বিষয়বস্তুতে চলুন

মোহাম্মদ আবদুল গাফফার হালদার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(এইচ.এম.এ গাফফার থেকে পুনর্নির্দেশিত)
এইচ এম এ গাফ্ফার
বিমান-পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৯৮৬ – ১৯৯০
খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৯৮৬ – ১৯৯০
পূর্বসূরীপ্রফুল্ল কুমার শীল
উত্তরসূরীসালাহ উদ্দিন ইউসুফ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মআনু. ১৯৪৫
খুলনা জেলা
মৃত্যু১২ এপ্রিল ২০২০
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল
সমাধিস্থলবনানী সামরিক কবরস্থান
রাজনৈতিক দলজাতীয় পার্টি (এরশাদ)
পুরস্কারবীর উত্তম
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য বাংলাদেশ
শাখা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
পদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল

মোহাম্মদ আবদুল গাফফার হালদার (আনু. ১৯৪৫-১২ এপ্রিল ২০২০) যিনি এইচ এম এ গাফ্ফার নামে পরিচিত, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের খুলনা জেলার রাজনীতিবিদ, খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন।[][] স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে।

প্রাথমিক জীবন

[সম্পাদনা]

এইচ এম এ গাফ্ফার ১৯৪৫ সালে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার|ডুমুরিয়া ইউনিয়নের]] আরাজি-সাজিয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[] তার পিতা মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও মাতা রহিমা খাতুন। তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগম। তাদের ২ ছেলে ও ২ মেয়ে।

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

এইচ এম এ গাফ্ফার ২৩ মার্চ ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানি মিলিটারী একাডেমিতে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ২৫ মার্চ তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থান করছিলেন। ২৭ মার্চ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে মন্দভাল সাবসেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি কে’ ফোর্সের অধীন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে বিলোনিয়া, ফেনীচট্টগ্রামের নাজিরহাট এলাকায় যুদ্ধ করেন।[][]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ৭-৯ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত সীমান্ত এলাকায় সালদা নদীতে বেশ শক্তিশালী যুদ্ধ হয়। সালদা নদীর পাশেই ছিলো ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথ। এখানে রেলস্টেশনও ছিলো। ১৯৭১ সালে এই রেলস্টেশন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই রেলস্টেশন ও এর আশপাশ এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল একযোগে আক্রমণ চালাল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে। এর মধ্যে একটি দলের নেতৃত্বে এম এ গাফফার হালদার। তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করছেন। পাকিস্তানি সেনারা প্রায় দিশেহারা। বিজয় প্রায় হাতের মুঠোয়। এমন সময় হলো বিপর্যয়। মুক্তিবাহিনীর একটি দলের গোলাবারুদ শেষ হয়ে যায়। এম এ গাফফারের নেতৃত্বাধীন দলের মুক্তিযোদ্ধারা তখন কিছুটা চাপের মধ্যে থাকলেও তিনি সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করলেন। তার সাহসিকতায় উজ্জীবিত হলেন তার দলের সব সদস্য। সেপ্টেম্বর মাসে একই এলাকায় বেশ কয়েকবার প্রচণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়। অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধে ২ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম) সালদা নদী রেলস্টেশন দখল করার পরিকল্পনা করেন। তার নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল ৭ অক্টোবর সালদা নদী ও এর আশপাশ এলাকায় বিভিন্ন পাকিস্তানি অবস্থানে আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা নয়নপুর থেকে সালদা নদী রেলস্টেশনে আশ্রয় নেয়। এখানেও এম এ গাফফার তার দল নিয়ে বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করছিলেন। তখন আবদুস সালেক চৌধুরীর (বীর উত্তম) নেতৃত্বাধীন দলের গোলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে তারা পেছনে সরে যেতে বাধ্য হন। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের সেদিনের আক্রমণ ব্যর্থ হয়। এরপর খালেদ মোশাররফ সালদা নদী দখলের দায়িত্ব অর্পণ করেন এম এ গাফফারের ওপর। ৮ অক্টোবর তিনি তার দল নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আবার আক্রমণ চালান। সারা দিন সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। পরদিন ৯ অক্টোবর এম এ গাফফার হালদার যুদ্ধ কৌশল পরিবর্তন করে নতুন পরিকল্পনা নেন। তার এই পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হয়। প্রথমে এক কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা চারটি দলে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করে। পাকিস্তানিরা তাদের পাল্টা আক্রমণ চালায়। এই সুযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দুটি দল সালদা নদী রেলস্টেশনে আক্রমণ করে। পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি শিকার করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। সালদা নদী রেলস্টেশন মুক্তিযোদ্ধারা দখল করেন। পরবর্তী সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালিয়েও ওই রেলস্টেশন পুনর্দখল করতে পারেনি। []

রাজনৈতিক জীবন

[সম্পাদনা]

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদ থেকে ১৯৭৬ সালে তিনি অবসর নেন। তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[]

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

এইচ এম এ গাফ্ফার ১২ এপ্রিল ২০২০ সালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "৩য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. "২য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. "গুটুদিয়া ইউনিয়ন, প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ১২ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২০ 
  4. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৩-০৩-২০১২"। ২০২০-০৭-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০১ 
  5. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৬৭। আইএসবিএন 9789849025375 
  6. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৬৭। আইএসবিএন 9789849025375 
  7. খুলনা, নিজস্ব প্রতিবেদক (১২ এপ্রিল ২০২০)। "সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী গাফ্ফার আর নেই"দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২০