রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৯০১–১৯৩২)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৯০১–১৯৩২) কবির জীবনের শান্তিনিকেতন বাস এবং এশিয়া, ইউরোপজাপান ভ্রমণ পর্ব।

শান্তিনিকেতন[সম্পাদনা]

১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ ত্যাগ করে চলে আসেন কলকাতার প্রায় ১০০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত শান্তিনিকেতনে (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলায় অবস্থিত)। ১৮৬৩ সালের রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন রুক্ষ অনুর্বর প্রান্তরের লাল কাঁকুড়ে মাটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানে সাত একর জমি ক্রয় করেছিলেন আশ্রম স্থাপন করার মানসে। নির্মাণ করিয়েছিলেন একটি ভবন ও শ্বেতপাথরের মেঝে-বিশিষ্ট একটি প্রার্থনা মন্দির। এখানেই আম্রকুঞ্জ ও উদ্যানের মাঝে একটি গ্রন্থাগার সহ রবীন্দ্রনাথ স্থাপন করেন তার পরীক্ষামূলক ব্রহ্মবিদ্যালয়।[১] জীবনের এই পর্বেই কবিকে শোকাহত করে প্রয়াত হলে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী (১৯০১), কন্যা রেণুকা (১৯০৩) ও পুত্র শমীন্দ্রনাথ (১৯০৭)। ১৯০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি ৮৭ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের পিতৃদেব দেবেন্দ্রনাথ প্রয়াত হলেন। এরপর থেকে পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে প্রতি মাসে ১,২৫০-১,৫০০ টাকা মাসোহারা পেতে শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। এছাড়া ত্রিপুরার মহারাজার কাছ থেকে পেতেন অনুদান স্বরূপ কিছু অর্থ। স্ত্রীর গহনা ও পুরীর সৈকতাবাসটি বিক্রয় করে কিছু অর্থ পান। আর পান তার রচনার সহস্রাধিক কপি প্রকাশের সম্মানী স্বরূপ সামান্য কিছু অর্থ (২,০০০ টাকা)।[২]

বাঙালি পাঠকসমাজে রবীন্দ্রনাথের পরিচিতি ও খ্যাতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রকাশিত হয় নৈবেদ্য (১৯০১) ও খেয়া (১৯০৬) প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ। তার রচনার মধ্যমানের কিছু অনুবাদও প্রকাশিত হতে থাকে অন্যান্য ভাষায়। এই সময় চিত্রকর উইলিয়াম রোদেনস্টাইন প্রমুখ গুণমুগ্ধদের অনুরোধক্রমে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজি মুক্তছন্দে নিজের রচনা অনুবাদ করতে শুরু করেন। ১৯১২ সালে রচনার ইংরেজি অনুবাদের গুচ্ছ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত হন ইংল্যান্ডে। সেখানে এই রচনা পাঠ করলে একাধিক বিশিষ্ট ইংরেজ ব্যক্তিত্ব তার প্রতি আকৃষ্ট হন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ইংরেজ মিশনারি ও গান্ধীবাদী চার্লস এফ অ্যান্ড্রুজ, অ্যাংলো-আইরিশ কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস, এজরা পাউন্ড, রবার্ট ব্রিজেস, আর্নেস্ট রাইস ও টমাস স্টার্জ মুর প্রমুখ।[৩][৪] পরে ইয়েটস ইন্ডিয়া সোসাইটি প্রকাশিত গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদটির মুখবন্ধ রচনা করে দেন। অ্যান্ড্রুজ কবির সঙ্গে কাজ করার উদ্দেশ্যে চলে আসেন ভারতে।

শিংগুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (清華大學) গবেষকদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ (ডানদিকের কেন্দ্রে)। ১৯২৪ সালে চীনে একটি প্রলম্বিত সফরে। (泰戈尔在清华大学讲学)

১৯১২ সালের ১০ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের আরবানার একটি ইউনিটারিয়ান চার্চে বক্তৃতা দেন কবি।[৫] এই বছরই কবি যুক্তরাজ্য সফরে যান। এই সফরে উইলিয়াম রোদেনস্টাইন ও ইয়েটসের সঙ্গে আলাপ হয় কবির। এঁরা ততদিনে তার গীতাঞ্জলি পাঠ করেছিলেন। এই সফরে কবি স্ট্র্যাফোর্ডশায়ারের বাটারটনে অ্যান্ড্রুজের ধর্মযাজক বন্ধুদের সঙ্গে অবস্থান করেন।[৬] ১৯১৩ সালের ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথ তার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির সংবাদ পান। গীতাঞ্জলি: দ্য সং অফারিংস (১৯১২) সহ তার অনূদিত সামান্য যে কয়টি রচনা সেই সময় পাশ্চাত্য পাঠকমহলে সুপরিচিত ছিল তার ভূয়সী প্রশংসা করে সুইডিশ আকাদেমি[৭]

১৯১৬ সালের ৩ মে রবীন্দ্রনাথ, মুকুল দে, চার্লস এফ. অ্যান্ড্রুজ ও ডব্লিউ. ডব্লিউ. পিয়ারসন জাহাজপথে প্রথমে জাপান ও পরে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ১৯১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তারা এই দুই দেশে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান।[৮] জাপানযাত্রী গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের এই চারমাসব্যাপী জাপান ভ্রমণের বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে।[৯] উক্ত গ্রন্থে কবি জাপানিদের নন্দনচেতনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। যদিও জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে তিনি বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। তার আক্রমণের লক্ষ্য ছিল মূলত জাপানি ও আমেরিকান জাতীয়তাবাদ। তার "ন্যাশানালিজম ইন ইন্ডিয়া" প্রবন্ধটি একই সঙ্গে নন্দিত ও নিন্দিত হয়েছিল। রোমা রোঁলা প্রমুখ বিশ্বশান্তীবাদী তথা কবির সমমনস্ক আন্তর্জাতিকতাবাদীরা অবশ্য এই গ্রন্থের প্রশস্তিবাদই করেছিলেন।[১০] তবে এই জাতীয় মতবাদ ব্যক্ত করায় সেই সময় তার জীবনও বিপন্ন হয়েছিল: সানফ্রান্সিসকোয় একটি হোটেলে অবস্থানকালে একদল ভারতীয় চরমপন্থীকে কবিকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, কারণ হত্যা করা উচিত হবে কিনা তা নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা নিজেরাই বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিল।[১১] পরদিন সকালেই কবি লস এঞ্জেলসের নিকটস্থ সান্টা বারবারার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।[১২] এখানে কমলালেবুর উদ্যানে ধ্যানমগ্নতার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ এক নতুন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা করেন। তার ইচ্ছা ছিল শান্তিনিকেতন ভারত ও অবশিষ্ট বিশ্বকে এক সূত্রে গ্রথিত করুক। দেশ ও ভূগোলের সীমারেখার বাইরে এখানে গড়ে উঠুক মানবতার এক বিশ্ববিদ্যাকেন্দ্র।[১১]

তিনি তার বিদ্যালয়ের নাম রাখেন বিশ্বভারতী। ১৯১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিদ্যালয়ের শিলান্যাস হয়। পরে ১৯২১ সালে ২২ ডিসেম্বর বিশ্বভারতীর উদ্বোধন হয়।[১৩] এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অধ্যক্ষ রূপে রবীন্দ্রনাথ সর্বদাই ব্যস্ত থাকতেন। সকালে ক্লাস নিতেন এবং বিকেলে ও সন্ধ্যায় ছাত্রদের জন্য রচনা করতেন পাঠ্যপুস্তক।[১৪] ১৯১৯ সাল থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে বিশ্বভারতীর জন্য অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণও করেন।[১৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. (Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 133)
  2. (Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 139-140)
  3. (Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 179)
  4. (Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 178)
  5. (Tagore Festival Committee 2006)
  6. (Chakravarty 1961, পৃ. 1-2)
  7. (Hjärne 1913)
  8. (Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 206)
  9. (Chakravarty 1961, পৃ. 2)
  10. (Chakravarty 1961, পৃ. 182)
  11. (Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 204)
  12. (Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 204-205)
  13. (Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 220)
  14. (Chakravarty 1961, পৃ. 27)
  15. (Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 221)
  • , আইএসবিএন ০-৮০৭০-৫৯৭১-৪  অজানা প্যারামিটার |Surname1= উপেক্ষা করা হয়েছে (|surname1= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Title= উপেক্ষা করা হয়েছে (|title= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Given1= উপেক্ষা করা হয়েছে (|given1= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Publisher= উপেক্ষা করা হয়েছে (|publisher= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Year= উপেক্ষা করা হয়েছে (|year= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  • , আইএসবিএন ০-৩১২-১৪০৩০-৪  অজানা প্যারামিটার |Surname1= উপেক্ষা করা হয়েছে (|surname1= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Year= উপেক্ষা করা হয়েছে (|year= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Publisher= উপেক্ষা করা হয়েছে (|publisher= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Given1= উপেক্ষা করা হয়েছে (|given1= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Title= উপেক্ষা করা হয়েছে (|title= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Given2= উপেক্ষা করা হয়েছে (|given2= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Surname2= উপেক্ষা করা হয়েছে (|surname2= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  • http://nobelprize.org/literature/laureates/1913/press.html  অজানা প্যারামিটার |Surname1= উপেক্ষা করা হয়েছে (|surname1= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Title= উপেক্ষা করা হয়েছে (|title= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Given1= উপেক্ষা করা হয়েছে (|given1= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Access-date= উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Periodical= উপেক্ষা করা হয়েছে (|periodical= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Year= উপেক্ষা করা হয়েছে (|year= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  • সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি, ১৩ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০০৯  অজানা প্যারামিটার |Surname1= উপেক্ষা করা হয়েছে (|surname1= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Access-date= উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Author= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Journal= উপেক্ষা করা হয়েছে (|journal= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Title= উপেক্ষা করা হয়েছে (|title= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |Year= উপেক্ষা করা হয়েছে (|year= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)