পাশ্চাত্য গূঢ়বাদ
পশ্চিমা গূঢ়বাদ যা সাধারণত গূঢ়বাদ বা পশ্চিমা রহস্যাবৃত ঐতিহ্য হিসেবেও পরিচিত এমন একটি টার্ম যার অধীনে বিশেষজ্ঞরা পশ্চিমা প্রচলিত নানারকম স্বাধীন ধারণা সমূহ ও আন্দোলন সমূহকে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। এই ধারণার প্রবাহ সমূহএকই সত্যর দ্বারা একত্রিত এবংং তারা জুডো খ্রিস্টান ধর্ম ও আলোকিত যুক্তিবাদ উভয়ই থেকে পৃথক। গূঢ়বাদ ধারণাটি বিভিন্ন ধরনের পাশ্চত্য দর্শন, ধর্ম, অপবিজ্ঞান,শিল্প সাহিত্য ও সংগীতকে বিস্তৃত করেছে সেই সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক ধারণা ও পপ কালচারকে অব্যাহত রেখেছে।
পাশ্চাত্যর বিশাল ঐতিহ্য ও দর্শনকে গূঢ়বাদের মধ্য শ্রেণিবদ্ধ করার ধারণা জন্মায় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে। বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী ও স্কলার পশ্চিমা গূঢ়বাদ কে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাবে তা নিয়ে বিতর্ক করেছেন, বিভিন্ন বিকল্পের প্রস্তাব করেছেন । কোন কোন পণ্ডিত গূঢ়বাদকে বহুবছর লুকানো ও আভ্যন্তরীণ ঐতিহ্য হিসেবে ধরে নিয়ে এর সংজ্ঞা নিয়েছেন গূঢ়বাদের নিজস্ব বিদ্যালয় গুলো থেকে।একটি দৃষ্টিকোণ থেকে গূঢ়বাদ কে এমন টি ভঙ্গিতে দেখা হয় যেটি যা মায়াময় পৃথিবী ও মোহমুক্তির মধ্যে বন্ধন হিসেবে কাজ করছে। আরেক দৃষ্টিভঙ্গিতে গূঢ়বাদ পশ্চিমাবিশ্বের সমস্ত প্রত্যাখ্যাত জ্ঞানকে একিভূত করে যা বৈজ্ঞানিক সংস্থা ও ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত।
পূর্বের ঐতিহ্যগুলি যাদের পরবর্তীতে বিশ্লেষণ করে গূঢ়বাদের ভিত্তি রচয়িত হয়েছিলো তাদের উৎপত্তি প্রাচীন যুগে পূর্বভূমধ্যসাগরের তীরে যেখানে হার্মিটিসিজম, নোস্টিসিজম ও নিওপ্লেটোনিজম চিন্তাধারার বাহক হয়ে উঠেছিলো যারা পরবর্তীতে খ্রিষ্টান চিন্তাধারার সাথে মিশে গিয়েছিলো। রেনেসাঁর সময় ইউরোপ এইসব চিন্তাধারার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে, বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী কাব্বালাহ ও খ্রিস্টান দর্শনের সাথে প্যাগান বা পৌত্তলিকদের দর্শনের মিল ঘটিয়েছেন। যা জন্ম দিয়েছে খ্রিষ্টান থিওসোফির মতো রহস্যময় আন্দোলন। সপ্তদশ শতাব্দীতে বিকাশ ঘটেছিলো রোশিক্রিশিয়ানিজম ও ফ্রীম্যাসনদের মতো গুপ্তজ্ঞান কে ধারণ করে এমন সমাজের, যখন অষ্টাদশ শতাব্দীর আলোর যুগটি গূঢ়বাদের চিন্তাধারাকে নতুন দিকে বিকশিত করে। উনবিংশ শতাব্দীতে গূঢ়তত্ত্বীয় চিন্তাধারায় নতুন প্রবণতা দেখা যায় যা অকাল্ট হিসেবে পরিচিতি পায়। এই শতাব্দীর বিশিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর মধ্য উল্লেখযোগ্য থিওসফিক্যাল সোসাইটি ও গোল্ডেন ডনের হারমেটিক অর্ডার। গূঢ়বাদের ধারণাগুলি ১৯৬০ এর দশকের পাল্টা সংস্কৃতি ও পরবর্তী কালের সাংস্কৃতিক প্রবণতাগুলির সাথে মিশে পড়ছিলো এবং যার থেকে ১৯৭০ এর দশকে নিউ এজ ফেনোমেনন এর আত্ম প্রকাশ ঘটে।
যদিও এই সব আন্দোলন গুলো আঠারো দশকের শেষদিকে বিকশিত পশ্চিমা গূঢ়বাদের বিকাশের বিধিতে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে এবং এই ধারণাটিকে মূলত একাডেমিক গবেষণার বিষয় হিসেবে অবহেলা করা হয়েছিলো। একাডেমিক বিষয় হিসেবে পাশ্চাত্য গূঢ়বাদের উত্থান হয়েছিলো বিশ শতকের শেষ ভাগে ফ্রান্সিস ইয়েটস এবং এন্টোইন ফাইভ্রের হাত ধরে। গূঢ়বাদী ধারণাগুলি ইতিমধ্যে শিল্প, সাহিত্য , চলচ্চিত্র এবং সংগীতে উপস্থাপিত হয়ে পপকালচারে প্রভাব ফেলছে।