বিষয়বস্তুতে চলুন

রহমতুল্লাহ কিরানভি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রহমতুল্লাহ কাইরানাউই
رحمت اللہ کیرانوی
উপাধিকিরানবী
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
রহমতুল্লাহ

১৮১৮
মৃত্যু১৮৯১ (বয়স ৭২–৭৩) (২২ রমযান ১৩০৮ হিজরি)
সমাধিস্থলজান্নাতুল মুয়াল্লা
ধর্মইসলাম
জাতীয়তামুঘল ভারতীয়
ব্রিটিশ ভারতীয়
সৌদি আরবীয়
জাতিসত্তাভারতীয়
যুগ১৯ শতক
অঞ্চলউত্তর প্রদেশ, ভারত
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
প্রধান আগ্রহখ্রিস্টধর্মের বিরুদ্ধে বিতর্ক
উল্লেখযোগ্য কাজIslamic Social Reform during the 19th century, Debate against Christianity or Unislamic Innovations in Islam, Founder of মাদ্রাসা আস-সাওলাতিয়া
তরিকাচিশতিয়া
কাজমুহাদ্দিস, ফকিহ, ইতিহাস-লেখক
মুসলিম নেতা
যার দ্বারা প্রভাবিত

রহমতুল্লাহ কাইরানাভি (রহমতুল্লাহ কাইরানভি বা আল-কাইরানভি বা শেখ রহমত কাইরানভি বা রহমতুল্লাহ ইবনে হালিল আল-উসমানী আল-কাইরানভি বা আল-হিন্দি), (১৮১৮–১৮৯১) ছিলেন একজন সুন্নি মুসলিম পণ্ডিতলেখক যিনি তার গ্রন্থ ইযহারুল হকের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।[] তিনি ১৮৭৪ সালে সৌদি আরবের প্রথম মাদ্রাসা মাদ্রাসা আস-সাওলাতিয়া প্রতিষ্ঠা করেন।[]

প্রেক্ষাপট

[সম্পাদনা]

নাম ও বংশধারা

[সম্পাদনা]

মুহাম্মাদ রাহমাতুল্লাহ কীরানবি ১২৩৩ হিজরি সালের জুমাদাল উলা মাসের ১ তারিখ, মোতাবেক ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চের ৮/৯ তারিখে ভারতের রাজধানী দিল্লির পার্শ্ববর্তী 'মুজাফফর নগর' জেলার 'কীরানা' বা 'কৈরানা' গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খলীলুর রহমান। তিনি ছিলেন তৃতীয় খলীফায়ে রাশেদ যুন-নূরাইন উসমান ইবন আফফান -এর বংশধর। তাঁর ২৪তম পিতামহ আব্দুর রাহমান ইবন আব্দুল আযীয সর্বপ্রথম সুলতান মাহমুদ গযনবির সাথে ভারতে আগমন করেন। এক পর্যায়ে তিনি পানিপথে স্থায়ীভাবে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন। আল্লামা রাহমাতুল্লাহর ৭ম পিতামহ আব্দুল কারীম একজন প্রসিদ্ধ চিকিৎসক ছিলেন। ভারতের মোগল সম্রাট আকবারের এক জটিল রোগের চিকিৎসায় তিনি সফল হন। পুরস্কার হিসেবে সম্রাট আকবার তাকে 'কৈরানা' গ্রামে অনেক লাখেরাজ ভূ-সম্পত্তি প্রদান করেন। তখন থেকে তারা তথায় বসবাস করতে থাকেন। পরবর্তী মোগল শাসনামলে এ বংশের অনেকেই বিভিন্ন বড়বড় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ইসলামি ধর্মতাত্ত্বিক জ্ঞান ও চিকিৎসা বিদ্যায় পারদর্শিতার জন্য তাঁরা প্রসিদ্ধ ছিলেন।❝ইজহারুল হক অনুবাদ খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর পৃ:১৯❞

শিক্ষা ও জ্ঞানার্জন

[সম্পাদনা]

রাহমাতুল্লাহর পিতা, চাচা ও বংশের অনেকেই ছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রসিদ্ধ আলিমদের অন্যতম। ইলম, ধার্মিকতা, সম্পদ ও প্রতিপত্তি সবদিক থেকেই তারা প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাদের হাতেই রাহমাতুল্লাহর হাতেখড়ি। ১২ বছর বয়সে তিনি 'হিফযুল কুরআন' (কুরআন কারীম মুখস্থ) সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি তিনি ইসলামি জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় শিক্ষা লাভ করেন এবং তিনি আরবি, ফারসি ও উর্দু তিনটি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন।

এরপর তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তৎকালীন ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রাজধানী দিল্লি গমন করেন। তথায় প্রসিদ্ধ আলিম মুহাম্মাদ হায়াতের 'মাদ্রাসা' (মহাবিদ্যালয়)-এ ভর্তি হন। উক্ত মাদরাসায় ও দিল্লির অন্যান্য আলিমের নিকট ইসলামি জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। শিক্ষার আগ্রহ রাহমাতুল্লাহকে এখানেই থামতে দেয়নি। দিল্লির আলিমদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ সমাপ্ত করার পরে তিনি লক্ষ্ণৌ গমন করেন। ইসলামি জ্ঞানের চর্চায় লক্ষ্ণৌও অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ছিল। তথাকার সুপ্রসিদ্ধ আলিম ও ফকীহ মুফতি সা'দুল্লাহর নিকট তিনি অধ্যয়ন করেন। ইমামবখশ সাহবায়ির নিকট ফারসি সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। তৎকালীন প্রসিদ্ধ চিকিৎসক মুহাম্মাদ ফায়েযের নিকট চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা করেন। এছাড়া তৎকালীন প্রসিদ্ধ পণ্ডিতদের নিকট গণিতশাস্ত্র ও প্রকৌশলবিদ্যা অধ্যয়ন করেন।

এভাবে দিল্লির ও লক্ষ্ণৌর শিক্ষক ও পণ্ডিতদের নিকট থেকে ইসলামি ও প্রচলিত শিক্ষার বিভিন্ন শাখায় পাণ্ডিত্য ও ব্যুৎপত্তি লাভের পরে রাহমাতুল্লাহ তাঁর জন্মস্থান কৈরানায় ফিরে আসেন। তথায় তিনি একটি মাদরাসা (মহাবিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেন। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর পাণ্ডিত্যের কথা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থান থেকে মেধাবী ছাত্ররা তাঁর মাদরাসায় ভর্তি হয়ে শিক্ষালাভ করতে থাকেন। এদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীকালে ইসলামি শিক্ষা প্রচার, খ্রিস্টধর্ম-প্রচারকদের বিভ্রান্তি প্রতিরোধ ও ব্রিটিশ আধিপত্যবিরোধী আন্দোলনে তাঁর সাহচর্যে থেকেছেন এবং অনেকেই তাঁদের লেখনী, বক্তব্য ও শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে ভারতের মুসলিম জাগরণ ও প্রতিরোধ আন্দোলনে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। এদের একজন ছিলেন আল্লামা শাইখ আব্দুল ওয়াহহাব। তিনি মাদ্রাজের প্রথম ইসলামি মহাবিদ্যালয় (মাদরাসা) 'আল-বাকিয়াতুস সালিহা' প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে মাদ্রাজের সবচেয়ে বড় ইসলামি শিক্ষাপীঠ বলে গণ্য।❝ ইজহারুল হক পৃ:২০-২১❞

ভারতের তৎকালীন অবস্থা ও মিশনারি অপতৎপরতা

[সম্পাদনা]

মিশনারি অপপ্রচারের প্রতিরোধে শাইখ রাহমাতুল্লাহ

[সম্পাদনা]

খ্রিষ্টান পাদ্রী মি. ফানডার এর সাথে বিতর্ক

[সম্পাদনা]

মি. ফানডার আগ্রা ও উত্তর ভারতের ইংরেজ নিয়ন্ত্রিত সকল এলাকায় খ্রিস্টধর্ম প্রচারে রত ছিলেন। তিনি হাটবাজার, মসজিদ, মাদরাসা ও বিভিন্ন জনসমাবেশে প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছিলেন এবং সাধারণ মুসলিমদেরকে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছিলেন। আল্লামা রাহমাতুল্লাহ তাকে প্রকাশ্য বিতর্কে অংশ গ্রহণের জন্য পত্রের মাধ্যমে আহ্বান জানান। ২৩ মার্চ ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে তাদের পত্রালাপ শুরু হয় এবং ৮ই এপ্রিল তা শেষ হয় এবং বিতর্কের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মি. ফানডারের পত্রাবলি থেকে সুস্পষ্ট যে, তিনি প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন কঠিন শর্ত জুড়ে বিতর্ক এড়াতে চেষ্টা করেন। এ সকল শর্তের মধ্যে ছিল, যে পক্ষ হেরে যাবে তাকে অন্য পক্ষের ধর্ম গ্রহণ করতে হবে। যদি মি. ফানডার প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারেন তবে তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন। আর যদি আল্লামা রাহমাতুল্লাহ প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারেন তবে তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করবেন। রাহমাতুল্লাহ সকল শর্ত মেনে নিয়েই বিতর্কে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

কিরানভি ১৮৯১ সালে (২২ রমজান ১৩০৮ হিজরী) মক্কায় মারা যান এবং তাকে জান্নাতুল মুয়াল্লায় দাফন করা হয়।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. https://www.arabnews.com/node/400479
  2. Ramezannia, Mehrdad। Persian Print Culture in India, 1780 - 1880। Chapter 6: Jawaharlal Nehru University-Shodhganga। পৃষ্ঠা 235। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০২০ 
  3. আফ্রিদি, নবরাস জে. (২০১৯)। "অ্যান্টি-সেমিটিজম ইন দ্য মুসলিম ইন্টেলেকচুয়াল ডিসকোর্স ইন সাউথ এশিয়া"রিলিজিয়নস (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ (৭): ৪। ডিওআই:10.3390/rel10070442 
  4. Deobandi, Nawaz (সম্পাদক)। Sawaneh Ulama-e-Deoband (Urdu ভাষায়)। 1 (January 2000 সংস্করণ)। পৃষ্ঠা 444। 

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]