শাহজাহান ওমর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর থেকে পুনর্নির্দেশিত)
ব্যারিস্টার
শাহজাহান ওমর
বীর উত্তম
সেচ, পানি উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রতিমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ – ১৯ মার্চ ১৯৯৬
প্রধানমন্ত্রীখালেদা জিয়া
বাংলাদেশের আইন প্রতিমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
৭ এপ্রিল ২০০২ – ২৯ অক্টোবর ২০০৬
প্রধানমন্ত্রীখালেদা জিয়া
বাংলাদেশের ভূমি প্রতিমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১০ অক্টোবর ২০০১ – ৭ এপ্রিল ২০০২
প্রধানমন্ত্রীখালেদা জিয়া
বাকেরগঞ্জ-১২ আসনের
সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ – ২৪ মার্চ ১৯৮২
পূর্বসূরীহরনাথ বাইন
উত্তরসূরীআসন বিলুপ্ত
ঝালকাঠি-১ আসনের
সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ – ৩০ মার্চ ১৯৯৬
প্রধানমন্ত্রীখালেদা জিয়া
পূর্বসূরীজাহাঙ্গীর কবির
উত্তরসূরীআনোয়ার হোসেন মঞ্জু
কাজের মেয়াদ
১ অক্টোবর ২০০১ – ২৯ অক্টোবর ২০০৬
প্রধানমন্ত্রীখালেদা জিয়া
পূর্বসূরীআনোয়ার হোসেন মঞ্জু
উত্তরসূরীবজলুল হক হারুন
ঝালকাঠি-১ আসনের
সংসদ সদস্য
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
৭ জানুয়ারি ২০২৪
প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা
পূর্বসূরীবজলুল হক হারুন
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মমোহাম্মদ শাহজাহান ওমর
(1947-12-24) ২৪ ডিসেম্বর ১৯৪৭ (বয়স ৭৬)
সাংগর, শুক্তাগড়, রাজাপুর, ঝালকাঠি, পূর্ব পাকিস্তান
(বর্তমান বাংলাদেশ)
রাজনৈতিক দল
সামরিক পরিষেবা
শাখা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
পদমেজর

শাহজাহান ওমর (জন্ম: ২৪ ডিসেম্বর ১৯৪৭) হলেন বাংলাদেশের একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদআইনজীবীবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করেন।[১][২] খালেদা জিয়ার ২টি মন্ত্রিসভায় তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন ঝালকাঠি-১ ও বিলুপ্ত বাকেরগঞ্জ-১২ আসনের সংসদ সদস্য

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

শাহজাহান ওমরের জন্ম ২৪ ডিসেম্বর ১৯৪৭ সালে তার পৈতৃক বাড়ি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঝালকাঠির রাজাপুরের শুক্তাগড়ার সাংগর গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল হামিদ এবং মায়ের নাম লালমন বেগম।

তার স্ত্রীর নাম মেহজাবিন ফারজানা ওমর। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে।

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)[সম্পাদনা]

শাহজাহান ওমর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠালগ্নের সদস্যদের মধ্যে একজন ছিলেন।

১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-১২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৩] ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৪] খালেদা জিয়ার প্রথম মন্ত্রিসভায় তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ থেকে ১৯ মার্চ ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সেচ, পানি উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৫] ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন।

২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৬] ১০ অক্টোবর ২০০১ থেকে ৭ এপ্রিল ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি ভূমি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি ৭ এপ্রিল ২০০২ থেকে ২৯ অক্টোবর ২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

আওয়ামী লীগে যোগদান[সম্পাদনা]

২০২৩ সালে ২৮শে অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে একজন পুলিশ কে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই মামলায় গ্রেফতার হন তিনি। ১৫ নভেম্বর ২০২৩ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ৩০শে নভেম্বর মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ধার্য হয়। শাহজাহান ওমর ২৯ নভেম্বর ২০২৩ জেলখানা থেকে মুক্তি পান। ৩০ নভেম্বর ২০২৩ আওয়ামী লীগে যোগদান করে ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করেন।[৭]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর রাতে মো. শাহজাহান ওমরসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা নৌকাযোগে রওনা হন চাচৈরের উদ্দেশে। এর অবস্থান ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায়। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি উপদলে বিভক্ত। তিনি তাদের সার্বিক নেতৃত্বে। ভোরে সবার আগে তিনি কয়েকজন সহযোদ্ধাসহ পৌঁছান চাচৈরের কাছে। পৌঁছেই তিনি খবর পান যে ওই এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এসেছে। তারা কয়েকটি বাড়িতে আগুন দিয়ে আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের দলগুলো তখনো সেখানে এসে পৌঁছায়নি। তার পরও মো. শাহজাহান ওমর সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করার। তখন তার দলের কাছে মাত্র একটি এসএলআর, একটি দুই ইঞ্চি মর্টার ও একটি ২২ বোর রাইফেল ছাড়া আর কোনো অস্ত্র ছিল না। এর মধ্যে দুটি উপদল এসে তার সঙ্গে যোগ দেয়। একটি দলকে তিনি পাঠান চাচৈর স্কুলে, অপর দলকে সঙ্গে নিয়ে প্রধান সড়কে তিনি নিজে অবস্থান নেন। সকাল আনুমানিক নয়টায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল ক্যাপ্টেন আজমত এলাহীর নেতৃত্বে স্কুলে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ চালান। পাকিস্তানি সেনারা ওই দলকে পাল্টা আক্রমণের পর ধাওয়া করে প্রধান সড়কে আসে। ওমর সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। গর্জে ওঠে মুক্তিযোদ্ধা সবার অস্ত্র। থেমে থেমে সারা দিন ধরে যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধারা তার নেতৃত্বে বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেন। সন্ধ্যার পর পাকিস্তানি সেনারা বিপুল ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পিছু হটে যায়। কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে একজন (আউয়াল) শহীদ ও দু-তিনজন আহত হন। পরদিন ১৪ নভেম্বর সকালে বরিশাল ও ঝালকাঠি থেকে নতুন সেনা এসে যোগ দেয় চাচৈরে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আগের দলের সঙ্গে। মো. শাহজাহান ওমর এতে বিচলিত হননি, মনোবলও হারাননি। সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ করেন। তাকে দেখে উজ্জীবিত হন অন্য সব সহযোদ্ধা। ওমর অগ্রভাগে থেকে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা বিপুল শক্তি নিয়েও তেমন সুবিধা করতে পারেনি। ১৪ নভেম্বরও সারা দিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। শেষের দিকে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকে। খাল পার হতে গিয়ে আরও কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে প্রাণ হারায়। সন্ধ্যার পর রাতের আঁধারে পাকিস্তানি সেনারা একেবারে পালিয়ে যায়। কয়েকজন মূল দলের সঙ্গে পালাতে না পেরে লুকিয়ে ছিল একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের খুঁজে বের করার পর আটক করে। এই যুদ্ধের সংবাদ তখন আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়।[৮]

তিনি বরিশাল এলাকায় একের পর এক পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের দিশেহারা করেন। চাচৈর যুদ্ধের কয়েক দিন পর রাজাপুরের যুদ্ধে তিনি আহত হন।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৮-০৯-২০১২"। ২০২০-০৯-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  2. "Profile Mr. M. Shahjahan Omar"tritiyomatra.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  3. "২য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. "৫ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  5. "৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  6. "৮ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. "নৌকার শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র বৈধ, বাতিল সংসদ সদস্য বজলুলের"প্রথম আলো। ২০২৩-১২-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৪ 
  8. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৫৫। আইএসবিএন 9789849025375