দেশাত্মবোধক গানও রচনা করেছিলেন।[৩] গানরচনা ছিল তার স্বভাবগত। তার রচিত ব্রহ্মসংগীত করো তাঁর নাম গান, যতদিন রহে দেহ প্রাণ বহু বছর ৭ পৌষের প্রার্থনায় গীত হয়েছিল। ব্রাহ্মসমাজের সাধারণ প্রার্থনাতেও তার রচিত ব্রহ্মসংগীতগুলি বহুলভাবে গীত হয়ে থাকে।[১০] হিন্দুমেলার জন্য লেখা তার একটি জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গান ছিল মলিন মুখচন্দ্রমা ভারত তোমারি[২]

শান্তিনিকেতনে[সম্পাদনা]

জীবনের শেষ কুড়ি বছর দ্বিজেন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে প্রকৃতির সাহচর্যে জ্ঞানচর্চা ও লেখালিখির মাধ্যমে অতিবাহিত করেন। শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকদের নিয়ে তিনি হাস্যোদ্দীপক চতুষ্পদী ছড়া রচনা করতেন। এই ছড়াগুলি প্রকাশিত হত শান্তিনিকেতন পত্রিকায়। তার রসবোধ শান্তিনিকেতনে সকলের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিল।[৬] শান্তিনিকেতনে চড়াই পাখি, কাঠবিড়ালি আর কাকেদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল প্রবাদপ্রতীম।[৪] ঈশ্বরজ্ঞান লাভের পর মানুষের হৃদয় শিশুর তুল্য হইয়া যায় - উপনিষদ্‌ শাস্ত্রের এই শিক্ষা তিনি মেনে চলতেন। তিনি নানা বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেছিলেন। তবে তার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল দর্শন। রবীন্দ্রনাথ সহ অন্যান্য বিদ্বান ব্যক্তিদের নিতে তিনি মজলিশ বসাতেন। এই মজলিশে তিনি তার রচনা পাঠ করে শোনাতেন। কোনো বিষয় বুঝতে না পারলে বিধুশেখর শাস্ত্রী ও ক্ষিতিমোহন সেনের সাহায্য নিতেন।[৬]

রবীন্দ্রনাথ তাকে বড়োদাদা বলে ডাকতেন। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে মহাত্মা গান্ধীচার্লস ফ্রিয়ার অ্যান্ড্রুজ শান্তিনিকেতনে এসে দ্বিজেন্দ্রনাথের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন এবং তারাও তাকে বড়োদাদা সম্বোধন করেন।[৬] দ্বিজেন্দ্রনাথের লেখা একটি চিঠি সংবাদপত্রে প্রকাশের উদ্দেশ্যে দিয়ে মুখবন্ধ হিসাবে মহাত্মা গান্ধী লেখেন, “আপনারা দ্বিজেন্দ্রনাথকে চেনেন। তিনি শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়োদাদা এবং তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতোই কার্যত সন্ন্যাসীর জীবন যাপন করে থাকেন।” [১১]

রচনাবলি[সম্পাদনা]

  • বাংলা: ভ্রাতৃভাব (১৮৬৩), তত্ত্ববিদ্যা (১৮৬৬-৬৯), "স্বপ্নপ্রয়াণ" (১৮৭৫) সোনার কাঠি রূপার কাঠি (১৮৮৫), সোনায় সোহাগা (১৮৮৫), আর্যামি এবং সাহেবিয়ানা (১৮৯০), সামাজিক রোগের কবিরাজি চিকিৎসা (১৮৯১), অদ্বৈত মতের সমালোচনা (১৮৯৬), ব্রহ্মজ্ঞান ও ব্রহ্মসাধনা (১৯০০), বঙ্গের রঙ্গভূমি (১৯০৭), হারামণির অন্বেষণ (১৯০৮), রেখাক্ষর-বর্ণমালা (১৯১২),গীতাপাঠের ভূমিকা (১৯১৫), প্রবন্ধমালা (১৯২০), এবং কাব্যমালা (১৯২০)।[২]
  • ইংরেজি: বক্সোমেট্রি (বাক্সমিতি) (১৯১৩), অন্টোলজি (১৮৭১) এবং জ্যামিতি-সংক্রান্ত একটি বই।[২]

জ্ঞানাঙ্কুর, প্রতিবিম্ব, তত্ত্ববোধিনী, ভারতী, সাধনা, নবপর্যায় বঙ্গদর্শন, মানসী, সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, শান্তিনিকেতন, বুধবার, শ্রেয়সী, প্রবাসী, সবুজপত্রসুপ্রভাত পত্রিকাতে তার অজস্র রচনা প্রকাশিত হয়েছিল।[২]

উত্তরপুরুষ[সম্পাদনা]

দ্বিজেন্দ্রনাথের পাঁচ পুত্র ছিল — দীপেন্দ্রনাথ, অরুণেন্দ্রনাথ, নীতীন্দ্রনাথ, সুধীন্দ্রনাথ ও কৃপেন্দ্রনাথ। এঁদের মধ্যে সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬৯-১৯২৯) ছিলেন একজন বিশিষ্ট লেখক। তিনি একাধিক কবিতা, উপন্যাস ও ছোটোগল্প রচনা করে গিয়েছেন। ১৮৯১ সালে সাধনা নামে তিনি একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনিই ছিলেন এই পত্রিকার সম্পাদক। পরে এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব রবীন্দ্রনাথ নিজের হাতে তুলে নেন। কালক্রমে পত্রিকাটি ভারতী পত্রিকার সঙ্গে বিলীন হয়ে যায়।[১]

তার পৌত্রদের মধ্যে দীপেন্দ্রনাথের পুত্র দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৮২-১৯৩৫) ছিলেন বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ। তিনি একবার গান শুনেই তা তুলে নিতে পারতেন। রবীন্দ্রনাথ স্বরচিত গানে সুরারোপ করলেও, সেই সুর মনে রাখতে বা তার স্বরলিপি রচনা করতে গিয়ে তাকে সমস্যায় পড়তে হত। এই কাজ করতেন দিনেন্দ্রনাথ। তিনি রবীন্দ্রসংগীতের প্রধান স্বরলিপিকারেদের মধ্যে অন্যতম। রবীন্দ্রনাথ তাকে “সকল গানের কাণ্ডারী” বলতেন।[১]

দ্বিজেন্দ্রনাথের অপর পুত্র সুধীন্দ্রনাথের পুত্র সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯১০-১৯৭৪) ছিলেন বিশিষ্ট বাগ্মী। ১৯৬০-এর ও ১৯৭০-এর দশকে সাংস্কৃতিক জগতে তার নাম সুপরিচিত ছিল।[১] প্রথম জীবনে তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।[১২] সুধীন্দ্রনাথের এক কন্যা এনা রায়ের কন্যা কৃষ্ণা রিঁবু (১৯২৭- ২০০০) হলেন শিল্প জগতের আন্তর্জাতিক নাম ।স্বামী জঁ রিঁবু ছিলেন Schlumberger কোম্পানির কর্ণধার (পৃথিবীর অন্যতম ধনী)। মাদাম রিঁবু ছিলেন শিল্প সংগ্রাহক, টেক্সটাইল গবেষক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও শিল্প জগতের এক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।

দ্বিজেন্দ্রনাথ চলচ্চিত্রাভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরেরও পূর্বপুরুষ। দ্বিজেন্দ্রনাথের পৌত্রী লতিকা ছিলেন শর্মিলা ঠাকুরের মাতামহী।[১৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠাকুরবাড়ির কথা। শিশু সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৯৫–৯৮। 
  2. দুলাল সরকার (২০১২)। "ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  3. সুবোধ চন্দ্র সেনগুপ্ত; অঞ্জলি বোস, সম্পাদকগণ (১৯৯৮) [১৯৭৬]। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ২২৫। আইএসবিএন 81-85626-65-0 
  4. ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী। স্মৃতিসম্পুত। বিশ্বভারতী। পৃষ্ঠা ২৯–৩১। 
  5. Nag, Kalidas, Introduction to the Bethune School and College Centenary Volume, 1949.
  6. হীরেন্দ্রনাথ দত্ত। শান্তিনিকেতনের এক যুগ। বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ। পৃষ্ঠা ২৭–৩২। আইএসবিএন 81-7522-329-4 
  7. চিত্রা দেব। "Jorasanko and the Thakur Family" [জোড়াসাঁঁকো এবং ঠাকুর পরিবার]। সুকান্ত চৌধুরি। Calcutta, the Living City [কোলকাতা, জীবন্ত শহর]। । অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৬৫। আইএসবিএন 0-19-563696-1 
  8. সরকার, সুমিত; আধুনিক ভারত ১৮৮৫-১৯৪৭; নয়াদিল্লি ১৯৯৮; আইএসবিএন ০-৩৩৩-৯০৪২৫-৭, পৃষ্ঠা ৫২।
  9. Sastri, Sivanath, History of the Brahmo Samaj, 1911-12/1993, p. 344, p. 395, Sadharan Brahmo Samaj.
  10. "দ্বিজেন্দ্রনাথ টেগোর (১৮৪০-১৯২৬)"গ্রেট মাস্টার্স। বিশ্বভারতী। ২০০৭-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০২-২৬ 
  11. দেসাই, মহাদেব। "Day to day with Gandhi"Secretary’s Diary। সর্ব সেবা সাংঘ প্রকাশন, রাজঘাট, বেনারস - ২২১০০১। ২০০৭-০৫-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০২-২৬ 
  12. সুবোধ চন্দ্র সেনগুপ্ত; অঞ্জলি বোস, সম্পাদকগণ (১৯৯৮) [১৯৭৬]। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৬০৭। আইএসবিএন 81-85626-65-0 
  13. "My surname opened many doors for me: Sharmila Tagore"দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-১৮ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]