আবদুল লতিফ মন্ডল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবদুল লতিফ
আবদুল লতিফ মন্ডল.jpg
জন্ম১৯৪৭
গাইবান্ধা জেলা
মৃত্যু৬ নভেম্বর, ১৯৭১
সিলেট জেলা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তম
অফিসবাংলাদেশ সেনাবাহিনী

শহীদ আবদুল লতিফ (জন্ম: ১৯৪৭ - মৃত্যু: ৬ নভেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। তার গেজেট নম্বর ৪৫। [১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

শহীদ আবদুল লতিফের পৈতৃক বাড়ি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের চরেরহাট গ্রামে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার বাবার নাম তোরাপ আলী এবং মায়ের নাম বালি বেগম।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

আবদুল লতিফ চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল সৈয়দপুরেমুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে জেড ফোর্সের অধীনে বাহাদুরাবাদ ঘাট, রাধানগর ও ছোটখেলসহ আরও কয়েক স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।[২]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ৩ নভেম্বর সিলেট জেলার গোয়াইন ঘাটে নিস্তব্ধ শীতের রাতে আবদুল লতিফসহ মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র কাঁধে এগিয়ে যান। তারা কয়েকটি দল (কোম্পানি) ও উপদলে (প্লাটুন) বিভক্ত। নিঃশব্দে তারা সমবেত হন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানের অদূরে। লক্ষ্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করে চিরতরে উচ্ছেদ করা। পাকিস্তানি ঘাঁটির তিন দিকে ছিল নদী। সে কারণে আবদুল লতিফেরা ছিলেন সুবিধাজনক অবস্থায়। মূল আক্রমণকারী দলের মুক্তিযোদ্ধাদের একপর্যায়ে নদী অতিক্রম করতে হয়। আবদুল লতিফ ছিলেন মূল আক্রমণে। তারা তাদের অন্য দলের ফায়ারিংয়ের ছত্রচ্ছায়ায় নৌকায় দ্রুত নদী অতিক্রম করেন। নদীর ঘাটপাড়ে ছিল পাকিস্তানিদের কয়েকটি বাংকার। আবদুল লতিফেরা নদী অতিক্রম করে ওই সব বাংকার লক্ষ্য করে অসংখ্য গ্রেনেড ছোড়েন।

পাকিস্তানি সেনারা হতভম্ব হয়ে পড়ে। কারণ, ঘাট এলাকা হয়ে পশ্চিম দিক থেকে এই আক্রমণ ছিল তাদের জন্য কল্পনাতীত। এ জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তীব্র আক্রমণে ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানি সেনারা নদীর তীরের অবস্থান ছেড়ে পেছনে গিয়ে ত্বরিত সমবেত হয়। সেখানে ছিল পাকা গুদামঘর। তারা দ্রুত গুদামের ছাদে উঠে মেশিনগান ও এলএমজি স্থাপন করে। নল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্যাপক গুলিবর্ষণ শুরু করে। তখন সকাল আনুমানিক পাঁচটা। আবদুল লতিফ ও তার সহযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের প্রচণ্ড গোলাগুলি উপেক্ষা করে নদীর পাড়ে উঠে পড়েন। সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণ করেন। একপর্যায়ে দুঃসাহসী আবদুল লতিফ গুদামঘরের কাছে যান। ছাদ লক্ষ্য করে কয়েকটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। হতাহত হয় কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। এ সময় পাকিস্তানিদের গুলিতে শহীদ হন তিনি। সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করার আগেই নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ।

তুমুল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। মুক্ত হয় বিরাট এলাকা। তবে এ বিজয় আবদুল লতিফ দেখে যেতে পারেননি। পরে সহযোদ্ধারা তাকে সেখানেই সমাহিত করেন। এর আগে ২৪ অক্টোবর আবদুল লতিফ ও তার সহযোদ্ধারা সেখানে আক্রমণ করেছিলেন। কিন্তু সেদিন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার ও পাকিস্তানিদের তাড়া খেয়ে তাদের পিছে হটে যেতে হয়েছিল। পাকিস্তানিরা তার অনেক আহত সহযোদ্ধাকে যুদ্ধক্ষেত্রের আশপাশ থেকে খুঁজে খুঁজে বের করে হত্যা করে। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৬-০৯-২০১২"। ২০১৭-০৮-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০৬ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। ঢাকা: জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৭৭। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৩৫। আইএসবিএন 9789849025375