আব্দুল হক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আব্দুল হক ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদস্বাধীনতা যুদ্ধের সংগঠক।[১][২]

আব্দুল হক
জন্ম১৯৩০ ইং
ভাতগাঁও,ছাতক,সুনামগঞ্জ
মৃত্যু১৯ ডিসেম্বর ১৯৭১
মৃত্যুর কারণসড়ক দুর্ঘটনা
মাতৃশিক্ষায়তনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণখ্যাতনামা রাজনীতিবিদ
পিতা-মাতা
  • মৌলভী আবদুল ওয়াহিদ (বাবা)
  • মাহেবুন নেসা (মা)
আত্মীয়আবুল হাসনাত আবদুল হাই (ভাই)

জন্ম[সম্পাদনা]

তিনি ১৯৩০ সালে তৎকালীন সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহকুমার ছাতক থানাধীন ভাতগাঁও গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।পিতা মৌলভী আব্দুল ওয়াহিদ ও মাতা মাহেবুন নেছা । তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন পরিবারে জ্যেষ্ঠ সন্তান। তার মেঝো ভাই মরহুম আবুল হাসনাত আব্দুল হাই ছিলেন এ অঞ্চলের একজন গণমানুষের নেতা। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ছাতক-দোয়ারা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে তিনি তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১]

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

এমএনএ আব্দুল হক ১৯৫১ সালে সুনামগঞ্জ জুবিলী হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য সুনামগঞ্জ কলেজে ভর্তি হন। তিনি সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। এসময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিম উল্লাহ হলে জিএস নির্বাচিত হন। পরে হাইকোর্টে আইন পেশায়ও নিযুক্ত হন তিনি। ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুলে তিনি কয়েক বছর শিক্ষকতাও করেন।[১]

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

১৯৫২ সালে সুনামগঞ্জের ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করে ভাষা আন্দোলনে আব্দুল হক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৫৫ সালে তিনি গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘ ১৩ মাস কারাভোগ করেন। রাজপথের অগ্রসৈনিক আব্দুল হক ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বৃহত্তর ছাতক (ছাতক-দোয়ারাবাজার-কোম্পানীগঞ্জ) ও জগন্নাথপুর থানা নিয়ে গঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ আসনে এমএনএ নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কালরাতে দেওয়ান ওবায়দুর রাজার বাড়িতে সুনামগঞ্জের প্রথম সারির নেতাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন আব্দুল হক। পরের দিন ২৭ মার্চ দেওয়ান ওবায়দুর রাজাকে আহবায়ক করে গঠিত হয় ১৩ সদস্য বিশিষ্ট সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা পরিষদ। এ পরিষদে প্রথম সদস্য ছিলেন বাংলার আরেক ক্ষণজন্মা পুরুষ কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ আব্দুস সামাদ আজাদ ও দ্বিতীয় সদস্য ছিলেন আব্দুল হক। এ ছাড়া সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, অ্যাড. আব্দুর রইছ, আব্দুস জহুর, সমছু মিয়া চৌধুরী, আ.লীগ নেতা হোসেন বখত, ন্যাপ নেতা আলী ইউনুছ, আব্দুল কদ্দুছ ও আলফাত উদ্দিন আহমদ স্বাধীন বাংলা পরিষদের সদস্য ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে ৫ নম্বর সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা ও ছাতক-জগন্নাথপুর-দিরাইর প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল হক। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্র“মুক্ত হলেও স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করা এ মহান নেতার ভাগ্যে ঘটেনি।[১][২]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর সিলেট-সুনামগঞ্জ রোডে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় এমএনএ আব্দুল হক চলে যান না ফেরার দেশে।

সিলেট সার্কিট হাউসে সংগ্রাম কমিটির সভা থেকে প্রাইভেট গাড়িযোগে সুনামগঞ্জে ফেরার পথে সিলেটের টুকেরবাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। এসময় তার সাথে ছিলেন ইদ্রিছ আলী বীরপ্রতীকসহ আরো ক’জন নেতা। সেদিন অল্পের জন্য বেঁচে যান তাঁহার সফর সঙ্গী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মো. ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক)।

এমএনএ আব্দুল হকের অকাল মৃত্যুতে তখন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ দেশের সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক মানুষ মর্মাহত হয়েছিলেন। ছাতক শহরে তাকে সমাধিস্থ করার দাবি ওঠে স্থানীয়ভাবে। ২০ ডিসেম্বর বিশাল জানাজা শেষে শহরের বাগবাড়িস্থ কবরস্থানে তাকে চিরশায়িত করা হয়। মরহুম আব্দুল হকের জানাজায় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিকনায়ক জেনারেল (অব.) আতাউল গনি ওসমানীসহ কমরেড মানিক মিয়া, মদরিছ আলী বিএ, শফিকুল হক, এমসিএ সমছু মিয়া চৌধুরী, আব্দুল ওদুদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুস সালাম, আঙ্গুর মিয়া চৌধুরী, মদরিছ মিয়া চৌধুরী, তৈমুছ রাজা, মুকিত চৌধুরী, ময়না মিয়া, সমশের আলী, লুৎফুর রহমান প্রধান, আচ্ছা মিয়া, আমির আলী বাদশা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।[১][২]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মরহুম এমএন এ আব্দুল হককে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৭২ সালে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করা হয় আব্দুল হক স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ। ৭২ পরবর্তি ২৫ বছর ছাতকের এ মহান নেতার নামে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে দেখা যায়নি। দীর্ঘ ২৫ বছর ছাতকের কিংবদন্তি পুরুষ আব্দুল হক এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানকে রাখা হয়েছে প্রচারবিমুখ। ১৯৯৬ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী সরকারের আমলে মুহিবুর রহমান মানিক এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধের ৫ নম্বর সেক্টর হেড কোয়াটার বাঁশতলায় নির্মাণ করা হয় এমএনএ আব্দুল হকের নামে হকনগর ও স্মৃতিসৌধ। বর্তমানে বাশঁতলা-হকনগর একটি অঘোষিত পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন হকনগর স্মৃতিসৌধ দেখতে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন এখানে। ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে হকনগরকে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত করতে কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন মুহিবুর রহমান মানিক এমপি।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "অবশেষে স্থানান্তর হচ্ছে এমএনএ আব্দুল হকের সমাধিস্থল | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। ২০১৯-০৩-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৯ 
  2. "জননেতা আব্দুল হক: যাকে ভুলা যায় না"http://sunamganjerkhobor.com/ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৯  |ওয়েবসাইট= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]