জ্বল্ জ্বল্ চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ
"জ্বল্ জ্বল্ চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ" | |
---|---|
নটী বিনোদিনী দেবব্রত বিশ্বাস অদিতি গুপ্ত প্রমুখ শিল্পীবৃন্দ কর্তৃক সঙ্গীত | |
ভাষা | বাংলা |
প্রকাশিত | ১৮৭৫ |
ধারা | রবীন্দ্রসংগীত |
গান লেখক | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
সুরকার | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
জ্বল্ জ্বল্ চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ হল একটি রবীন্দ্রসংগীত। ১৮৭৫ সালে ১৪ বছর বয়সে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সরোজিনী বা চিতোর আক্রমণ নাটক-এর জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানটি রচনা করেছিলেন। রাগ ভূপালী একতালে নিবদ্ধ এই গানটির স্বরলিপিকার ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী। গানটি গীতবিতান গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে ‘নাট্যগীতি’ পর্যায়ে সংকলিত। স্বরবিতান ৫১তম খণ্ডে এই গানের স্বরলিপি রক্ষিত আছে।[১]
নরেন্দ্রনাথ দত্ত ও বৈষ্ণবচরণ বসাক সম্পাদিত সঙ্গীতকল্পতরু এবং দুর্গাদাস লাহিড়ী সম্পাদিত বাঙালীর গান গ্রন্থে এই গানটি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান হিসেবে সংকলিত হয়। গানটি সেই যুগে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।[২]
কথা[সম্পাদনা]
গানের কথাটি নিম্নরূপ:[৩]
- জ্বল্ জ্বল্ চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ
- পরান সঁপিবে বিধবা বালা।
- জ্বলুক জ্বলুক চিতার আগুন
- জুড়াবে এখনি প্রাণের জ্বালা।
- শোন্ রে যবন, শোন্ রে তোরা,
- যে জ্বালা হৃদয়ে জ্বালালি সবে
- সাক্ষী র’লেন দেবতা তার
- এর প্রতিফল ভুগিতে হবে।।
- দেখ্ রে জগৎ, মেলিয়ে নয়ন,
- দেখ রে চন্দ্রমা, দেখ রে গগন,
- স্বর্গ হতে সব দেখো দেবগণ
- জ্বলদ্-অক্ষরে রাখো গো লিখে।
- স্পর্ধিত যবন, তোরাও দেখ রে,
- সতীত্ব রতন করিতে রক্ষণ
- রাজপুত সতী আজিকে কেমন
- সঁপিছে পরান অনলশিখে।।
রচনার ইতিহাস[সম্পাদনা]
‘জ্বল্ জ্বল্ চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ’ গানটির রচনা প্রসঙ্গে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন:[৪]
…রাজপুত মহিলাদের চিতাপ্রবেশের যে একটা দৃশ্য আছে, তাহাতে পূর্ব্বে আমি গদ্যে একটা বক্তৃতা রচনা করিয়া দিয়াছিলাম। যখন এই স্থানটা পড়িয়া প্রুফ্ দেখা হইতেছিল, তখন রবীন্দ্রনাথ পাশের ঘরে পড়াশুনা বন্ধ করিয়া চুপ করিয়া বসিয়া বসিয়া শুনিতেছিলেন। গদ্য-রচনাটি এখানে একেবারেই খাপ খায় নাই বুঝিয়া, কিশোর রবি একেবারে আমাদের ঘরে আসিয়া হাজির। তিনি বলিলেনএখানে পদ্যরচনা ছাড়া কিছুই জোর বাঁধিতে পারে না। প্রস্তাবটা আমি উপেক্ষা করিতে পারিলাম নাকারণ, প্রথম হইতেই আমারও মনটা কেমন খুঁৎ-খুঁৎ করিতেছিল। কিন্তু এখন আর সময় কৈ? আমি সময়াভাবের আপত্তি উত্থাপন করিলে, রবীন্দ্রনাথ সেই বক্তৃতার পরিবর্তে একটা গান রচনা করিয়া দিবার ভার লইলেন, এবং তখনই খুব অল্পকালের মধ্যেই “জ্বল্ জ্বল্ চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ” এই গানটি রচনা করিয়া আনিয়া, আমাদিগকে চমৎকৃত করিয়া দিলেন।
উল্লেখ্য, সরোজিনী বা চিতোর আক্রমণ নাটক-এ নায়িকা সরোজিনীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সেকালের বিখ্যাত মঞ্চাভিনেত্রী নটী বিনোদিনী। তাঁর আত্মজীবনী আমার অভিনেত্রী জীবন-এ এই গানটির উল্লেখ সহ সংশ্লিষ্ট দৃশ্যের মঞ্চসজ্জার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। বিনোদিনী ও সহ অভিনেত্রীরা এই গানটি গাইতে গাইতে রাজপুত রমণীদের চিতারোহণের দৃশ্যটি অভিনয় করেছিলেন।[৫]
১৮৭৬ সালের ৩১ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার দিন রাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের সিঁথির বাগানবাড়ি মরকত-কুঞ্জ উদ্যানে (অধুনা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বি. টি. রোড শিক্ষাপ্রাঙ্গন) একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ এই কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনান।[৬]
রেকর্ড[সম্পাদনা]
২০০১ সালে প্রকাশিত মহার্ঘ্য নামে একটি কমপ্যাক্ট ডিস্কে দেবব্রত বিশ্বাসের কণ্ঠে এই গানটি প্রকাশিত হয়। গানটি শিল্পীর জীবৎকালে অপ্রকশিত একটি রেকর্ডিং। ২০১০ সালে অদিতি গুপ্ত এই গানটি রেকর্ড করেন।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ রবীন্দ্র-সঙ্গীত-কোষ, সুরেন মুখোপাধ্যায়, সাহিত্য প্রকাশ, কলকাতা, ১৪১৬ বঙ্গাব্দ, পৃ. ১৬১
- ↑ রবীন্দ্র-সঙ্গীত-কোষ, সুরেন মুখোপাধ্যায়, পৃ. ১৬১
- ↑ গীতবিতা, তৃতীয় খণ্ড, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, পৃ. ৭৬৭
- ↑ জীবনস্মৃতি, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, পৃ. ১৪৭
- ↑ রবিজীবনী, প্রথম খণ্ড, প্রশান্তকুমার পাল, ভূর্জপত্র, কলকাতা, ১৩৮৯ বঙ্গাব্দ, পৃ. ২৮২-৮৪
- ↑ রবিজীবনী, প্রথম খণ্ড, প্রশান্তকুমার পাল, পৃ. ২৮০