হিন্দুধর্ম-জরাথুস্ট্রবাদ সম্পর্ক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

হিন্দুধর্ম ও জরাথুস্ট্রবাদের ধর্মীয় বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে প্রত্যক্ষ যোগসূত্র রয়েছে। হিন্দুধর্মের বহু বিশ্লেষক দাবি করেন যে, হিন্দুধর্ম সমসাময়িক সকল ধর্মের উপাদানকে নিজেদের মধ্যে আত্মস্থ করে থাকে[১] এবং হিন্দুধর্মের বেদ পুরাণ সহ বহু ধর্মগ্রন্থ বৌদ্ধধর্ম, জৈনধর্মশিখধর্মের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্রিক ধর্ম ও জরাথুস্ট্রবাদের আবেস্তা ধর্মগ্রন্থ হতে ধর্মীয় উপাদান গ্রহণ করেছে, যেমনঃ অহুর থেকে অসুর, দেইব থেকে দেব, আহুরা মাজদা থেকে একেশ্বরবাদ, বরুণ, বিষ্ণুগরুদ, অগ্নিপুজা, হোম নামক পানীয় থেকে সোম নামক স্বর্গীয় সুধা, ভারতীয় ও পারসিকদের বাকযুদ্ধ থেকে দেবাসুরের যুদ্ধ, আর‍্য থেকে আর্য, মিত্রদেব, দিয়াউসপিত্র দেব (বৃহস্পতি দেব), অপাং নপাত্, ইয়াস্না থেকে ইয়যোনা বা যজ্ঞ, নারীয়সঙ্ঘ থেকে নরাশংস (মানুষের মাঝে প্রশংসিত জন), অন্দ্র থেকে ইন্দ্র, গান্দারেওয়া থেকে গন্ধর্ব, বজ্র, বায়ু, মন্ত্র, যম, আহুতি, হুমাতা থেকে সুমতি ইত্যাদি।[২][৩]

ঋগ্বেদের পাণ্ডুলিপি পাতা (১.১.১-৯)
ইয়াস্না ২৮.১ (বদলেইয়ান এমএস জে২)

নীচে ঋগ্বেদ এবং আবেস্তা এর তুলনামূলক ভাষাগত বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত সমজাতীয় পদগুলির একটি তালিকা দেওয়া হল। উভয় সংগ্রহই প্রোটো-ইন্দো-ইরানীদের থেকে পৃথক হয়ে (আনুমানিক দ্বিতীয় সহস্রাব্দ খ্রিস্টপূর্ব) তাদের নিজ নিজ ভারতীয় ও ইরানি শাখায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরের প্রস্তাবিত সময় থেকে নেওয়া।[৪][৫][৬]

বৈদিক সংস্কৃত আবেস্তা সাধারণ অর্থ
অপ অবন "জল," অপস "জলাদি"[৬]
অপাং নপাত, অপাম নপাত অপাম নপাত "জলের সন্তান"[৬]
আর্যমন আইর্যমন "আর্যত্ব" (সাহি:** "আর্য সম্প্রদায়ের সদস্য")[৬]
ঋত আশা/আর্ত "সক্রিয় সত্য", থেকে "আদেশ" ও "ন্যায়নিষ্ঠতা" পর্যন্ত[৫][৬]
অথর্বন আত্রাউয়ান, আতাউরুন অতর "পুরোহিত"[৫]
অহি অঝি, (অজি) "ড্রাগন, সাপ", "নাগ"[৬]
দাইবা, দেব দাএব, (দাএউয়া) একটি স্বর্গত শ্রেণী
মনু মনু "মানুষ"[৬]
মিত্র মিথ্র, মিত্র "শপথ, অঙ্গীকার"[৫][৬]
অসুর অহুর আরেকটি আত্মার শ্রেণী[৫][৬]
সর্বতৎ হাউরুউয়াতাত "অক্ষত", "পরিপূর্ণতা"[৭][৮][৯]
সরস্বতী হরক্সবইতি (অরদুউই সুরা অনহিতা) একটি বিতর্কিত (সাধারণত পৌরাণিক হিসেবে বিবেচিত) নদী, একটি নদী দেবী[১০][১১]
সৌম্য, সোম হোম একটি দেবতুল্য গাছ[৫][৬]
সূর্য, স্বর হবর, ক্সবর সূর্য, পাশাপাশি গ্রিক হেলিওস, লাতিন সোল, ইংরেজি. সান-এর সমজাতীয়[৭]
তপতি তপইতি সম্ভাব্য আগুন/সৌরদেবী; দেখুন তবিতি (একটি সম্ভাব্য হেলেনাইজড সিথিয়ান নাম)। লাতিন তেপিও এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি পরিভাষার সমজাতীয়। [৭]
ভ্রত্র-/ব্রত্রগ্ন/ব্রিত্রবন বেরেথ্র, বেরেত্র (তুলনা. বেরেথ্রগ্ন, বেরেথ্রয়ন) "বাঁধা"[৫][৬]
যম যিম সৌরদেবতা বিবসবান্ত,বিউউয়াহুউয়ান্তের পুত্র[৬]
ইয়জন, যজ্ঞ ইয়স্ন, বস্তু: ইয়জত "উপাসনা, উৎসর্গ, অর্ঘ্য"[৫][৬]
গন্ধর্ব গন্দরেও "স্বর্গীয় সত্ত্বা"[৬]
নসত্য নঘইথ্য "যমজ বৈদিক দেবতা যারা ঊষা, চিকিৎসা আর জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত"[৬]
অমরত্ব অমেরেতত "অমরত্ব"[৬]
পোসা অপাওশা "'খরার দৈত্য'"[৬]
আশ্মান আসমান "'আকাশ, সর্বোচ্চ স্বর্গ'"[৭]
অঙ্গিরা মন্যু অংরা মইন্যু "'ধ্বংসাত্মক/দুষ্ট আত্মা, আত্মা, রাগ, প্রবৃত্তি, আবেগ, ক্রোধ, ঐশী জ্ঞানের শিক্ষক'"[৬]
মন্যু মনিয়ু "'রাগ, ক্রোধ'"[৬]
সর্ব হর্ব "'রুদ্র, বৈদিক বাতাসের দেবতা, শিব'"[৭]
মধু মদু "'মধু'"[৬]
ভুত বুইতি "'প্রেত'"[৬]
মন্ত্র মন্থ্র "'পবিত্র জাদুবাক্য'"[৬]
অরমতি অরমইতি "'পুণ্য'"
অমৃত অমেশা "'অমরত্বের নির্যাস'"[৬]
সুমতি হুমাতা "'শুভ চিন্তা'"[৬][৭]
সুক্ত হুক্ত "'শুভ বাক্য'"[৬]
নরাসংস নইরিয়সঙ্ঘ "'প্রশংসিতমানব'"[৬]
বায়ু বাইইউ "'বাতাস'"[৬]
বজ্র বয্র "'বিদ্যুৎচমক'"[৬]
ঊষা উশাহ "'ভোর'"[৬]
অহুতি অজুইতি "'অঞ্জলি'"[৬]
পুরমধি পুরেন্দি[৬]
ভগ বগ "'"প্রভু, পৃষ্ঠপোষক, সম্পদ, সমৃদ্ধি, ভাগ্যের ভাগীদার / ভাগ্যবান'"[৬]
উসিজ উসিজ "'"পুরোহিত'"[৬]
ত্রিত্ব থ্রিত "'"তৃতীয়'"[৬]
মাস মাহ "'"চাঁদ, মাস'"[৬]
বিবস্বন্ত বিবনহবন্ত "'" জ্বলে ওঠা, প্রভাতী'"[৬]
দ্রুহ দ্রুজ "'"দুরাত্মা'"[৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Swamy, Subramanian (২০০৬)। Hindus Under Siege: The Way Out (ইংরেজি ভাষায়)। Har-Anand Publications। পৃষ্ঠা 45। আইএসবিএন 978-81-241-1207-6। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২১ 
  2. Muesse, Mark W. (২০১১)। The Hindu Traditions: A Concise Introduction (ইংরেজি ভাষায়)। Fortress Press। পৃষ্ঠা 30-38। আইএসবিএন 978-1-4514-1400-4। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২১ 
  3. Griswold, H. D.; Griswold, Hervey De Witt (১৯৯৯)। The Religion of the Ṛigveda (ইংরেজি ভাষায়)। Motilal Banarsidass Publishe। পৃষ্ঠা 1-21। আইএসবিএন 978-81-208-0745-7। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২১ 
  4. Gnoli, Gherardo (মার্চ ২৯, ২০১২)। "INDO-IRANIAN RELIGION"Encyclopædia Iranica। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১০, ২০১৮ 
  5. Muesse, Mark W. (২০১১)। The Hindu Traditions: A Concise Introduction (ইংরেজি ভাষায়)। Fortress Press। পৃষ্ঠা 30-38। আইএসবিএন 978-1-4514-1400-4। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২১ 
  6. ড় ঢ় য় কক Griswold, H. D.; Griswold, Hervey De Witt (১৯৭১)। The Religion of the Ṛigveda। Motilal Banarsidass Publishe। পৃষ্ঠা 1-21। আইএসবিএন 978-81-208-0745-7। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২১ 
  7. Muir, John (১৮৭৪)। Original Sanskrit Texts on the Origin and History of the People of India, Their Religion and Institutions (ইংরেজি ভাষায়)। Oricntal Publishers and Distributors। পৃষ্ঠা 224। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  8. Quiles, Carlos; Lopez-Menchero, Fernando (২০০৯)। A Grammar of Modern Indo-European: Language and Culture, Writing System and Phonology, Morphology, Syntax, Texts and Dictionary, Etymology (ইংরেজি ভাষায়)। Indo-European Association। পৃষ্ঠা 741। আইএসবিএন 978-1-4486-8206-5। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  9. Bonar, Horatius (১৮৮৪)। The Life and Work of the Rev. G. Theophilus Dodds: Missionary in Connection with the McAll Mission, France (ইংরেজি ভাষায়)। R. Carter। পৃষ্ঠা 425। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  10. Kainiraka, Sanu (২০১৬)। From Indus to Independence - A Trek Through Indian History: Vol I Prehistory to the Fall of the Mauryas (ইংরেজি ভাষায়)। Vij Books India Pvt Ltd। আইএসবিএন 978-93-85563-14-0। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  11. Kala, Aporva (২০১৫)। Alchemist of the East (ইংরেজি ভাষায়)। Musk Deer Publishing। আইএসবিএন 978-93-84439-66-8। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১