নিখিলবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিখিলবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়
বিপ্লবী নিখিলবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম১৯০৮
যশোর,অবিভক্ত বাংলা
মৃত্যু১৯৫০
পরিচিতির কারণবিপ্লবী
আন্দোলনব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন
পিতা-মাতা
  • অনাথবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায় (পিতা)
  • শ্যামসুন্দরী (মাতা)

নিখিলবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮-১৯৫০) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বাঙালি বিপ্লবী।[১][২]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

নিখিল বন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৮ সালে অবিভক্ত বাংলার যশোহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম অনাথ বন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতার নাম শ্যামসুন্দরী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পাঠশালা গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। সাংসারিক সমস্যার কারণে তিনি সপরিবারে যশোহর ছেড়ে কলকাতার খিদিরপুরে মামার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন।

বিপ্লবী কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯২৩ সালে নিখিলবন্ধু যখন আশুতোষ কলেজের ছাত্র তখন তাঁর মধ্যে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রবল বিরোধিতা জেগে ওঠে। ছাত্রাবস্থায় বিপ্লবী বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নিখিলবন্ধু রেভল্যুশনারি সিক্রেট সোসাইটি/আন্ডারগ্রাউন্ড সোসাইটির সদস্য হয়ে ব্রিটিশবিরোধী কার্যকলাপে সক্রিয়ভাবে লিপ্ত হন। কলকাতার শোভাবাজারে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকাকালীন তিনি এই প্রতিরোধ আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। দক্ষিণেশ্বরে একটি বোমা বিস্ফোরণে জড়িত থাকার ফলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেপ্তার করে। আলিপুর জেলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর।

ভূপেন চট্টোপাধ্যায় হত্যা[সম্পাদনা]

ভূপেন চট্টোপাধ্যায় মাঝে মাঝে আলীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে রাজবন্দীদের সাথে আলাপ আলোচনা করতেন। তার উদ্দেশ্য ছিলো রাজবন্দিদের দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করে বিপ্লবী দলের গোপন সংবাদ সংগ্রহ করা। ১৯২৬ সনের ২৮ মে দক্ষিণেশ্বর বোমার মামলায় দণ্ডিত অনন্তহরি মিত্রপ্রমোদরঞ্জন চৌধুরী লোহার ডাণ্ডা দ্বারা ভূপেন চট্টোপাধ্যায়কে জেলের মধ্যে আক্রমণ করে হত্যা করেন। নেতাদের নির্দেশে ঘটনাস্থলে পাঁচজন উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে কে প্রকৃত হত্যাকারী বের করতে না পেরে পুলিস খুশিমতো দুজনকে হত্যার অপরাধে এবং বাকি তিনজনকে ঐ কাজে সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করে। বিচারে অনন্তহরি মিত্র ও প্রমোদ চৌধুরীর ফাঁসি হয়। তাদের সাহায্য করার জন্য নিখিলবন্ধু,ধ্রুবেশ চট্টোপাধ্যায়, অনন্ত চক্রবর্তী ও রাধিকার যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয়।

পরবর্তী জীবন[সম্পাদনা]

নিখিলকে প্রথমে হিজলি কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়, যেখানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সাথে তাঁর মুখোমুখি হয়। নেতাজির সহযোগিতায় পতাকা উত্তোলনের একটি ঘটনার ফলে নিখিল বন্ধুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। প্রাথমিকভাবে দক্ষিণেশ্বর বোমা মামলার রায়ের পর তাকে আন্দামানে পাঠানোর সাজা দেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টে সফল আপিলের পর ১৯৩০ সালে তিনি মুক্তি পান।

মুক্তির পর নিখিলবন্ধু কমিউনিস্ট আন্দোলনে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখেন। তিনি অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিয়ে করেছিলেন এবং হেফাজতে থাকাকালীন নির্যাতনের ফলে সৃষ্ট শারীরিক জটিলতা সহ্য করেছিলেন। নিখিলবন্ধু ১৯৫০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ভারত সরকার তাঁর অবদানকে স্বীকৃতি দেয়, যা তাঁকে তাঁর আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসাবে তাঁর স্ত্রীকে স্বাধীনতা সংগ্রামীর পেনশন প্রদান করে সম্মানিত করে

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বসু, অঞ্জলি (নভেম্বর ২০১৩)। বসু, অঞ্জলি; সেনগুপ্ত, সুবোধচন্দ্র, সম্পাদকগণ। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান (পঞ্চম সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ সংস্করণ)। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৫১২। আইএসবিএন 978-8179551356 
  2. রায়, প্রকাশ (২০২০)। বিস্মৃত বিপ্লবীচেন্নাই: নোশনপ্রেস তামিলনাড়ুআইএসবিএন 978-1-63873-011-8