মতিচুর লাড্ডু
![]() মতিচুর লাড্ডু | |
উৎপত্তিস্থল | বঙ্গ |
---|---|
অঞ্চল বা রাষ্ট্র | বঙ্গ |
পরিবেশন | সাধারণ তাপমাত্রা |
প্রধান উপকরণ | বেসন, চিনি, বাদাম, কিশমিশ, ঘি ইত্যাদি |
৩৬২ কিলোক্যালরি (১৫১৬ কিলোজুল) | |
মতিচুর লাড্ডু বা মোতিচুর বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে জনপ্রিয় একটি মিষ্টান্ন। বিশেষ করে দিল্লির মতিচুরের লাড্ডুর সুখ্যাতি সমগ্র বিশ্বব্যাপী। বিয়ে, ঈদ, পূজা, জন্মদিন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মতিচুর লাড্ডুর উপস্থিতি থাকে। বেসন ও চিনির সিরা এই লাড্ডুর প্রধান উপকরণ। এছাড়াও বাদাম, কিসমিস ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহৃত হয়। আসল স্বাদ পেতে বুন্দিয়া ভাজার জন্য ব্যবহার করা হয় খাঁটি ঘি, গাওয়া ঘি।
উৎপত্তি
[সম্পাদনা]লাড্ডু শব্দটি সংস্কৃত শব্দ "লাড্ডুকা" বা "লাত্তিকা" থেকে এসেছে যার অর্থ ছোট বল। আর হিন্দিতে মতি/মোতি শব্দের অর্থ মুক্তা। চূর অর্থ ভাঙ্গা বা চুর্ণ করা। অর্থাৎ, মতিচুর মানে মুক্তার ভাঙ্গা গুঁড়া।[১] ছোট ছোট মুক্তা দানার মতো বোঁদে বানিয়ে সেগুলোকে একসাথে হাতে চেপে তৈরি হয় মতিচুরের লাড্ডু। আর এজন্যই এমন চমৎকার নামের উৎপত্তি। মতিচুরের লাড্ডু ভারত উপমহাদেশের একটি প্রাচীন মিষ্টি। এর বয়স দুই হাজার বছরেরও বেশি। ধারণা করা হয় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে বিহারে এর উৎপত্তি হয়।[১]
বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের মোতিচুরের জি আই প্রাপ্তি
[সম্পাদনা]
পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার মোতিচুর ভারত সরকারের জি আই স্বীকৃতি পেল।[২][৩] ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে ৪১তম মল্লরাজ বীর হাম্বিরের শাসনকালে (১৫৯৫-১৬২০) বিষ্ণুপুরের পথে চুরি যাওয়া একগুচ্ছ বৈষ্ণব পুথির খোঁজে বিষ্ণুপুরে আসেন শ্রীনিবাস আচার্য, নরোত্তম দাস ও শ্যামানন্দ। পরে বীরহাম্বির শ্রীনিবাসের শিয্যত্ম গ্রহণ করেন। গোটা মল্লভূম জুড়ে বৈষ্ণব ধর্মের প্রচার শুরু হয়। এই বীরহাম্বির বৃন্দাবন থেকে নিয়ে আসেন সেখানকার মিষ্টান্ন মোতিচুর।। বিষ্ণুপুরের রাজপ্রাসাদে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসরে গুণীদের আপ্যায়নেও থাকত এই মিষ্টান্ন।
কারিগরেরা স্থানীয় জঙ্গল থেকে পিয়ালের বীজ সংগ্রহ করে নানা পদ্ধতির মাধ্যমে বেসন তৈরি করে মোতিচুর বানাতে শুরু করেন। ধীরে বিষ্ণুপুর ঘরানার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায় মোতিচুরের ঘ্রাণও। বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যেরও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে তা 'গান-বাজনা মোতিচুর, তিন নিয়ে বিষ্ণুপুর।' বিষ্ণুপুর মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি মোতিচুরের 'জিআই' স্বীকৃতি লাভের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আবেদন জানিয়েছিলেন।[৪]
পুষ্টিগুণ
[সম্পাদনা]একটি লাড্ডুতে ৩৬২ ক্যালরি থাকে। ফ্যাট থাকে ৪১%, কোলেস্টেরল ২২%, ১০% কার্বহাইড্রেট ও ৭% প্রোটিন থাকে। (আনুমানিক)[১]
প্রস্তুতপ্রণালী
[সম্পাদনা]
উপকরণ
[সম্পাদনা]১/২ কেজি বেসন, ১/৩ কাপ দুধ, ১ টেবিল চামচ পেস্তা কুঁচি, ১/২ কেজি চিনি, ১ টেবিল চামচ কিসমিস, ১ চিমটি বেকিং সোডা, কয়েক ফোঁটা কমলা ফুড কালার/জাফরান দানা (ঐচ্ছিক), ভাজার জন্য ঘি বা তেল।
প্রণালী
[সম্পাদনা]বুন্দিয়া বা বোঁদে তৈরি করতে যা করবেন- বেসন ও বেকিং পাউডার একসাথে মিশিয়ে নিন। ২ টেবিল চামচ ঘি ও প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে ঘন করে মিশ্রণ তৈরি করুন। প্যান কেকের ব্যাটার বা বেগুনী ভাজার বেসন গোলার মতন হবে ঘনত্বে। ঘি গরম করে ঝাঁঝরি চামচ দিয়ে বেসনের মিশ্রণ তেলে দিন। বুন্দিয়াগুলো ভালো করে লাল করে ভেজে নিন। সবটুকু বেসনের বুন্দিয়া ভাজা হয়ে গেলে একটি পাত্রে রেখে দিন।
লাড্ডু তৈরি করতে- আরেকটি চুলায় চিনির ও পানি মিশিয়ে শিরা বানাতে দিন। শিরায় দুধ ও ফুড কালার দিন। শিরা ঘন ও আঠালো হয়ে গেলে শিরায় বুন্দিয়াগুলো দিয়ে দিন কিসমিস ও পেস্তা বাদাম মিশিয়ে দিন। মিশ্রণ শুকিয়ে মাখা মাখা হলে নামিয়ে নিন। হাতের তালুতে ঘি মেখে নিন মিশ্রণটি হাতে ধরার মতো সহনশীল মাত্রার গরম থাকতেই হাতের তালুতে ঘুরিয়ে গোল আকৃতি দিন। চাইলে দোকানের কেনা বুন্দিয়া দিয়েও তৈরি করতে পারবেন। বুন্দিয়ার আকৃতি আপনার ইচ্ছা মতন বড়/ছোট হতে পারে। উপরে বাদাম দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]মতিচুর লাড্ডু'র আরোও কিছু চিত্র:
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ "২০০০ বছরের ইতিহাস নিয়ে মতিচুরের লাড্ডু"। priyo.com। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ "নতুন জি আই"। জি কে টুডে।
- ↑ "বিষ্ণুপুরের মতিচুর লাড্ডু"। দি স্টেটসম্যান। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল,২০২৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ সংবাদপত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, পুরুলিয়া- বাঁকুড়া সংস্করণ,তারিখ:১২ এপ্রিল, ২০২৫, পৃ.ক১
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]