মোয়াজ্জেম হোসেন (লেফটেন্যান্ট কমান্ডার)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মোয়াজ্জেম হোসেন
জন্ম১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩২
মৃত্যু২৬ মার্চ ১৯৭১
৩৬ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা
মৃত্যুর কারণমুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা
সমাধিশহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, মিরপুর, ঢাকা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
পেশানৌ বাহিনী কর্মকর্তা
কর্মজীবন১৯৫০-১৯৭০
প্রতিষ্ঠানপাকিস্তান নৌ বাহিনী
উল্লেখযোগ্য কর্ম
আগরতলা ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা, ১৯৬৭
আদি নিবাসপিরোজপুর
দাম্পত্য সঙ্গীকোহিনূর হোসেন
সন্তানওয়ালি নোমান, ওয়াসি নোমান, ওয়াদিয়া নোমান
পুরস্কারস্বাধীনতা পুরস্কার (২০১২)

শহীদ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন (১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ - ২৬ মার্চ ১৯৭১)[১] ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত স্বাধীনতাকামী ও বীর শহীদ। তিনি ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান নৌ বাহিনীতে কর্মরত একজন বাঙ্গালী কর্মকর্তা এবং ১৯৬৭ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা-র ২য় আসামী।

পাকিস্তান নৌবাহিনীতে চাকরিকালে বাঙালি ও অবাঙালিদের মধ্যে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে অযৌক্তিক বৈষম্য লক্ষ করে তিনি ক্ষুব্ধ হন। একপর্যায়ে বাঙালি অফিসার ও সেনাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাঁর অভিমত প্রকাশ করেন। এর ফলে তিনি পাকিস্তানি, বিশেষত পাঞ্জাবিদের বিরাগভাজন হন। পরবর্তী সময়ে তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িত করে ১৯৬৭ সালে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ছিলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ২ নম্বর আসামি। ১৯৬৯ সালে গণ-আন্দোলনের চাপে বঙ্গবন্ধু ও তাঁকেসহ সব আসামিকে সরকার মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তখন তিনি লে. কমান্ডার ছিলেন। তাঁকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১৯৭০ সালে তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয় লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন কমিটি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ভোরে বর্বর পাকিস্তানি সেনারা তাঁর ৩৬ এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় হামলা চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।[১]

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগের অনন্য অবদানের জন্য ২০১২ সালে তাকে “স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয়।[২]

জন্ম ও পারিবার[সম্পাদনা]

জন্ম ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর জেলার ডুমুরিতলা গ্রামে। তাঁর পিতা মোফাজ্জেল আলী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। মায়ের নাম লতিফুননেছা বেগম। তার ডাক নাম লাল মিয়া।[৩][৪]

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৪৭ সালে কচুয়া হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর তিনি বাগেরহাট কলেজে আই.এস.সি ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার কারণে তাঁর শিক্ষা জীবন ব্যাহত হয়। পরে তিনি বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে আই.এস.সি ক্লাশে অধ্যয়ন করেন এবং সফলতার সাথে আই.এস.সি উত্তীর্ণ হন।[৩]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

বরিশাল বিএম (ব্রজমোহন) কলেজ থেকে আই..এস.সি পাস করে মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৫০ সালে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেন। নৈপুণ্য ও দক্ষতা প্রদর্শন করায় ১৯৫১ সালে ইংল্যান্ডে নেভাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির জন্য পাঠানো হয়। একই বছর তিনি ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীতেও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি রয়াল নেভাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সব পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি পাকিস্তান নৌবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৫৯ সালে মেরিন বিশেষজ্ঞ কোর্সে ম্যানভিন রয়াল কলেজে অধ্যয়ন ও প্রথম স্থান অধিকার করেন। মোয়াজ্জেম হোসেন পাকিস্তান নৌবাহিনীর মনোনীত অফিসার হিসেবে ১৯৫৮-১৯৬০ সালে ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংএ গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে নেভাল বেস চট্টগ্রামে চিফ ইঞ্জিনিয়ার নিযুক্ত হন এবং ১৯৬৭ সালে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার পদে উন্নীত হন। এ সময় তিনি ডেপুটেশনে পূর্ব পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থার বরিশাল শাখায় যোগ দেন।[১][৩]

আগরতলা ষড়যন্ত্রে অবদান[সম্পাদনা]

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণ বিভিন্নভাবে উপেক্ষিত ও অবহেলিত হচ্ছিল। ফলে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেণির জনগণের মধ্যে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ও ক্ষোভ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনের দাবি পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক গণসর্মথন লাভ করে। সামরিক বাহিনীতে বিদ্যমান বৈষম্যের কারণে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন সহ সশস্ত্রবাহিনীর কিছুসংখ্যক বাঙালি অফিসার ও সিপাহি অতি গোপনে সংগঠিত হতে থাকেন। পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে থেকে বাঙালিদের স্বার্থ রক্ষা কখনও সম্ভব নয় বুঝতে পেরে তারা সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং এ লক্ষ্যে অতি গোপনে কাজ করে যেতে থাকেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতার কারণে এ ষড়যন্ত্র প্রকাশ পায়। শুরু হয় সরকারের গ্রেফতারি তৎপরতা। আইয়ুব সরকারের গোয়েন্দাবাহিনী সারা পাকিস্তানে প্রায় দেড় হাজার বাঙালিকে গ্রেফতার করে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি এক প্রেসনোটে ঘোষণা করে যে, সরকার ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এক চক্রান্ত উদ্ঘাটন করেছে। এ ঘোষণায় ২ জন সিএসপি অফিসারসহ ৮ জনের গ্রেফতারের খবর প্রকাশ পায়। এতে অভিযোগ করা হয় যে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা ভারতীয় সহায়তায় এক সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়াসে লিপ্ত ছিল। স্বরাষ্ট্র দফতর ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি অপর এক ঘোষণায় শেখ মুজিবুর রহমানকেও এ ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত করে।[১][৩]

১৯৬৭ সালের ৯ ডিসেম্বর সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনে মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করে। সরকার ১৯৬৮ সালে ফৌজদারি আইন সংশোধন করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য’ নামে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ গঠন করে।  আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত এ মামলার ৩৫ জন অভিযুক্তের মধ্যে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৬৪ সালের শুরু থেকে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নৌবাহিনীতে অবস্থানরত বাঙালিদের সমন্বয়ে একটি সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলা, সেনা ও বিমান বাহিনীর বাঙালি কর্মকর্তাদের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা, কার্যক্রম সফল করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান সহ পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সিভিল সার্ভিসের বাঙালি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন গোপন বৈঠক এবং সংগঠন পরিচালনার তহবিল সংগ্রহ করার অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। প্রবল গণআন্দোলনের চাপে সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করলে মোয়াজ্জেম হোসেন মুক্তিলাভ করেন। এরপর তিনি পুনরায় চাকরিতে যোগ দেন এবং ১৯৭০ সালের ১৮ মার্চ অবসর গ্রহণ করেন।[৩]

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

১৯৭০ সালের ১৮ মার্চ চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর মোয়াজ্জেম হোসেন প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭০ সালের ২৪ মার্চ তিনি ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ২৮ মার্চ লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেন। এ লক্ষ্যে তিনি লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন, এক দফা প্রভৃতি পুস্তিকা রচনা করেন। ১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মোয়াজ্জেম হোসেন লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন কমিটিকে জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক দলে রূপান্তর করেন। মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে যেকোন ধরনের সমঝোতার পরিবর্তে সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের কথা বলেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক কর্মীদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের নির্দেশ দেন এবং এ উদ্দেশ্যে ১৬ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত তিনি ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া সফর করেন।[৩]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে শুরু করে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। সেনাবাহিনীর অন্যতম টার্গেট ছিলেন লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ভোরে কর্নেল তাজের নেতৃত্বে একটি বর্বর পাকিস্তানি সেনাদল তাঁর ৩৬ এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় হামলা চালিয়ে অকুতোভয় বিচক্ষণ এই বাঙালি বীরসেনানীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁকে প্রথমে গুলি ও পরে বেয়নেট চার্জ করা হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে দৃঢ়কণ্ঠে তিনি বলেছেন, ‘আমি বাংলাদেশ স্বাধীন চাই’। তাঁর মরদেহ পাকিস্তানি সেনারা সঙ্গে করে নিয়ে যায়। শোনা যায়, পূর্ব পাকিস্তানের তখনকার গভর্নর টিক্কা খান নিজে তাঁর মরদেহ দেখে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।[১][৩]

এ ঘটনা সম্পর্কে জানা যায় তাঁর স্ত্রী কোহিনূর হোসেনের বয়ান থেকে। তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চ বিকেল থেকেই আমার স্বামী চঞ্চল ছিলেন। রাত সাড়ে নয়টা-দশটার দিকে আমার এক কাজিন তাঁকে ফোন করে। তিনি তাঁর সঙ্গে কথা বলে শার্ট গায়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। আমাদের বাড়ি ছিল তিনতলা। আমরা নিচতলায় থাকতাম। দেখলাম রাস্তায় অনেক লোক দাঁড়িয়ে। রাত পৌনে বারোটা হবে, এমন সময় দূরে ফায়ারিংয়ের আওয়াজ হলো। তখন লোকজন মেইন রাস্তা থেকে ভেতরের দিকে চলে গেল। এ সময় তিনি আমাকে বাচ্চাদের নিয়ে দোতলায় যেতে বলেন। আমি বাচ্চাদের নিয়ে দোতলায় যাই। আমার স্বামী নিচেই থাকলেন।[১]

‘রাত একটার দিকে তিনি দোতলায় আসেন। এর আগেই ব্ল্যাক আউট হয়ে গেছে। রাত বারোটার পর থেকে ট্যাংক চলার ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সারা রাতই এভাবে কাটল। ভীষণ ফায়ারিং ও চারদিকে আগুন। খুব ভোরবেলা অন্ধকার থাকতেই উনি ড্রয়িংরুমে গিয়ে সোফায় চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসলেন। তাঁর খুব ক্ষিধে পেয়েছিল। কাজের লোক নাশতা তৈরি করছিল। এমন সময় কতগুলো জিপ গাড়ি ও বুটের আওয়াজ শুনে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি অনেক আর্মি অস্ত্র তাক করে আমাদের বাসার সামনে দাঁড়ানো। শব্দ শুনে আমার স্বামীর তন্দ্রাভাব কেটে গেল। আমি তাঁকে বললাম, আর্মি ঘিরে ফেলেছে আমাদের বাসা। তিনি ড্রয়িংরুম থেকে চলে গেলেন অন্যদিকে। কিন্তু পালানোর তো পথ নাই। চারদিকে আর্মি ঘিরে ফেলেছে।[১]

‘তিনি কোথাও লুকিয়ে ছিলেন। আর আর্মিরা তাঁকে খুঁজছিল। তাঁকে না পেয়ে তারা চেঁচিয়ে বলে, মিসেস মোয়াজ্জেম কোথায়? এটা তিনি শুনেছিলেন আর বোধহয় ভেবেছিলেন, আর্মি আমাকে টর্চার করতে পারে। তখন তিনি বেরিয়ে নিচে গিয়ে বলেন, আমিই কমান্ডার মোয়াজ্জেম। আর্মি প্রথমে তাঁর কথা বিশ্বাস করেনি। ওরা তাঁকে উর্দুতে কয়েকবার বলেছে, “বলো পাকিস্তান জিন্দাবাদ”। তিনি বলেছেন, “না আমি পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলব না। আমার এক দফা, বাংলাদেশ স্বাধীন চাই।” তখন ওরা গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়েও বলেছেন বাংলাদেশ স্বাধীন চাই। এটা আমি নিজ চোখে দেখিনি। পরে প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে শুনেছি।[১]

‘এদিকে এ ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দোতলার জানালার পর্দা সরিয়ে দেখি আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছেন। এ সময় কয়েকজন আর্মি এল। তারা তাঁকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁর দুই পা ও হাত ধরেছে। মাথাটা ঝুলছে। গোটা শরীর রক্তে একদম ভরা। এ দৃশ্য দেখে আমি চিৎকার দিয়ে উঠি।[১]

‘আমি আমার স্বামীর ডেডবডি পাইনি। পরে শুনেছি পাকিস্তানি আর্মিরা আমার স্বামীর লাশ তখনকার গভর্নর হাউস, এখন যেটা বঙ্গভবন, সেখানে নিয়ে গিয়েছিল টিক্কা খানকে দেখানোর জন্য। তারপর তাঁর লাশ কী করেছে জানি না।’[১][৫]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

  • বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উত্সর্গকারী এই বীর শহীদকে তার অসাধারণ অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার”[৬][৭][৮] হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয়।[২]
  • তাঁর সম্মানে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অন্যতম বৃহত ঘাঁটির নামকরণ করা হয়। যা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বানৌজা শহীদ মোয়াজ্জেম নামে সুখ্যাতি ছড়িয়ে চলছে।[৩]
  • গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ ১৯৯৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।[৩]
  • ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ঢাকার একটি সড়কের নামকরণ করেছে শহীদ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন সড়ক।[৩]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "মোয়াজ্জেম হোসেন"দৈনিক প্রথম আলো অনলাইন। ২৬ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  2. "স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকা"মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  3. Hossain, ATM Zayed। "হোসেন,_লে._কমান্ডার_মোয়াজ্জেম"en.banglapedia.org। Banglapedia। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১৬ 
  4. "কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের বোন মাহমুদা বেগমের মৃত্যু"Dhaka Tribune Bangla। ২০২১-০১-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-২১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "My husband Moazzem Hossain"The Daily Star। ২৫ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১৬ 
  6. সানজিদা খান (জানুয়ারি ২০০৩)। "জাতীয় পুরস্কার: স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার"। সিরাজুল ইসলাম[[বাংলাপিডিয়া]]ঢাকা: এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশআইএসবিএন 984-32-0576-6। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।  ইউআরএল–উইকিসংযোগ দ্বন্দ্ব (সাহায্য)
  7. "স্বাধীনতা পদকের অর্থমূল্য বাড়ছে"কালেরকন্ঠ অনলাইন। ২ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  8. "এবার স্বাধীনতা পদক পেলেন ১৬ ব্যক্তি ও সংস্থা"এনটিভি অনলাইন। ২৪ মার্চ ২০১৬। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]