ওয়াহিদুজ্জামান কিরানবি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মাওলানা
ওয়াহিদুজ্জামান কিরানবি
শিক্ষাসচিব, দারুল উলুম দেওবন্দ
কাজের মেয়াদ
১৯৮৩ – ১৯৮৫
সহকারি পরিচালক, দারুল উলুম দেওবন্দ
কাজের মেয়াদ
১৯৮৫ – ১৯৮৭
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০
কিরানাহ, মজঃফরনগর, উত্তরপ্রদেশ
মৃত্যু১৫ এপ্রিল ১৯৯৫(1995-04-15) (বয়স ৬৫)
সমাধিস্থলমাজারে কাসেমি
জাতীয়তাভারতীয়
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদারুল উলুম দেওবন্দ
ব্যক্তিগত তথ্য
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
প্রধান আগ্রহআরবি সাহিত্য
উল্লেখযোগ্য কাজ
ঊর্ধ্বতন পদ
সাহিত্যকর্ম
  • আল কিরাতুল ওয়াজিহা
  • আল কামুস আল ওয়াহিদ

ওয়াহিদুজ্জামান কিরানবি (১৯৩০ – ১৫ এপ্রিল ১৯৯৫) ছিলেন একজন ভারতীয় ইসলামি পণ্ডিত, আরবি সাহিত্যিক ও ভাষাতত্ত্ববিদ।[১][২][৩] তিনি দীর্ঘ ২৭ বছর দারুল উলুম দেওবন্দে আরবি সাহিত্যের অধ্যাপনা করেছেন। তিনি মাসিক আদ দাঈদাওয়াতুল হকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তার বিখ্যাত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে আল কিরাতুল ওয়াজিহাআল কামুস আল ওয়াহিদ। এছাড়াও তিনি কিছুকাল দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষাসচিব ও সহকারি পরিচালক ছিলেন।

জীবনী[সম্পাদনা]

ওয়াহিদুজ্জামান ১৯৩০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মজঃফরনগর জেলার কিরানাহতে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তারপর ১৯৪৬ সালে তিনি হায়দ্রাবাদ যান এবং শেখ মামুন দামেস্কির কাছ থেকে আরবি ভাষা শেখেন। ১৯৪৮ সালে তিনি পুনরায় দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন এবং দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করে। ১৯৫২ সালে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে আরবি সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।[৫]

পড়াশোনা সমাপ্ত করার পর ১৯৫৬ সালে তিনি মজলিসে আহরারে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা হাবিবুর রহমান লুধিয়ানভির ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করেন এবং লুধিয়ানভির সভাপতিত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সাথে হজে গমন করেন। হজ্জ থেকে ফেরার পর তিনি সচিবের চাকরি ছেড়ে দিয়ে তার শিক্ষাভূমি দেওবন্দে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৫৭ সালে "দারুল ফিকর" নামে একটি সাংস্কৃতিক ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন, যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল মাদ্রাসার ছাত্রদের মধ্যে ইংরেজির সাথে আধুনিক আরবি ভাষা এবং তাদের আরবি ও ইংরেজি শেখার সুযোগ করে দেওয়া এবং দেওবন্দের ছাত্রদের মধ্যে আরবি কথ্য পরিবেশ তৈরি করা। তাই তিনি উর্দু মাসিক ম্যাগাজিন "আল কাসিম" প্রকাশ করেন এবং মাদ্রাসার স্নাতকদের আরবি ও ইংরেজি এবং আধুনিক সাংবাদিকতা শেখার জন্য অনুপ্রাণিত করেন এবং দারুল উলূম দেওবন্দের লক্ষ্য এবং এর শিক্ষা ও ধর্মীয় সেবা তুলে ধরেন। এই সময়ের মধ্যে ১৯৫৮ সালে তিনি তার বিখ্যাত আধুনিক আরবি-উর্দু অভিধান প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি প্রথমবারের মত আরবি শিক্ষক এবং ছাত্রদের মধ্যে একজন ভাষাবিদ হিসেবে আবির্ভূত হন।[৫]

দারুল উলুম দেওবন্দের শূরা কমিটি ১৯৬৩ সালে তাকে অধ্যাপনার প্রস্তাব দেয় এবং আরবি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়। শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর তিনি আরবি পত্রিকা প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং ১৯৬৫ সালে আরবি ত্রৈমাসিক পত্রিকা "দাওয়াতুল হক" প্রকাশ করেন। তারপরে তিনি দারুল উলুমে ১৯৬৪ সালে ছাত্রদের জন্য আরবি সাহিত্য ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি তার বিখ্যাত আরবি গ্রন্থ "আল কিরাতুল ওয়াজিহা" সংকলন করে প্রকাশ করেন এবং এটি আরবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে খ্যাতি লাভ করে।[৫] দাওয়াতুল হকের পর তিনি মাসিক আদ দাঈ প্রকাশ করেন।

১৯৭৭ সালে তিনি সৌদি আরব, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেছেন এবং সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ এবং সমাজকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। তাদের কাছে দারুল উলুম দেওবন্দের বাণী প্রচার এবং ভারতীয় মুসলমানদের বর্তমান ধর্মীয়, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষাগত বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। উপসাগরীয় দেশগুলো পরিদর্শন করার পর, তিনি দারুল উলুম দেওবন্দ কর্তৃপক্ষের কাছে তার শিক্ষা সংস্কার নিয়ে একটি সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি ১৯৮০ সালে দেওবন্দ মাদ্রাসার শতবর্ষ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং তিনি দারুল উলুম দেওবন্দ কর্তৃক গঠিত কমিটির প্রধান ছিলেন। ১৯৮৩ সালে তিনি শিক্ষা বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন এবং এ বছর তিনি ইউরোপ-আফ্রিকাসহ বিশ্বের বহু দেশ সফর করে দারুল উলুমের বাণীকে জনপ্রিয় করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নিযুক্ত হন। এবছর তিনি "আয়নায়ে দারুল উলুম" প্রকাশ করেন এবং এটি এখনও প্রকাশিত হচ্ছে এবং ম্যাগাজিনটির সমস্ত বিষয়বস্তু এবং নিবন্ধগুলো তথ্যপূর্ণ এবং ব্যাপক। ১৯৮৭ সালে তিনি কিছু ব্যক্তিগত কারণে ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের পদত্যাগ করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি "দারুল মুআল্লাফীন" প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯০ সালে তিনি সৌদি আরবের হজ্জ মন্ত্রকের আমন্ত্রণে হজ ও ওমরা পালন করেন। ১৯৯২ সালে তিনি কুয়েতি যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির জন্য বিশ্ব সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে তিনি বিশাল আরবি অভিধান "আল কামুস আল ওয়াহিদ" সংকলন করেন, যেটি তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়।[৫]

তিনি ১৯৯৫ সালে ১৫ এপ্রিল দিল্লীতে মৃত্যুবরণ করেন, তাকে মাজারে কাসেমিতে দাফন করা হয়।[৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

উদ্ধৃতি[সম্পাদনা]

  1. খালিদ হোসেন, আ ফ ম (১৬ জানুয়ারি ২০২২)। "ভারতীয় বংশোদ্ভূত আরবি লেখক"নয়া দিগন্ত 
  2. কামরামুজ্জামান (২০০১)। Maulavi Wahiduzzaman Karanvi His Contribution To Arabic Language And Literature In India [মৌলভি ওয়াহিদুজ্জামান কিরানভি: ভারতে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে তার অবদান] (গবেষণাপত্র)। ভারত: আরবি বিভাগ, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়hdl:10603/57789 
  3. মেহজাবিন আখতার, ডক্টর (২০১১)। مولانا وحید الزماں کیرانویؒ حیات و خدمات [মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান কিরানবির জীবন ও কর্ম]। হায়দ্রাবাদ: আনিস অফসেট। 
  4. আমিনী, নূর আলম খলিল (২০০০)। ওহ কুন খান কী বাত (৩য় সংস্করণ)। দেওবন্দ: ইদারা ইলম ও আদব। পৃষ্ঠা ১১৩। 
  5. নদভী, ফয়েজ আহমদ (১৪ মে ২০২০)। "Maulana Waheed-uz-Zaman Kiranawi: 1930 - 1995" [মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান কিরানবি (১৯৩০ — ১৯৯৫)]। দেওবন্দ অনলাইন। ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • খালিদ হোসেন, আ ফ ম (২০২২)। নিভে যাওয়া দীপশিখা ১। বাংলাদেশ: আকাবিব স্টাডিজ অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস। পৃষ্ঠা ৩৪৬–৩৫২। আইএসবিএন 9789849591405 
  • মাযহারুল ইসলাম ওসমান কাসেমী, মুফতি (২০১৫)। বিখ্যাত ১০০ ওলামা-মাশায়েখের ছাত্রজীবন (৩য় সংস্করণ)। ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ১২৩–১২৫। আইএসবিএন 98483916605 
  • চিশতী, আব্দুল হালিম। হায়াতে ওয়াহিদুজ্জামান। আরামবাগ, করাচি: তিজারাত কিতাব। 
  • আলংগদন, আনিস (২০১৪)। Relocating Arabic language and literature with reference to Arabic journalism in India 1950 to 2000 [১৯৫০ থেকে ২০০০ ভারতে আরবি সাংবাদিকতার উল্লেখ সহ আরবি ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ] (গবেষণাপত্র)। ভারত: মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ২৮৬–২৮৯। hdl:10603/30548 
  • আরবি, জিকরুল্লাহ (২০১৯)। Contribution of Darul Uloom Deoband to Arabic Journalism With Special Reference of Al-Die [আদ দাঈ-এর বিশেষ উল্লেখ সহ আরবি সাংবাদিকতায় দারুল উলুম দেওবন্দের অবদান] (গবেষণাপত্র)। ভারত: আরবি বিভাগ, মাওলানা আজাদ জাতীয় উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়। hdl:10603/337869 
  • খান, মুহাম্মদ নাজিম (১৯৯৬)। Contribution of Western Uttar Pradesh to the development of arabic learnings during the 14th century [চতুর্দশ শতাব্দীতে আরবি শিক্ষার বিকাশে পশ্চিম উত্তর প্রদেশের অবদান] (গবেষণাপত্র)। ভারত: আরবি বিভাগ, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১০৫–১০৮। hdl:10603/337869 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]