মৃত্যু পরবর্তী জীবন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Afterlife থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মৃত্যু পরবর্তী জীবন বা পরকাল হল একটি জগতের ধারণা, যে ধারণা অনুসারে ব্যক্তির শরীরের মৃত্যু হয়ে গেলেও তার আত্মপরিচয় বা চেতনার অস্তিত্ব থেকে যায়। পরকালের বিভিন্ন ধারণা অনুযায়ী মৃত্যুর পরেও থেকে যাওয়া ব্যক্তির এসেন্স কোন আংশিক উপাদান অথবা পূর্ণাঙ্গ আত্মা বা স্পিরিট হতে পারে। এই এসেন্স কোন ব্যক্তিগত পরিচয় বহন করতেও পারে আবার নাও পারে যেমন ভারতীয় দর্শনের নির্বাণ। পরকালের উপর বিশ্বাস প্রকৃতিবাদী দর্শন থেকে আসতে পারে অথবা অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস থেকে আসতে পারে। এই বিশ্বাস এটারনাল অবলিভিয়ন ধারণায় বিশ্বাসের বিপরীত।

কিছু লোকায়ত মতবাদ অনুসারে, মৃত্যুর পরও অস্তিত্ববহন করা এই সত্তা কোন অতিপ্রাকৃত জগতে অবস্থান করে, আবার অন্যান্য লোকায়ত মতবাদ অনুসারে এই সত্তার পুনর্জন্ম ঘটে এবং পুনরায় জীবনচক্র শুরু হয়। এক্ষেত্রে পূর্বের জীবন সম্পর্কে কোন স্মৃতি থাকে না। এই মতবাদ অনুসারে সত্তার একটি অতিপ্রাকৃতিক জগতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত বারবার জন্ম ও মৃত্যুর প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। পরকাল সংক্রান্ত বেশিরভাগ বিশ্বাসেরই উৎপত্তি ধর্ম, এসোটেরিসিজম এবং অধিবিদ্যা থেকে।

কিছু বিশ্বাস ব্যবস্থা বিশেষ করে আব্রাহামিক ধর্মেগুলোর বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যুর পর সত্তা জীবিতাবস্থায় পৃথিবীতে তার কৃতকার্যবিশ্বাস অনুযায়ী ঈশ্বর বা কোন স্বর্গীয় বিচারের দ্বারা নির্ধারিত বিশেষ স্থানে গমন করে। অন্যদিকে ভারতীয় ধর্মগুলোর পুনর্জন্ম বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যুর পর কৃতকার্য অনুসারে সত্তার প্রকৃতি সরাসরি নির্ধারিত হয়ে যায়, এতে ভিন্ন কোন সত্তার সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয় না।

বিভিন্ন অধিবিদ্যীয় মডেল অনুযায়ী পরকাল[সম্পাদনা]

অধিবিদ্যীয় মডেলগুলোতে আস্তিকরা সাধারণত একধরনের পরকালে বিশ্বাস করে থাকেন যা মৃত্যুর পর তাদের জন্য অপেক্ষা করে। কিছু সাধারণ অ-আস্তিক্যবাদী ধর্মের সদস্যরা পরকালে বিশ্বাসমুখী হন, কিন্তু এই বিশ্বাসে কোন ঈশ্বর থাকে না। স্যাডিউসিজ নামে একটি প্রাচীন ইহুদি সম্প্রদায় আছে যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করলেও পরকালে বিশ্বাস করতেন না।

অনেক ধর্মই, তা সে খ্রিষ্টধর্ম বা ইসলাম বা অনেক পৌত্তলিকতাবাদী বিশ্বাসব্যবস্থার মত পরকাল বলতে মৃত্যুর পর অন্য এক জগতে আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসী হোক অথবা হিন্দুধর্ম বা বৌদ্ধধর্মের অনেক ধারার মত পুনর্জন্মেই বিশ্বাসী হোক, সকল ক্ষেত্রেই বিশ্বাস করা হয় যে পরকালে কোন ব্যক্তির অবস্থা হচ্ছে জীবিতাবস্থায় তার কৃতকার্যের শাস্তি অথবা পুরস্কার।

জন্মান্তরবাদ[সম্পাদনা]

জন্মান্তরবাদ বা পুনর্জন্ম একটি পরকাল সম্পর্কিত ধারণা যা হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, রসিক্রুশিয়ান, থিওসফিস্ট, স্পিরিটিস্টগণ এবং উইক্কানদের বিশ্বাস ব্যবস্থায় পাওয়া যায়। এছাড়া কাব্বালিস্টিক ইহুদি ধর্মেও পুনর্জন্মকে গিলগুল নেশামত (আত্মার পুনর্জন্ম) নামে একটি বিশ্বাস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[১] জন্মান্তরবাদের ধারণা অনুযায়ী, মৃত্যুর পর আত্মা আরেকটি নতুন জীবন শুরু করে।

মোক্ষ বা মুক্তি বা ঈশ্বরের সাক্ষাত অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত পুনর্জন্মের এই ধারা চলতে থাকে এবং মোক্ষ প্রাপ্তির মাধ্যমে এই জন্মান্তরের সমাপ্তি ঘটে ।

জন্মান্তরবাদ বিশ্বাসের আরেকটি দিক হচ্ছে, এই বিশ্বাস অনুযায়ী প্রতিটি জীবন একই সাথে একটি পরকাল এবং পূর্বকাল। এই বিশ্বাস মতে, বর্তমান জীবন হল পূর্বজন্ম বা কর্মের ফল। এই বিশ্বাস অনুযায়ী আত্মার কখনো সৃষ্টি বা ধ্বংশ হয় না । আত্মাকে একটি নিত্য সত্তা হিসাবে দেখা হয় ।

রসিক্রুশিয়ানগণ,[২] মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মতই লাইফ রিভিউ পর্যায়ের কথা বলেন, যা মৃত্যুর ঠিক পরপরই কিন্তু নতুন জীবন শুরু এবং স্বর্গীয় বিচারের পূর্বে ঘটে। এই ঘটনাটি অনেকটা জীবনের চূড়ান্ত পর্যালোচনা বা চূড়ান্ত রিপোর্ট এর মত।[৩]

স্বর্গ ও নরক[সম্পাদনা]

আব্রাহামিক ধর্মগুলো অনুসারে ব্যক্তি মৃত্যুর পর পৃথিবীতে তার কৃতকার্য বা বিশ্বাস অথবা প্রিডেস্টিনেশন বা ভাগ্য এবং আনকন্ডিশনাল ইলেকশন এর ভিত্তিতে স্বর্গ বা নরকে যান অথবা মৃত ব্যক্তির পুনরুত্থানের সময় পর্যন্ত একটি মধ্যবর্তী অবস্থায় অপেক্ষা করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বর্গ হল ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তির জন্য মৃত্যুর পর পুরস্কারস্বরূপ প্রাপ্ত একটি অবস্থা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বর্গকে ঈশ্বরের সাথে চিরমিলনের অবস্থা হিসেবে দেখা হয়। অন্যদিকে নরক হল পাপী ব্যক্তিদের শাস্তি এবং পীড়নের জন্য একটি অবস্থা। এটা চিরকাল ব্যাপী অথবা একটি নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত শাস্তির জায়গা যেখানে ব্যক্তিকে অন্যান্য পাপাত্মার এবং পতিত স্বর্গদূতদের সাথে বন্দিদশায় থাকতে হবে।

লিম্বো[সম্পাদনা]

লিম্বো খ্রিষ্টধর্মের একটি জনপ্রিয় বিশ্বাস। মধ্যযুগের ধর্মতাত্ত্বিকদের দ্বারা এই মতটি বিকশিত হয়। কিন্তু যথেষ্ট জনপ্রিয় মত হলেও একে রোমান ক্যাথলিক চার্চ কখনও একটি ডগমা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় নি। তবুও চার্চগুলোতে এটাকে জনপ্রিয় ধর্মতাত্ত্বিক মতবাদ হিসেবে ধরা হয়। লিম্বো মতবাদ অনুসারে কোন বাপ্টিজম বা অভিসিঞ্চনের মধ্য দিয়ে না যাওয়া কোন নিষ্পাপ আত্মা যেমন শিশু অবস্থায় মৃতের নিষ্পাপ আত্মা, যিশুখ্রিষ্টের জন্মের পূর্বে মৃত কোন নিষ্পাপ ব্যক্তির আত্মা অথবা যারা অভিসিঞ্চনের পূর্বেই মারা গেছেন তাদের আত্মা স্বর্গ বা নরক কোথাও অবস্থান করে না। তাই এই আত্মারা না ইশ্বরদর্শন লাভ করে, না কোন শাস্তিপ্রাপ্ত হয়। কারণ তারা কোন ব্যক্তিগত পাপে পাপী নন কিন্তু অভিসিঞ্চিত না হবার কারণে তারা জন্মগত পাপের বোঝাও বহন করেন। তাই তারা সময়ের শেষ হবার আগ পর্যন্ত একটি প্রাকৃতিক সুখের অবস্থায় থাকবেন, কিন্তু অতিপ্রাকৃতিক সুখ তারা লাভ করবেন না। কিছুকিছু ক্ষেত্রে লিম্বোকে একটি মধ্যবর্তী অবস্থা বা বন্দী অবস্থা বলা হয়েছে।[৪]

পারগেটরি[সম্পাদনা]

পারগেটরি এর ধারণাটি বিশেষভাবে ক্যাথলিক চার্চের সাথে সম্পর্কিত। ক্যাথলিক চার্চ অনুসারে, যারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও বন্ধুত্বপ লাভ করে মারা গিয়েছেন, কিন্তু সম্পূর্ণভাবে শুদ্ধ হননি তাদের পরিণতি হিসেবে চিরমুক্তি নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর পর তাদেরকে একটি পরিশোধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যাতে তিনি স্বর্গে গমন করার জন্য প্রয়োজনীয় পবিত্রতা লাভ করতে পারেন। আর এই শোধন প্রক্রিয়া পাপাত্মাদের শাস্তির প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কিছু জায়গায় পারগেটরিকের জায়গায় "ক্লিন্সিং ফায়ার" বা "পরিষ্কারক অগ্নি" শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

অ্যাংলো-ক্যাথলিক ট্রেডিশনের অ্যাংলিকানগণও এই বিশ্বাসকে ধারণ করেন। মেথোডিজম মতবাদের উদ্ভাবক জন ওয়েসলি মৃত্যু এবং মৃত ব্যক্তির পুনরুত্থানের মধ্যে একটি মধ্যবর্তী অবস্থার ধারণায় বিশ্বাস করতেন যেখানে "আত্মার মাঝে পবিত্রতা বৃদ্ধি পাবার" একটি সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মেথোডিজম আনুষ্ঠানিকভাবে এই মতবাদকে স্বীকৃতি দেয় না। তারা এই মধ্যবর্তী অবস্থা এবং প্রার্থনার মাধ্যমে এই অবস্থায় থাকা মৃত ব্যক্তিকে সাহায্য করার নীতিকে অস্বীকার করে।[৫]

পরম্পরাগত আফ্রিকান ধর্ম[সম্পাদনা]

পরম্পরাগত আফ্রিকান ধর্মগুলো পরকাল সম্পর্কে বিচিত্ররকম বিশ্বাস ধারণ করে। হাজদাদের মত শিকারী-সঞ্চয়কারী সমাজের মধ্যে পরকাল সম্পর্কিত কোন বিশেষ বিশ্বাস নেই। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী ব্যক্তির মৃত্যুর অর্থ হল সম্পূর্ণভাবে জীবনের শেষ।[৬] ইয়মবে[৭], বেং[৮], ইয়রুবা এবং এওয়ে সংস্কৃতি সহ সমগ্র সাব-সাহারান আফ্রিকাতেই পূর্বপুরুষ আচার প্রত্যক্ষ করা যায়। এই পূর্বপুরুষ আচার হল একটি বিশ্বাস যেখানে মৃতব্যক্তি পুনরায় জীবিতাবস্থায় তাদের পরিবারে ফিরে আসে। এই পুনর্জন্মে নতুন ব্যক্তি তার পূর্বপুরুষের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো লাভ করে কিন্তু তার আত্মা লাভ করে না। এক্ষেত্রে প্রতিটি আত্মাই আলাদা এবং একেকটি জন্ম একেকটি নতুন আত্মার প্রকাশ।[৯] ইউরোবা, ডোগোন এবং লাডোগাদের পরকালের ধারণাগুলোর সাথে আব্রাহামিক ধর্মগুলোর মিল রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ আফ্রিকান সমাজেই একটা সাধারণ চিত্র দেখা যায়, সেটা হল তাদের পরকালে স্বর্গ ও নরকের পরিষ্কার ধারণার অনুপস্থিতি। কিন্তু মৃত্যুর পর ঈশ্বর কর্তৃক আত্মার বিচারের ধারণা তাদের মধ্যে পাওয়া যায়।[৯] মেন্ডে এর মত কিছু সমাজে অনেকগুলো বিশ্বাসের একত্রে উপস্থিতি দেখা যায়। মেন্ডেরা বিশ্বাস করে যে ব্যক্তি দুইবার মৃত্যু হয়। একবার মৃত্যু ঘটে মেন্ডেদের গোপন সমাজে যোগদানের পূর্বে যা জীববিজ্ঞানগত মৃত্যু নয়, আর দ্বিতীয়বারের মৃত্যুটি হল জীববিজ্ঞানগত মৃত্যু যখন ব্যক্তি আসলেই মারা যায়। দ্বিতীয় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ব্যক্তি পূর্বপুরুষ হয়ে যায়। মেন্ডেরা এও বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর কর্তৃক তাদের সৃষ্টির পর তারা পরপর দশটি জীবন যাপন করেছিল আর এই প্রত্যেকটি জীবনই একেকটি ক্রম অবরোহী জগতে।[১০] এদের একটি মিশ্র-সাংস্কৃতিক ধারণা হল পূর্বপুরুষগণ জীবিতদের জগতেরই একটি অংশ এবং জীবিতদের সাথে তাদের একটি সম্পর্কও থাকে।[১১][১২][১৩]

প্রাচীন ধর্ম[সম্পাদনা]

প্রাচীন মিশরীয় ধর্ম[সম্পাদনা]

প্রাচীন মিশরীয় ধর্মে পরকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, আর এই বিশ্বাস ব্যবস্থাটি পরকাল সম্পর্কিত লিখিত ইতিহাসের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন। মৃত্যুর পর আত্মার কা (দ্বিতীয় শরীর) এবং বা (ব্যক্তিত্ব) মৃতদের রাজ্যে চলে যায়। সেখানে আত্মা ফিল্ড অব অরু নামক একটি স্থানে অবস্থান করে। মৃতদের বিকল্প হিসেবে সমাধির উপর একটি মূর্তি তৈরি করার রীতি ছিল প্রাচীন মিশরীয় ধর্মে।[১৪]

মৃত্যুর পর পরকালে পুরষ্কৃত হবার জন্য একটি পাপমুক্ত হৃদয় এবং বুক অব দ্য ডেড এর মন্ত্র, পাসওয়ার্ড ও সূত্রের উচ্চারণ করার সামর্থের প্রয়োজন হয়। মৃতদের হৃদয়কে শু পালক এর বপরীতে দাড়িপাল্লায় ওজন করা হয়।[১৫] যদি হৃদয় এই পালকের চেয়ে হালকা হয় তাহলে সে ফিল্ড অব অরুতে যেতে পারে। যদি ভারি হয় তাহলে তাকে আম্মিত নামক দৈত্যের খাদ্যে পরিণত হতে হয়।[১৬]

মিশরীয়গণ এও বিশ্বাস করতেন যে যদি মৃতের শরীরকে সারকোফেগাসে (বিভিন্ন জটিল চিহ্ন, ছবি ও হায়ারোগ্লিফিক লেখা সংবলিত প্রাচীন মিশরীয়দের কফিন) রাখা হয়, সঠিকভাবে পচনরোধক মৃতের শরীরে মাখানো হয় এবং মন্দীরে সমাধিস্ত করা হয় তাহলেই তাদের পরোলোক প্রাপ্তি ঘটবে এবং সূর্যের সাথে ফিল্ড অব অরুতে প্রতিদিনের ভ্রমণে যোগ দিতে পারবেন। পরকালের বিভিন্ন বিপদের সম্ভাবনার জন্য সমাধিতে খাদ্য, অলংকারের সাথে "বুক অব দ্য ডেড"ও দিয়ে দেয়া হত।[১৭][১৮]

প্রাচীন মিশরীয়দের সভ্যতা ধর্মের উপর ভিত্ত করে গড়ে উঠেছিল। মৃত্যুর পর পরকালের বিশ্বাস ছিল তাদের মৃতের অন্তেষ্টিক্রিয়া পালনের প্রধান চালিকাশক্তি। তাদের কাছে মৃত্যু ছিল কেবল মাত্র একটি অস্থায়ী বাঁধা, পূর্ণাঙ্গ সমাপ্তি নয়। আর চিরকাল ব্যাপী জীবন কেবল দেবদেবীদের করুণা লাভ, মোমিকরণের মাধ্যমে দেহের সংরক্ষণ এবং মূর্তি তৈরি ও অন্তেষ্টিক্রিয়ার আচার যথাযথভাবে পালনের উপর নির্ভর করে। তাদের বিশ্বাস অনুসারে প্রত্যেক মানুষ কা, বা, এবং আখ এর সমন্ব্যে গঠিন। নাম এবং ছায়াও জীবিত সত্তা। পরকালকে উপভোগ করতে হলে তাই এই সবগুলো অংশকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।[১৯]

২০১০ সালের ৩০ মার্চে মিশরের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় থেকে দাবী করা হয় যে লুক্সরে একটি বিশাল গ্রানাইটের দরজা পাওয়া গেছে যেখানে রাণী হাসেপসুতের ক্ষমতাশালী উপদেষ্টা উশেরের খোদাই করা লেখা রয়েছে।[২০] হাশেপসুত ছিলেন প্রাচীন মিশরের অষ্টাদশ রাজবংশের একজন রাণী যিনি মিশরে নারী শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় (খ্রিষ্টপূর্ব ১৪৭৯ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১৪৫৮) মিশর শাসন করেছিলেন। মনে করা হচ্ছে যে এই ফলস ডোরটিকে পরকালের দরজা হিসেবে ভাবা হত। নৃতত্ত্ববিদদের মতে এই দরজাকে রোমানদের শাসিত মিশরে কোন স্থাপনায় পরবর্তীতে ব্যবহার করা হয়েছিল।

প্রাচীন গ্রীক ও রোমান ধর্ম[সম্পাদনা]

গ্রিক পুরাণ অনুসারে আন্ডারওয়ার্ল্ডের রাজা হলেন গ্রীক দেবতা হেডিস। আন্ডারওয়ার্ল্ড হল একটি স্থান যেখানে মৃতরা মৃত্যুর পর অবস্থান করে।[২১] দেবতাদের বার্তাবাহক, গ্রীক দেব হার্মিস মৃতদের আত্মাকে আন্ডারওয়ার্ল্ডে নিয়ে যান (কখনও হেডিসকে ডেকেও নিয়ে আসেন)। হার্মিস আত্মাকে স্টিক্স নদীর তীরে রেখে আসেন। গ্রীক পুরাণ মতে স্টিক্স নদী হল জীবন ও মৃত্যুর মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী।[২২]

এরপর যদি আত্মার কাছে সোনা থাকে (সমাধিস্থ করার সময় মৃতের পরিবার মৃতের জিভের নিচে একটি মুদ্রা রেখে দেয়) মাঝি ক্যারন এই আত্মাদেরকে নদী পাড় করে হেডিসের কাছে নিয়ে আসে। এরপর আত্মাকে একাস, রাডামেন্থাস এবং রাজা মিনোস বিচার করেন। সেই বিচারের উপর ভিত্তি করে আত্মাকে এলিসিয়াম, টারটারাস, এসফোডেল ক্ষেত্র ও ফিল্ড অব পানিশমেন্টে পাঠানো হয়। এলিসিয়াম হল তাদের জন্য যারা পৃথিবীতে পরিত্র জীবন যাপন করেছিলেন। এখানে সবুজ মাঠ, উপত্যকা এবং পর্বতমালা রয়েছে। সকলে এখানে সুখে শান্তিতে থাকে এবং সূর্য সবসময় এখানে কীরণ দেয়। টারটারাস হল সেইসব লোকের জন্য যারা দেবতাদের নিন্দা করেন, বিদ্রোহ করেন ও জেনে বুঝে খারাপ কাজ করেন।[২৩]

এসফোডেল ক্ষেত্র হল তাদের জন্য যারা সমানভাবে ভাল কাজ ও পাপ কাজ করেছেন বা জীবনে যারা অমীমাংসিত ছিলেন এবং যাদের বিচার করা হয় নি। ফিল্ড অব পানিশমেন্ট বা শাস্তির ক্ষেত্র তাদের জন্য যারা প্রায়ই পাপ করেন কিন্তু টারটারাস আশা করেন না। টারটারাসে আত্মাকে লাভায় পুড়িয়ে অথাবা র‍্যাকে টেনে কষ্ট দেয়া হয়। গ্রীক কিংবদন্তির কিছু বীরকে আন্ডারওয়ার্ল্ডে ভ্রমণ করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। পরকাল বিষয়ে রোমানদের বিশ্বাসও একইরকম। তাদের পুরাণে হেডিস প্লুটো নামে পরিচিত। প্রাচীন গ্রীক পুরাণের লেবরস অব হেরাক্লেস অনুসারে, বীর হারকিউলিস তাকে দেয়া কাজ তিন মাথাওয়ালা কুকুর সারবেরাসকে বন্দী করতে আন্ডারওয়ার্ল্ডে গিয়েছিলেন।

ড্রিম অব সিপিও তে সিসারো শরীরের বাইরে বের হবার পর আত্মার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন যেখানে সেই আত্মা পৃথিবী থেকে অনে উঁচুতে উঠে গিয়ে দূর থেকে ক্ষুদ্র পৃথিবীকে দেখে।[২৪]

ভারজিলের এনিয়াড এ বীর এনিয়াস তার পিতাকে দেখতে আন্ডারওয়ার্ল্ডে ভ্রমণ করেছিলেন। সেখানে গিয়ে স্টিক্স নদীর তীরে তিনি অনেক আত্মাকে দেখতে পান যাদেরকে সঠিকভাবে সমাধিস্থ করা হয় নি। তাদেরকে যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ ঠিকভাবে সমাধিস্থ করছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে এখানে অপেক্ষা করে কাটাতে হবে। তারপর তাকে একটি প্রাসাদ দেখানো হয় যেখানে ভুলভাবে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিরা বাস করেন, তাকে ফিল্ড অব সরো দেখানো হয় যেখানে আত্মহত্যা করা ব্যক্তিগণ অনুশোচনা করেন যেখানে এনিয়াসের এনিয়াসের প্রাক্তন প্রেমিকাও ছিল। তাকে টারটারাস দেখানো হয় যেখানে টাইটান এবং অলিম্পিয়ানদের শক্তিশালী অমর শত্রুরা বসবাস করে। টারটারাসে তিনি বন্দীদের চিৎকার ও গোঙ্গানি শুনতে পান। তিনি বিস্মৃতির নদি লেথকে দেখেন যা পান করে একজন মৃৎ পূর্বের সব ভুলে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে যায়। তিনি ফিল্ড অব এলিসিয়ামে যান যেখানে সাহসী বীরগণ বাস করেন। তার পিতা তাকে রোমের সকল ভবিষ্যৎ বীরদেরকে দেখান। এনিয়াস যদি তার উদ্দেশ্য অনুযায়ী নগর প্রতিষ্ঠা করে তাহলে এই বীরগণ জন্ম লাভ করবে।

নর্স ধর্ম[সম্পাদনা]

পোয়েটিক এডা এবং প্রোস এডা হল দুটো প্রাচীনতম সূত্র যেখানে নর্সদের পরকাল বিষয়ক ধারণা পাওয়া যায়। নর্সদের পরকাল সম্পর্কিত কিছু ধারণা নিচের বিষয়গুলোর মধ্যে পড়ে:

  • ভালহালা: যুদ্ধে হহীদদের অর্ধেক দেবতা ওডিনের সৈন্যদলে যোগ দেয় যিনি এসগার্ডে ভালহালা নামক একটি শাসন করেন।[২৫]
  • ফকভ্যাংগার: শহীদদের বাকি অর্ধেক দেবী ফ্রেইয়ার সৈন্যদলে যোগ দেয় এবং ফকভ্যাংগার নামক একটি বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে বাস করে।
  • হেল: এই স্থানটি অনেকটা গ্রীক পুরাণের এসফোডেল ক্ষেত্রের মত। এখানে যারা খুব ভাল বা খুব খারাপ কোনটাই না তারা অবস্থান করে।
  • নিফলহেল: এই স্থানটি গ্রীক পুরাণের টারটারাসের মত। এই স্থানটি হেলের নিচে অবস্থান করে। যারা শপথ ভঙ্গ করে এবং জীবনে দুষ্কার্য করে তারা এই স্থানে কঠোর শাস্তি ভোগ করে।

আব্রাহামিক ধর্ম[সম্পাদনা]

ইহুদি ধর্ম[সম্পাদনা]

শেওল[সম্পাদনা]

হিব্রু বাইবেলে শেওলকে মৃতদের স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[২৬] শেওলের ব্যাপারে খ্রিষ্টান লেখকদের বক্তব্য হল হিব্রু শব্দ শেওলের অনেক অর্থ হতে পারে। এটা দিয়ে সমাধি, অবলম্বন, অপেক্ষার স্থান এবং সুস্থ হবার স্থানও বোঝায়। এটার অর্থ 'গভীর'ও হতে পারে যেহেতু পৃথিবী 'খুলে গিয়ে' বিদ্রোহী কোরাহ, ডাথান, আবিরাম এবং তাদের ২৫০ জন অনুসারীকে ধ্বংস করার কাহিনীতে এই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল।(নাম্বারস ১৬:৩১-৩৩) শেওলকে আক্ষরিকভাবে 'আন্ডারগ্রাউন্ড' হিসেবে ব্যবহার করা যায়, যদিও একে সহজে ভূমিকম্প বা পৃথিবীর দ্বিখণ্ডিত হওয়া অর্থেও ব্যবহার করা যায়।

বুক অব স্যামুয়েলের প্রথমটি ২৯:৩-১৯ (এলিয়াহু কোরেন বাইবেল): "এখন স্যামুয়েল মৃত... এরপর সাউল তার দাসদের বললেন, "আমাকে একজন মহিলাকে খুঁজে এনে দাও যিনি একজন মাধ্যম... এবং তিনি বললেন... স্যামুয়েলকে নিয়ে আসো আমার কাছে... এবং সাউল জানতেন যে এটাই স্যামুয়েল... এবং স্যামুয়েল সাউলকে বললেন, আমাকে এখানে আবার ফিরিয়ে এনে তুমি কেন আমাকে অশান্তিতে ফেললে? সাউল উত্তর দিল, আমি প্রচণ্ড মর্মপীড়ায় আছি... ঈশ্বর তোমার থেকে প্রস্থান করেছেন এবং তোমার শত্রু হয়েছেন বলে তুমি আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করো?... কাল তুমি এবং তোমার পুত্ররা আমার সাথে থাকবে।"

একলেসিয়াসতেস: "যা মানবপুত্রদের সাথে ঘটে তা পশুদের সাথেও ঘটে; তাদের সকলের বেলায় একই ব্যাপার ঘটে: এদের একটি যেমন মারা যায়, অন্যটিও মারা যায়, তাদের সকলের একই শ্বাস-প্রশ্বাস; মানুষের পশুদের থেকে বেশি কোন সুবিধা নেই, সবই অসার, সবাই একটি জায়গাতেই যাবে: সকলের উৎপত্তি ধুলা থেকে, এবং সকলে ধুলায় ফিরে যাবে। কে বলতে পারে যে মানুষের আত্মা উপরের দিকে যাবে আর পশুর আত্মা মাটির নিচে যাবে?" (একলেসিয়াসতেস ৩:১৯-২১ NKJV)

"কিন্তু যিনি জীবিতদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন তার আশা আছে, একট জীবিত কুকুর একটি মৃত সিংহের থেকে ভাল। জীবিতরা জানেন যে তিনি একদিন মারা যাবেন; কিন্তু মৃতরা কিছুই জানেন না, আর তাদের কাছে আর কোন পুরস্কার নেই। তাদের কোন স্মৃতি নেই। ভালবাসা, ঘৃণা, হিংসা সব বিনষ্ট হয়ে যাবে; সূর্যের নিচে তারা যা যা করেছেন তারা তা আর কিছুই করতে পারবেন না।" (একলেসিয়াসতেস ৯:4-6 NKJV)

বুক অব জবে বলা হয়েছে: "কিন্তু মানুষ মারা যায় এবং শায়িত হয়; যদি সে শ্বাস-প্রশ্বাস না নেয় তাহলে সে কোথায়?... সুতরাং মানুষ শায়িত হয় এবং আর কখনও ওঠে না। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বর্গ থাকবে না তারা জাগবেও না, ঘুম থেকেও উঠবে না... যদি একজন মানুষ মারা যায়, সে কি আবার জীবিত হবে?" (জব ১৪:১০,১২,১৪এ NKJV)

ওলাম হাবা[সম্পাদনা]

তালমুদে পরকাল সংক্রান্ত কিছু কথার উল্লেখ পাওয়া যায়। তালমুদীয় কর্তৃপক্ষগণ স্বীকার করেন যে মৃত্যুর পর ধার্মিকগণ একটি পরকাল ভোগ করবেন। মৃত্যুর পর আত্মাকে বিচারের কাঠগড়ায় আনা হবে। যারা পাপমুক্ত জীবন যাপন করেছেন তারা তৎক্ষণাৎ ওলাম হাবা বা ওয়ার্ল্ড টু কাম এ প্রবেশ করবেন। বেশিরভাগই এই ওলাম হাবায় প্রবেশ করতে পারেন না, বরং তারা তাদের পার্থিব জীবন পর্যালোচনা করার জন্য একটি পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যান। এই সময় তারা পৃথিবীতে কী কী ভুল কাজ করেছেন সে সম্পর্কে অবগত হন। কারও মতে এই সময়টা হল "পুনঃশিক্ষন" যেখানে আত্মা তার ভুলের পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে জ্ঞান লাভ করে। অন্যদের মতে এই সময়ে পূর্বের ভুলগুলোর জন্য এক ধরনের আধ্যাত্মিক অস্বস্তি কাজ করে। এই সময়কালের শেষে, যা এক বছরের বেশি নয়, আত্মা ওলাম হাবায় প্রবেশ করে। যদিও কিছু ইহুদি ধারণায় মৃত্যুর পর পূর্বের ভুলের কারণে পাওয়া অস্বস্তির কথার উল্লেখ আছে, কিন্তু অন্যান্য ধর্মগুলোর মধ্যে উপস্থিত চিরস্থায়ী নরকভোগের মত বিষয় ইহুদিদের পরকালের মতবাদে নেই। তালমুদ অনুসারে আত্মার বিলুপ্তির বিষয়টি খুওই বিদ্বেষ্পরায়ণ এবং অসৎ দলনেতাদের জন্য বরাদ্দ। এদের কুকর্ম হয় নিয়মের ঊর্ধ্বে চলে গেছে, না হয় মানুষের একটি বড় অংশকে তারা প্রচণ্ড অশুভ কাজের দিকে ঠেলে দিয়েছে।[২৭][২৮]

মাইমোনিডিস ওলাম হাবাকে আধ্যাত্মিক অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন। তার মতে পরকাল প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রেই হয়, এটা হল আত্মার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া যেই দেহে এটি তার পার্থিব অস্তিত্বের সময় অবস্থান করেছিল।

ইহুদি ধর্মগ্রন্থ জোহর অনুসারে গেহেনা (ইহুদিদের নরক) পাপাত্মাদের শাস্তির জায়গা নয়, বরং এটা তাদের আত্মার শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ার একটি স্থান।[২৯]

ইহুদিধর্মে জন্মান্তরবাদ[সম্পাদনা]

যদিও ইহুদের তালমুদ বা এর পূর্বের ধর্মগ্রন্থগুলোতে জন্মান্তরবাদের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না,[৩০] আব্রাহাম আরিয়েহ ট্রাগম্যানের মত র‍্যাবাইদের মতে জন্মান্তরবাদকে ইহুদি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ধরা হয়। ট্রাগম্যান ব্যাখ্যা করেন এটা মৌখিক ঐতিহ্য হিসেবে এসেছে। ইহুদি রহস্যবাদের[৩১] প্রাচীন গ্রন্থ জোহারে বারবার পুনর্জনের কথা বলা হয়েছে। ট্রাগম্যান বলেন বিগত পাঁচটি শতকে ইহুদিদের মাঝে পুনর্জন্মের কথা প্রকাশ করা হয়। এর পূর্বে পূনর্জন্মের ব্যাপারটি লুক্কায়িত ছিল।[৩১]

শ্রাগা সিমোনস বলেন, বাইবেলেও ডিউটোরমি ২৫:৫-১০, ডিউটোরমি ৩৩:৬ এবং ইসাইয়াহ ২২:১৪,৬৫:৬ এ পুনর্জন্মের ধারণা দেয়া আছে।

ইরমিয়াহু আলম্যন লিখেছনে, পুনর্জন্ম ইহুদিধর্মে একটি প্রাচীন ও মূলধারার বিশ্বাস। জোহারে পুনর্জন্মের ব্যাপারে বারবার এবং বড় আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সময়ে ইহুদিধর্মে ধর্মান্তরিত, ধার্মিক ও নির্ভরযোগ্য ভাষ্যকার অনকেলস ডিউটোরনমি ৩৩:৬ স্তবকটি ("রিউবেনকে মরতে দিও না, বাঁচতে দাও...") ব্যাখ্যা করেছিলেন এভাবে যে, রিওবেনকে সরাসরিভাবে পৃথিবীতে বাঁচতে দেয়া উচিত, এবং পুনর্জন্মের ফল হিসেবে তাকে পুনরায় মরে যেতে দেয়া উচিত নয়। তোরাহ পণ্ডিত, ভাষ্যকার এবং কাব্বালিস্ট ন্যাকম্যানিডিজ (রাম্বান ১১৯৫-১২৭০) জবের কষ্টভোগকে পুনর্জন্ম বলে মত দিয়েছিলেন। কারণ জবের কথায়, "ঈশ্বর একজন মানুষের সাথে এসব দুইবার বা তিনবার করে করেন যাতে তার আত্মা অন্ধকূপ থেকে ... জীবনের আলোয় ফিরে আসে" (জব ৩৩:২৯,৩০)।[৩২]

গিলগুল নামে পরিচিত পুনর্জন্মের ধারণায় ইহুদি লোক-বিশ্বাসে জনপ্রিয়, এবং আশকেনাজি ইহুদিদের ইদ্দিশ সাহিত্যেও এটা পাওয়া যায়। কিছু কাব্বালিস্টদের মতে, এটা বলা হয়েছে যে কিছু মানব আত্মা অ-মানব শরীরে জন্ম লাভ করবে। এই ধারণা ১৩শ শতক থেকে কাব্বালিস্টদের গ্রন্থে পাওয়া যায়। ১৬শ শতকের শেষের দিক থেকে অনেক রহস্যবাদীদের মাঝেও এই ধারণা পাওয়া যায়। মারটিন বুবারের বাল শেম তভ এর জীবনের গল্পের প্রথম সংগ্রহগুলোতে দেখা যায় মানুষ পরপর ক্রমানুযায়ী পুনর্জন্ম হয়।[৩৩]

অনেক সুপরিচিত র‍্যাবাই (সাধারণত নন-কাব্বালিস্ট বা এন্টি-কাব্বালিস্ট) যারা জন্মান্তরবাদের ধারণাকে পরিত্যাগ করেছেন তাদের মধ্যে আছেন সাদিয়া গাওন, ডেভিড কিমহি, হাসদাই ক্রেসকাস, ইয়েদেয়াহ বেডেরশি (১৪শ শতকের প্রথম দিকের), জোসেফ আলবো, আব্রাহাম ইবনে দাউদ, রশ এবং লিও ডে মোডেনা। সাদিয়া গাওন তার এমুনথ ভে ডেওথ (হিব্রু: বিশ্বাস এবং মতামত) গ্রন্থের সেকশন ৬ এ মেটেমসাইকোসিস (পুনর্জন্ম) এর নীতিকে খণ্ডন করেছেন। তিনি আরও বলেন, "যেসকল ইহুদিগণ পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন তারা অ-ইহুদীয় বিশ্বাস ধারণ করেন।" অবশ্যই সকল ইহুদি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে না, কিন্তু ইহুদিদের মধ্যে পুনর্জন্মে বিশ্বাস অপ্রচলিত নয়, এমনকি অর্থোডক্স ইহুদিদের মধ্যেও পুনর্জন্ম বা জন্মান্তরবাদ অপ্রচলিত নয়।

সুপরিচিত জন্মান্তরবাদী র‍্যাবাইদের মধ্যে আছেন ইয়োনোসান গেরশম, আব্রাহাম আইসাক কুক, তালমুদ পণ্ডিত এডিন স্টাইনসাল্টজ, ডভবার পিনসন, ডেভিড এম. ওয়েক্সেলম্যান, জালমান শাখতার[৩৪] এবং আরও অনেকে। রামবান (ন্যাকম্যানিডিজ), মেনাকেম রেকান্তি এবং রাবেনুউ বাখিয়ার মত নির্ভরযোগ্য বাইবেল ভাষ্যকারও জন্মান্তরবাদের কথা বলেছেন।

ইয়েৎশাক লুরিয়ার অনেকগুলো সংখ্যায় (যার বেশিরভাগই ইয়েৎশাকের শিষ্য চেইম ভিটালের দ্বারা লিখিত) জন্মান্তরবাদ সংক্রান্ত বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। তার শার হাগিলগুলিম (পুনর্জন্মের দ্বার) নামক গ্রন্থে ইহুদিধর্মে জন্মান্তরবাদের বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে।

রোর জিউইশ লার্নিং ইনস্টিটিউটের র‍্যাবাই নাফতালি সিলবেরবার্গ বলেন, "অন্য ধর্ম ও বিশ্বাসব্যাবস্থা থেকে উৎপন্ন যেসব ধারণাগুলো জনপ্রিয় হয়েছে, সাদাসিধে ইহুদিরা সেগুলোকেই মেনে নিয়েছে।"[৩৫]

খ্রিষ্টধর্ম[সম্পাদনা]

প্রচলিত ও মূলধারার খ্রিষ্টধর্ম নাইসিন মতের একটি বিশ্বাসকে স্বীকার করে নেয় যা বলে, "আমরা মৃতব্যক্তির পুনরুত্থানের সন্ধান করি এবং সন্ধান করি আগামী জগতের জীবনকে।" খ্রিষ্টীয় পরকালবিদ্যা, মৃত্যু, মধ্যবর্তী অবস্থা, স্বর্গ, নরক, যিশুখ্রিষ্টের দ্বিতীয়বার ফিরে আসা, মৃতব্যক্তির পুনরুত্থান, র‍্যাপচার, গ্রেট ট্রিবিউলেশন, মিলেনিয়াম, সমাপ্তি সময়, শেষ বিচার, নতুন স্বর্গ ও নতুন পৃথিবী এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি নিয়ে আলোচনা করে। বাইবেলের বিভিন্ন জায়গায় এসকাটোলজি বিষয়ে উল্লেখ আছে, বিশেষ করে ইসাইয়াহ, ডেনিয়েল, ম্যাথিউ ২৪, ম্যাথিউ ২৫ এবং বুক অব রেভেলেশনে। যদিও কিছু বিশেষ খ্রিষ্টীয় ধর্মমতে পরকালে শাস্তির কথা বলা হয়, পরকালে চিরস্থায়ী নরকভোগই খ্রিষ্টধর্মে প্রধান ধর্মমত।

যখন স্যাডিউসিজ যিশুকে (কারও একাধিক স্ত্রী থাকলে পরকালে তার স্ত্রী কে হবেন এই প্রেক্ষিতে) মৃতব্যক্তির পুনরুত্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, যিশু উত্তর দেন, পুনরুত্থানের পর বিবাহ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে কারণ পুনরুত্থিত ব্যক্তি (অন্তত এক্ষেত্রে) স্বর্গে দেবদূতের মত হয়ে যাবেন।[৩৬]

যিশু এও বলেন যে, একটা সময় আসবে যখন মৃতব্যক্তিগণ ঈশ্বরপুত্রের কণ্ঠস্বর শুনতে পারবেন। তখন সমাধিতে যারা আছে্ন সকলে বের হয়ে আসবেন। যারা ভাল কাজ করেছে তারা পুনরুত্থিত হয়ে জীবন পাবেন, আর যারা পাপ কাজ করেছেন তারা পুনরুত্থিত হয়ে দণ্ড ভোগ করবেন।[৩৭] ম্যাথিউ এর গসপেল অনুসারে, যিশুর মৃতুর সময় সমাধিগুলো খুলে গিয়েছিল, এবং তার পুনরুত্থানের সময় মৃত সেইন্টগণ তাদের সমাধি থেকে পুনরুত্থিত হবেন এবং তারা পবিত্র শহর 'নতুন জেরুজালেমে' গমন করবেন।[৩৮] নিউ টেস্টামেন্ট এর অন্য কোথাও এই ঘটনার কথা লেখা নেই।

শেষ দিন: যিশু তার শাসনে থাকা স্বর্গরাজ্যকে সমুদ্রে ফেলা জালের সাথে তুলনা করেছেন যেই জালে সকল ধরনের মাছ একত্রিত করা হয়। যখন জালে মাছ পূর্ণ হয়ে যায় তখন জেলে এটাকে টেনে তোলে। এরপর সে ভাল মাছকে পাত্রে রাখে আর খারাপ মাছকে ছুড়ে ফেলে দেয়। সুতরাং যখন শেষ দিন আসবে তখন সময়ের শেষ হয়ে যাবে। দেবদূতগণ পাপী ব্যক্তিদেরকে ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা করবেন এবং তাদেরকে চিরজ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করবেন। এরপর ন্যায়নিষ্ঠগণ তাদের পিতার রাজ্যে সূর্যের ন্যায় উদ্ভাসিত হবেন।

বুক অব ইনক -এ চার ধরনের মৃতের জন্য শেওলকে চারটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। এখানে বলা হয়, বিশ্বাসী সেইন্টগণ স্বর্গে পুনরুত্থিত হবার জন্য অপেক্ষা করবেন, সামান্য ধার্মিকগণ পুরস্কারের জন্য অপেক্ষা করবেন, পাপীরা শাস্তির জন্য অপেক্ষে করবেন, এবং যেসকল ব্যক্তিগণ ইতিমধ্যেই শাস্তি পেয়ে গেছেন তারা বিচারের দিন পুনরুত্থিত হবেন না।[৩৯] উল্লেখ্য যে, বুক অব ইনককে খ্রিষ্টধর্ম এবং ইহুদিধর্মের বেশিরভাগ সম্প্রদায়ই প্রামাণিক হিসেবে ধরে না।

২ ম্যাকাবিজ গ্রন্থে ভবিষ্যতে পুনরুত্থান এবং বিচারের জন্য অপেক্ষারত মৃতব্যক্তির সংখ্যা পরিষ্কারভাবে দেয়া আছে। সেই সাথে গ্রন্থটিতে মৃতদেরকে তাদের পাপের বোঝা থেকে মুক্ত করার জন্য প্রার্থনার এবং দানের বিধানও দেয়া আছে।

ডোমিনিকো[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] বেক্কাফুমির ইনফার্নো: নরকের একটি খ্রিষ্টীয় কল্পনা

ল্যুক এর লেখক ল্যাজারাস এন্ড দ্য রিচ ম্যান এর গল্পটির বর্ণনা করেছেন যেখানে দেখানো হয়েছে হেডিসে (যেখানে মৃতের আত্মারা অপেক্ষা করে) মানুষেরা সুখের জীবন অথবা কষ্টের যন্ত্রণার জীবনে পুনরুত্থিত অপেক্ষা করছেন। বুক অব রেভেলেশন এর লেখক শেষ বিচারের সময় ঈশ্বর ও দেবদূতদের সাথে শয়তান এবং ডিমনদের মহাকাব্যিক যুদ্ধের কথা বর্ণনা করেছেন। এখানে পূর্বের নবীদের আত্মা এবং যিশুর ট্রান্সফিগারেশনের কথাও বলা হয়েছে।

অ্যাক্টস অব পল এন্ড থেকলা গ্রন্থে মৃতের উদ্দেশ্যে প্রার্থনার কার্যকারিতা সম্পর্কে বলা হয়। এখানে বলা হয়, মৃতের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করলে আত্মা "সুখের অবস্থায় গমন করতে পারে"।[৪০]

রোমের ধর্মতাতত্ত্বিক হিপ্পোলিতাস আন্ডারওয়ার্ল্ড বা হেডিসকে একটি স্থান হিসেবে উল্লেখ করেছেন যেখানে "বসম অব আব্রাহাম" বা "আব্রাহামের বক্ষ" নামক জায়গায় ন্যায়বান মৃতব্যক্তিগণ পুনরুত্থিত হবার জন্য অপেক্ষা করেন এবং তাদের ভবিষ্যৎ প্রত্যাশার কথা ভেবে আনন্দ করেন, এবং পাপী মৃতব্যক্তিগণ "লেক অব আনকোয়েঞ্চেবল ফায়ার" বা "চিরজ্বলন্ত অগ্নির হ্রদ" এর দৃশ্য দেখে পীড়িত হন যেখানে তাদেরকে ভবিষ্যতে ছুড়ে ফেলা হবে।

নিসার ধর্মতাত্ত্বিক গ্রেগরি মৃত্যুর পর আত্মার শুদ্ধিকরণের সম্ভাবনার কথা আলোচনা করেছেন যা অনেক আগে খ্রিষ্টধর্মে বিশ্বাস করা হত।[৪১] গ্রেগরি মনে করতেন যেসব ব্যক্তি ন্যয়নিষ্ঠ ছিলেন না মৃত্যুর পর তারা শুদ্ধিকরণ ভোগের মাধ্যমে বেঁচে যেতে পারেন। পোপ প্রথম গ্রেগরি প্রায় এক শতাব্দী পূর্বের নিসার গ্রেগরির এই বিষয়ের রচনাগুলো পুনরায় আলোচনা করেন এবং পারগেটরির অগ্নিশিখার সাথে এর একটি সম্পর্ক স্থাপন করেন।

"পারগেটরিয়াম" (ল্যাতিন: পরিষ্কার করার স্থান[৪২]) বিশেষ্যটি মৃত্যুর পর যারা রক্ষা পেয়েছেন তাদের যন্ত্রণাময় শুদ্ধিকরণের অবস্থা বোঝাতে প্রথমবার ব্যবহার করা হয়। শব্দটির বিশেষণ রূপগুলো যেমন পারগেটরিয়াস ধর্মের বাইরের রচনাতে ব্যবহার করা হত,[৪৩] কিন্তু তার পূর্বেই অনেক খ্রিষ্টান যেমন হিপ্পোর অগাস্টিন এবং পোপ প্রথম গ্রেগরি মৃত্যু পরবর্তী শুদ্ধিকরণ বোঝাতে শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

এজ অব এনলাইটেনমেন্ট বা আলোকিত যুগে ধর্মতাত্ত্বিক এবং দার্শনিকগণ পরকাল সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের দর্শন এবং বিশ্বাস পেশ করেন। এদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছেন ইমানুয়েল সোয়ডেনবর্গ যিনি প্রায় ১৮টি ধর্মতাত্ত্বিক রচনা প্রকাশ করেছিলেন যেখানে তার দাবীকৃত আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া পরকালের প্রকৃতি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল হ্যাভেন এন্ড হেল[৪৪] তিনি পরকাল সম্পর্কিত অনেক জিনিস আলোচনা করেছেন তার রচনাগুলোতে, যেমন স্বর্গে বিবাহ (যেখানে সকল দেবদূত বিবাহিত), স্বর্গের শিশু (যেখানে সকলেই তাদের দেবদূত পিতামাতার দ্বারা পালিত হয়), স্বর্গে স্থান ও কাল, মৃত্যুর পর আত্মাদের দুনিয়ায় জেগে ওঠা (একটি স্থান যা স্বর্গ ও নরকের মাঝামাঝি অবস্থান করে এবং মৃত্যুর পর মানুষ প্রথমে সেখানে জেগে ওঠে), স্বর্গ ও নরকে স্বাধীন ইচ্ছা বা ফ্রি উইলের অনুমতি (ঈশ্বরের আদেশে স্বর্গ বা নরকে না যেতে চাইলে কী হবে), নরকের চিরস্থায়িত্ব (ব্যক্তি নরক ত্যাগ করতে পারবে কিন্তু কোন দিন তা করতে চাবে না), এবং সকল দেবদূত এবং শয়তান পৃথিবীতে একদিন মানুষ ছিল।[৪৪]

অন্যদিকে, আলোকিত যুগে অনেক যুক্তিবাদী দর্শনের জন্ম হয় যেমন ডেইজম বা শ্বরবাদ। অনেক স্বরবাদী মুক্তমনা বিশ্বাস করতেন যে, পুরস্কার ও শাস্তিযুক্ত একটি পরকাল যুক্তি এবং ভাল নৈতিকতার জন্য প্রয়োজনীয়।

কিছু খ্রিষ্টান মনে করেন, স্বর্গে প্রবেশানুমতি সম্পূর্ণভাবে যোগ্যতাবলে অর্জন করা যায়, তারা বরং বিশ্বাস করেন যে স্বর্গপ্রাপ্তি সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের যোগ্যতানিরপেক্ষ দয়া। তারা সেইন্ট পলের একটি বাক্যের উপর ভিত্তি করে এটা বিশ্বাস করেন যা বলে, "দয়ার কারণে বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে তোমরা সুরক্ষিত হলে। আর এটা তোমাদের নিজেদের জন্য না, এটা ঈশ্বরের দেয়া উপহার, এটা তোমরা কাজের দ্বারা অর্জন কর নি, যাতে তোমাদের কেউ দম্ভ না করতে পারে।" প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মসংস্কারের সময় লুথারিয়ান এবং কেলভিন ধর্মতাত্ত্বিক ধারা ঈশ্বরের অনাকাঙ্ক্ষিত দয়ার উপর জোড় দেয় এবং তথাকথিত পেলাজিয়ানিজমকে বর্জন করে, যা মানুষকে ভাল কাজের মাধ্যমে স্বর্গলাভ অর্জনকে সমর্থন করত। অন্যান্য খ্রিষ্টানগণ এই নীতিকে স্বীকার করে না, যার ফলে দয়া, স্বাধীন ইচ্ছা এবং নিয়তির নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ভাল কাজের জন্য পরকালে পুরস্কার লাভ করা যায় এটা একটি খ্রিষ্টীয় সমাজের একটি সাধারণ লোকবিশ্বাস, এমনকি সেইসব চার্চের সদস্যগণও এই ধারণায় বিশ্বাস করেন যেসব চার্চ এই বিশ্বাসকে বর্জন করে।

কিছু খ্রিষ্টান নরকের শাস্তিকে স্বীকার করে না। ইউনিভারসালিস্ট বা সার্বজনীনতাবাদীদের মতে পরকালে পুরস্কার সকলের জন্যই। জিহোভাস উইটনেসেস ধারা এবং সেভেন্থ ডে অ্যাডভেন্টিস্টস চার্চে জীবনযাপনের অনেক বাঁধা ধরা নিয়ম সত্ত্বেও তারা শেখায় যে পাপীরা চিরকাল নির্যাতিত হবে না বরং তারা ধ্বংস হবে। জন ৩:১৬ তে বলা হয়, কেবল যারা যিশুকে স্বীকার করবে তাদেরকে অমরত্ব দান করা হবে, তাই যে সব ব্যক্তি যিশুকে স্বীকার করবে না তারা নরকে চিরকালের জন্য দগ্ধ হবেন না কারণ যিশু তাদেরকে অমরত্ব দেন নি, এর বদলে তারা ধ্বংস হয়ে যাবেন।

আমেরিকান পপ সংস্কৃতিতে স্বর্গের চিত্রে, বিশেষ করে মধ্য বিংশ শতকের লুনি টিউনসের মত ভিন্টেজ কার্টুনগুলোতে দেখানো হত, ধার্মিক ব্যক্তির আত্মাকে স্বর্গে গিয়ে দেবদূতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু এটা অর্থোডক্স খ্রিষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মানুষের সৃষ্টির পূর্বে ঈশ্বরের দ্বারা তৈরিকৃত স্বর্গীয় প্রাণী এবং বার্তাবাহক দেবদূত, এবং স্বর্গবাসী যিশুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে ঈশ্বরের করুণায় অমরত্ব প্রাপ্ত মানবাত্মা সেইন্টদের মাঝে পার্থক্য খ্রিষ্টধর্মে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে।

লেটার ডে সেইন্টস বা পরবর্তী দিনের সেইন্টগণ (মরমনিজম ধারা) বিশ্বাস করতেন যে পৃথিবীতে জীবন শুরুর পূর্বে আত্মার অস্তিত্ব ছিল এবং পরেও আত্মার অস্তিত্ব থাকবে। দেবদূতরা হয় এমন আত্মা যারা এখনও পৃথিবীতে তাদের মরনশীল জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পৃথিবীতে আসেন নি, অথবা এমন আত্মা যারা ইতিমধ্যেই পৃথিবীর মরণশীল জীবন অতিবাহিত করে পুনরুত্থিত হয়েছেন এবং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করছেন (জব ৩৮:৪-৭, ডক্ট্রাইন এন্ড কভেনেন্টস ৯৩:২৯)। লেটার ডে সেইন্টদের চার্চের নীতি অনুসারে, আর্চএঞ্জেল মাইকেল পৃথিবীতে মরণশীল জীবনের অভিজ্ঞতা লাভের জন্য প্রথম মানব আদমে পরিণত হন। মরমনিজম অনুসারে প্রাচীন আমেরিকায় মরণশীল জীবন অতিবাহিত করা দেবদূত মরনি বালক জোসেফ স্মিথের সাথে সাক্ষাত করতে আসতেন। পরবর্তীতে জোসেফ স্মিথ তিনি এপস্টল পিটার, জন, জন দ্য বাপ্টিস্ট এবং অন্যান্যদের থেকে দৈব আদেশ লাভ করেন।

ক্যাথলিক চার্চ[সম্পাদনা]

পরকাল সংক্রান্ত ক্যাথলিক ধারণা অনুসারে দেহের মৃত্যুর পর আত্মার বিচার হয়। ন্যয়নিষ্ঠ এবং পাপমুক্তগণ স্বর্গে গমন করেন, কিন্তু যারা পাপ করে অনুশোচনা না করেই মারা গেছেন তারা নরকে গমন করেন। ১৯৯০ এর দশকে ক্যাথলিক চার্চের নীতি বা ক্যাটেকিজম অনুসারে নরককে পাপীদের উপর বর্ষিত শাস্তি হিসেবে নয়, বরং ঈশ্বরের কাছ থেকে আত্মবর্জন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অন্যান্য খ্রিস্টীয় ধারার সাথে ক্যাথলিক চার্চের একটি পার্থক্য হল, ক্যাথলিক চার্চ অনুসারে যারা ঈশ্বরের করুণায় মারা যান কিন্তু তারপরও জন্মগত পাপ বহন করেন (অভিসিঞ্চন না হওয়ার কারণে) তারা পারগেটরি নামক একটি স্থানে গমন করেন এবং স্বর্গে গমনের জন্য শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান।

অর্থোডক্স খ্রিষ্টধর্ম[সম্পাদনা]

অর্থোডক্স চার্চগুলো ঐচ্ছিকভাবেই পরকালের বিষয়ে কম কথা বলে, কারণ তারা সকল বিষয়েই, বিশেষ করে যেসব ঘটনা এখনও পর্যন্ত ঘটেনি সেসব বিষয়ে রহস্যের স্বীকৃতি দেয়। যিশুর প্রত্যাবর্তন, দেহের পুনরুত্থান এবং শেষ বিচার সহ যেসব বিষয় নাইসিন ক্রিড (৩২৫ খ্রিষ্টাব্দ) কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়, তার বাইরে গিয়ে অর্থোডক্সি স্পষ্ট করে তেমন কিছু শেখায় না। পশ্চিম দিকের খ্রিষ্টধর্মের মত না হয়ে এরা ঐতিহ্যগতভাবেই নন-ডুয়েলিস্ট এবং এরা স্বর্গ ও নরক নামের দুটো আলাদা স্থানকে আক্ষরিক অর্থে স্বীকার না করে একটি চূড়ান্ত নিয়তিকে স্বীকার করেন, যেখানে স্বর্গ নরক শব্দদুটো আক্ষরিক নয়, বরং আলঙ্কারিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।[৪৫] অর্থোডক্সিতে শেখানো হয়, শেষ বিচার কেবলই ব্যক্তির স্বর্গীয় ভালবাসা ও করুণার সম্মুখীন হওয়া, কিন্তু ব্যক্তি কতটুকু রূপান্তরিত হয়েছেন বা কতটুকু স্বর্গীয়তা লাভ করেছেন তার উপরে নির্ভর করবে তিনি কেমন বা কতটুকু স্বর্গীয় ভালবাসা এবং করুণার সম্মুখীন হবেন। "তাই পরকালে যে অপরিবর্তনীয় এবং বিরামহীন বিষয়ের সম্মুখীন হতে হবে তা কেবলই ঈশ্বরের ভালবাসা, করুণা এবং মহিমা যা স্বর্গীয় পীঠস্থানগুলোতেও অনুপ্রবিষ্ট হয়ে আছে। আর মানুষের বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়াই তাদের বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার বহুরূপতার জন্ম দেয়।"[৪৫] যেমন সেইন্ট আইজাক দ্য সিরিয়ান বলেন, "যাদেরকে গেহেনায় (নরকে) শাস্তি লাভ করেন, তাদেরকে ভালবাসার চাবুক মারা হয়... ভালবাসার শক্তি দুইভাবে কাজ করে: পাপীদেরকে এটা যন্ত্রণা দেয়... তিক্ত অনুশোচনার মাধ্যমে। কিন্তু স্বর্গের পুত্রদেরকে আত্মাকে ভালবাসা তার আনন্দের মাধ্যমে উল্লসিত করে।"[৪৬] এক্ষেত্রে, স্বর্গীয় ক্রিয়া সবসময়ই অপরিবর্তনীয় এবং সকলের জন্যই সমান ভালবাসা এবং কেউ যদি এই ভালবাসা নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করে, তাহলে এই অভিজ্ঞতাটি ঈশ্বরপ্রদত্ত দণ্ড নয়, বরং তা ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছার কারণে একধরনের আত্মদণ্ড। অর্থোডক্সি তাই তাদের পরকালের মডেলের জন্য জন ৩:১৯-২১ এ বর্ণিত যীশুর বিচারের বর্ণনাকে ব্যবহার করে: "১৯- এবং এটাই বিচার: বিশ্বে আলো এসেছে, এবং মানুষ আলোর বদলে অন্ধকারকে ভালবাসে কারণ তাদের কৃতকার্যসমূহ মন্দ। ২০- যারা মন্দ কাজ করে, তাদের প্রত্যেকেই আলোকে ঘৃণা করে এবং আলোর সামনে তারা আসে না, যদি না তাদের কৃতকার্যসমূহকে প্রকাশ করা হয়। ২১- কিন্তু যে সৎ কাজ করে, সে আলোর পথে আসে, যাতে এটা স্পষ্টভাবে দেখা যায় যে তার কৃতকার্যসমূহ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যেই পালিত।" পরকাল সম্পর্কিত অর্থোডক্স চিন্তাধারাকে ফাদার থমাস হপকো এভাবে তুলে ধরেছেন, "এটা সঠিকভাবেই ঈশ্বরের করুণা এবং ভালবাসা যা পাপীকে পীড়িত করে। ঈশ্বর শাস্তি দেন মা; তিনি ক্ষমা করেন... এক কথায়, ঈশ্বরের করুণা সকলের উপরেই বর্ষিত হয়, তা ব্যক্তি পছন্দ করুক বা নাই করুক। আমরা যদি তা পছন্দ করি এটা স্বর্গ; আর যদি না করি, তবে এটা নরক। ঈশ্বরের সামনে প্রত্যেকেই নতজানু হয়। সবকিছুই তারই উদ্দেশ্যে কৃত। ঈশ্বর তাই পরিণামে সকলের কাছেই অসীম করুণা এবং নিঃশর্ত ক্ষমা নিয়ে আসবেন। কিন্তু ঈশ্বরের এই ক্ষমার দানে সকলে উল্লসিত হবে না, আর তাদের এই পছন্দই হবে তাদের বিচার, আর এটাই হবে তাদের দুঃখ এবং বেদনার স্বেচ্ছানির্বাচিত উৎস্য।"[৪৭]

আবার, অর্থোডক্সিতে এপোকাস্টাসিসও শেখানো হয়, যা বলে একসময় সকলকেই উদ্ধার করা হবে বা কষ্ট থেকে পরিত্রাণ দেয়া হবে। এটা খুব সম্ভব ওরিগেন এর দেয়া ধারণা, কিন্তু অনেক চার্চ ফাদার এবং সেইন্টও এটা মেনে নেয় যাদের মধ্যে নিসার গ্রেগরিও আছে, যাকে ম্যাক্সিমস দ্য কনফেসর 'ইউনিভার্সাল ডক্টর' বলেছিলেন এবং সেকন্ড কাউনসিল অব কনস্ট্যান্টিনোপল (৫৫৩ খ্রিষ্টাব্দ) যাকে কেবল "ফাদারদের ফাদার" হিসেবেই আখ্যায়িত করে নি, সাথে তার অর্থোডক্সিকে যথার্থ বলে নিশ্চিত করেছে, যেখানে ওরিগেনের ইউনিভার্সালিজমকে এটা মেনে নেয় নি কারণ ওরিগেন এর মত সেই উদ্ধারে আমাদের অস্তিত্বের পূর্ব অবস্থাতেই নিয়ে যাওয়া হয়, যা অর্থোডক্সি শেখায় না। ইউনিভারসালিজম বলতে ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষকেই (নরক থেকে) উদ্ধার করার ধারণাকে বোঝায়। বিভিন্ন বিশিষ্ট অর্থোডক্স ধর্মতাত্ত্বিক যেমন অলিভার ক্লেমেন্ট, মেট্রোপলিটান ক্যালিস্টোস ওয়ার এবং বিশপ হিলারিটন আলফেয়েভও এটা শেখান।[৪৮] যদিও এপোকাটাস্টাসিস অর্থোডক্স চার্চের কোন ডগমা বা নীতি নয়, এটা বরং একটি থিওলগুমেনা, তবুও এটা অর্থোডক্স চার্চগুলোর দেয়া শিক্ষাগুলোর চেয়ে কম গুরুত্বহীন নয়। মেট্রোপলিটান ক্যালিস্টস অয়ার বলেছেন, "সকলে অবশ্যই পরিত্রাণ পাবেন এটা বলা ধর্মবিরোধী, কারণ এটা স্বাধীন ইচ্ছা বা ফ্রি উইলের বিরুদ্ধে, কিন্তু সকলেই পরিত্রাণ পাবেন এই আশা করাটি বৈধ,"[৪৯] ঠিক যেমন চিরকালের জন্য শাস্তি পাওয়াও স্বাধীন ইচ্ছার বিরুদ্ধে।

দ্য চার্চ অব জেসাস ক্রাইস্ট এন্ড লেটার ডে সেইন্টস[সম্পাদনা]

দ্য চার্চ অব লেটার ডে সেইন্টস এর জোসেফ এফ. স্মিথ পরকাল সম্পর্কিত একটি বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। এখনে দেখা গেছে যে, স্বর্গের পুন্যাত্মা ব্যক্তিগণ অন্ধকার স্পিরিট প্রিজন বা নরকে বসবাসকারী ব্যক্তিদের প্রতি ব্যাপক ধর্মপ্রচারে লিপ্ত। পরকাল এখানে দুই ভাগে বিভক্ত: স্পিরিট প্রিজন এবং স্বর্গ। একত্রে তারা স্পিরিট ওয়ার্ল্ড বা আত্মার জগৎ নামে পরিচিত (সেই সাথে আব্রাহামের বক্ষ নামেও পরিচিত; দেখুন ল্যুক ১৬:১৯-২৫)। তারা বিশ্বাস করে যে, যীশু স্পিরিট প্রিজন বা আত্মার কারাগারে ভ্রমণ করেছিলেন (১ পিটার ৩:১৮-২০) এবং যারা তাদের কৃতকার্যের জন্য অনুতাপ করেছিলেন তাদের জন্য এই কারাগারের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। " ... যিশুর অমর আত্মা তার মৃত্যুর পর কি করেছিলেন তা কেবল মাত্র লেটার ডে সেইন্টস বা পরবর্তী দিনের সাধুরাই জানেন ... " (এডলার স্পেনসার জে. কন্ডাই, লিয়াহোনা, - চার্চ ম্যাগাজিন - জলাই, ২০০৩)" ... বিদ্বেষপূর্ণ ব্যক্তির কাছে তিনি যান নি, এবং অনুতাপহীন ব্যক্তিদের জন্য তার গলার স্বর ওঠে নি। ... কিন্তু যারা সৎ ছিলেন তাদের জন্য তিনি তার শক্তি সঞ্চয় করেন এবং তার দূতদেরকে নিয়োগ করেন... " (ডকট্রাইন এন্ড কোভেনান্টস ১৩৮:২০, ৩০-৩২)। "যিশু নরকের দরজা খুলে দেন যাতে মৃতদের মধ্যে মিশনারি কার্য সম্পাদন করা যায়... " (এইচ. ডনি পিটারসন, "I Have a Question", Ensign, এপ্রিল, ১৯৮৬, ৩৬-৩৮)। এটা কিছু প্রধান খ্রিষ্টীয় ধারার "হ্যারোইং অব হেল" নীতির সাথে মিলে যায়, যেখানে যিশু তার ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু এবং পুনরুত্থিত হবার মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে লিম্বো বা শেওলে গিয়ে সেখানে বসবাসরত সৎ ব্যক্তিদেরকে উদ্ধার করবেন। লেটার ডে সেইন্ট মত অনুসারে স্পিরিট প্রিজন এবং প্যারাডাইস বা স্বর্গ উভয়ই অস্থায়ী। পুনরুত্থানের পর আত্মারা স্থায়ীভাবে তিনটি মাত্রার স্বর্গীয় সম্মান লাভ করে যা নির্ধারিত হয় তাদের কার্যের ভিত্তিতে। এই তিনটি মাত্রার স্বর্গীয় সম্মান হল সেলেস্টিয়াল, টেরেস্ট্রিয়াল এবং টেলেস্টিয়াল (১ কোরিন্থিয়ানস ১৫:৪৪-৪২; ডক্ট্রাইন এন্ড কোভেনান্টস,সেকশন ৭৬) যারা ঈশ্বরকে দেখে বা জেনেও স্বীকার করবে না, তাদেরকে চিরকালের জন্য শয়তানের রাজ্যে প্রেরণ করা হবে, যাকে বাইরের অন্ধকার বলা হয়, যেখানে তারা চিরকালের জন্য দুঃখ ও কষ্টে বেঁচে থাকবে।[৫০]

লেটার[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] ডে সেইন্টস চার্চ অনুসারে সালভেশন বা উদ্ধারের নকশা

সেলেস্টিয়াল রাজ্যকে একটি স্থান বলে মনে করা হয় যেখানে ব্যক্তি তার পরিবার নিয়ে বাস করতে পারবেন। কারও উন্নয়ন একবার সেলেস্টিয়াল রাজ্যে গেলেই শেষ হয় না, বরং এই উন্নয়নের সময় অনন্তকাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ট্রু টু দ্য ফেইথ (লেটার ডে সেইন্টস এর বিশ্বাসগুলোর উপর লেখা একটা হ্যান্ডবুক) অনুযায়ী, "সেলেস্টিয়াল কিংডম কেবল তাদের জন্যই তৈরি হয়ে আছে যারা যিশুকে প্রামাণ্য হিসেবে মানবে এবং যারা রক্ত ঝড়িয়ে সঠিক প্রায়শ্চিত্তের মধ্য দিয়ে যাবে" (ডকট্রাইন এন্ড কোভেনান্টস ৭৬:৫১,৬৯)। এই উপহার অর্জনের জন্য একজনকে অবশ্যই উদ্ধারের রায় পেতে হবে, নিয়মগুলো মানতে হবে এবং পাপের জন্য অনুতাপ করতে হবে।"[৫১]

জিহোভাস উইটনেসেস[সম্পাদনা]

জিহোভাস উটনেসেস প্রায়ই "পরকাল" শব্দটিকে মৃতদের আশা বোঝাতে ব্যবহার করে[৫২], কিন্তু তারা অমর আত্মায় বিশ্বাস না করার যুক্তি হিসেবে একলেসিয়াসতেস ৯:৫ ব্যবহার করেন।[৫৩] ঈশ্বর কর্তৃক বিচারকৃত হওয়া কোন পাপী ব্যক্তিকেই পরকালের আশা দেয়া হয় না। যাই হোক, তারা বিশ্বাস করেন যে, আরমাগেডনের পর সৎ ও অসৎ উভয়েরই মৃতদেহের পুনরুত্থান ঘটবে, কিন্তু পাপী বা বিদ্বেষপূর্ণ ব্যক্তির পুনরুত্থান ঘটবে না। আরমাগেডনে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি এবং পুনরুত্থিত ব্যক্তিগণ ধীরে ধীরে স্বর্গপ্রাপ্ত হবেন।[৫৪] আরমাগেডনের পর যেসব পাপী অনুতপ্ত হবে না তাদেরকে চিরমৃত্যুর (অস্তিত্বহীনতা) শাস্তি দেয়া হবে।

সেভেন্থ ডে অ্যাডভেন্টিস্টস[সম্পাদনা]

সেভেন্থ ডে অ্যাডভেন্টিস্টস চার্চ শেখায়, পৃথিবীতে জীবিত থাকা অবস্থায় যে মৃত্যু হয় তা হল প্রথম মৃত্যু এবং এই মৃত্যু বিভিন্ন পাপী অবস্থার কারণে ঘটে, যেমন অসুস্থতা, বার্ধক্য, দুর্ঘটনা ইত্যাদি। এই মৃত্যু কেবলই আত্মার নিদ্রা। এডভেন্টিস্টগণ বিশ্বাস করেন যে, ব্যক্তির শরীর + ঈশ্বরের শ্বাসপ্রশ্বাস = একটি জীবন্ত আত্মা। জিওভাস উইটনেসেস এর মত এডভেন্টিস্টগণও বাইবেল থেকে নেয়া কিছু মূল অংশ ব্যবহার করেন যেমন, "জীবিতদের বেলায় জেনে রেখো তারা মরবে: কিন্তু মৃতরা কিছুই জানবে না, তারা আর কোন পুরস্কারও পাবে না; তাদের স্মৃতি বিস্মৃত হবে" (একলেসিয়াসতেস ৯:৫ কেজেভি)। এডভেন্টস্টগণ এও বলেন যে পাপের পরিণাম হল মৃত্যু এবং কেবল ঈশ্বরই অমর। এডভেন্টস্টগণ এও বিশ্বাস করেন যে, ঈশ্বর তাদেরকেই শুধু সেইসব উদ্ধারকৃতদেরকেই অমরত্বের অনুমোদন দেবেন যারা যিশুর দ্বিতীয় আগমনে পুনরুত্থিত হবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত সকল মৃতই ঘুমন্ত অবস্থায় থাকবে। যখন যিশু দ্বিতীয়বারের মত আসবেন, সৎ ব্যক্তিগণ অক্ষত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন এবং তাদেরকে ঈশ্বরের সাথে সাক্ষাতের জন্য মেঘে নিয়ে যাওয়া হবে। সৎ ব্যক্তিগণ এক হাজার বছর যাবৎ স্বর্গে জীবন যাপন করবেন, যেখানে তারা উদ্ধার হয় নি এমন ব্যক্তি এবং পতিত দেবদূতদের বিচারকার্য ঈশ্বরের সাথে বসে দেখবেন। যখন উদ্ধারকৃতগণ স্বর্গে থাকবেন তখন পৃথিবীতে মানুষ ও পশুপাখি বসবাস করবে না। কেবল পতিত দেবদূতরাই সেখানে জীবিত বসবাস করবে। দ্বিতীয় পুনরুত্থান হবে অসৎ ব্যক্তিদের যখন যিশু নতুন জেরুজালেমকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে এনে স্থাপন করবে। যিশু সকল অসৎ ব্যক্তিকে জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন। শয়তান ও তার দেবদূতগণ অসৎ ব্যক্তিদেরকে নতুন জেরুজালেম শহরকে ঘিরে ফেলতে প্ররোচিত করবে। কিন্তু স্বর্গ থেকে নরকের আগুন ও এর জ্বালানিকে পৃথিবীতে ফেলা হবে। এতে জগৎ চিরকালের জন্য পাপ হতে মুক্ত হয়ে যাবে। একে বলা হয় দ্বিতীয় মৃত্যু। নতুন পৃথিবীতে ঈশ্বর উদ্ধারকৃতদের জন্য একটি চিরস্থায়ী আবাস এবং চিরকাল বাঁচার জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ দান করবেন যেখানে ইডেন পুনস্থাপিত হবে। এর ফলে মহাম বাদানুবাদের নিষ্পত্তি ঘটবে এবং আর পাপ থাকবে না। ঈশ্বর তখন যথার্থ ঐকতানে চিরকাল জুড়ে শাসন করবেন। (রোমানস ৬:২৩; ১ টিমোথি ৬:১৫,১৬; একলেসিয়াসতেস ৯:৫,৬; সালম ১৪৬:৩,৪; জন ১১:১১-১৪; কলোসিয়ানস ৩:৪; ১ কোরিন্থিয়ানস ১৫:৫১-৫৪; ১ থেসালোনিয়ানস ৪:১৩-১৭; জন ৫:২৮,২৯; রেভেলেশন ২০:১-১০; রেভেলেশন ২০; জেরেমিয়াহ ৪:২৩-২৬;রেভেলেশন ২১:১-৫; মালাচি ৪:১; এজেকিয়েল ২৮:১৮, ১৯; ২ পিটার ৩:১৩; ইসাইয়া ৩৫; ৬৫:১৭-২৫; ম্যাথিউ ৫:৫; রেভেলশন ২১:১-৭; ২২:১-৫; ১১:১৫)।[৫৫][৫৬]

ইসলাম[সম্পাদনা]

কুরআনে পরকাল সংক্রান্ত ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। স্বর্গের আরব্য শব্দটি হল জান্নাত এবং নরকের আরব্য শব্দটি হল জাহান্নাম । সমাধিতে তাদের স্বাচ্ছন্দ্যের মাত্রা সম্পূর্ণরূপে তাদের ঈমানের বা এক সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা এবং সর্বোচ্চ সত্তা ঈশ্বর বা আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাসের মাত্রার উপর নির্ভর করে। সঠিক, দৃঢ় এবং সুস্থ ইমান অর্জনের জন্য একজনকে অবশ্যই ধর্ম নির্দেশিত কার্যাবলি পালন করতে হবে, অন্যথা তার ঈমান অবশেষে শ্বাসরুদ্ধ ও সংকুচিত হবে, এবং তিনি যথেষ্ট দীর্ঘ সময় ধরে ইসলাম পালন না করলে সেই ঈমান নির্জীব হয়ে যাবে। তাই ইসলাম পালন করা পরকালে পুরষ্কৃত হবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। কেউ আল্লাহ্‌র নাম জপার জন্য তসবীহ্‌ গ্রহণ করতে পারেন।

ইসলাম শেখায় মানবজাতির সম্পূর্ণ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হল সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করা। এখানে বলা হয়, পৃথিবীতে মানুষ যে জীবন যাপন করে সেটা তাদের জন্য একটা পরীক্ষা এবং মৃত্যুর পর তাদেরকে তাদের ভাল ও মন্দ কাজের উপর ভিত্তি করে শেষ বিচারের পর জান্নাত বা জাহান্নাম দেয়া হয়। কিন্তু জাহান্নাম চিরস্থায়ী কিনা এব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে।[৫৭][৫৮][৫৯] দেবসূত ইসরাফিলের বাঁশি বাজানোর পর শেষ বিচার শুরু হয়।

জান্নাত এবং জাহান্নাম দুটোরই বিভিন্ন স্তর রয়েছে। জান্নাতে আটটি দরজা ও আটটি স্তর রয়েছে। সর্বোচ্চ স্তরটি সবচেয়ে ভাল এবং সেখানকার মানুষেরা সবচেয়ে সুখী থাকবেন। জাহান্নামে সাতটি গভীর স্তর রয়েছে। স্তর যত নিচে যাবে তা ততই খারাপ। ইসলাম অনুসারে, মৃত্যুর পর আত্মার চিরস্থায়ী অস্তিত্ব এবং সেই সাথে পরীবর্তিত শারীরিক অবস্থাও থাকবে।

বিংশ শতকে ইসলামে পরকাল সম্পর্কিত আলোচনায় যেসব বিষয় সবচেয়ে গুরুত্ব পায় তা হল মানুষের কার্যাদি এবং স্বর্জ্ঞীয় বিচারের মধ্যবর্তী সম্পর্ক, নৈতিক সততার প্রয়োজনীয়তা এবং ইহকালে মানুষের কার্যের চিরস্থায়ী ফলাফল।[৬০]

কুরআনের একটি কেন্দ্রীয় নীতি হল শেষ দিন, যখন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এবং আল্লাহ্‌ বিচারের জন্য সকল মানুষ ও জ্বিনকে মৃত অবস্থা থেকে জাগ্রত করবেন। শেষ দিনকে দাঁড়াবার দিন, বিচ্ছিন্নতার দিন, গণনার দিন, জেগে ওঠার দিন, বিচারের দিন ইত্যাদি বলা হয়।

বিচারের দিনের আগ পর্যন্ত, মৃত আত্মাগণ সমাধিতে পুনরুত্থানের জন্য অপেক্ষা করেন। কিন্তু তারা তৎক্ষণাৎ তাদের ভবিষ্যতে আসতে চলা ভাগ্যের স্বাদ পেয়ে যান। যাদের জন্য নরক নির্ধারিত তারা সমাধিতেই কষ্ট ভোগ করেন, আর যাদের জন্য স্বর্গ নির্ধারিত তারা সমাধিতেই শান্তির লাভ করেন।

শেষ দিনে যে পুনরুত্থান ঘটবে তা শারীরিক এবং ঈশ্বর সেদিন মৃতের শরীর পুনরায় সৃষ্টি করবেন (১৭:১০০ - "তারা কি দেখতে পায় না যে ঈশ্বর যিনি স্বর্গসমূহ এবং পৃথিবীকে তৈরি করেছেন তিনি তাদের একই রকম দেহও তৈরি করতে সক্ষম হবেন"?)। শেষ দিনে পুনরুত্থিত ব্যক্তিগণ তাদের কার্যাদির ভিত্তিতে আল্লাহ্‌কর্তৃক বিচারকৃত হবেন। ভাল ও মন্দ কাজের ভারসাম্যের ভিত্তিতে জান্নাত বা জাহান্নামে তাদের স্থান নির্ধারিত হবে। ভাল কাজের জন্য জান্নাতে ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিগণ চিরকালের জন্য আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক প্রশান্তি লাভ করবেন, মন্দ কাজের জন্য পাপী ব্যক্তিগণ আধ্যাত্মিক ও শারীরিক কষ্ট ভোগ করবেন।

জাহান্নামে শাস্তির চিরস্থায়িত্ব নিয়ে বিতর্ক: কাদেরকে নরকে পাঠানো হবে এবং কারা সেখানে চিরকালের জন্য থাকবে তা নিয়ে বিতর্ক আছে।[৫৭][৫৮]

কুরআনের অন্তত দুটো আয়াতে (৬:১২৮[৬১] এবং ১১:১০৭[৬২]) জোড় দিয়ে বলা হয়েছে যে, নরকবাস ভয়ঙ্কর এবং চিরস্থায়ী "যদি না ঈশ্বর তা চান"।

religiousfacts.com এ বলা হয়েছে,

"সবশেষে ঈশ্বর নরক থেকে সেই সব বিশ্বাসীকে সরিয়ে নেবেন যাদের পাপকে ক্ষমা করা হয় নি অথাবা জীবদ্দশায় ভাল কাজের মাধ্যমে যাদের প্রায়শ্চিত্ত হয় নি, এবং তারাও স্বর্গে গমন করবেন। বাকিরা চিরকালের জন্য নরকে থাকবেন।"[৫৭][৬৩]

কিছু হাদিসে সকল নরকবাসীকেই নরক থেকে মুক্ত হবার কথা লেখা আছে। মুহাম্মাদ বলেছিলেন, "আল্লাহ্‌ সকল মানুষকেই আগুন থেকে তুলে আনবেন এবং তাদেরকে স্বর্গে স্থান দেবেন।"[Note ১]এছাড়াও মুহাম্মাদ এও বলেছেন, "অবশ্যইনরকে একটা সময় আসবে যখন এর দরজা বাতাসের দমকায় উড়ে যাবে, সেখানে তখন আর কেউ থাকবে না, আর এটা হবে তাদের নরকে অনেক বছর থাকার পর।"[৬৫]

একটি হাদিসে বলা হয়েছে, শেষ বিচারের দিনে অথবা তার পরে মুহাম্মাদ ও আল্লাহ্‌ পাপীদেরকে জাহান্নাম থেকে সরিয়ে নেয়া বিষয়ে মধ্যস্থতা করবেন। কিন্তু এই মধ্যস্থতায় কেবল সেই সব পাপীই অন্তর্ভুক্ত হবেন যারা আন্তরিকভাবে কালিমা শাহদার স্বীকার করেছেন।[৬৬] এরপর "যাদের হৃদয়ে তিল পরিমাণেও ধার্মিকতা আছে তাদেরকে স্বর্গে স্থান দেয়া হবে"। কিন্তু এই মধ্যস্থতায় যেসকল ব্যক্তি শিরক (মুর্তিপূজা বা বহুঈশ্বরবাদ) পালন করেছেন তারা থাকবেন না।[৬৭] ইসলামি স্কলার কাজি থানা উল্লাহ তার হানাফি ফিকহ এর রচনায় লিখেছেন, "অবিশ্বাসীগণ জাহান্নামে অনন্তকাল ব্যাপী কষ্ট ভোগ করবেন, যেখানে পাপী মুসলিমগণ দীর্ঘ অথবা স্বল্পকাল পর ছাড়া পেয়ে স্বর্গে গমন করবেন, যা সঠিক"।[৬৮]

লেখক ফিল পারশাল আরেকটি হাদিস দেখান[৬৯][৭০][৭১][৭২] যেখানে একইভাবে বিশ্বাসী পাপীদেরকে নরক থেকে উদ্ধার করে স্বররগে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে, যাকে তিনি ক্যাথলিক ধর্মমতের পারগেটরির সাথে তুলনা করেছেন।[৭৩]

কিছু টীকাকার দাবী করেছেন আয়াত ১৯:৬৭-৭২[৭৪] দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে ঈশ্বর সকল বিশ্বাসীকে রক্ষা করবেন। অন্যেরা মনে করেন এই ধারণাটি আয়াত ২১:১০১[৭৫] এর বিরুদ্ধে যায় যেখানে বলা হয়েছে, "যারা স্বর্গ অর্জন করেছেন তাদেরকে "এটা (নরক) থেকে অনেক দূরে রাখা হয়"। অনেকে বলেন, কুরআনে বেশ কিছু আয়াতে জাহান্নামবাসীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, কিন্তু কোনটাতেই ক্ষমাপ্রাপ্ত স্বর্গবাসীদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলা হয় নি।

 আহ্‌মদীয়া[সম্পাদনা]

আহমাদি মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে পরকাল কোন বস্তুগত বিষয় নয়, বরং এর প্রকৃতি আধ্যাত্মিক। ইসলামের আহ্‌মদীয়া ধারার প্রবর্তক মিরজা গুলাম আহমেদের মতে, আত্মা আরেকটি বিরল অস্তিত্বের জন্ম দেবে। এই অস্তিত্বটি এমনভাবে পৃথিবীর জীবনের মত হবে যে, আত্মা পৃথিবীতে মানব অস্তিত্বের সাথে যেরকম সম্পর্ক রাখ, এই অস্তিত্বও আত্মার সাথে ঠিক সেরকম সম্পর্ক রাখবে। পৃথিবীতে যদি একজন ব্যক্তি সৎ জীবন যাপন করেন এবং নিজেকে ঈশ্বরর ইচ্ছায় স্থাপন করেন, তাহলে তার স্বাদ এমন হয়ে যায় যাতে তিনি পার্থিব লোভ লালসার বিরুদ্ধে গিয়ে আধ্যাত্মিক সুখ লাভ করতে পারেন। এর মাদ্যমে একটি "ভ্রূণীয় আত্মা" গঠিত হতে থাকে। তখন ব্যক্তির উপভোগের স্বাদ বদলে যায়। যেমন, তখন তিনি অন্যের সুখের জন্য নিজ স্বার্থত্যাগ করায় উপভোগ করেন। আহ্‌মদীয়া বিশ্বাস অনুযায়ী এই অবস্থায় ব্যক্তি তার হৃদয়ে পরিতৃপ্তি এবং শান্তি খুঁজে পান। এসময় আত্মার ভেতরের আত্মা তার আকৃতি লাভ করতে থাকে।[৭৬]

সুফি[সম্পাদনা]

সুফি স্কলার ইবনে আরাবি বারজাখকে মধ্যবর্তী জগৎ বা "ইসথমাস" বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এটা দেহের জগৎ এবং আত্মার জগতের মধ্যবর্তী অবস্থা, এবং এই দুই জগতের মধ্যকার যোগাযোগের উপায়। এটা ছাড়া, এই দুই জগতের মধ্যে কোন সংযোগ থাকবে না এবং দুটো জগতের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে। তিনি এই মধ্যবর্তী জগৎকে আত্মার জগতের মতই সরল এবং আলোকিত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু দেহের জগতের মতই এই জগত বিভিন্ন আকার লাভ করতে পারে। সাধারণ অর্থে, বারজাখ অর্থ হল এমন কিছু যা দুতো বস্তুকে আলাদা করে দেয়। এটাকে স্বপ্নের জগত বলা হয় যেখানে স্বপ্নদ্রষ্ঠা একই সাথে জীবন ও মৃত্যুতে অবস্থান করে।[৭৭]

বাহাই ধর্ম[সম্পাদনা]

বাহাই বিশ্বাসের শিক্ষা বলে যে, পরকালের প্রকৃতি জীবিতদের বোঝার ঊর্ধ্বে, ঠিক যেমন একটি এখনও জন্মগ্রহণ করে নি এমন একটি ভ্রূণ মাতৃগর্ভের বাইরের জগৎ সম্পর্কে বুঝতে পারে না। বাহাই বিশ্বাস অনুসারে আত্মা অমর এবং মৃত্যুর পর ঈশ্বরের উপস্থিতি অর্জন করার আগ পর্যন্ত এটি উন্নয়ন করা শুরু করবে। বাহাই বিশ্বাস অনুসারে, পরকালে আত্মারা তাদের এককত্ব বা সত্তা এবং বিবেক ধরে রাখে এবং আধ্যাত্মিকভাবে তারা অন্যান্য আত্মাদেরকে চিনতে এবং কথা বলতে পারবে যাদের সাথে তাদের অনেক ঘনিষ্ট ও গভীর বন্ধুত্ব আছে, যেমন স্বামী ও স্ত্রীর আত্মা।[৭৮]

বাহাই ধর্মগ্রন্থগুলোতে এও বলা হয়েছে যে, আত্মা এবং পরকালের মধ্যে পার্থক্য আছে, এবং আত্মারা তাদের নিজ কার্যের মূল্য এবং ফলাফল বুঝতে পারবে। এখানে ব্যাখ্যা করা হয় যে, যে সকল আত্মা ঈশ্বরের পথে চলেছে তারা আনন্দ উপভোগ করবে, আর যারা ভুল পথে চলেছিল তারা বুঝতে পারবে যে তারা তাদেরকে দেয়া সুযোগ হারিয়েছে। এছাড়াও বাহাই মত অনুসারে আত্মারা সেইসব আত্মাকে চিনতে বা বুঝতে পারবে যারা তাদের সাথে একই উচ্চতায় পৌঁছেছে,কিন্তু যেসব আত্মা তাদের চেয়েও উচ্চ অবস্থানে অর্জন করেছে তাদেরকে তারা চিনতে বা বুঝতে পারবে না।[৭৮]

ভারতীয় ধর্ম[সম্পাদনা]

হিন্দু ধর্ম[সম্পাদনা]

উপনিষদে জন্মান্তরবাদের কথা বলা হয়েছে। হিন্দু ধর্মগ্রন্থসমূহের মধ্যে অন্যতম ভগবদ গীতায়, পরকাল সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এখানে কৃষ্ণ বলেছেন যে, মানুষ যেমন তার পুরনো কাপড় ছেড়ে নতুন কাপড় পরিধান করেন, আত্মাও তেমনি তার পুরনো দেহ পরিত্যাগ করে নতুন দেহ গ্রহণ করে। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, দেহ একটি খোলসের মত, এর ভিতরের আত্মা অপরিবর্তনীয় এবং অবিনশ্বর, এবং এই আত্মা জন্ম মৃত্যুর চক্রে ভিন্ন দেহ ধারণ করে থাকে। এই চক্রের সমাপ্তিকে মুক্তি বা মোক্ষ বলা হয় যেখানে এই আত্মা ঈশ্বরের সাথে মিশে যায়।

গরুড় পুরাণেও মৃত্যুর পর ব্যক্তির সাথে কি ঘটে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে বলা হয়, যখন ব্যক্তির মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে তখন মৃত্যুর দেবতা যম তার যমদূতদেরকে ব্যক্তির দেহ থেকে তার আত্মাকে নিয়ে আসতে পাঠান। উক্ত ব্যক্তির সকল ভাল ও মন্দ কাজের হিসাব যমের সহকর্মী চিত্রগুপ্ত লিখে রাখেন। গরুড় পুরাণ মতে আত্মা দেহ ত্যাগ করার পর দক্ষিণ দিকে একটি দীর্ঘ এবং অন্ধকার সুড়ঙ্গপথ পাড়ি দেয়। এজন্য মৃৎ ব্যক্তির দেহের পাশে একটি তেলের বাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়, যাতে সুড়ঙ্গপথ আলোকিত হয় এবং মৃতব্যক্তির আত্মা স্বাচ্ছন্দে যেতে পারে।

পূর্বজন্মের কর্মের উপর নির্ভর করে পরের জন্মে আত্মা কোন দেহ নিয়ে জন্মগ্রহণ করবে। পূর্বজন্মে যদি কেউ পাপ কাজ করেন তাহলে পরের জন্মে তিনি পশু বা অন্য কোন নিম্নশ্রেণী জীবদেহে পুনর্জন্ম লাভ করবেন, যদি তিনি ভাল কাজ করেন তাহলে পরের জন্মে তিনি একটি ভাল পরিবারে মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করবেন এবং সুখী জীবন পাবেন। এই দুই জন্মের মাঝে ব্যক্তি তার অসৎ কর্মের জন্য নরকে শাস্তি ভোগ করেন এবং সৎ কাজের জন্য স্বর্গে প্রশান্তি উপভোগ করেন। যখন ব্যক্তির শাস্তি বা পুরস্কার ভোগের সময়কাল শেষ হয়ে যায় তখন তাকে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠানো হয় যাকে "মৃত্যুলোক"ও বলা হয়। আর এভাবে বারবার জন্মমৃত্যুর মধ্য দিয়ে ব্যক্তি জীবনের একটি চক্রে ঘুরপাক খেতে থাকে যা থেকে কেবল মোক্ষের মাধ্যমেই তার মুক্তি ঘটতে পারে।

হিন্দুদের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল মোক্ষলাভ করা যা বেদ অনুসারে জ্ঞানযোগ এবং ভগবতগীতা অনুযায়ী কর্মযোগ ও ভক্তিযোগের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব। জ্ঞানযোগ বলতে উপনিষদে এবং যোগসূত্রে উল্লিখিত সন্ন্যাসজীবনে গিয়ে ধ্যানের মাধ্যমে সমাধি অর্জনকে বোঝায়, জ্ঞানযোগ অনুসারে জগতের সবকিছুকে মায়া বা বিভ্রম হিসেবে চিন্তা করা হয় এবং এখানে ব্রহ্ম বা ঈশ্বরকেই একমাত্র সত্য ভাবা হয়। কর্মযোগ অনুসারে কর্মফলের আশা ত্যাগ করা এবং স্বত্তাভিমান ত্যাগ অর্থাৎ নিজেকে কোন কাজের কর্তা না ভেবে কর্ম করে যাওয়াকে কর্মযোগ বলা হয়। ভক্তিযোগ অর্থ হল নিজেকে ঈশ্বরের উপর সমর্পন করা এবং সবসময় ঈশ্বরের কথা চিন্তা করা। এই তিনটি পথের দ্বারা মোক্ষলাভ সম্ভব হয়, অর্থাৎ ঈশ্বরের সাথে আত্মার মিলন সম্ভব হয়। উল্লেখ্য বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ নামে একটি বেদান্ত দর্শন অনুসারে ভক্তিযোগ ছাড়া কেবল জ্ঞানযোগ এবং কর্মযোগের মাধ্যমেই ঈশ্বরের সাথে মিলন সম্ভব নয়। হিন্দুধর্মের কোথাও এই মোক্ষকে চরম আনন্দের অবস্থা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, কোথাও দুঃখ থেকে মুক্তির অবস্থা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, আবার কোথাও আনন্দ, দুঃখ থেকে শুরু করে সকল প্রকার আবেগ মুক্ত একটি অবস্থা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ভগবদ গীতা অনুসারে আত্মা কখনও মরে না, শুধু মাত্র শরীরের মৃত্যু হয় যা পাঁচটি উপাদান - ক্ষিতি (মাটি), অপ (পানি), তেজ (আগুন), মরুৎ (বায়ু), ব্যোম (আকাশ) এর সমষ্টি। এই পাঁচটি উপাদানকে পঞ্চভূত বলা হয়। এই পাঁচটি উপাদানের কোনটাই আত্মার কোন ক্ষতি বা আত্মাকে প্রভাবিত করতে পারে না। গরুড় পুরাণে বিভিন্ন ধরনের স্বর্গ ও নরকের বর্ণনা দেয়া আছে। পৃথিবীতে কৃতকাযের উপর ভিত্তি করে কোন স্বর্গ বা নরক প্রাপ্তি হবে তা ঠিক হয়।

হিন্দুরা "কর্ম"তে বিশ্বাস করেন। কর্ম হল ব্যক্তির মোট ভাল ও মন্দ কাজের সমষ্টি। সৎকর্ম দ্বারা ভাল কাজ ও বিকর্ম দ্বারা মন্দ কাজ বোঝায়। হিন্দুধর্ম অনুসারে কর্মের মূল ধারণাটি হল "যেমন কর্ম, তেমন ফল"। সুতরাং, ব্যক্তি যদি একটি সৎ জীবন যাপন করেন তাহলে তিনি পরকালে পুরষ্কৃত হবেন। যদি অসৎ জীবন যাপন করেন তবে পরজন্মে সেই অসৎকর্ম প্রতিফলিত হবে। সৎকর্মে পুরস্কার এবং বিকর্মে খারাপ ফল জোটে, এবং এখানে কোন ধরনের বিচার নেই। ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় তার কর্ম এবং এমনকি চিন্তার দ্বারাও কর্ম সংগ্রহ করেন। ভগবদ গীতা অনুসারে, অর্জুন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে তার আত্মীয় স্বজনকে হত্যা করতে দ্বিধা বোধ করছিলেন। তখন কৃষ্ণরূপে ঈশ্বর অর্জুনকে বলেন, "তুমি কি বিশ্বাস করো যে তুমি এই কাজের কর্তা? না। তুমি আমার হাতের নিছক একটি যন্ত্র। তুমি কি মনে করো যে তোমার সামনের এই মানুষগুলো জীবিত? হে অর্জুন, এরা ইতিমধ্যেই মৃৎ। ক্ষত্রিয় হিসেবে তোমার জনগণ এবং ভূমিকে রক্ষা করা তোমার দায়িত্ব। যদি তুই তোমার এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নাও, তাহলে তুমি ধর্মের নীতিকে অনুসরণ করবে না।"

বৌদ্ধধর্ম[সম্পাদনা]

বৌদ্ধরা মনে করে যে মৃত্যুর পরে তাদের পুনর্জন্ম হবে তাদের কর্মফল অনুযায়ী[৭৯] পুনর্জন্মের ধরন কী হবে তা ব্যক্তির কৃতকার্যের (কম্ম বা কর্ম) উপর নির্ভর করবে। যেমন ব্যক্তি যদি দেহ, বাক্য ও মনের দ্বারা লোভ, ঘৃণা ও বিভ্রমের কারণে ক্ষতিকর কাজ করে, তাহলে তারা নিম্ন জগতে বা নরক জগতে থাকবেন যার অর্থ হল একটি পশু বা ভূত হয়ে জন্মানো। অন্যদিকে যদি ব্যক্তি উদারতা, ভালবাসা, দয়া, সহানুভূতি ও জ্ঞানের দ্বারা ভাল কাজ করেন তাহলে তিনি সুখের জগতে বা স্বর্গীয় জগতে জন্মাবেন যার অর্থ হল মানুষ হয়ে জন্মানো।

পুনর্জন্মের পদ্ধতি পূর্ব থেকেই ঠিক করা নয়। এটা বিভিন্ন মাত্রার কম্মের উপর নির্ভর করে। ব্যক্তি কোন অবস্থায় পুনর্জন্ম লাভ করবে তা ঠিক হবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হল শেষ চিন্তার সময়। এই সময়ের অনুযায়ী ভারী কম্ম ফলবে (heavy kamma), সেটা না হলে মৃত্যু নিকট কম্ম (near death kamma) কাজ করবে, যদি তা না হয় তাহলে অভ্যাসগত কম্ম (habitual kamma) কাজ করবে, আর শেষে তাও যদি না হয় তাহলে অবশিষ্ট কম্ম (residual kamma) কাজ করবে যা এর পূর্বের কৃতকার্যের উপর নির্ভর করে। থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম অনুসারে একজন মানুষ পুনর্জন্ম লাভ করতে পারে এমন ৩১টি অস্তিত্বের জগতের কথা বলা হয়েছে।

মহাযান বিশ্বাসের পিওর ল্যান্ড বৌদ্ধধর্ম এই ৩১টি জগৎ ছাড়াও আরেকটি বিশেষ স্থানের কথায় বিশ্বাস করে যাকে পিওর ল্যান্ড বা পবিত্র ভূমি বলা হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, প্রত্যেক বুদ্ধেরই তাদের নিজস্ব পবিত্র ভূমি থাকে যা তাদের যোগ্যতা বা সদগুণ দিয়ে সচেতন ব্যক্তির হিতার্থে তৈরি হয়েছে। সচেতন ব্যক্তি সমনোযোগে বুদ্ধদেরকে স্মরণ করলে এই পবিত্র ভূমিতে পুনর্জন্ম লাভ করেন এবং একজন বুদ্ধ হবার জন্য প্রশিক্ষিত হন। তাই পিওর ল্যান্ড বৌদ্ধধর্মের প্রধান চর্চা হল বুদ্ধের নাম ভজন করা।

তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মের টিবেটান বুক অব ডেড -এ মৃত্যু এবং পুনর্জন্মের মধ্যে একটি মধ্যবর্তী অবস্থার কথা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মৃতব্যক্তিগণ জ্ঞানের উজ্জ্বল আলো খুঁজে পাবেন যা ঊর্ধ্বে যাবার একটি সোজা রাস্তা দেখাবে এবং এর সাহায্যে ব্যক্তি পুনর্জন্মের চক্র ত্যাগ করতে সক্ষম হবেন। অনেক কারণেই মৃত ব্যক্তি সেই আলো অনুসরণ করে না, অনেকে জীবদ্দশায় কখনও এই মধ্যবর্তী অবস্থা ও আলোর ব্যাপারে শোনেও নি, অনেকে পশুদের মত কেবল মৌলিক প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে, আবার অনেকের ভয়ও থাকতে পারে যা জীবদ্দশায় থাকা খারাপ কাজ অথবা অহংকারের কারণে তাদের মাঝে সৃষ্টি হতে পারে। এই মধ্যবর্তী অবস্থায় সচেতনতা খুবই নমনীয়, তাই ধার্মিক হওয়া, ইতিবাচক মনোভাব ধারণ করা এবং নেতিবাচক ধারণাগুলো এড়িয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে অবচেতন থেকে আসা ধারণাগুলো প্রচণ্ড মেজাজ এবং ভীতিকর দৃশ্যের সৃষ্টি করতে পারে। এই অবস্থায় মৃতকে বুঝতে হবে যে, এই প্রদর্শনগুলো কেবলই মনের ভেতরের চিন্তার প্রতিফলন। কেউই তাদেরকে আঘাত করতে বা ক্ষতি করতে পারবে না, কারণ তাদের কোন বস্তুগত শরীর নেই। মৃত ব্যক্তি বিভিন্ন বুদ্ধের কাছ থেকে সাহায্য লাভ করে যারা তাদেরকে উজ্জ্বল আলোর পথ দেখান। যারা শেষ পর্যন্ত এই পথ অনুসরণ করেন না, তারা উন্নততর পুনর্জন্ম লাভের জন্য সংকেত পান। গত জন্মের যেসব ব্যক্তি ও বস্তুর মায়া তিনি এখনও বয়ে চলেছেন সেগুলোকে তাকে ত্যাগ করতে হয়। তাদেরকে প্রস্তাব করা হয় যাতে তারা একটি পরিবার গ্রহণ করেন যেখানে পিতামাতা ধর্মে বিশ্বাসী হবেন, যাতে তিনি সকল জীবের প্রতি ভালবাসার ইচ্ছা নিয়ে পুনর্জন্ম লাভ করতে পারেন।

বৌদ্ধধর্ম অনুসারে, জীবন হল মহাবিশ্বের একটি মহাজাগতিক শক্তি এবং মৃত্যুর পর এটা মহাবিশ্বের সাথে আবার জুড়ে যায়। আর যখন সেই জীবনের জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে পাওয়ার সময় হয় তখন এটি জন্ম লাভ করে। যেকোন জীবনের দশটি জীবনাবস্থা রয়েছে, এগুলো হল: নরক, ক্ষুধা, রাগ, পশুবৃত্তি, পরমানন্দ, মানবিকতা, শিক্ষণ, বোধগম্যতা, বোধিসত্ত্ব এবং বুদ্ধত্ব। এগুলোর মধ্যে জীবন যে অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, জীবন পুনরায় সেই অবস্থাতেই আবার জন্মলাভ করে।"

শিখ ধর্ম[সম্পাদনা]

শিখধর্মে পরকাল সম্পর্কিত খুব শক্তিশালী ধারণা রয়েছে। শিখরা বিশ্বাস করে যে আত্মারা আধ্যাত্মিক জগতের অংশভূক্ত যার উৎপত্তি ঈশ্বরের থেকে হয়েছে। যাই হোক, শিখদের মধ্যে পরকাল নিয়ে একটি বড় বিতর্ক রয়েছে। অনেকে বিশ্বাস করেন, অনেকে বিশ্বাস করেন যে শিখধর্মের পরকালে তাদের ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিবের স্তবক অনুযায়ী পুরস্কার এবং শাস্তির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু একটি বিশাল সংখ্যার শিখগণ অন্যরকম বিশ্বাস করেন এবং মনে করেন যে সেইসব স্তবকগুলো রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

কিন্তু কেউ শিখ ধর্মগ্রন্থগুলোকে বিচক্ষণতার সহিত বিশ্লেষণ করলে দেখতে পারেন যে গুরু গ্রন্থ সাহিব এবং দশম গ্রন্থে পরকালের অনেক ঘটনায় স্বর্গ ও নরকের অস্তিত্বের কথা সূক্ষ্মভাবে বলা আছে। সুতরাং সেখান থেকে বলা যায় শিখধর্ম স্বর্গ ও নরকের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। যাইহোক, স্বর্গ ও নরক ব্যক্তিকে কেবল পুরষ্কৃত করতে ও শাস্তি দিতে তৈরি করা হয়েছে, পুরস্কার বা শাস্তি লাভ শেষ হলে ব্যক্তিকে আবার জন্ম নিতে হবে। ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে এই জন্মমৃত্যুর চক্রের মধ্যেই থাকতে হবে। শিখ ধর্মগ্রন্থগুলো অনুসারে মানবিক আকার হল ঈশ্বরের সবচেয়ে নিকটবর্তী আকার এবং ঈশ্বরের সাথে পুনরায় যুক্ত হবার জন্য সবচাইতে ভাল সুযোগ। শিখ গুরুরা বলেন যে, কিছুই মরে না, কিছুই জন্মায় না, সবকিছুই চিরকাল বর্তমান থাকে, এরা শুধু নিজেদের আকৃতি বদল করে। এটা একটি উচ্চতর দর্শন। এটা অনেকটা একটি পোশাকের আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে থাকার মত, আপনি একটি পোশাক গ্রহণ করবেন, একে পড়বেন এবং এরপর একে ত্যাগ করবেন, তারপর আরেকটা পড়বেন। আপনি কেবল একটি আকার থেকে আরেকটি আকারে পরিবর্তিত হচ্ছেন। আসলে, আপনার আত্মা কখনই জন্মলাভ বা মৃত্যুবরণ করে না। আপনার আত্মা ঈশ্বরের একটি অংশ এবং তাই তা চিরকাল জীবিত থাকে।[৮০]

নব্যপৌত্তলিকতাবাদ[সম্পাদনা]

উইক্কা[সম্পাদনা]

উইক্কাদের পরকালকে সাধারণভাবে "দ্য সামারল্যান্ড" হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এখানে আত্মা বিশ্রাম নেয়, জীবন থেকে পুনরুদ্ধৃত হয় এবং জীবদ্দশায় থাকার সময় তার অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটায়। বিশ্রামের একটা সময় শেষে, আত্মা পুনর্জন্ম লাভ করে, এবং তাদের গতজন্মের সব স্মৃতি এসময় মুছে যায়। অনেক উইক্কান দ্য সামারল্যান্ডকে তাদের জীবদ্দশায় করা কৃতকার্যের প্রতিফলনের স্থান হিসেবে দেখেন। এটা পুরষ্কৃত হবার কোন স্থান নয়, বরং একটি জীবনের যাত্রাপথের ইতি।[৮১]

অন্যান্য[সম্পাদনা]

শিন্তৌ ধর্ম[সম্পাদনা]

জাপানে কোন শ্রাইনে শিন্তৌ ধর্মের উৎসবগুলোতে সকলের অংশগ্রহণ খুব সাধারণ, তবু সকলে মৃত্যুর পর বৌদ্ধধর্মের নিয়মে অন্তেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেয়। প্রাচীন জাপানী কিংবদন্তি অনুসারে, প্রায়ই দাবী করা হয় যে, মৃতেরা ইয়মি (黄泉) নামক একটি তমসাচ্ছন্ন পাতালের জগতে প্রবেশ করে। ইজানামি (শিনিগামি নামেও পরিচিত) এবং ইজানাগির কিংবদন্তি অনুসারে এখানে একটি নদী আছে যা জীবিতদেরকে মৃতদের থেকে পৃথক করে। গ্রীক পুরাণের হেডিসের সাথে এর অনেক মিল রয়েছে। যাই হোক, পরবর্তী পুরাণগুলোতে পুনরুদ্ধার এবং এমনকি এলিসিয়ামের মত বর্ণনাও আছে যেমন ওকুনিনুশি ও সুসানুর কিংবদন্তিতে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। শিন্তো ধর্মে মৃত্যু এবং মৃতদেহ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা করা হয়, এবং এদেরকে কেগারে নামক দূষণের উৎস্য বলে মনে করা হয়। যাইহোক, শিন্তৌ ধর্মে মৃত্যুকে ব্যক্তির এপোথিওসিস (কোন বিষয়কে স্বর্গীয়মাত্রায় মহিমান্বিত করা) এর পথ হিসেবেও ধরা হয়। এর সাক্ষ্য হিসেবে শিন্তৌ পুরাণে মৃত্যুর পর কিংবদন্তি নায়কদেরকে মহিমান্বিত অবস্থান পাবার ঘটনাকে দেখানো যায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হবেন সম্ভবত সম্রাট ওজিন যিনি মৃত্যুর পর হাচিমান বা যুদ্ধের দেবতার পদ লাভ করেন।

অনেক ধর্মের মত শিন্তৌ ধর্মে বিশ্বাসী হবার জন্য সকলের সামনে শিন্তো ধর্মকে মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করতে হয় না। যখনই জাপানে একজন শিশুর জন্ম হয়, একটি স্থানীয় শিন্তৌ শ্রাইন (শিন্তৌ মন্দির) একটি লিস্টে বাচ্চার নাম নথিভুক্ত করে ফেলে এবং তা সেই শ্রাইনে রেখে বাচ্চাটিকে একটি উজিকো (ফ্যামিলি চাইল্ড বা পারিবারিক সন্তান বা 氏子) হিসেবে ঘোষণা করে। শিন্তো ধর্মমতে মৃত্যুর পর উজিকো ফ্যামিলি স্পিরিট বা ফ্যামিলি কামি বা পারিবারিক আত্মায় পরিণত হয় যাকে উজিগামি (氏神 ujigami) বলা হয়। স্থান পরিবর্তনের ফলে কেউ নিজের নাম অন্য কোন লিস্টে নথিভূক্ত করতে পারেন, তাহলে তার নাম উভয় জায়গাতেই নথিভূক্ত থাকবে। এই নাম সম্মতি ছাড়াই এবং যেকোন ধর্মমতের ব্যক্তির ক্ষেত্রেই নথিভূক্ত হতে পারে। একে ধর্মমত আরোপ বলে মনে করা হয় না, কিন্তু একে স্থানীয় কামি দ্বারা আমন্ত্রিত হবার চিহ্ন হিসেবে দেখা হয়, যেখানে মৃত্যুর পর আত্মা বা কামিকে প্যানথিওনে প্রবেশের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।

ইউনিটারিয়ান ইউনিভারসালিজম[সম্পাদনা]

কিছু ইউনিটারিয়ান ইউনিভারসালিস্ট একধরনের ইউনিভারসালিজম বা সার্বজনীনতাবাদে বিশ্বাস করেন যা অনুসারে তাদের আত্মা চূড়ান্তভাবে উদ্ধারকৃত হবে এবং তাদেরকে কোনধরনের নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হবে না।[৮২] ইউনিটারিয়ান ইউনিভার্সালিস্টদের মাঝে ধর্মতত্ত্ব নিয়ে মতভেদ আছে, কারণ এই ব্যাপারে একই অবস্থান নয়।[৮৩] যদিও ইউনিটারিয়ানগণ ঐতিহাসিকভাবে একটি আক্ষরিক অর্থে বোঝানো একটি নরকে বিশ্বাস করেন, এবং ইউনিভারসালিস্টগণ ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বাস করেন যে সকলেই স্বর্গে যাবে, আধুনিক ইউনিটারিয়ান ইউনিভারসালিস্টগণ হিসেবে তাদেরকেই ফেলা যায় যারা স্বর্গ, পুনর্জন্ম এবং মৃত্যু পরবর্তী চিরসমাপ্তি বা অবলিভিয়নে বিশ্বাস করেন। বেশিরভাগ ইউনিটারিয়ান ইউনিভারসালিস্ট বিশ্বাস করেন যে স্বর্গ এবং নরক চেতনার একটি সাংকেতিক্সথান এবং এই বিশ্বাস পরকালের চেয়ে ইহকালকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।[৮৪]

আধ্যাত্মবাদ[সম্পাদনা]

এডগার কেসের মতে, পরকাল নয়টি জগত নিয়ে গঠিত যা জ্যোতিশাস্ত্রের নয়টি গ্রহকে ইঙ্গিত করে। প্রথমটি শনি গ্রহের প্রতীকস্বরূপ, এটি আত্মার শুদ্ধিকরণের একটি স্তর। দ্বিতীয়টি হল বুধ যা সমস্যাকে বুঝতে পারার ক্ষমতা দান করে। তৃতীয়টি পৃথিবী কর্তৃক শাসিত হয়, এবং এই পৃথিবী পার্থিব সন্তুষ্টির সাথে সম্পর্কযুক্ত। চতুর্থটি হল শুক্র যেখানে আমরা ভালবাসা খুঁজে পাই। পঞ্চমটি হল মঙ্গল গ্রহ যেখানে আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে পারি। ষষ্ঠ রাজ্যটি নেপচুন কর্তৃক শাসিত হয় এবং এখানে আমরা আমাদের সৃজনশীলতা ব্যবহার করতে এবং বস্তুজগৎ থেকে মুক্ত করতে শিখি। সপ্তম রাজ্য বৃহস্পতি গ্রহ দ্বারা প্রতীকায়িত হয় যা আত্মার কার্যকারিতাকে বৃদ্ধি করে যার ফলে আত্মা কোন অবস্থাকে বুঝতে পারে, মানুষ, স্থান, বস্তু এবং অবস্থা বিশ্লেষণ করতে পারে। অষ্টম পরকালের রাজ্য ইউরেনাস কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এটা সাইকিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নবম পরকাল রাজ্য প্লুটো দ্বারা প্রতীকায়িত হয় যা অচেতনদের জ্যোতিশাস্ত্রীয় রাজ্য। এই পরকালের জগৎ একটি খণস্থায়ী স্থান যেখানে আত্মারা সৌরজগতের অন্য জগৎগুলোতে ভ্রমণ করতে পারে। এটা আত্মার চিরকালীন স্বাধীনতা, এবং এই জগৎ আমাদের সৌরজগত থেকে মহাজগতের দিকে দরজা খুলে দেয়।[৮৫]

মূলধারার আধ্যাত্মবাদীরা সাত জগতের একটি সিরিজের কথা বলেন যা এডগার কেসের নয়টি গ্রহ দ্বারা শাসিত নয় জগতের পরকালের মত না। এর বিবর্তনের সাথে সাথে আত্মারা ঊর্ধ্ব থেকে ঊর্ধ্ব দিকে যেতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত এরা আধ্যাত্মিক একত্বের চূড়ান্ত জগতে না পৌঁছায়। এখানে প্রথম জগত হল নরকের সমতুল্য যেখানে সংকটগ্রস্ত আত্মারা পরবর্তী স্তরে যাবার আগে অনেক সময় অতিবাহিত করে যতক্ষণ না তারা পরবর্তী স্তরে যেতে বাধ্য হয়। দ্বিতীয় স্তরটি হল যেখানে বেশিরভাগ আত্মাই সরাসরি চলে যায়, এই স্থানকে নরকের নিম্ন স্তর থেকে মহাজগতের উচ্চ যথার্থ জগতে যাবার একটি মধ্যবর্তী স্তর। তৃতীয় স্তরটি হল তাদের জন্য যারা কর্মফলের দায় (karmic inheritance) নিয়ে নিয়ে কাজ করেছেন। চতুর্থ স্তর হল সেই স্থান, যেখান থেকে বিবর্তিত আত্মারা পৃথিবীবাসীদেরকে শিক্ষা এবং নির্দেশনা দেয়। পঞ্চম স্তরটি হল সেই স্থান যেখানে আত্মারা মানব চেতনাকে পিছনে ফেলে আসে। ষষ্ঠ স্থানে আত্মারা মহাজাগতিক চেতনার সাথে যুক্ত হয় এবং এসময় তাদের একত্ব এবং বিচ্ছিন্নতার কোন চেতনা থাকে না। চূড়ান্তভাবে সপ্তম স্তরটি হল সকল আত্মার লক্ষ্য। এই স্থানে আত্মা তার নিজের আত্মাময়তার (soulfulness) চেতনাকে অতিক্রম করে এবং বিশ্বের আত্মা বা পরমাত্মার সাথে পুনরায় যুক্ত হয়ে যায়।[৮৫]

জরাথুস্ট্রবাদ[সম্পাদনা]

জরাথুস্ট্রবাদ বলে, দেহচ্যুত আত্মা বা উরভান নিচের দিকে ইমার দ্বারা শাসিত মৃতের রাজ্যে যাবার পূর্বে পৃথিবীতে তিন দিন বিলম্ব করে। এই তিন দিনের জন্য আত্মা পৃথিবীতে বিশ্রাম নেয়, সৎ আত্মা তার শরীরের মাথার কাছে বসে এবং আনন্দের সাথে উস্তাভইতি গাথাস এর ভজন করে, যেখানে মন্দ ব্যক্তি দেহের পায়ের কাছে বসে দুঃখপ্রকাশ করে এবং ইয়াসনার ভজন করে। জরাথুষ্ট্রবাদ বলে যে সৎ আত্মার জন্য একটি সুন্দরী কুমারী আবির্ভূত হয় যা ব্যক্তির উত্তম চিন্তা, কার্য এবং বাক্যেরই নারীরূপ। অন্যদিকে একজন মন্দ ব্যক্তির বেলায় খুবই বৃদ্ধ, কুৎসিত ও নগ্ন ডাইনি আবির্ভূত হয়। তিন রাতের পর মন্দ ব্যক্তির আত্মাকে ভিজারেসা নামক একজন দৈত্য চিনভত সেতুতে নিয়ে যায় যা অন্ধকারে (নরক) যাবার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

ইমাকে পৃথিবী শাসন করা প্রথম রাজা বলে বিশ্বাস করা হয়, এবং একই সাথে তাকে প্রথম মৃত বলেও বিশ্বাস করা হয়। ইমার রাজ্যে আত্মারা একটি ছায়াময় অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকে, এবং তারা তাদের নিজেদের বংশধরের উপর নির্ভরশীল যারা এখনও পৃথিবীতে বেঁচে আছে। তাদের বংশধরদেরকে পৃথিবীতে করা বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পূর্বপুরুষ আত্মার ক্ষুধা ও বস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে হয়।

প্রথম দিন দিনে যে অনুষ্ঠানগুলো করা হয় সেগুলো অত্যাবশ্যকীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেগুলো আত্মাকে মন্দ ক্ষমতার হাত থেকে রক্ষা করবে এবং এটা তাদেরকে পরকালে যেতে শক্তি দান করবে। তিন দিন পর আত্মা চিনভত সেতু পাড়ি দেবে যা হল আত্মার শেষ বিচার। রাশনু এবং স্রাওশা শেষ বিচারের সময় উপস্থিত থাকে। উপস্থিতদের তালিকা কখনও কখনও বর্ধিত হয় এবং এখানে ভাহমান, অরমাজদও থাকে। রাশনু হল ইয়াজাতা যিনি ন্যায় এর দাঁড়িপাল্লা ধরে থকেন। দাঁড়িপাল্লায় যদি ব্যক্তির ভাল কাজ তার মন্দ কাজের চেয়ে ভারি হয় তাহলে আত্মা স্বর্গে গমনের জন্য উপযুক্ত হবে। যদি তার খারাপ কাজ ভাল কাজের চেয়ে ভারি হয় তাহলে সেতুটি সরু হতে হতে সেতুটির একটি কিনারার সমান হবে, এবং একটি বিকট ডাইনি আত্মাকে তার হাত দিয়ে টেনে নিয়ে তার সাথে নিচে নরকে নিয়ে যাবে।

মিসভান গাতু হল 'মিশ্রিতদের স্থান' যেখানে আত্মারা ধূসর অস্তিত্ব নিয়ে থাকে এবং তাদের কোন আনন্দ ও বেদনা থাকেনা। একটি আত্মা সেখানে যায় যদি রাশনুর দাঁড়িপাল্লায় তার ভাল কাজ ও খারাপ কাজের ভর সমান হয়। 

 প্যারাসাইকোলজি[সম্পাদনা]

১৮৮২ সালে পরকাল এবং আধ্যাত্মিকতার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তদন্ত করার জন্য সোসাইটি ফর সাইকোলজিকাল রিসার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদস্যগণ তখন থেকে আজ পর্যন্ত প্যারানরমাল বিষয়ের উপর গবেষণা পরিচালনা করছে। এখানকার প্রথমদিকের প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি করে ব্যবহার করে পরকাল সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর প্রথমদিকের সদস্যদের মধ্যে উইলিয়াম ক্রুক্সদের মত বিশিষ্ট গবেষক এবং হেনরি সিজউইক এবং উইলিয়াম জেমসের মত বিশিষ্ট দার্শনিক ছিলেন।

পরকালের প্যারাসাইকোলজিকাল তদন্তগুলোর মধ্যে হন্টিং, মৃতদের ভূত, ইনস্ট্রুমেন্টাল ট্রান্স যোগাযোগ, ইলেকট্রনিক ভয়েস ফেনোমেনা, এবং মিডিয়ামশিপ অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৮৬] এছাড়া নেয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স বা মৃত্যু পরবর্তী অভিজ্ঞতা নিয়েও গবেষণা করা হয়। এই ক্ষেত্রে যেসব বিজ্ঞানীগণ কাজ করেছেন তাদের মধ্যে আছেন রেমন্ড মুডি, সুজান ব্ল্যাকমোর, চার্লস টার্ট, উইলিয়াম জেমস, ইয়ান স্টিভেনসন, মাইকেল পারসিংগার, পিম ভ্যান লোমেল, পেনি সারটরি প্রভৃতি।[৮৭][৮৮]

১৯০১ সালে ফিজিশিয়ান ডানকান ম্যাকডুগালের পরিচালিত একটি গবেষণায় মৃত্যুর পর আত্মার শরীর থেকে বের হয়ে যাবার ফলে তার কী পরিমাণ ওজন কমে তা পরিমাপ করা হয়।[৮৯] তিনি আত্মাকে বস্তুগত, স্পৃশ্য এবং পরিমাপযোগ্য প্রমাণ করার জন্য মৃত্যু নিকটবর্তী এমন রোগীর ওজন পরিমাপ করেন। যদিও ম্যাকডুগালের ফলাফল তার দাবীকৃত "২১ গ্রাম" থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ভিন্ন ছিল, তবুও কিছু লোক এই ২১ গ্রামকেই আত্মার ভরের পরিমাপ হিসেবে মেনে নেয়।[৯০] ২০০৩ সালের চলচ্চিত্র ২১ গ্রামস নামটি ম্যাগডুগালের এই ফলাফলের রেফারেন্সেই নেয়া হয়। তার ফলাফলকে কখনই আর পুনপ্রস্তুত করা হয় নি, এবং এই ফলাফলকে সাধারণত অর্থহীন এবং বৈজ্ঞানিক প্রতিভায় এর কোন অবদান থাকলে তাকে খুবই সামান্য বলা হয়।[৯১]

ফ্র্যাংক টিপলার যুক্তি দেখান, পদার্থবিজ্ঞান অমরত্মকে ব্যাখ্যা করতে পারে, যদিও এধরনের যুক্তি ফলসিফায়াবল বা মিথ্যা হিসেবে প্রমাণযোগ্য নয় বলে বিজ্ঞান অনুসারে কার্ল পপারের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এটি যুক্তি হবার যোগ্যতা রাখে না।[৯২]

প্যারাসাইকোলজিকাল গবেষণার ২৫ বছর পর সুজান ব্ল্যাকমোর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, পরকালের কোন এম্পিইরিকাল এভিডেন্স বা গবেষণামূলক সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই।[৯৩][৯৪]

দর্শন[সম্পাদনা]

আধুনিক দর্শন[সম্পাদনা]

ব্যক্তিগত পরিচয়ের প্রশ্নে এখনও একটি অবস্থান রয়েছে যাকে মুক্ত ব্যক্তিবাদ বা ওপেন ইন্ডিভিজুয়ালিজম নামে অভিহিত করা হয়, এবং এটার সাথে প্রাচীন বিশ্বাস মনোসাইকিজমের সাথে মিল রয়েছে। মনোসাইকিজম অনুসারে ব্যক্তির আলাদা আলাদা অস্তিত্ব মায়াময় বা বিভ্রম, এবং আমাদের চেতনা আমাদের মৃত্যুর পর অন্য কোন সচেতন জীবে চলে যাওয়ার মাধ্যমে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। মৃত্যুর পর অস্তিত্ব ভিত্তিক অবস্থান বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদার্থবিদ যেমন এরভিন শ্রোডিঙার এবং ফ্রিম্যান ডাইসন বিশ্বাস করতেন।[৯৫]

মৃত্যুর পর কোন ব্যক্তির অস্তিত্বের ধারাবাহিকতায় কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্নের উদয় হয়। পিটার ভ্যান ইনোয়াগেন তার পুনর্জন্ম সংক্রান্ত যুক্তিতে উল্লেখ করেন, মেটারিয়ালিস্টদের অবশ্যই কোন ধরনের শারীরিক ধারাবাহিকতা রয়েছে।[৯৬] জন হিকও তার রচনা ডেথ এন্ড এটারনাল লাইফ গ্রন্থে ব্যক্তিগত পরিচয় সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি একটি উদাহরণ ব্যবহার করেন যেখানে একজন ব্যক্তির অস্তিত্ব একটি স্থানে বিলীন হয়ে যায় এবং আরেকটি স্থানে সেই ব্যক্তির ঠিক একই রেপ্লিকা আবির্ভূত হয়। যদি সেই রেপ্লিকাটির পূর্বের ব্যক্তির মত একই অভিজ্ঞতা, বৈশিষ্ট্য এবং শারীরিক প্রকাশ থেকে থাকে, তাহলে আমরা কী বলতে পারব যে দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথম ব্যক্তির পরিচয় বহন করছে?

প্রোসেস ফিলোসফি[সম্পাদনা]

প্রোসেস ফিলোসফি ও ধর্মতত্ত্বের প্যানেনথিস্টিক মডেল অনুযায়ী আলফ্রেড নর্থ হোয়াইটহেড এবং চার্লস হার্টশোর্ন বস্তু দ্বারা তৈরি জগৎ অস্বীকার করেন, এবং এর বদলে তারা মনে করেন জগৎ জীবন্ত অভিজ্ঞতা দ্বারা তৈরি। হার্টশোর্নের মতে মানুষ পরকালে ব্যক্তিবাচক বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা লাভ করে না, কিন্তু তারা বস্তুবাচক অমরত্ব লাভ করে কারণ তখন তাদের অভিজ্ঞতা চিরকালের মত ঈশ্বরে বাস করে, যা পূর্বের সব কিছু ধারণ করে। যাই হোক, অন্যান্য প্রোসেস ফিলোসোফার যেমন ডেভিড রে গ্রিফিন লিখেছেন যে মৃত্যুর পর মানুষের ব্যক্তিবাচক অভিজ্ঞতা থাকতে পারে।[৯৭][৯৮][৯৯][১০০]

বিজ্ঞান[সম্পাদনা]

বিজ্ঞান সমাজ ধর্মগুলোতে বিশ্বাস করা মৃত্যু-পরবর্তী চেতনার ধারাবাহিকতা সম্পর্কে সংশয়বাদী অবস্থান নেয়। মন-দেহ সমস্যা বা মাইন্ড-বডি প্রবলেমের উপর ভিত্তি করে বেশিরভাগ স্নায়ুবিজ্ঞানী বা নিউরোসাইন্টিস্ট, ফিজিকালিস্ট বা শরীরবাদী অবস্থান নেন যা অনুসারে চেতনা শরীরের বৈশিষ্ট্য যেমন মস্তিষ্কের স্নায়বিক কার্যাবলি থেকেই উৎপন্ন হয়।[১০১][১০২] এই প্রতিজ্ঞাটির নিহিতার্থটি হচ্ছে, একবার ব্রেইন ডেথের পর মস্তিষ্ক তার কার্যক্রম বন্ধ করে ফেললে, চেতনার অস্তিত্বের সমাপ্তি ঘটে।[১০৩][১০৪] সাধারণত, বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকগণ মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের প্রশ্নে সংশয়বাদের আশ্রয় নেন। বিজ্ঞান সমাজের কেউ কেউ স্বীকার করেন যে, মৃত্যুর সময় মানবাত্মার তথ্যসমূহ কেবল মাত্র তাদের থেকেই আবিষ্কার করা সম্ভব যারা মৃত্যুর অভিজ্ঞতা লাভ করছেন। এসম্পর্কিত তথ্য আবিষ্কার করার জন্য তিব্বতীয় লামাদের একটি দল তাদের শিষ্যদের তাদের মরার সময়কার অভিজ্ঞতা জানিয়ে যান।

লামাদের বলা লক্ষণসমূহের মধ্যে ছিল-

  1. শরীরে চাপের একটি অনুভূতি
  2. ভিজে ঠাণ্ডা এবং তারপর জ্বরজ্বর উষ্ণতা
  3. শরীর পরমাণুসমূহে পরিণত হচ্ছে এধরনের অনুভূতি

এরকমও অনেক উদাহরণ আছে যেখানে ব্যক্তিকে ক্লিনিকালি মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল কিন্তু ব্যক্তি বেঁচে উঠেছেন। সেই সব ব্যক্তিকে যখন তাদের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তারা দাবী করেন তারা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তার জন্য যথেষ্ট শব্দ নেই। ডাক্তার রেমন্ড এ. মুডি ১০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণা করেছেন যাদেরকে ক্লিনিকালি ডেথ বা ক্লিনিকালি মৃত বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেঁচে গেছেন। তিনি তার প্রাপ্ত তথ্যগুলোকে লাইফ আফটার লাইফ (১৯৭৫) নামক রচনায় প্রকাশ করেন। এই গবেষণার ফলাফলগুলো থেকে মৃত্যু সম্পর্কিত অভিজ্ঞতার কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য উদ্ঘাটিত হয়। ব্যক্তিগণ প্রায়ই দেহ-বহির্ভূত অভিজ্ঞতার কথা বলেন যেখানে শরীর এবং আত্মা বিচ্ছন্ন হয়ে যায় এবং ব্যক্তিগণ জগৎকে তাদের "এস্ট্রাল বডি" এর মাধ্যমে দেখেন। ফ্রেড স্কুনমেকার নামক একজন কার্ডিওলজিস্ট ১৯৭৯ সালে মুডির এই ফলাফলগুলোকে তার ১৯৭৯ সালের একটি গবেষণায় ভেরিফাই করেন যেখানে তার গবেষণাটি ছিল মারাত্মক মৃত্যুঝুঁকি থেকে বেঁচে ফেরা ২,৩০০ জন রোগীকে নিয়ে। সুপরিচিত পদার্থবিদ এবং প্যারাসাইকোলজিস্ট স্যার উইলিয়াম ব্যারেট ১৯২৬ সালে এধরনের ঘটনা নিয়ে ডেথ বেড ভিশন নামক রচনা প্রকাশ করেন। তার রচনায় অসুস্থ ব্যক্তি গান শোনেন এবং তার ভাল্বাসার মৃত ব্যক্তিকেও দেখতে পান। একটি কেস স্টাডিতে দেখা যায়, ব্যক্তি একটি দেব বহির্ভূত অভিজ্ঞতায় একজন মৃত ব্যক্তিকে দেখেন যার সেই সময় মৃত্যুই হয় নি। সেকেলে পদ্ধতি গবেষণা এবং প্রচণ্ডভাবে ব্যক্তির সততার উপর নির্ভরশীল এই কেস স্টাডিগুলোর অনেকগুলোই যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছে। তার উপর, বর্তমানে দাবী করা হচ্ছে আউট-অব-বডি বা দেহ-বহির্ভূত অভিজ্ঞতাগুলো ক্কয় হতে থাকা মস্তিষ্কের তৈরি হেলুসিনোজেনিক বা বিভ্রম তৈরিকারী এফেক্টের ফল।

পরকালে বিশ্বাসের জন্মের মনোবিজ্ঞানগত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে কগনিটিভ ডিসপোজিশন বা জ্ঞানীয় স্বভাব, সাংস্কৃতিক শিক্ষা এবং ইনটুইটিভ রেলিজিয়াস আইডিয়া সজ্ঞাত ধর্মীয় ধারণা।[১০৫] একটি গবেষণায় দেখা যায়, বাচ্চারা মৃত্যুর সময় শারীরিক ও মানষিক সমাপ্তিকে স্বীকার করেছিল, কিন্তু তারা ইচ্ছা, আত্ম এবং আবেগের সমাপ্তিকে স্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করছিল।[১০৬]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. জাবির বলেছেন যে তিনি তার কানে নবীকে বলতে শুনেছেন যে, "আল্লাহ্‌ সকল মানুষকেই আগুন থেকে তুলে আনবেন এবং তাদেরকে স্বর্গে স্থান দেবেন।"[৬৪]

উদ্ধৃতি[সম্পাদনা]

  1. "Gilgul Neshamot - Reincarnation of Souls"। Projectmind.org। ২০১৫-০৫-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  2. Max Heindel, The Rosicrucian Christianity Lectures (The Riddle of Life and Death), 1908, আইএসবিএন ০-৯১১২৭৪-৮৪-৭
  3. Max Heindel, Death and Life in PurgatoryLife and Activity in Heaven
  4. "limbo - definition of limbo by the Free Online Dictionary, Thesaurus and Encyclopedia"। Thefreedictionary.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  5. Ted Campbell, Methodist Doctrine: The Essentials (Abingdon 1999), quoted in Feature article by United Methodist Reporter Managing Editor Robin Russell ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ জুলাই ২০১১ তারিখে and in FAQ Belief: What happens immediately after a person dies?
  6. Bond, George C. (১৯৯২)। "Living with Spirits: Death and Afterlife in African Religions"। Obayashi, Hiroshi। Death and Afterlife: Perspectives of World Religions। New York: Greenwood Press। পৃষ্ঠা 3–18। আইএসবিএন 0-313-27906-3The entire process of death and burial is simple, without elaborate rituals and beliefs in an afterlife.  The social and spiritual existence of the person ends with the burial of the corpse. 
  7. Bond, George C. (১৯৯২)। "Living with Spirits: Death and Afterlife in African Religions"। Obayashi, Hiroshi। Death and Afterlife: Perspectives of World Religions। New York: Greenwood Press। পৃষ্ঠা 3–18। আইএসবিএন 0-313-27906-3The belief in the ancestors remains a strong and active spiritual and moral force in the daily lives of the Yombe; the ancestors are thought to intervene in the affairs of the living.... The afterlife is this world. 
  8. Gottlieb, Alma; Graham, Philip; Gottlieb-Graham, Nathaniel (১৯৯৮)। "Infants, Ancestors, and the Afterlife: Fieldwork's Family Values in Rural West Africa"Anthropology and Humanism23 (2): 121। ডিওআই:10.1525/ahu.1998.23.2.121। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৫But Kokora Kouassi, an old friend and respected Master of the Earth in the village of Asagbé, came to our compound early one morning to describe the dream he had just had: he had been visited by the revered and ancient founder of his matriclan, Denju, who confided that Nathaniel was his reincarnation and so should be given his name. The following morning a small ritual was held, and Nathaniel was officially announced to the world not only as Denju but as N'zri Denju—Grandfather Denju—an honorific that came to be used even by Nathaniel's closest playing companions. 
  9. Opoku, Kofi Asare (১৯৮৭)। "Death and Immortality in the African Religious Heritage"। Badham, Paul; Badham, Linda। Death and Immortality in the Religions of the World। New York: Paragon House। পৃষ্ঠা 9–23। আইএসবিএন 0-913757-54-3। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০১৫ 
  10. Bond, George C. (১৯৯২)। "Living with Spirits: Death and Afterlife in African Religions"। Obayashi, Hiroshi। Death and Afterlife: Perspectives of World Religions। New York: Greenwood Press। পৃষ্ঠা 3–18। আইএসবিএন 0-313-27906-3The process of being born, dying, and moving to a lower level of earth continues through ten lives. 
  11. Bond, George C. (১৯৯২)। "Living with Spirits: Death and Afterlife in African Religions"। Obayashi, Hiroshi। Death and Afterlife: Perspectives of World Religions। New York: Greenwood Press। পৃষ্ঠা 3–18। আইএসবিএন 0-313-27906-3The ancestors are of people, whereas God is external to creation.  They are of this world and close to the living.  The Yombe believe that the afterlife of the ancestors lies in this world and that they are a spiritual and moral force within it. 
  12. Bond, George C. (১৯৯২)। "Living with Spirits: Death and Afterlife in African Religions"। Obayashi, Hiroshi। Death and Afterlife: Perspectives of World Religions। New York: Greenwood Press। পৃষ্ঠা 3–18। আইএসবিএন 0-313-27906-3Death represents a transition from corporeal to incorporeal life in the religious heritage of Africa and the incorporeal life is taken to be as real as the corporeal. 
  13. Ephirim-Donkor, Anthony (২০১২)। African Religion Defined a Systematic Study of Ancestor Worship among the Akan. (2nd সংস্করণ)। Lanham: University Press of America। পৃষ্ঠা 26। আইএসবিএন 9780761860587। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৫ 
  14. Richard P. Taylor, Death and the afterlife: A Cultural Encyclopedia, ABC-CLIO, 2000, আইএসবিএন ০-৮৭৪৩৬-৯৩৯-৮
  15. Bard, Katheryn (১৯৯৯)। Encyclopedia of the Archaeology of Ancient Egypt। Routledge। 
  16. Kathryn Demeritt, Ptah's Travels: Kingdoms of Ancient Egypt, 2005, p. 82
  17. Glennys Howarth, Oliver Leaman, Encyclopedia of death and dying, 2001, p. 238
  18. Natalie Lunis, Tut's Deadly Tomb, 2010, p. 11
  19. Fergus Fleming, Alan Lothian, Ancient Egypt's Myths and Beliefs, 2011, p. 96
  20. "Door to Afterlife found in Egyptian tomb"। www.meeja.com.au। ২০১০-০৩-৩০। ২০১১-০৭-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-৩০ 
  21. F. P. Retief and L. Cilliers, "Burial customs, the afterlife and the pollution of death in ancient Greece", Acta Theologica 26(2), 2006, p. 45 (PDF).
  22. Social Studies School Service, Ancient Greece, 2003, pp. 49–51
  23. Perry L. Westmoreland, Ancient Greek Beliefs, 2007, pp. 68–70
  24. N. Sabir, Heaven Hell Or, 2010, p. 147
  25. "Norse Mythology | The Nine Worlds"www.viking-mythology.com। ২০১৬-০৫-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৫-১১ 
  26. Harris, Stephen. Understanding the Bible.
  27. "Tractate Sanhedrin: Interpolated Section: Those Who have no Share in the World to Come"। Sacred-texts.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  28. "Jehoiakim"। Jewishvirtuallibrary.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  29. "soc.culture.jewish FAQ: Jewish Thought (6/12)Section - Question 12.8: What do Jews say happens when a person dies? Do Jews believe in reincarnation? In hell or heaven? Purgato"। Faqs.org। ২০১২-০৮-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  30. Saadia Gaon in Emunoth ve-Deoth Section vi
  31. ইউটিউবে Reincarnation in the Jewish Tradition
  32. Yirmiyahu, Rabbi (২০০৩-০৭-১২)। "Reincarnation « Ask! « Ohr Somayach"। Ohr.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  33. Martin Buber, "Legende des Baalschem" in Die Chassidischen Bücher, Hellerau 1928, especially Die niedergestiegene Seele
  34. "Reincarnation and the Holocaust FAQ"। ২০১১-০৭-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  35. "Where does the soul go? New course explores spiritual existence"। Middletown, CT। West Hartford News। অক্টোবর ১৪, ২০১৫। মার্চ ৪, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৩১, ২০১৭ 
  36. "Matthew 22:23-33"। Biblegateway.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  37. "The New American Bible - IntraText"। Vatican.va। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  38. "Matthew 27:50-54"। Biblegateway.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  39. Fosdick, Harry Emerson. A guide to understanding the Bible. New York: Harper & Brothers. 1956. page 276.
  40. Acts of Paul and Thecla ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ জুন ২০০৭ তারিখে 8:5
  41. He wrote that a person "may afterward in a quite different manner be very much interested in what is better, when, after his departure out of the body, he gains knowledge of the difference between virtue and vice and finds that he is not able to partake of divinity until he has been purged of the filthy contagion in his soul by the purifying fire" (emphasis added)—Sermon on the Dead, AD 382, quoted in The Roots of Purgatory ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ মে ২০০৭ তারিখে
  42. "purgatory". The Columbia Electronic Encyclopedia, Sixth Edition. Columbia University Press., 2003. Answers.com 06 Jun. 2007.
  43. "Charlton T. Lewis, Charles Short, ''A Latin Dictionary''"। Perseus.tufts.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  44. "Swedenborg, E. ''Heaven and its Wonders and Hell. From Things Heard and Seen'' (Swedenborg Foundation, 1946)"। Swedenborgdigitallibrary.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  45. Andrew P. Klager, "Orthodox Eschatology and St. Gregory of Nyssa's De vita Moysis: Transfiguration, Cosmic Unity, and Compassion," In Compassionate Eschatology: The Future as Friend, eds. Ted Grimsrud & Michael Hardin, 230-252 (Eugene, OR: Wipf & Stock, 2011), 245.
  46. St. Isaac the Syrian, "Homily 28," In The Ascetical Homilies of Saint Isaac the Syrian, trans. Dana Miller (Brookline, MA: Holy Transfiguration Monastery Press, 1984), 141.
  47. Fr. Thomas Hopko, "Foreword," in The Orthodox Church, Sergius Bulgakov (Crestwood, NY: St. Vladimir's Seminary Press, 1988), xiii.
  48. Andrew P. Klager, "Orthodox Eschatology and St. Gregory of Nyssa's De vita Moysis: Transfiguration, Cosmic Unity, and Compassion," In Compassionate Eschatology: The Future as Friend, eds. Ted Grimsrud & Michael Hardin, 230-252 (Eugene, OR: Wipf & Stock, 2011), 251.
  49. Kallistos Ware, The Orthodox Church (New York: Penguin, 1997), 262.
  50. Doctrine and Covenants, Section 76.
  51. https://www.lds.org/manual/true-to-the-faith/kingdoms-of-glory.p1?lang=eng
  52. "Is Gehenna a Place of Fiery Torment?"The Watchtower: 31। এপ্রিল ১, ২০১১। 
  53. Reasoning From the Scriptures। পৃষ্ঠা 168–175। 
  54. Insight on the Scriptures2। পৃষ্ঠা 574–576। 
  55. White, E.G. (1858). The great controversy. Washington, D.C.: Review and Herald Publishing Association
  56. "The Official Site of the Seventh-day Adventist world church"। Adventist.org। ২০০৬-০৩-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  57. "Islamic Beliefs about the Afterlife"Religion Facts। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  58. Emerick, Yahiya (২০১১)। The Complete Idiot's Guide to Islam, (3rd সংস্করণ)। Penguin। আইএসবিএন 9781101558812 
  59. "A Description of Hellfire (part 1 of 5): An Introduction"Religion of Islam। ১ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪No one will come out of Hell except sinful believers who believed in the Oneness of God in this life and believed in the specific prophet sent to them (before the coming of Muhammad). 
  60. "Afterlife - Oxford Islamic Studies Online"। Oxfordislamicstudies.com। ২০০৮-০৫-০৬। ডিওআই:10.1093/0195156498.001.0001। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  61. কুরআন ৬:১২৮
  62. কুরআন ১১:১০৭
  63. Yahya, Harun (১৪ আগস্ট ২০০৩)। "Belief: Six Pillars"OnIslam.net। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  64. "The Book of Faith"sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-২০ 
  65. Al Majum al Kabir by Al Tabir 9th century AD
  66. (Sahih Bukhari, book 3 "book of learning or knowledge", number 97 (98 in another edition))
  67. "Events on the Day of Judgement"Meaning of Islam। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  68. Al-Amriki, Yusuf Talal Ali; Ullah, Qazi Thanaa (১৯৮৫)। Essential Hanafi Handbook of Fiqh। Lahore, Pakistan: Kazi Publications। পৃষ্ঠা 27। 
  69. Bukhari v.8 pp.375-6, book 76, chapter 52, #577
  70. Bukhari v.1 p.24, book 2, chapter 15, #21
  71. সহীহ বুখারী, ৮:৭৬:৫৭৭ (ইংরেজি)
  72. সহীহ বুখারী, ১:২:২১ (ইংরেজি)
  73. Parshall, Phil (১৯৯৪)। Inside the Community। Baker Books। পৃষ্ঠা 136–7। আইএসবিএন 0801071321 
  74. কুরআন ১৯:৬৭-৭২
  75. কুরআন ২১:১০১
  76. Mirza Tahir Ahmad। An Elementary Study of Islam। Islam International Publications। পৃষ্ঠা 50। আইএসবিএন 1-85372-562-5 
  77. Ibn Al-Arabi, Muhyiddin (২০০৬)। Angela Jaffray, সম্পাদক। The Universal Tree and The Four Birds। Anqa Publishing। পৃষ্ঠা 29n,50n, 59, 64–8, 73, 75–8, 82, 102। 
  78. Smith, Peter (২০০০)। "burial, "death and afterlife", evil, evil spirits, sin"। A concise encyclopedia of the Bahá'í Faith। Oxford: Oneworld Publications। পৃষ্ঠা 96–97, 118–119, 135–136, 322–323। আইএসবিএন 1-85168-184-1 
  79. Becker, Carl B. (১৯৯৩)। Breaking the circle: death and the afterlife in Buddhism। Carbondale: Southern Illinois University Press। পৃষ্ঠা viii। আইএসবিএন 0-585-03949-6Buddhists believe in karma and rebirth, and yet they deny the existence of permanent souls. 
  80. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৭ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  81. Solitary Wicca For Life: Complete Guide to Mastering the Craft on Your Own - Page 162, Arin Murphy-Hiscock - 2005
  82. Bond, Jon (২০০৪-০৬-১৩)। "Unitarians: unitarian view of afterlife, unitarian universalist association uua, unitarian universalist association"। En.allexperts.com। ২০১৫-১১-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  83. The A to Z of Unitarian Universalism - Page 147, Mark W. Harris - 2009
  84. Searching for Spiritual Unity ... Can There Be Common Ground? - Page 582, Robyn E. Lebron - 2012
  85. Bartlett, Sarah (২০১৫)। The Afterlife Bible: The Complete Guide to Otherworldly Experience। Octopus Publishing Group। আইএসবিএন 9781841814490 
  86. David Fontana (2005): Is there an afterlife. A comprehensive overview of the evidence.
  87. "Near-death experience in survivors of cardiac arrest: a prospective study in the Netherlands"। Profezie3m.altervista.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  88. "Nurse writes book on near-death"BBC News। ২০০৮-০৬-১৯। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০০৮ 
  89. Roach, Mary (২০০৫)। Spook – Science Tackles the Afterlife। W. W. Norton & Co.। আইএসবিএন 0-393-05962-6 
  90. Urban Legends - Reference Page (Soul man).
  91. Park, Robert Ezra (২০১০)। Superstition: Belief in the Age of Science। Princeton, N.J: Princeton University Press। পৃষ্ঠা 90আইএসবিএন 0-691-14597-0 
  92. Tipler, Franl, J. (১৯৯৭)। The Physics of Immortality – Modern Cosmology, God and the Resurrection of the Dead। Anchor। আইএসবিএন 0-385-46799-0 
  93. "Skeptical Odysseys: Personal Accounts by the World's Leading Paranormal Inquirers pp 85–94"। Susanblackmore.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  94. Kurtz, Paul (২০০১)। Skeptical Odysseys: Personal Accounts by the World's Leading Paranormal Inquirers। Prometheus Books। আইএসবিএন 1-57392-884-4 
  95. Kolak, Daniel (২০০৫)। I Am You: The Metaphysical Foundations for Global Ethics। Springer। আইএসবিএন 1-4020-2999-3 
  96. Peter van Inwagen। "I Look for the Resurrection of the Dead and the Life of the World to Come"। ২০০৭-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  97. Charles Hartshorne, Omnipotence and Other Theological Mistakes (Albany: State University of New York, 1984) p. 32–36
  98. David Griffin, "The Possibility of Subjective Immortality in Whitehead's Philosophy," in The Modern Schoolman, LIII, November. 1975, pp. 39–51.
  99. "What Is Process Theology? by Robert B. Mellert"। ৯ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  100. "A Whiteheadian Conception of Immortality by Forrest Wood, Jr."। ৫ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  101. James H. Schwartz. Appendix D: Consciousness and the Neurobiology of the Twenty-First Century. In Kandel, ER; Schwartz JH; Jessell TM. (2000). Principles of Neural Science, 4th Edition.
  102. Pinker, Steven. "The Brain: The Mystery of Consciousness". Time. Monday, January 29, 2007.
  103. Bernat JL (৮ এপ্রিল ২০০৬)। "Chronic disorders of consciousness"। Lancet367 (9517): 1181–1192। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(06)68508-5পিএমআইডি 16616561 
  104. Laureys, Steven; Tononi, Giulio. (2009). The Neurology of Consciousness: Cognitive Neuroscience and Neuropathology. Academic Press. p. 20. আইএসবিএন ৯৭৮-০-১২-৩৭৪১৬৮-৪ "In brain death there is irreversible cessation of all functions of the brain including the brainstem. Consciousness is, therefore, permanently lost in brain death."
  105. Pereira, Vera; Faísca, Luís; de Sá-Saraiva, Rodrigo (১ জানুয়ারি ২০১২)। "Immortality of the Soul as an Intuitive Idea: Towards a Psychological Explanation of the Origins of Afterlife Beliefs"। Journal of Cognition and Culture12 (1): 121। ডিওআই:10.1163/156853712X633956 
  106. Misailidi, Plousia; Kornilaki, Ekaterina N (এপ্রিল ২০১৫)। "Development of Afterlife Beliefs in Childhood: Relationship to Parent Beliefs and Testimony"। Merrill-Palmer Quarterly61 (2): 290–318। আইএসএসএন 0272-930X 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Afterlife: A History of Life after Death by Philip C Almond(London and Ithaca NY: I B Tauris and Cornell University Press, 2015).
  • Death and Afterlife: Perspectives of World Religions edited by Hiroshi Obayashi, Praeger, 1991.
  • Beyond Death: Theological and Philosophical Reflections on Life after Death edited by Dan Cohn-Sherbok and Christopher Lewis, Pelgrave-MacMillan, 1995.
  • The Islamic Understanding of Death and Resurrection by Jane Idelman Smith and Yazbeck Haddad, Oxford UP, 2002.
  • Life After Death: A History of the Afterlife in Western Religion by Alan F. Segal, Doubleday, 2004.
  • Brain & Belief: An Exploration of the Human Soul by John J. McGraw, Aegis Press, 2004.
  • Beyond the Threshold: Afterlife Beliefs and Experiences in World Religions by Christopher M. Moreman, Rowman & Littlefield, 2008.
  • Is there an afterlife: a comprehensive overview of the evidence by David Fontana, O Books 2005.
  • Death and the Afterlife, by Robert A. Morey. Minneapolis, Minn.: Bethany House Publishers, 1984. 315 p. আইএসবিএন ০-৮৭১২৩-৪৩৩-৫
  • Conceptions of the Afterlife in Early Civilizations: Universalism, Constructivism and Near-Death Experience by Gregory Shushan, New York & London, Continuum, 2009. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮২৬৪-৪০৭৩-০.
  • The Myth of an Afterlife: The Case against Life After Death edited by Michael Martin and Keith Augustine, Rowman & Littlefield, 2015. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮১০৮-৮৬৭৭-৩.
  • A Traveler's Guide to the Afterlife: Traditions and Beliefs on Death, Dying, and What Lies Beyond by Mark Mirabello, Ph.D.  Inner Traditions.  Release Date : September 26, 2016  আইএসবিএন ৯৭৮১৬২০৫৫৫৯৭২

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

ধর্মানুসারে জন্মান্তরবাদের গ্রহনযোগ্যতা