বিষয়বস্তুতে চলুন

সোভিয়েত–আফগান যুদ্ধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ থেকে পুনর্নির্দেশিত)
সোভিয়েত–আফগান যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: স্নায়ুযুদ্ধ, আফগানিস্তান–পাকিস্তান দ্বন্দ্ব এবং আফগানিস্তান যুদ্ধ (১৯৭৮–বর্তমান)

১৯৮৮ সালে আফগানিস্তানে একদল সোভিয়েত স্পেৎসনাজ সৈন্য অভিযানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে
তারিখ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৯ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯
অবস্থান
আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানইরানের আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চলসমূহ
ফলাফল

সামরিক অচলাবস্থা

বিবাদমান পক্ষ

আফগানিস্তান আফগানিস্তান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
সোভিয়েত ইউনিয়ন সোভিয়েত ইউনিয়ন
সমর্থক:

সুন্নি মুজাহিদিন:

শিয়া মুজাহিদিন:

সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
সোভিয়েত ইউনিয়ন লিওনিদ ব্রেজনেভ
সোভিয়েত ইউনিয়ন ইউরি আন্দ্রোপভ
সোভিয়েত ইউনিয়ন কনস্তান্তিন চেরনেনকো
সোভিয়েত ইউনিয়ন মিখাইল গর্বাচেভ
সোভিয়েত ইউনিয়ন দিমিত্রি উস্তিনভ
সোভিয়েত ইউনিয়ন সের্গেই সকোলভ
সোভিয়েত ইউনিয়ন দিমিত্রি ইয়াজভ
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্যালেন্তিন ভ্যারেন্নিকভ
সোভিয়েত ইউনিয়ন ইউরি তুখারিনভ
সোভিয়েত ইউনিয়ন বোরিস ৎকাচ
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভিক্তর এর্মাকভ
সোভিয়েত ইউনিয়ন লিওনিদ জেনারেলভ
সোভিয়েত ইউনিয়ন ইগর রোদিয়োনভ
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভিক্তর দুবিনিন
সোভিয়েত ইউনিয়ন বোরিস গ্রোমোভ
আফগানিস্তান হাফিজুল্লাহ আমিন 
আফগানিস্তান বাবরাক কারমাল
আফগানিস্তান মুহম্মদ নাজিবুল্লাহ
আফগানিস্তান আব্দুল রাশিদ দোস্তাম
আফগানিস্তান আব্দুল কাদির
আফগানিস্তান শাহনওয়াজ তানাই
আফগানিস্তান মোহাম্মেদ রাফি

বুরহানউদ্দিন রাব্বানী
আহমদ শাহ মাসুদ
আবদুল্লাহ ইউসুফ আযযাম
ইসমাইল খান
জালালউদ্দিন হাক্কানী
গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার
আব্দুল হক
ইউনুস খালিস
আহমেদ গিলানি
নকিব আলীকোজাই
আব্দুল রহিম ওয়ারদাক
ফজল হক মুজাহিদ
ওসামা বিন লাদেন


মুহম্মদ আসিফ মুহসিনি
আসিফ কান্দাহারি
সৈয়দ আলী বেগেশতি
মোসবাহ সা'দে
শক্তি
সোভিয়েত ইউনিয়ন ১,১৫,০০০ সৈন্য
আফগানিস্তান ৫৫,০০০ সৈন্য
২,০০,০০০–২,৫০,০০০
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৪,৪৫৩ সৈন্য নিহত
৫৩,৭৫৩ সৈন্য আহত
২৬৪ সৈন্য নিখোঁজ
১৪৭টি ট্যাঙ্ক ধ্বংসপ্রাপ্ত
১,৩১৪টি আইএফভি/এপিসি ধ্বংসপ্রাপ্ত
৪৩৩টি কামান ও মর্টার ধ্বংসপ্রাপ্ত
১১,৩৬৯টি মালবাহী ও জ্বালানিবাহী ট্রাক ধ্বংসপ্রাপ্ত
১১৮টি যুদ্ধবিমান ধ্বংসপ্রাপ্ত
৩৩৩টি হেলিকপ্টার ধ্বংসপ্রাপ্ত
আফগানিস্তান ১৮,০০০ সৈন্য নিহত
৭৫,০০০–৯০,০০০ যোদ্ধা নিহত
৭৫,০০০+ যোদ্ধা আহত
পাকিস্তান ৩০০+ সৈন্য নিহত
১টি যুদ্ধবিমান ধ্বংসপ্রাপ্ত
ইরান অজ্ঞাতসংখ্যক সৈন্য নিহত
২টি হেলিকপ্টার ধ্বংসপ্রাপ্ত
৫,০০,০০০–১৫,০০,০০০ বেসামরিক মানুষ নিহত
প্রায় ৩০,০০,০০০ বেসামরিক মানুষ আহত
প্রায় ৫০,০০,০০০ বেসামরিক মানুষ আফগানিস্তানের বাইরে উদ্বাস্তু
প্রায় ২০,০০,০০০ বেসামরিক মানুষ আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে উদ্বাস্তু

সোভিয়েত–আফগান যুদ্ধ ১৯৭৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নআফগানিস্তান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং আফগান মুজাহিদদের মধ্যে সংঘটিত হয়। ১৯৭৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর আফগানিস্তানে সোভিয়েত সৈন্য প্রবেশের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধ আরম্ভ হয়, আর ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান থেকে সর্বশেষ সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এই যুদ্ধে প্রায় ৬ থেকে ২০ লক্ষ আফগান প্রাণ হারায়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক।

সোভিয়েত সৈন্যদের প্রবেশের আগে ১৯৭৮ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পিডিপিএ আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে এবং নূর মুহম্মদ তারাকী রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন। দলটি দেশজুড়ে প্রচলিত ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস করে কার্ল মার্কস এর কমিউনিজম আগ্রাসনের সূচনা করে, যা ধর্মপ্রাণ গ্রাম্য জনসাধারণ এবং প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতার কাঠামোর অধিকারীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ এর জন্ম দেয়। আফগান সরকার কঠোরভাবে বিরোধিতা দমন করে, হাজার হাজার লোককে গ্রেপ্তার করে এবং প্রায় ২৭,০০০ রাজনৈতিক বন্দিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। এর প্রতিক্রিয়ায় অনেকগুলো সরকারবিরোধী সশস্ত্র দল গঠিত হয় এবং ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে আফগানিস্তানের বড় একটি অংশ জুড়ে বিদ্রোহ দেখা দেয়। তদুপরি, আফগান সরকার অন্তদ্বন্দ্বের কারণে অস্থিতিশীল ছিল এবং ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বরে হাফিজুল্লাহ আমিনের সমর্থকেরা তারাকীকে ক্ষমতাচ্যুত করে আমিনকে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত করে। আফগান কমিউনিস্ট শাসকদের দ্বারা কমিউনিজম এর স্বার্থ পুরোপরিভাবে উদ্ধার না হওয়ায় এবং আফগানিস্তানে ব্যাপক বিদ্রোহের কারণে লিওনিদ ব্রেজনেভের নেতৃত্বে সোভিয়েত সরকার ১৯৭৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর আফগানিস্তানে সোভিয়েত ৪০তম আর্মি মোতায়েন করে। এর মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যক্ষ আগ্রাসনের সূচনা হয়। রাজধানী কাবুলে পৌঁছানোর পর সোভিয়েত সৈন্যরা একটি অভ্যুত্থানের নাটক করে রাষ্ট্রপতি আমিনকে হত্যা করে এবং একটি প্রতিদ্বন্দ্বী উপদলের সদস্য সোভিয়েতপন্থী বাবরাক কারমালকে ক্ষমতায় বসায়।

১৯৮০ সালের জানুয়ারিতে ৩৪টি মুসলিম রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ আফগানিস্তান থেকে "সোভিয়েত সৈন্যদের তাৎক্ষণিক, জরুরি এবং নি:শর্ত প্রত্যাহারের" দাবি জানিয়ে প্রস্তাব পেশ করে, অন্যদিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১০৪–১৮ ভোটে আফগানিস্তানে সোভিয়েত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রস্তাব গৃহীত হয়। আফগান বিদ্রোহীরা প্রতিবেশী পাকিস্তানচীনে সামরিক প্রশিক্ষণ লাভ করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পারস্য উপসাগরীয় আরব রাজ্যগুলো থেকে বিপুল আর্থিক সহায়তা প্রাপ্ত হয়।

সোভিয়েত সৈন্যরা আফগানিস্তানের শহর ও যোগাযোগ কেন্দ্রগুলো দখল করে, অন্যদিকে মুজাহিদিনরা আফগানিস্তানের যে ৮০ শতাংশ ভূমি আফগান সরকার ও সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল সেসব অংশে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গেরিলা যুদ্ধ আরম্ভ করে। সোভিয়েতরা আফগান বিদ্রোহী ও বেসামরিক জনগণকে কঠোরভাবে মোকাবেলা করার জন্য বিমানশক্তি ব্যবহার করে, মুজাহিদিনদের নিরাপদ আশ্রয় লাভের সুযোগ না দেয়ার উদ্দেশ্য গ্রামের পর গ্রাম মাটিতে মিশিয়ে দেয়, সেচ খালগুলো ধ্বংস করে এবং লক্ষ লক্ষ ভূমি মাইন ছড়িয়ে দেয়।

১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সৈন্যসংখ্যা ১,০৮,০০০-এ বর্ধিত করা হয় এবং দেশব্যাপী সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায়, কিন্তু এই যুদ্ধের ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিপুল সামরিক ও কূটনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ১৯৮৭ সালের মাঝামাঝিতে সংস্কারপন্থী নেতা মিখাইল গর্বাচেভের নেতৃত্বাধীন সোভিয়েত সরকার আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। ১৯৮৮ সালের ১৫ মে আফগানিস্তান থেকে চূড়ান্তভাবে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহার আরম্ভ হয় এবং ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। এই যুদ্ধের দীর্ঘ ব্যাপ্তির জন্য এটিকে কখনো কখনো পশ্চিমা গণমাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিয়েতনাম যুদ্ধ বা ভল্লুকের ফাঁদ হিসেবে অভিহিত করা হয়, এবং যুদ্ধটিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের একটি অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

পটভূমি

[সম্পাদনা]

১৮৮৫ সালে রুশ সৈন্যরা অক্সাস নদীর দক্ষিণ তীরে পাঞ্জদেহ অঞ্চলে একটি বিরোধপূর্ণ মরূদ্যান আফগান সৈন্যদের কাছ থেকে দখল করে নেয়, এবং এই ঘটনাটি পাঞ্জদেহ ঘটনা নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৮৮৫–১৮৮৭ সালের ইঙ্গ-রুশ যৌথ আফগান সীমান্ত কমিশন রাশিয়া ও আফগানিস্তানের মধ্যবর্তী সীমানা নির্দিষ্ট করে। সোভিয়েত আমলেও এ অঞ্চলে রুশ আগ্রহ বজায় থাকে, এবং ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানকে শত শত কোটি ডলার সমমূল্যের আর্থিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করে[]

১৯৭৮ সালের সাউর বিপ্লবের পর ১৯৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল আফগানিস্তান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। নতুন সরকার দরিদ্র-অভিমুখী, কৃষক-অভিমুখী এবং সমাজতান্ত্রিক চেতনার অধিকারী ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে নতুন আফগান সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ১৯৭৮ সালের ৫ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি মৈত্রীচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়[]

১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত অ্যাডলফ ডাবসকে সেতামি মিল্লি জঙ্গিরা অপহরণ করে এবং পরবর্তীতে সোভিয়েত উপদেষ্টাদের সহযোগিতায় আফগান পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করলে গোলাগুলিতে তিনি নিহত হন। ডাবসের মৃত্যু মার্কিন–আফগান সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।

আফগানিস্তানের ঘটনাবলি চলাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছিল। ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইরানি বিপ্লবের ফলে মার্কিন-সমর্থিত ইরানের শাহ ক্ষমতাচ্যুত হন, যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি অন্যতম শক্তিশালী মিত্ররাষ্ট্রকে হারায়। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারস্য উপসাগর ও আরব সাগরে ২টি বিমানবাহী রণতরীসহ ২০টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে অবিরত হুমকি-ধামকি চলতে থাকে। ১৯৭৯ সালের মার্চে ইসরায়েলমিসরের মধ্যে মার্কিন মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সোভিয়েত নেতৃবৃন্দ এই চুক্তিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় সুবিধা বলে বিবেচনা করেন। তদুপরি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে ৫,০০০ এরও বেশিসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করে। এছাড়া ইরাকের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের আগেকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কেরও অবনতি ঘটতে থাকে। ১৯৭৮ সালের জুনে ইরাক পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে এবং ফরাসি ও ইতালীয় অস্ত্র ক্রয় করতে আরম্ভ করে, যদিও তখনও ইরাকের বেশিরভাগ অস্ত্রশস্ত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন, ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত দেশগুলো এবং চীন থেকেই আসত।

সাউর বিপ্লব

[সম্পাদনা]

১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বাদশাহ মুহম্মদ জহির শাহ আফগানিস্তান শাসন করেন। তার চাচাতো ভাই লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহম্মদ দাউদ খান ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এসময় মার্ক্সবাদী পিডিপিএ-এর শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। ১৯৬৭ সালে পিডিপিএ নূর মুহম্মদ তারাকীহাফিজুল্লাহ আমিনের নেতৃত্বাধীন খালক (জনতা) এবং বাবরাক কারমালের নেতৃত্বাধীন পারচাম (পতাকা) নামক দুইটি উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে[]

জহির শাহের সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা সৃষ্টির অভিযোগ উঠলে ১৯৭৩ সালের ১৭ জুলাই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দাউদ এই সুযোগে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। দাউদ আফগানিস্তানে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটান এবং তার শাসন আফগান জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে, কিন্তু পিডিপিএ-এর সমর্থকদের নিতট দাউদের শাসন জনপ্রিয় ছিল না।

দাউদের সরকার কর্তৃক পিডিপিএ সদস্যদের ওপর চালানো নিপীড়ন এবং পিডিপিএ-এর একজন প্রথম সারির নেতা মীর আকবর খাইবারের রহস্যজনক মৃত্যু পিডিপিএ-র উভয় উপদলকে দাউদের সরকারের চরম বিরোধী করে তোলে[]। খাইবারে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার পর কাবুলে দাউদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণবিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর ফলে আফগান কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকজন পিডিপিএ নেতাকে গ্রেপ্তার করে[]

১৯৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল পিডিপিএ-এর প্রতি সহানুভূতিশীল আফগান সেনাবাহিনীর সদস্যরা দাউদের সরকারকে উৎখাত করে এবং দাউদ সপরিবারে নিহত হন[]। পিডিপিএ-এর মহাসচিব নূর মুহম্মদ তারাকী নবগঠিত আফগানিস্তান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের বিপ্লবী পরিষদের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

পিডিপিএ-এর অভ্যন্তরে অন্তর্দ্বন্দ্ব

[সম্পাদনা]

বিপ্লবের পর তারাকী আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী এবং পিডিপিএ-এর মহাসচিব পদে আসীন হন। আফগান সরকার রাষ্ট্রপ্রধান তারাকী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী হাফিজুল্লাহ আমিনের নেতৃত্বে 'খালক' এবং বাবরাক কারমালমুহম্মদ নাজিবুল্লাহর নেতৃত্বাধীন 'পারচাম' এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পিডিপিএ-র এই অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে পারচাম উপদলের সদস্যদের কেউ কেউ নির্বাসিত হন, কেউ কেউ দল থেকে বহিষ্কৃত হন এবং কাউকে কাউকে হত্যা করা হয়[]

পিডিপিএ-এর শাসনকালের প্রথম ১৮ মাসে আফগান সরকার সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুকরণে একটি আধুনিকায়ন ও সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে, যেগুলোর বেশিরভাগই আফগান রক্ষণশীলরা ইসলামবিরোধী হিসেবে বিবেচনা করেন[]। বিবাহ প্রথার পরিবর্তন এবং ভূমি সংস্কার সংক্রান্ত অধ্যাদেশগুলো কট্টর ইসলামপন্থী আফগান জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারে নি, এবং সুদপ্রথা নিষিদ্ধকরণ ও কৃষকদের ঋণ বাতিল করায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ক্ষমতাশালী জমিদাররাও সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট হয় (যদিও খোদ ইসলামেই সুদপ্রথা হারাম)। নতুন সরকার নারীদের অধিকারও বৃদ্ধি করে, নিরক্ষরতা দূরীকরণে সচেষ্ট হয় এবং আফগানিস্তানের জাতিগত সংখ্যালঘুদের সমঅধিকার প্রদান করে, যদিও এসব প্রকল্পের ফলাফল কেবল শহরাঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল বলে প্রতীয়মান হয়[]। ১৯৭৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ শুরু হয়। পূর্ব আফগানিস্তানের নূরিস্তান প্রদেশে বিদ্রোহীরা স্থানীয় সেনানিবাস আক্রমণ করে এবং শীঘ্রই সমগ্র দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বরে উপ-প্রধানমন্ত্রী হাফিজুল্লাহ আমিন রাষ্ট্রপ্রধান তারাকীকে গ্রেপ্তার ও হত্যা করেন এবং শাসনক্ষমতা দখল করেন। আমিন পিডিপিএ-র অভ্যন্তরে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের এবং ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা বিদ্রোহীদের কঠোর হাতে দমনের চেষ্টা চালান, যার ফলে তার শাসনামলে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য তীব্রতর হয়ে ওঠে।

আফগান–সোভিয়েত সম্পর্ক

[সম্পাদনা]
১৯৫০-এর দশকে আফগানিস্তান স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন

সোভিয়েত ইউনিয়ন তার দরিদ্রতর ও ক্ষুদ্রতর প্রতিবেশী রাষ্ট্র আফগানিস্তানের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল। দেশটি আফগানিস্তানের সামরিক-বেসামরিক অবকাঠামো থেকে সমাজব্যবস্থা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে জড়িত ছিল[১০]। ১৯৪৭ সাল থেকে আফগানিস্তান সোভিয়েত সরকারের প্রভাবাধীন ছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে প্রচুর পরিমাণে অনুদান, অর্থনৈতিক সহায়তা, সামরিক সরঞ্জাম এবং সামরিক প্রশিক্ষণ লাভ করে। অবশ্য রুশ বিপ্লবের পর রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ চলাকালে ১৯১৯ সালেই সোভিয়েত সরকার আফগানিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহায্য ও অনুদান প্রদান করেছিল। তৃতীয় ইঙ্গ–আফগান যুদ্ধের সময় সোভিয়েত সরকার আফগানিস্তানকে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, কয়েকটি যুদ্ধবিমান এবং ১০ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা (স্বর্ণ রুবল) প্রদান করে। ১৯৪২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আবার আগ্নেয়াস্ত্র ও যুদ্ধবিমান সরবরাহ এবং তাসখন্দে প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে আফগান সশস্ত্রবাহিনীকে শক্তিশালী করতে সচেষ্ট হয়। ১৯৫৬ সাল থেকে নিয়মিতভাবে সোভিয়েত-আফগান সামরিক সহযোগিতা আরম্ভ হয় এবং ১৯৭০-এর দশকে দেশ দু'টির মধ্যে আরও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে সামরিক উপদেষ্টা ও বিশেষজ্ঞদের প্রেরণ করে।

১৯৭৮ সালে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার পর আফগান রাষ্ট্রপতি মুহম্মদ দাউদ খান আফগান রাজনীতিতে পাকিস্তানইরানের প্রভাব হ্রাস করার জন্য একটি সামরিকীকরণ প্রকল্প আরম্ভ করেন। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে স্বাক্ষরিত একটি চূড়ান্ত চুক্তি অনুযায়ী আফগান সরকার সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ সামরিক সহায়তা দাবি করার অধিকার লাভ করে[১১]

আমাদের বিশ্বাস, স্থলসৈন্য মোতায়েন করা হবে একটি মারাত্মক ভুল। [...] যদি আমরা সৈন্য প্রেরণ করি, আপনাদের দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। বরং এর আরও অবনতি হবে। আমাদের সৈন্যদের কেবল বহি:শত্রুর সঙ্গেই নয়, আপনাদের নিজস্ব জনগণের একটি বড় অংশের সঙ্গেও লড়াই করতে হবে। আর জনগণ এ ধরনের ঘটনা কখনোই ক্ষমা করবে না

— আফগানিস্তানে সোভিয়েত সৈন্য মোতায়েনের জন্য তারাকীর অনুরোধের জবাবে সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সেই কোসিগিন[১২]

১৯৭৯ সালের হেরাত বিদ্রোহের পর আফগান রাষ্ট্রপ্রধান তারাকী সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সেই কোসিগিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং "সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্রসহ বাস্তবিক ও কারিগরি সহায়তা" প্রার্থনা করেন। এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে এমন আশঙ্কা মাথায় রেখে কোসিগিন তারাকীর প্রস্তাবের বিরোধী ছিলেন এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েত সামরিক সহায়তা লাভের জন্য তারাকীর সকল প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেন[১৩]। কোসিগিনের প্রত্যাখ্যানের পর তারাকী সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান ও কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব লিওনিদ ব্রেজনেভের কাছে সহায়তা প্রার্থনা করেন। কিন্তু ব্রেজনেভ তারাকীকে এই বলে সতর্ক করে দেন যে, প্রত্যক্ষ সোভিয়েত হস্তক্ষেপ "কেবল আমাদের শত্রুদের জন্যই সহায়ক হবে – আপনাদের এবং আমাদের উভয়েরই"। ব্রেজনেভ তারাকীকে তার গৃহীত সংস্কার কর্মসূচি শ্লথ করতে এবং তার সরকারের জন্য আরও বেশি জনসমর্থন আদায় করতে পরামর্শ দেন[১৪]

১৯৭৯ সালে তারাকী কিউবার হাভানায় জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের একটি সম্মেলনে যোগদান করেন। ফেরার পথে ২০ মার্চ তিনি মস্কোয় থামেন এবং ব্রেজনেভ, সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই গ্রোমিকো ও অন্যান্য সোভিয়েত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গুজব রটে যে, আমিন ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে তারাকীর খালক উপদল এবং পারচাম উপদলের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের উদ্দেশ্যে কারমাল এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে তারাকী কিছু সোভিয়েত সহায়তা আদায় করে নিতে সক্ষম হন। তারাকীর অনুরোধে সোভিয়েত-আফগান সীমান্তে সোভিয়েত ইউনিয়ন দুই ডিভিশন সশস্ত্র সৈন্য মোতায়েন করে, আফগানিস্তানে ৫০০ সামরিক ও বেসামরিক উপদেষ্টা ও বিশেষজ্ঞ প্রেরণ করে এবং প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ২৫% কম মূল্যে আফগানিস্তানের নিকট বিক্রি করা অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দ্রুত সরবরাহ করে। কিন্তু সোভিয়েতরা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে তবুও সন্তুষ্ট ছিল না এবং ব্রেজনেভ তারাকীকে দলীয় ঐক্য স্থাপনের জন্য চাপ দেন। তারাকীর সঙ্গে এই চুক্তি সম্পাদনের পরেও সোভিয়েতরা তারাকীর শাসনামলে এবং আমিনের স্বল্পকালীন শাসনামলে আফগানিস্তানে সৈন্য মোতায়েন করতে অনাগ্রহী থাকে[১৫]

বিদ্রোহ আরম্ভ

[সম্পাদনা]

বিদ্রোহীদের প্রতি পাকিস্তানি সহায়তা

[সম্পাদনা]
আফগানিস্তানে মোতায়েনকালে সোভিয়েত পদাতিক সৈন্য

আফগান রাষ্ট্রপ্রধান দাউদের পশতুনিস্তান নীতির কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল[১৬]। পাকিস্তানি রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলী ভুট্টোর নির্দেশে পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার মেজর জেনারেল নাসিরুল্লাহ বাবর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একটি গোপন অভিযান পরিচালনা করেন[১৬]। ১৯৭৪ সালে ভুট্টো কাবুলে আরেকটি গোপন অভিযান পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান করেন। এই অভিযানে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা দপ্তর আফগানিস্তান থেকে বুরহানউদ্দিন রাব্বানীগুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারকে পেশোয়ারে স্থানান্তর করে, কারণ আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে, দাউদ তাদের গুপ্তহত্যা করাতে পারেন[১৬]। ভুট্টোর এই অভিযানের ফলে দাউদ ও তার সরকারের ওপর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় এবং দাউদ ভুট্টোর সঙ্গে শান্তি স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন[১৬]। পাকিস্তানি অভিযানের আরেকটি অংশ ছিল দাউদের ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের বিরুদ্ধে কট্টরপন্থী জামিয়াত-এ ইসলামি সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান[১৬]। অবশ্য ভুট্টো ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই প্রকল্পটি বাতিল করা হয়[১৬]

১৯৭৫ সালের জুনে জামিয়াত-এ ইসলামি দলের জঙ্গিরা আফগান সরকারকে উৎখাত করার প্রচেষ্টা চালায়। কাবুল থেকে প্রায় ১০০ কি.মি. উত্তরে পাঞ্জশির উপত্যকায় এবং আপগানিস্তানের আরও বেশ কয়েকটি প্রদেশে তাদের বিদ্রোহ শুরু হয়। কিন্তু আফগান সরকারি বাহিনী সহজেই এই বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হয় এবং বিদ্রোহীদের বড় একটি অংশ পাকিস্তানে আশ্রয় গ্রহণ করে[১৭]

কিছু মুজাহিদকে বন্দি করার পর সোভিয়েত সৈন্যবাহিনী
৪০তম আর্মির সদরদপ্তর, তাজবেগ প্রাসাদ, ১৯৮৬
প্রশিক্ষণকালে সোভিয়েত সৈন্যরা

১৯৭৮ সালে তারাকী সরকার আফগানিস্তানে বিস্তৃত সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে। এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল ঐতিহ্যবাহী ইসলামি বেসামরিক আইন এবং বিশেষত বিবাহসংক্রান্ত আইনের বৈপ্লবিক আধুনিকায়ন, যেটির মূল লক্ষ্য ছিল আফগান সমাজে বিদ্যমান সামন্তবাদ উৎপাটিত করা[১৮]। সরকার এসব সংস্কারের প্রতি কোনো বিরোধিতা সহ্য করে নি[] এবং সকল প্রকার বিরোধিতা কঠোর হস্তে দমন করে। ১৯৭৮ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে অনেক গ্রাম্য মোল্লা ও গ্রামপ্রধানসহ প্রায় ২৭,০০০ বন্দিকে কুখ্যাত পুল-এ-চারখি কারাগারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়[১৯][২০]। আফগানিস্তানের অভিজাত শ্রেণির অন্যান্য সদস্য, ধর্মীয় নেতা এবং বুদ্ধিজীবীগণ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান[২০]

দেশটির বড় অংশ খোলাখুলিভাবে বিদ্রোহ করে। পরবর্তীতে পারচাম সরকার দাবি করে যে, আমিন ও তারাকীর শাসনামলে এসব বিদ্রোহের প্রত্যুত্তরে প্রায় ১১,০০০ লোককে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়[২১]। অক্টোবরে পাকিস্তান সীমান্তের নিকটে দেশের উত্তর-পূর্ব অংশে কুনার উপত্যকায় নূরিস্তানি উপজাতিগুলো বিদ্রোহ করে, এবং শীঘ্রই বিদ্রোহ অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালের বসন্তকালের মধ্যে দেশের ২৮টি প্রদেশের মধ্যে ২৪টিতেই বিদ্রোহ দেখা দেয়[২২][২৩]। বিদ্রোহ শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে: ১৯৭৯ সালের মার্চে হেরাত শহরে ইসমাইল খানের নেতৃত্বে বিদ্রোহ আরম্ভ হয়। এই বিদ্রোহকালে ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ১০০ সোভিয়েত নাগরিকও প্রাণ হারায়[২৪][২৫]

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের হত্যাকাণ্ড

[সম্পাদনা]

১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তানে বিরাজমান বিশৃঙ্খল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে দেশটিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত অ্যাডলফ ডাবস একদল রহস্যময় জঙ্গির দ্বারা অপহৃত হন। এই জঙ্গিরা কট্টরপন্থী কমিউনিস্ট দল "সেত্তাম-এ-মিল্লি" ("জাতীয় শোষণ")-এর সদস্য ছিল বলে ধারণা করা হয়, তবে কখনো কখনো তারা ইসলামপন্থী কোনো দলের সদস্য ছিল বলেও সন্দেহ করা হয়[২৬]। সেত্তাম-এ-মিল্লি তাদের কমিউনিস্ট নেতা বদরুদ্দিন বাহেসের মুক্তির দাবি জানায়, যদিও আফগান সরকার তাকে বন্দি রাখার কথা অস্বীকার করে। মার্কিন দূতাবাসের দাবি সত্ত্বেও আফগান সরকার জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানায়[২৬]। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগান সরকার ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর চাপ প্রয়োগ করে এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে তাদের রাষ্ট্রদূতকে মুক্ত করার দাবি জানায়[২৭]

ডাবসকে কাবুল হোটেলের ১১৭ নং কক্ষে বন্দি করে রাখা হয়েছিল এবং মার্কিন সরকার জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল প্রেরণ করে[২৬]। আফগান নিরাপত্তারক্ষী ও সোভিয়েত উপদেষ্টারা হোটেলটি ঘিরে ফেলে এবং সোভিয়েত উপদেষ্টারা আক্রমণ চালানোর নির্দেশ দেয়ার পর জঙ্গিদের সঙ্গে ব্যাপক গুলিবিনিময় হয়[২৭]। ১৯৯০-এর দশকের প্রথমদিকে প্রকাশিত সোভিয়েত কেজিবির নথিপত্র থেকে জানা যায় যে, আফগান সরকার আক্রমণটি অনুমোদন করেছিল এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেজিবি উপদেষ্টা সের্গেই বাত্রুকিন আক্রমণ চালানোর পাশাপাশি মার্কিন বিশেষজ্ঞরা জিজ্ঞাসাবাদ করার পূর্বেই একজন বন্দি হওয়া অপহরণকারীকে হত্যা করার সুপারিশ করেছিলেন[২৮]। আলোচনার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডাবস গোলাগুলিতে নিহত হন[২৭]। এই ঘটনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের নিকট এই আক্রমণটির ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে, যা মার্কিন–সোভিয়েত সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটায়[২৯]

বিদ্রোহীদের প্রতি মার্কিন সহায়তা

[সম্পাদনা]

১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে আফগানিস্তানের ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তা প্রদানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোকে চাপ দিতে থাকেন। পাকিস্তানি রাষ্ট্রপতি মুহম্মদ জিয়াউল হকের সময়ে পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্প এবং ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে জুলফিকার আলী ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কারণে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টারের প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। তবে তা সত্ত্বেও কার্টার তার জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জিবিগন্যু ব্রেজেজিনস্কিকে ইরান সঙ্কটের পরিপ্রক্ষিতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানোর নির্দেশ দেন[৩০]। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র প্রাক্তন কর্মকর্তা রবার্ট গেটসের মতে, "বিশেষত ১৯৭৯ সালের মাঝামাঝি তৃতীয় বিশ্বে আরম্ভ হওয়া সোভিয়েত ও কিউবান আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য কার্টার প্রশাসন সিআইএ-র দ্বারস্থ হয়"। ১৯৭৯ সালের মার্চে সিআইএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ সমন্বয় কমিটির কাছে আফগানিস্তানে গুপ্ত অভিযান পরিচালনার বিষয়ে বেশ কয়েকটি পথ তুলে ধরে। ৩০ মার্চে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ওয়াল্টার স্লোকোম্বে প্রশ্ন করেন যে আফগান বিদ্রোহ অব্যাহত রাখার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে কি যাতে করে সোভিয়েতদের একটি 'ভিয়েতনামি পাঁকে' আটকে ফেলা যায়[৩১]? মন্তব্যটি স্পষ্ট করতে বলা হলে স্লোকোম্বে ব্যাখ্যা করেন: আসলে সম্পূর্ণ ধারণাটি ছিল এরকম যে যদি সোভিয়েতরা আফগানিস্তান আক্রমণ করে, তাহলে তারা যেন সেখানে আটকা পড়ে যায় এটা নিশ্চিত করার মধ্যেই আমাদের স্বার্থ নিহিত ছিল[৩২]। তবে তা সত্ত্বেও ৫ এপ্রিলে জাতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা আর্নল্ড হোরেলিক সতর্ক করে দেন যে: গুপ্ত কার্যক্রমের ফলে সোভিয়েতদের ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি পাবে এবং অনেক দেশে তাদের বিরুদ্ধে মুসলিম জনমত গঠিত হবে। ঝুঁকির বিষয়টি হচ্ছে বড়মাত্রার মার্কিন গুপ্ত সহায়তা প্রকল্প সোভিয়েতদেরকে আরও প্রত্যক্ষ ও জোরালোভাবে হস্তক্ষেপ করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে, যেটি আমাদের উদ্দেশ্য নয়[৩১]

সোভিয়েত অভিযানসমূহ ১৯৭৯–৮৫

[সম্পাদনা]

সৈন্য প্রেরণ

[সম্পাদনা]
১৯৮৭ সালে কাবুলে সোভিয়েত ৪০তম আর্মির সদর দপ্তর। সোভিয়েত হস্তক্ষেপের পূর্বে এই ভবনটি ছিল তাজবেগ প্রাসাদ, যেখানে হাফিজুল্লাহ আমিনকে হত্যা করা হয়েছিল

১৯৭৯ সালের বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে আফগান সরকার ১৯৭৮ সালের চুক্তি অনুযায়ী আফগানিস্তানে সোভিয়েত সৈন্য মোতায়েনের জন্য বারবার অনুরোধ করতে থাকে। নিরাপত্তা বিধান এবং মুজাহিদ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সহায়তা করার জন্য তারা সোভিয়েত সৈন্য মোতায়েন করার অনুরোধ করেছিল। ১৯৭৯ সালের ১৪ এপ্রিল আফগান সরকার সোভিয়েত ইউনিয়নকে আফগানিস্তানে ক্রুসহ ১৫ থেকে ২০টি হেলিকপ্টার প্রেরণ করার অনুরোধ জানায়। আফগান সরকারের পূর্বের অনুরোধে সাড়া দিয়ে সোভিয়েত সরকার ১৬ জুন কাবুলের সরকার এবং বাগরাম ও শিনদান্দ বিমানঘাঁটিদ্বয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আফগানিস্তানে কিছু ট্যাঙ্ক, বিএমপি এবং ক্রু প্রেরণ করে। আফগান সরকারের ১৪ এপ্রিলের অনুরোধ মঞ্জুর করে সোভিয়েত ইউনিয়ন লেফটেন্যান্ট কর্নেল লোমাকিনের নেতৃত্বে একটি এয়ারবোর্ন ব্যাটালিয়ন প্রেরণ করে, যেটি ৭ জুলাই বাগরাম বিমানঘাঁটিতে পৌঁছায়। সোভিয়েত প্যারাট্রুপারদের সমরসজ্জা ব্যতীত কারিগরি বিশেষজ্ঞের ছদ্মবেশে প্রেরণ করা হয়েছিল। এরা ছিল আফগান রাষ্ট্রপ্রধান তারাকীর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। এই প্যারাট্রুপাররা সরাসরি সিনিয়র সোভিয়েত সামরিক উপদেষ্টার অধীনস্থ ছিল এবং তারা আফগান রাজনীতিতে কোনোপ্রকার হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকে। আলেক্সেই কোসিগিন এবং আন্দ্রেই গ্রোমিকোর মত শীর্ষ সোভিয়েত নেতারা এসময় আফগানিস্তানে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের বিরোধী ছিলেন।

এক মাস পরে আফগান সরকার আর ক্রু কিংবা ছোট ইউনিট নয়, বরং রেজিমেন্ট ও বড় বড় ইউনিট প্রেরণের জন্য অনুরোধ জানাতে থাকে। জুলাইয়ে আফগান সরকার আফগানিস্তানে দুইটি সোভিয়েত মোটর রাইফেল ডিভিশন প্রেরণের অনুরোধ জানায়। পরের দিন তারা এর সঙ্গে একটি অতিরিক্ত এয়ারবোর্ন ডিভিশন প্রেরণেরও অনুরোধ জানায়। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা এ ধরনের অনুরোধের পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। কিন্তু সোভিয়েত সরকার তাদের অনুরোধে সাড়া দেয়ার জন্য আগ্রহী ছিল না।

আমাদের উচিত তারাকী এবং আমিনকে তাদের কৌশল পাল্টাতে বলা। তারা এখনো যেসব লোক তাদের সঙ্গে একমত নয় তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে। তারা পারচামের কেবল উচ্চ পর্যায়েরই নয়, মাঝারি পর্যায়েরও প্রায় সব নেতাকে মেরে ফেলছে।

— পলিটব্যুরোর অধিবেশনকালে কোসিগিন[৩৩]
মুজাহিদদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সময় সোভিয়েত সৈন্যদল

কেজিবির তথ্যের ভিত্তিতে সোভিয়েত নেতারা ধারণা করেন যে, হাফিজুল্লাহ আমিনের কার্যকলাপের জন্য আফগানিস্তানের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। তারাকীর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর কেজিবির কাবুল শাখার সদস্যরা মস্কোকে সতর্ক করে দেন যে, আমিনের শাসনের ফলে নিষ্ঠুর নির্যাতন দেখা দেবে, যা বিদ্রোহীদেরকে সক্রিয় ও সংগঠিত করবে[৩৪]

সোভিয়েত ইউনিয়নে কেজিবি প্রধান ইউরি আন্দ্রোপভ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বোরিস পোনোমারেভ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী দিমিত্রি উস্তিনভের সমন্বয়ে আফগানিস্তান সংক্রান্ত একটি কমিশন গঠন করা হয়। ১৯৭৮ সালের এপ্রিলের শেষদিকে কমিটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে, আমিন সোভিয়েত সমর্থকদেরসহ তার বিরোধীদের দল থেকে বহিষ্কার করছেন, মস্কোর প্রতি তার আনুগত্য প্রশ্নবিদ্ধ এবং তিনি পাকিস্তান ও সম্ভবত চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। বিশেষত মার্কিন চার্জ-দ্য-অ্যাফেয়ার্স ব্রুস অ্যামস্টুটযের সঙ্গে আমিনের গোপন বৈঠক (যদিও তারা প্রকৃতপক্ষে কোনো চুক্তিতে পৌঁছান নি) ক্রেমলিনে আমিনের প্রতি সন্দেহের সৃষ্টি করে[৩৫]

কাবুল থেকে কেজিবি এজেন্টদের মস্কোয় প্রেরিত তথ্য আমিনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ধারণা করা হয়, আমিনের দু'জন দেহরক্ষী বালিশ চাপা দিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান তারাকীকে হত্যা করেছিল এবং আমিন নিজেই একজন সিআইএ এজেন্ট বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল। যদিও দ্বিতীয় বিষয়টি বিতর্কিত, কারণ আফগানিস্তানে আসা প্রতিটি সোভিয়েত প্রতিনিধি দলের প্রতি আমিন বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেছিলেন। ব্রেজনেভের একজন রাজনৈতিক উপদেষ্টা জেনারেল ভ্যাসিলি জাপ্লাতিন দাবি করেছিলেন যে, তারাকীর চারজন মন্ত্রী আফগানিস্তানে অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী। কিন্তু জাপ্লাতিন আলোচনাকালে তার বক্তব্য প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন এবং তার মতামত অগ্রাহ্য করা হয়[৩৬]

১৯৭৯ সালের মার্চে রাষ্ট্রপ্রধান তারাকী এবং সোভিয়েত নেতাদের মধ্যে বৈঠককালে সোভিয়েতরা আফগান সরকারকে রাজনৈতিক সমর্থন প্রদান এবং সামরিক সরঞ্জাম ও কারিগরি বিশেষজ্ঞ প্রেরণের প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু তারাকীর বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও সোভিয়েত নেতারা আফগানিস্তানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের যুক্তি ছিল যে, প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করলে তারা আফগান জনগণের শত্রুতা অর্জন করবেন এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা একটি প্রচারণামূলক বিজয় লাভ করবে। বস্তুত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আফগানিস্তানের গুরুত্বহীনতার কারণে সোভিয়েত নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেছিলেন যে, আফগানিস্তানের মতো একটি দরিদ্র, অস্থিতিশীল এবং বিদেশিদের প্রতি বিরূপ মনোভাবাপন্ন জনসাধারণের দেশে প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তারা কিছুই অর্জন করতে পারবেন না। কিন্তু ১৯৭৯ সালের মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটলে সৈন্য প্রেরণের ব্যাপারে মস্কোর মনোভাবের পরিবর্তন হয়। সোভিয়েত নেতৃবৃন্দের মনোভাবের এরকম আকস্মিক পরিবর্তনের প্রকৃত কারণ পরিষ্কার নয়, তবে আফগানিস্তানের বিপজ্জনক অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি, বিদ্রোহ মোকাবেলায় আমিনের নেতৃত্বাধীন নতুন আফগান সরকারের ব্যর্থতা, ইরানি বিপ্লবের প্রভাবে আফগানিস্তান ও মুসলিম-অধ্যুষিত সোভিয়েত মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রগুলোতে ধর্মীয় উগ্রপন্থা বিস্তারের আশঙ্কা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্রমাবনতি প্রভৃতিকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সামরিক হস্তক্ষেপের কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়[৩৭]

সোভিয়েত হস্তক্ষেপ এবং অভ্যুত্থান

[সম্পাদনা]
সোভিয়েত সামরিক হস্তক্ষেপ

১৯৭৯ সালের ৩১ অক্টোবর আফগান সশস্ত্রবাহিনীতে নিযুক্ত সোভিয়েত সামরিক উপদেষ্টারা সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান ব্রেজনেভের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের নির্দেশে আফগান সৈন্যদের তাদের ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জামকে রক্ষণাবেক্ষণ চক্রের আওতায় আনার জন্য তথ্য প্রদান করেন। একই সময়ে কাবুলের বাইরের অঞ্চলগুলোর সঙ্গে শহরটির টেলিযোগাযোগ ছিন্ন করে শহরটিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। দ্রুত অবনতির দিকে ধাবিত হওয়া নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে আফগানিস্তানে বিদ্যমান সোভিয়েত স্থলসেনাদের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক প্যারাট্রুপার যোগদান করে এবং ২৫ ডিসেম্বর কাবুলে অবতরণ করে। একই সময়ে আমিন রাষ্ট্রপ্রধানের কার্যালয় তাজবেগ প্রাসাদে সরিয়ে নেন। তার ধারণা ছিল এই স্থানটি বিভিন্ন হুমকি থেকে অধিকতর নিরাপদ। আফগানিস্তানে প্রেরিত সোভিয়েত ৪০তম আর্মির প্রথম কমান্ডার কর্নেল-জেনারেল ইউরি তুখারিনভের বক্তব্য অনুযায়ী, আমিন সর্বশেষ ১৭ ডিসেম্বর উত্তর আফগানিস্তানে সোভিয়েত সামরিক সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছিলেন এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েত সৈন্যদের গতিবিধি সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবগত ছিলেন[৩৮][৩৯]। দেশটিতে সোভিয়েত সৈন্য প্রবেশের পূর্বে আমিনের ভাই এবং জেনারেল দিমিত্রি চিয়াঙ্গভ সোভিয়েত ৪০তম আর্মির কমান্ডারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সোভিয়েত সৈন্যদের প্রাথমিক গতিপথ ও মোতায়েনস্থল নির্ধারণ করেন[৩৮]

১৯৭৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর কেজিবি এবং গ্রু-র বিশেষ বাহিনী আলফা গ্রুপজেনিথ গ্রুপের কর্মকর্তাসহ ৭০০ সোভিয়েত সৈন্য কাবুলের প্রধান প্রধান সরকারি, সামরিক ও প্রচারমাধ্যমের ভবনগুলো দখল করে নেয়।

কাবুলে একটি বিএমডি-১-এর ওপরে সোভিয়েত প্যারাট্রুপার

সেদিন সন্ধ্যা ৭:০০টায় কেজিবি-পরিচালিদ সোভিয়েত জেনিথ গ্রুপ কাবুলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয় এবং এর মাধ্যমে আফগান সামরিক কমান্ডকে অকেজো করে দেয়। ৭:১৫ তে তাজবেগ প্রাসাদের ওপর আক্রমণ আরম্ভ হয় এবং পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক আফগান রাষ্ট্রপ্রধান হাফিজুল্লাহ আমিনকে হত্যা করে। একই সঙ্গে কাবুলের আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য লক্ষ্যবস্তু দখল করে নেয়া হয়। ১৯৭৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে অভিযানটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

উজবেক প্রজাতন্ত্রের তেরমেজ থেকে সোভিয়েত সামরিক কর্তৃপক্ষ রেডিও কাবুলে ঘোষণা করেন যে, আফগানিস্তান আমিনের "দু:শাসন" থেকে মুক্ত হয়েছে। সোভিয়েত পলিটব্যুরোর বক্তব্য অনুযায়ী, তারা ১৯৭৮ সালে স্বাক্ষরিত বন্ধুত্ব, সহযোগিতা এবং ভালো প্রতিবেশীসুলভ আচরণ সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী চলছেন, আফগান বিপ্লবী কেন্দ্রীয় কমিটি আমিনকে "তাঁর অপরাধসমূহের জন্য মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছে"এবং এরপর উক্ত কমিটি সরকারপ্রধান হিসেবে প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী বাবরাক কারমালকে নির্বাচিত করেছে (খালক কর্তৃক ক্ষমতা দখলের পর তাঁকে চেকোস্লোভাকিয়ায় রাষ্ট্রদূতের গুরুত্বহীন পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল)। তাঁরা আরও ঘোষণা করেন যে, নতুন আফগান সরকার সোভিয়েত সামরিক সহায়তা প্রার্থনা করেছে[৪০]

২৭ ডিসেম্বর মার্শাল সের্গেই সকোলভের নেতৃত্ব সোভিয়েত স্থলসেনারা উত্তর দিক থেকে আফগানিস্তানে প্রবেশ করে। সকালে বাগরাম বিমানঘাঁটিতে সোভিয়েত ১০৩তম রক্ষী 'ভিতেবস্ক' এয়ানবোর্ন ডিভিশন অবতরণ করে এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েত সৈন্য মোতায়েন আরম্ভ হয়। আফগানিস্তানে প্রবেশকারী সোভিয়েত সৈন্যবাহিনী (১০৩তম রক্ষী এয়ারবোর্ন ডিভিশনসহ) ৪০তম আর্মির অধীন ছিল এবং সোভিয়েত ১০৮তম ও ৫ম রক্ষী মোটর রাইফেল ডিভিশন, ৮৬০তম পৃথক মোটর রাইফেল রেজিমেন্ট, ৫৬তম পৃথক এয়ারবোর্ন অ্যাসল্ট ব্রিগেড, এবং ৩৬তম মিশ্র এয়ার কোরের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে আরও কিছু ক্ষুদ্র ইউনিটের সঙ্গে সোভিয়েত ২০১তম এবং ৫৮তম মোটর রাইফেল ডিভিশনও দেশটিতে প্রবেশ করে[৪১]। আফগানিস্তানে প্রবেশকারী সোভিয়েত সৈন্যবাহিনীতে প্রাথমিকভাবে ৮০,০০০ সৈন্য, প্রায় ১,৮০০টি ট্যাঙ্ক এবং প্রায় ২,০০০টি এএফভি ছিল। কেবল দ্বিতীয় সপ্তাহেই সোভিয়েত বিমানগুলো কাবুলে সর্বমোট ৪,০০০টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল[৪২]। পরবর্তীতে আরও দুই ডিভিশন সোভিয়েত সৈন্য আগমনের পর মোট সৈন্যসংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় ১,০০,০০০-এর বেশি।

সোভিয়েত হস্তক্ষেপের প্রতি আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

[সম্পাদনা]

৩৪টি মুসলিমপ্রধান দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আফগানিস্তানে সোভিয়েত হস্তক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং অবিলম্বে ও নি:শর্তভাবে মুসলিম রাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানান[৪৩]। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১০৪–১৮ ভোটে আফগানিস্তানে সোভিয়েত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়[৪৪]মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ৬৫টি দেশ আফগানিস্তানে সোভিয়েত হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে ১৯৮০ সালে মস্কোয় অনুষ্ঠিতব্য গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস বয়কট করে। রাজনৈতিক বিজ্ঞানী গিলেস কেপেলের মতে, আফগানিস্তানে সোভিয়েত হস্তক্ষেপ বা 'আক্রমণ'কে পশ্চিমা বিশ্বে "আতঙ্কের সঙ্গে দেখা হয়" এবং তারা এটিকে ভূরাজনীতিতে একটি "স্পষ্ট পরিবর্তন" হিসেবে বিবেচনা করে, যেটির মাধ্যমে ১৯৪৫ সালের ইয়াল্টা সম্মেলনে স্বীকৃত ক্ষমতার ভারসাম্যের লঙ্ঘন ঘটেছে বলে তারা মনে করতে থাকে[৪৫]

বেশ কয়েকটি দেশের মাধ্যমে আফগান মুজাহিদদের অস্ত্র সরবরাহ আরম্ভ হয়; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল কর্তৃক আরব রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে দখলকৃত সকল সোভিয়েত অস্ত্র ক্রয় করে মুজাহিদদের নিকট প্রেরণ করে, মিসর নিজস্ব সেনাবাহিনীর জন্য নতুন অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করে পুরাতন অস্ত্রগুলো মুজাহিদদের কাছে পাঠিয়ে দেয়, তুরস্ক তাদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলের অস্ত্রভাণ্ডার মুজাহিদদের প্রেরণ করে, আর যুক্তরাজ্যসুইজারল্যান্ড যথাক্রমে ব্লোপাইপ ক্ষেপণাস্ত্রওরেলিকন বিমান-বিধ্বংসী কামান তাদের সেনাবাহিনীর জন্য অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের বিবেচিত হওয়ায় সেগুলো মুজাহিদদের সরবরাহ করে[৪৬]চীনও গেরিলাযুদ্ধে তাদের নিজস্ব বিস্তৃত অভিজ্ঞতা অনুসারে তাদের সবচেয়ে প্রচলিত অস্ত্রগুলো মুজাহিদদের সরবরাহ করে এবং সবগুলো সরবরাহের সূক্ষ্ম হিসাব সংরক্ষণ করে[৪৬]

ডিসেম্বর ১৯৭৯ – ফেব্রুয়ারি ১৯৮০: সৈন্য মোতায়েন

[সম্পাদনা]

যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে সোভিয়েত সৈন্যরা বিভিন্ন বিদ্রোহী দলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হয়[৪৩]। সোভিয়েত সৈন্যরা স্থলপথ ও আকাশপথে আফগানিস্তানে প্রবেশ করে দ্রুত দেশটির প্রধান প্রধান শহর, সামরিক ঘাঁটি এবং কৌশলগত স্থাপনাগুলোর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু সোভিয়েত সৈন্যদের উপস্থিতির ফলে দেশটির পরিস্থিতি আশানুরূপ স্থিতিশীল হয় নি। বরং এটি আফগানদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার সৃষ্টি করে এবং ফলে বিদ্রোহের মাত্রা আরও বিস্তৃত হয়[৪৭]। আফগানিস্তানের নতুন রাষ্ট্রপ্রধান বাবরাক কারমাল সোভিয়েতদেরকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য দায়ী করেন এবং ৪০তম আর্মিকে সরাসরিভাবে বিদ্রোহ দমনে অংশ নেয়ার জন্য দাবি জানান, কারণ তার নিজের সেনাবাহিনী বিশ্বাসের অযোগ্য হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছিল[৪৮]। এভাবে সোভিয়েত সৈন্যরা আবিষ্কার করে যে, তাদেরকে শহুরে বিদ্রোহ, উপজাতীয় সৈন্যদলসমুহ ("লস্কর" নামে পরিচিত) এবং কখনো কখনো আফগান সেনাবাহিনীর বিদ্রোহী ইউনিটগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। অবশ্য এসব বাহিনী প্রধানত খোলা স্থানে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, যার ফলে সোভিয়েত যুদ্ধবিমান ও কামানগুলো তাদের দমন করার কাজ অনেকটাই সহজ করে দেয়[৪৯]

১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারি কান্দাহারের অধিবাসীরা বিদ্রোহ করে এবং সেখানে অবস্থানরত সোভিয়েত সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করে[১১]। ১৯৮০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কাবুলের জনসাধারণ সোভিয়েত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিলের ওপর সোভিয়েত সৈন্যরা গুলিবর্ষণ করলে শত শত আফগান নিহত হয় এবং কয়েক হাজার আফগানকে গ্রেপ্তার করা হয় (গ্রেপ্তারকৃতদের পরবর্তীতে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়)[১১]। একই দিন শিনদান্দে সোভিয়েতবিরোধী দাঙ্গা আরম্ভ হয়। সোভিয়েত সৈন্যরা দাঙ্গাটি দমন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে[১১]

মার্চ ১৯৮০ – এপ্রিল ১৯৮৫: প্রচণ্ড যুদ্ধ

[সম্পাদনা]
কুনার প্রদেশে একজন মুজাহিদ যোদ্ধা একটি কমিউনিকেশন্স রিসিভার ব্যবহার করছেন

যুদ্ধটি ক্রমে একটি নতুন রূপ ধারণ করে: সোভিয়েতরা আফগানিস্তানের শহর ও প্রধান যোগাযোগ কেন্দ্রগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে, আর বিদ্রোহী মুজাহিদরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ ভূমি সরকারের হাতছাড়া হয়ে যায়[৫০]। সোভিয়েত সৈন্যদের উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে, বিশেষত তেরমেজ থেকে কাবুল পর্যন্ত রাস্তা বরাবর মোতায়েন করা হয়। ইরানের প্রভাব প্রতিহত করার জন্য পশ্চিম আফগানিস্তানে একটি শক্তিশালী সোভিয়েত সৈন্যদল মোতায়েন রাখা হয়। কখনো কখনো সোভিয়েত স্পেৎসনাজ সৈন্যরা সেখান থেকে ইরানের অভ্যন্তরে মুজাহিদ ঘাঁটিগুলোর ওপর গুপ্ত আক্রমণ চালায় এবং সোভিয়েত হেলিকপ্টারগুলো ইরানি বিমানবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়[৫১]। অন্যদিকে, উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের নূরিস্তান এবং মধ্য আফগানিস্তানের পার্বত্য হাজারাজাত অঞ্চলসহ বেশকিছু অঞ্চলে সোভিয়েত সৈন্যদের কোনো উপস্থিতি ছিল না এবং যুদ্ধের পুরো সময় জুড়ে এসব অঞ্চল প্রায় স্বাধীন অবস্থায় থাকে।

১৯৮৪ সালে জাজিতে দুইটি দখলকৃত কামানসহ মুজাহিদ যোদ্ধাগণ

কখনো কখনো সোভিয়েত সৈন্যবাহিনী মুজাহিদ-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে কয়েক ডিভিশন সৈন্যসহ আক্রমণ চালায়। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে সোভিয়েত ও আফগান সৈন্যরা কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পাঞ্জশির উপত্যকায় ৯টি আক্রমণ চালায়, কিন্তু অঞ্চলটিতে আফগান সরকারের পূর্ণ বা স্থায়ী কর্তৃত্ব কখনোই প্রতিষ্ঠিত হয় নি[৫২]পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলোতেও তীব্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এসব প্রদেশের শহর ও সরকারি বাহিনীর ঘাঁটিগুলো প্রায়ই মুজাহিদদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ত। সোভিয়েতরা নিয়মিতভাবে বড়মাত্রার অভিযান চালিয়ে এসব অবরোধ ভেঙে ফেলত, কিন্তু সোভিয়েত সৈন্যরা ফিরে যাওয়ার পরপরই মুজাহিদরা ফিরে আসত[৫৩]। পশ্চিম ও দক্ষিণ আফগানিস্তানে যুদ্ধ হয় অনেকটা বিক্ষিপ্তভাবে এবং সীমিত মাত্রায়, ব্যতিক্রম ছিল হেরাতকান্দাহার, যে প্রদেশগুলোর অংশবিশেষ সবসময়ই মুজাহিদদের দখলে থাকত[৫৪]

যুদ্ধের প্রথমদিকে সোভিয়েতরা আফগান বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এমন সক্রিয়ভাবে তাদেরকে অংশ নিতে হবে এ ধারণা করে নি। এজন্য তারা আফগান সেনাবাহিনীকে সীমিত সমর্থন প্রদানের মধ্যে যুদ্ধে তাদের ভূমিকা সীমিত রাখার প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু সোভিয়েত হস্তক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হয় কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের সম্পূর্ণ উল্টো। সোভিয়েত সৈন্যদের উপস্থিতি আফগান জনসাধারণকে শান্ত করার পরিবর্তে মুজাহিদদের শক্তি ও সংখ্যাবৃদ্ধিতে সহায়তা করে [৫৫]। প্রকৃতপক্ষে সোভিয়েতরা ধারণা করেছিল যে তাদের সৈন্যদের উপস্থিতি আফগান সেনাবাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি করবে এবং বড় বড় শহর, যোগাযোগ কেন্দ্রসমূহ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মধ্যে তাদের সহযোগিতা সীমাবদ্ধ থাকবে[৫৬]। কিন্তু আফগান সামরিক বাহিনীতে সৈন্যদের দলত্যাগের হার ছিল খুবই বেশি এবং বিশেষত যখন সোভিয়েত সৈন্যরা সাঁজোয়া যান ও গোলন্দাজ বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে তাদের ওপর পদাতিক বাহিনীর দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় তখন থেকেই তারা যুদ্ধ করতে আগ্রহী ছিল না। তবে আফগান সৈন্যদের এতটা অকর্মণ্যতার মূল কারণ ছিল যে, তারা মনোবলহীন হয়ে পড়েছিল, কেননা বস্তুত তাদের অনেকেই আফগান কমিউনিস্ট সরকারের প্রতি আন্তরিকভাবে অনুগত ছিল না বরং কেবল বেতন সংগ্রহ করছিল। যখন এটি স্পষ্ট হয়ে গেল যে সোভিয়েতদের নিজেদেরকেই যুদ্ধের গুরুভার কাঁধে নিতে হবে, তখন তারা বিদ্রোহ দমনের জন্য তিনটি প্রধান কৌশল অবলম্বন করে[৫৭]। প্রথম কৌশলটি ছিল ভীতিপ্রদর্শন। সোভিয়েতরা গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণের মাধ্যমে সেখানকার গ্রাম, গবাদিপশু ও শস্যক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করে দেয়। যেসব স্থানে সোভিয়েত সৈন্যবহরগুলোর ওপর গেরিলা হামলা হত অথবা যেসব স্থানের জনসাধারণ মুজাহিদ দলগুলোকে সহযোগিতা করত, সেসব স্থানের গ্রামগুলোর ওপর সোভিয়েতরা বোমাবর্ষণ করত। এসব অঞ্চলে নিয়মিত সোভিয়েত আক্রমণের ফলে সেখানে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় এবং স্থানীয় জনসাধারণ হয় মৃত্যুবরণ করে নয়ত বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এসব অঞ্চলকে জনশূন্য করার মাধ্যমে সোভিয়েতরা গেরিলাদেরকে তাদের রসদপত্র ও নিরাপদ আশ্রয় থেকে বঞ্চিত করতে চাইছিল। দ্বিতীয় কৌশলটি ছিল অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা। এজন্য সোভিয়েতরা মুজাহিদ দলগুলোতে যোগদানের জন্য গুপ্তচর প্রেরণ করে এবং স্থানীয় উপজাতি অথবা গেরিলা নেতাদের যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য উৎকোচ প্রদান করে। তৃতীয় কৌশলটি ছিল গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর মাধ্যমে গেরিলাদের উচ্ছেদ করা। এজন্য সোভিয়েতরা ব্যাপকভাবে মিল এমআই-২৪ হেলিকপ্টার গানশিপ ব্যবহার করে যেগুলো সাঁজোয়া যানগুলোর অভ্যন্তরে থাকা সোভিয়েত সৈন্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করত। কখনো কোনো গ্রাম দখল করার পরপরই সোভিয়েত সৈন্যরা সেখানে থেকে যাওয়া অধিবাসীদের বন্দি করে তথ্যের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করত অথবা মেরে ফেলত[৫৮]

সোভিয়েত আক্রমণের ফলে বিধ্বস্ত একটি আফগান গ্রামের ধ্বংসাবশেষ

বিদ্রোহ দমনের জন্য তাদের 'পাশবিক শক্তি প্রয়োগে'র নীতি কার্যকর করতে সোভিয়েতরা আফগান গোয়েন্দা পুলিশ সংস্থা কেএইচএডি-কে কাজে লাগায়। তথ্য সংগ্রহ, মুজাহিদ দলগুলোতে অনুপ্রবেশ, ভুয়া তথ্য ছড়ানো, উপজাতীয় মিলিশিয়াগুলোকে আফগান সরকারের পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য উৎকোচ প্রদান এবং একটি সরকারি মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের জন্য সোভিয়েতরা কেএইচএডি-কে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে। যদিও কেএইচএডি মুজাহিদ দলগুলোতে অনুপ্রবেশ করতে কতটা সক্ষম হয়েছিল সেটা সঠিকভাবে জানা সম্ভব নয়, তবুও ধারণা করা হয় যে, তারা আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরানভিত্তিক বেশ কয়েকটি মুজাহিদ দলে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল[৫৯]। মুজাহিদ দলগুলোর মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি এবং রাজনৈতিক বিভেদ সৃষ্টিতে কেএইচএডি বিশেষভাবে সফল হয়েছিল, যার ফলে অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে কিছু মুজাহিদ দল সম্পূর্ণরূপে অকেজো হয়ে পড়ে[৬০]। বিভিন্ন উপজাতির আনুগত্য অর্জনের ক্ষেত্রেও কেএইচএডি কিছুটা সাফল্য অর্জন করে, কিন্তু এসব সম্পর্কের অনেকগুলোই ছিল কৃত্রিম ও সাময়িক। কেএইচএডি প্রায়শই উপজাতিগুলোর স্থায়ী রাজনৈতিক আনুগত্য আদায়ের পরিবর্তে তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়[৬১]। কেএইচএডি-নিয়ন্ত্রিত সারান্দোয় নামক সরকারি মিলিশিয়া বাহিনী যুদ্ধে মিশ্র সাফল্য অর্জন করে। বেশি বেতন ও প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র প্রদান করায় অনেকেই কমিউনিস্টপন্থী না হয়েও এই বাহিনীটিতে যোগ দিতে আগ্রহী হয়। কিন্তু সমস্যার বিষয় ছিল যে, যোগদানকারীদের অনেকেই ছিল অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অর্থ সংগ্রহে আগ্রহী প্রকৃতপক্ষে মুজাহিদ দলগুলোর সদস্য এবং আসন্ন সামরিক অভিযানগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল[৬০]

১৯৮৫ সালে আফগানিস্তানে মোতায়েনকৃত সোভিয়েত সৈন্যসংখ্যা ১,০৮,০০০-এ উন্নীত হয় এবং দেশব্যাপী যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। বস্তুত ১৯৮৫ সালই ছিল আফগান যুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বছর। কিন্তু প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও মুজাহিদরা পরাজিত হয় নি, কারণ প্রতিদিনই হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছিল। ফলে সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধ অব্যাহত থাকে।

১৯৮০-এর দশক: বিদ্রোহ

[সম্পাদনা]

১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, মিসর, চীন ও অন্যান্য রাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট আফগান মুজাহিদরা মস্কোর সামরিক ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি করে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগান যুদ্ধকে স্নায়ুযুদ্ধের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ অপারেশন সাইক্লোন নামক একটি কর্মসূচিতে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সোভিয়েতবিরোধী যোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান করে[৬২]

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ আফগান প্রতিরোধ যোদ্ধাদের একটি ঘাঁটিতে পরিণত হয়। প্রদেশটির দেওবন্দি উলেমা আফগান জিহাদে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং মাদ্রাসা হাক্কানিয়া সোভিয়েতবিরোধী আফগান যোদ্ধাদের জন্য একটি প্রধান সাংগঠনিক ও যোগাযোগ ঘাঁটিতে পরিণত হয়[৬৩]। মুসলিম দেশগুলো আফগান মুজাহিদদের অর্থের পাশাপাশি হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক যোদ্ধা সরবরাহ করে, যারা "নাস্তিক" কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে "জিহাদ" করতে আগ্রহী ছিল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সৌদি তরুণ ওসামা বিন লাদেন, যাঁর আরব দল পরবর্তীতে আল কায়েদায় পরিণত হয়[৬৪][৬৫][৬৬][৬৭][৬৮][৬৯][৭০][৭১][৭২]

আফগানিস্তানের মুজাহিদদের সৃষ্টি হয়েছিল নৈরাজ্যের মধ্যে এবং তাদের বিস্তার ও সাফল্য অর্জন হয়েছিল নৈরাজ্যের মধ্যে। এজন্য তারা অন্য কোনোভাবে শাসন করার পথ খুঁজে পায় নি। আফগান যুদ্ধের প্রায় পুরোটাই পরিচালিত হয়েছিল আঞ্চলিক যুদ্ধবাজ নেতাদের দ্বারা। যুদ্ধ নিয়মিত হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মুজাহিদদের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন ও তাদের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়তে থাকে। তবে তা সত্ত্বেও মুজাহিদদের সংগঠনের মূল ইউনিটসমূহ ও তাদের কার্যক্রম আফগান সমাজের ব্যাপক বিক্ষিপ্ত প্রকৃতিরই প্রতিফলন ঘটায়[৭৩]

গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া

[সম্পাদনা]

১৯৮৬: স্টিঞ্জার ক্ষেপণাস্ত্র এবং 'স্টিঞ্জার প্রভাব'

[সম্পাদনা]

প্রত্যাহার

[সম্পাদনা]

কূটনৈতিক প্রচেষ্টাসমূহ এবং জেনেভা চুক্তি (১৯৮৩–৮৮)

[সম্পাদনা]

এপ্রিল ১৯৮৫ – জানুয়ারি ১৯৮৭: সংঘর্ষের আফগানিকরণ

[সম্পাদনা]
১৯৮৭ সালে আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশে মুজাহিদ যোদ্ধাগণ

জানুয়ারি ১৯৮৭ – ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯: সৈন্য প্রত্যাহার

[সম্পাদনা]
১৯৮৮ সালে আফগানিস্তানে একজন সোভিয়েত সৈন্য

যুদ্ধাপরাধসমূহ

[সম্পাদনা]

গণহত্যা

[সম্পাদনা]

নারী নির্যাতন

[সম্পাদনা]

সোভিয়েত সৈন্যরা বহুসংখ্যক আফগান নারীকে অপহরণ ও ধর্ষণ করে। হেলিকপ্টারে চড়ে দেশটির বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে মুজাহিদদের খোঁজ করার সময়ে সোভিয়েত সৈন্যরা আফগান নারীদের অপহরণ করত। ১৯৮০ সালের নভেম্বরে লাঘমান ও কামাসহ আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। এছাড়া, সোভিয়েত সৈন্য ও আফগান কেএইচএডি সদস্যরা কাবুল শহরে এবং দারুল আমান ও খাইর খানা অঞ্চলগুলোতে সোভিয়েত সেনানিবাসের আশপাশ থেকে আফগান নারীদের অপহরণ করে ও ধর্ষণ করে[৭৪]। যেসব নারী সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা অপহৃত ও ধর্ষিত হয়, তারা বাড়ি ফিরলে তাদের পরিবার তাদেরকে 'অসম্মানিত' হিসেবে বিবেচনা করে এবং তারা সামাজিক লাঞ্ছনার শিকার হয়[৭৫][৭৬]

সিবা শাকিব তার আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জনকারী বই আফগানিস্তান, হোয়্যার গড ওনলি কামস টু উইপ গ্রন্থে আফগান নারীদের ওপর সোভিয়েত সৈন্যদের নির্যাতন সম্পর্কে লিখেছেন:[৭৭]

উর্দিধারী রুশ ছেলেরা আদেশ পালন করে, ভয় কাটিয়ে ওঠে, সাহস সঞ্চয় করে এবং ক্ষমতা, শক্তি ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করে। তারা গ্রামগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, নারীদের তুলে নিয়ে যায়, ধর্ষণ করে, স্তন কেটে ফেলে, পেট চিরে ফেলে এবং ভ্রূণগুলোকে চাপড় দিয়ে বালিতে পুঁতে ফেলে। তারা শিশুদের শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলে, মেয়েদের মুখে চুম্বন করে, মেয়েদের উদর লেহন করে, মেয়েদের স্তন আঁকড়ে ধরে এবং তরুণ রুশ শিশ্নগুলোকে কুমারী আফগান যোনিতে তৃপ্ত করে[৭৭]

১৯৮৪ সালে সোভিয়েত সেনাবাহিনী থেকে দলত্যাগী সৈন্যরা আফগান নারী ও শিশুদের ওপর সোভিয়েত সৈন্যদের নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করেন এবং জানান যে, আফগান নারীরা সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন[৭৬]

ফলাফল

[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

[সম্পাদনা]

বৈদেশিক হস্তক্ষেপ এবং মুজাহিদদের প্রতি আন্তর্জাতিক সহায়তা

[সম্পাদনা]

সোভিয়েত সৈন্যসংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি

[সম্পাদনা]

সৈন্য প্রত্যাহারের কারণ

[সম্পাদনা]

আফগানিস্তানের ক্ষয়ক্ষতি

[সম্পাদনা]

শরণার্থী সমস্যা

[সম্পাদনা]

পরিণতি

[সম্পাদনা]

সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্তিক্ষয়

[সম্পাদনা]

আফগান গৃহযুদ্ধ

[সম্পাদনা]

জঙ্গিবাদের উত্থান

[সম্পাদনা]

পাকিস্তানে জঙ্গিবাদের বিস্তার

[সম্পাদনা]

বুমেরাং

[সম্পাদনা]

প্রচারমাধ্যম ও সংস্কৃতিতে প্রভাব

[সম্পাদনা]

প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নে ধারণা

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Rubin, Barnett R. The Fragmentation of Afghanistan. New Haven: Yale University Press, 1995. p. 20.
  2. Gates, Robert (2007-01-09). From the Shadows, Pg. 146. Simon & Schuster. ISBN 978-1-4165-4336-7. Retrieved July 28, 2011.
  3. Barfield, Thomas (মার্চ ২৫, ২০১২)। Afghanistan: A Cultural and Political History (Princeton Studies in Muslim Politics)। Princeton University Press। আইএসবিএন 978-0691154411 
  4. Bradsher, Henry S. (১৯৮৩)। Afghanistan and the Soviet Union। Durham: Duke Press Policy Studies। পৃষ্ঠা 72–73। 
  5. Hilali, A. Z. (২০০৫)। "The Soviet Penetration into Afghanistan and the Marxist Coup"। The Journal of Slavic Military Studies18 (4): 709। ডিওআই:10.1080/13518040500354984 
  6. Garthoff, Raymond L. (১৯৯৪)। Détente and Confrontation। Washington D.C.: The Brookings Institution। পৃষ্ঠা 986। 
  7. The April 1978 Coup d'état and the Democratic Republic of Afghanistan – Library of congress country studies(Retrieved February 4, 2007)
  8. "Afghanistan Marxist Coup 1978"। Onwar.com। নভেম্বর ৮, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৮, ২০১১ 
  9. Amstutz, J. Bruce (১৯৯৪-০৭-০১)। Afghanistan: The First Five Years of Soviet Occupation (ইংরেজি ভাষায়)। DIANE Publishing। পৃষ্ঠা 315। আইএসবিএন 9780788111112 
  10. Press Release (ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০০৯)। "Tips for Soviet in Afghanistan"BBC, 1979। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২, ২০১২ 
  11. The Russian General Staff (২০০২)। Lestwer W. Grau; Michael A. Gress, সম্পাদকগণ। The Soviet Afghan-War: How a Superpower Fought and LostUniversity Press of Kansas। পৃষ্ঠা 10আইএসবিএন 0-7006-1186-X 
  12. Walker, Martin (১৯৯৩)। The Cold War and the Making of the Modern WorldFourth Estate। পৃষ্ঠা 253আইএসবিএন 978-1-85702-004-5 
  13. Misdaq, Nabi (২০০৬)। Afghanistan: Political Frailty and External InterferenceTaylor & Francis। পৃষ্ঠা 134। আইএসবিএন 978-0-415-70205-8 
  14. Grigory, Paul (২০০৮)। Lenin's Brain and Other Tales from the Secret Soviet ArchivesHoover Press। পৃষ্ঠা 121। আইএসবিএন 978-0-8179-4812-2 
  15. Rasanayagam, Angelo (২০০৫)। Afghanistan: A Modern HistoryI.B.Tauris। পৃষ্ঠা 86–88। আইএসবিএন 978-1-85043-857-1 
  16. Amin, Abdul Hameed (2001)। "Remembering our Warriors: Major-General Baber and Bhutto's Operation Cyclone."Pakistan Military Consortium and Directorate for the Military History Research (DMHR)। Pakistan Defence Journal। April 28, 2016 তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2011  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  17. Pakistan's Support of Afghan Islamists, 1975–79 – Library of congress country studies(Retrieved February 4, 2007)
  18. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; law.upenn.edu নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  19. Kabul's prison of death BBC, February 27, 2006
  20. Kaplan 2008, পৃ. 115।
  21. "U.S. Library of Congress – "The April 1912 Coup d'etat and the Democratic Republic of Afghanistan""। Countrystudies.us। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৮, ২০১১ 
  22. Goodson, Larry P.(2001), Afghanistan's Endless War: State Failure, Regional Politics, and the Rise of the Taliban, University of Washington Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০-২৯৫-৯৮০৫০-৮, pp. 56–57
  23. "The Rise and Fall of the Taliban", by Neamatollah Nojumi, published in The Taliban and the Crisis of Afghanistan, ed by Robert D Crews and Amin Tarzi, pub by Harvard University Press, 2008
  24. Tanner, Stephen (২০০৯-০৪-২৮)। Afghanistan: A Military History from Alexander the Greatআইএসবিএন 978-0-7867-2263-1 
  25. Amstutz, J. Bruce (১৯৯৪-০৭-০১)। Afghanistan: The First Five Years of Soviet Occupationআইএসবিএন 978-0-7881-1111-2 
  26. Harrison, Selig; Cordovez, Diego (১৯৯৫)। Out of Afghanistan: The Inside Story of the Soviet withdrawal। New York: Oxford University Press, Cordovez, Diego। পৃষ্ঠা 34–35। আইএসবিএন 0-19-506294-9 
  27. Harwood, William L. (ডিসেম্বর ২৮, ২০০১)। "The Murder of Adolph Dubs"The New York Times, 2001। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১২ 
  28. Ostermann, Christian Friedrich। "New evidence on the war in Afghanistan" (পিডিএফ)Cold War International History Project Bulletin। wilsoncenter.org। পৃষ্ঠা 139। ৮ মে ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  29. Staff Release (ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯৭৯)। "World: Death Behind a Keyhole"The Times। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১২ 
  30. Riedel, Bruce (২০১৪)। What We Won: America's Secret War in Afghanistan, 1979–1989Brookings Institution Press। পৃষ্ঠা 98–99। আইএসবিএন 978-0815725954 
  31. Gates, Robert (২০০৭)। From the Shadows: The Ultimate Insider's Story of Five Presidents and How They Won the Cold WarSimon & Schuster। পৃষ্ঠা 142, 144–145। আইএসবিএন 9781416543367 
  32. White, John Bernell (মে ২০১২)। "The Strategic Mind Of Zbigniew Brzezinski: How A Native Pole Used Afghanistan To Protect His Homeland"। পৃষ্ঠা 7–8, 12, 29, 45–46, 80–83, 97। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-১০ 
  33. Harrison, Selig S.; Cordovez, Diego (১৯৯৫)। Out of Afghanistan: the Inside Story of the Soviet Withdrawal। New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 36–37। আইএসবিএন 978-0-19-506294-6 
  34. Walker, Martin (১৯৯৪)। The Cold War – A History। Toronto, Canada: Stoddart। 
  35. Coll, Steven. Ghost Wars: The Secret History of the CIA, Afghanistan, and Bin Laden, from the Soviet Intervention to September 10, 2001. New York: Penguin Books, 2004. p. 48.
  36. (রুশ) ДО ШТУРМА ДВОРЦА АМИНА
  37. "Documents on the Soviet Invasion of Afghanistan e-Dossier No. 4. p. 70-75" (পিডিএফ)। Woodrow Wilson International Center for Scholars। নভেম্বর ২০০১। ৭ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৬ 
  38. Garthoff, Raymond L. (১৯৯৪)। Détente and Confrontation। Washington D.C.: The Brookings Institution। পৃষ্ঠা 1017–1018। 
  39. Arnold, Anthony (১৯৮৩)। Afghanistan's Two-Party Communism: Parcham and Khalq। Stanford: Hoover Institution Press। পৃষ্ঠা 96 
  40. "The Soviet Invasion of Afghanistan in 1979: Failure of Intelligence or of the Policy Process?" (পিডিএফ)। পৃষ্ঠা 7। জুলাই ২২, ২০০৬ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। 
  41. Ye. I. Malashenko, Movement to contact and commitment to combat of reserve fronts, Military Thought (military-theoretical journal of the Russian Ministry of Defence), April–June 2004
  42. Fisk, Robert (২০০৫)। The Great War for Civilisation: the Conquest of the Middle East। London: Alfred Knopf। পৃষ্ঠা 40–41। আইএসবিএন 1-84115-007-X 
  43. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; news.google.co.nz নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  44. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; ReferenceA নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  45. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; kepel-2002-138 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  46. Kinsella, Warren. "Unholy Alliances", Lester Publishing, 1992
  47. Roy, Olivier (১৯৯০)। Islam and resistance in AfghanistanCambridge University Press। পৃষ্ঠা 118। 
  48. Russian General Staff, Grau & Gress, The Soviet-Afghan War, p. 18
  49. Grau, Lester (মার্চ ২০০৪)। "The Soviet-Afghan war: a superpower mired in the mountains"Foreign Military Studies Office Publications। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১৫, ২০০৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  50. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Amstutz, J. Bruce 1986 p. 127 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  51. Gregory Feifer The Great Gamble, pp. 169–170
  52. Russian General Staff, Grau & Gress, The Soviet-Afghan War, p. 26
  53. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; bear নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  54. Roy। Islam and resistance in Afghanistan। পৃষ্ঠা 191। 
  55. Klass, Rosanne (১৯৮৭)। Afghanistan: The Great Game Revisited। Freedom House। পৃষ্ঠা 244। 
  56. Amstutz, J. Bruce (১৯৮৬)। Afghanistan: The First Five Years of Soviet Occupation। National Defense University Press। পৃষ্ঠা 43। 
  57. Amstutz, J. Bruce (১৯৮৬)। Afghanistan: The First Five Years of Soviet Occupation। National Defense University Press। পৃষ্ঠা 144–149। 
  58. Report from Afghanistan ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে Claude Malhuret
  59. Urban, Mark (১৯৯০)। War in Afghanistan। St. Martin's Press। পৃষ্ঠা 149। 
  60. Girardet, Edward (১৯৮৫)। Afghanistan: The Soviet War। St. Martin's Press। পৃষ্ঠা 129। 
  61. Girardet, Edward (১৯৮৫)। Afghanistan: The Soviet War। St. Martin's Press। পৃষ্ঠা 133। 
  62. "1986–1992: CIA and British Recruit and Train Militants Worldwide to Help Fight Afghan War"। History Commons। সেপ্টেম্বর ১২, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৯, ২০০৭ 
  63. Haroon, Sana (২০০৮)। "The Rise of Deobandi Islam in the North-West Frontier Province and Its Implications in Colonial India and Pakistan 1914–1996"। Journal of the Royal Asiatic Society18: 66–67। জেস্টোর 27755911 
  64. Sageman, Marc (মে ১, ২০০৪)। "2"। Understanding Terror NetworksUniversity of Pennsylvania Pressআইএসবিএন 0812238087 
  65. "Did the U.S. "Create" Osama bin Laden?(2005-01-14)"US Department of State। ডিসেম্বর ১, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২৮, ২০০৭ 
  66. Marshall, Andrew (নভেম্বর ১, ১৯৯৮)। "Terror 'blowback' burns CIA (November 1, 1998)"The Independent। London। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১, ২০১০ 
  67. Kepel, Gilles (২০০২)। Jihad: The Trail of Political Islam। Belknap Press of Harvard University Press। পৃষ্ঠা 147 
  68. Temple-Raston, Dina। "Western Fighters Answer Mideast Extremists' Clarion Call"NPR। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১৪১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েতরা আফগানিস্তান আক্রমণ করার পর মুসলিম যোদ্ধাদের সর্বশেষ যুদ্ধে যাওয়ার ডাক আসে। প্রায় ২০,০০০ বিদেশি যোদ্ধা সেখানে যান, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন উপসাগরীয় রাষ্ট্রসমূহের নাগরিক। 
  69. Commins, David (২০০৬)। The Wahhabi Mission and Saudi Arabia। London: I.B.Tauris & Co Ltd। পৃষ্ঠা 174সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫,০০০ মুসলিম যোদ্ধা ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে আফগানিস্তানে যান, তাছাড়া আরও অজ্ঞাত হাজার হাজার মুসলিম প্রাক্তন ও ভবিষ্যৎ যোদ্ধায় পরিপূর্ণ সীমান্তবর্তী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে যোগদান করেন। 
  70. Rashid, Ahmed, Taliban: Militant Islam, Oil and Fundamentalism in Central Asia (New Haven, 2000), p. 129.
  71. Wright, Lawrence, Looming Tower: Al Qaeda and the Road to 9/11, by Lawrence Wright, NY, Knopf, 2006, p.107
  72. interview with Arab Afghan fighter Abullah Anas and Afghan CIA station chief Milt Berden. Wright, Lawrence, Looming Tower, Knopf, 2006, p.105
  73. The Path to Victory and Chaos: 1979–92 – Library of Congress country studies(Retrieved Thursday 31, 2007)
  74. Kakar, M. Hassan (১৯৯৫)। The Soviet Invasion and the Afghan Response, 1979–1982। University of California Press। আইএসবিএন 9780520208933দেশটিতে যখন সামরিক অভিযান চলছিল, তখন নারীরা অপহৃত হয়। মুজাহিদদের সন্ধান করার সময় হেলিকপ্টারগুলো আফগান নারীদের দেখতে পেলে শস্যক্ষেত্রে অবতরণ করত। আফগান নারীরা প্রধানত গৃহস্থালির কাজ করলেও তারা ক্ষেতের কাজও নিজেরা করে অথবা কাজে স্বামীদের সাহায্য করে। রুশরা এসব নারীদের অপহরণ করে নিয়ে যেত। ১৯৮০ সালের নভেম্বরের মধ্যে লাঘমান ও কামাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের অনেকগুলো ঘটনা ঘটে। কাবুল শহরেও সাধারণত সন্ধ্যার পর রুশরা নারীদের অপহরণ করত এবং ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য সাঁজোয়া যানে নিয়ে যেত। প্রধানত দারুল আমান ও খাইর খান অঞ্চলে সোভিয়েত সেনানাবাসগুলোর কাছে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটে। 
  75. The War Chronicles: From Flintlocks to Machine Guns। Fair Winds। পৃষ্ঠা 393। আইএসবিএন 9781616734046সোভিয়েতরা মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যে সর্বশেষ অস্ত্রটি প্রয়োগ করে সেটি হলো আফগান নারীদের অপহরণ। হেলিকপ্টারে আসীন সৈন্যরা পুরুষদের অনুপস্থিতিতে শস্যক্ষেত্রে কাজ করা আফগান নারীদের খুঁজে বেড়াত, অবতরণ করত এবং সেসব নারীদের বন্দি করে নিয়ে যেত। কাবুল শহরেও রুশ সৈন্যরা তরুণী মেয়েদের অপহরণ করত। এসবের উদ্দেশ্য ছিল ধর্ষণ, তবে মাঝে মাঝে অপহৃত নারীদের মেরেও ফেলা হত। যেসব নারী বাড়ি ফিরত তাদের অসম্মানিত বিবেচনা করা হত। 
  76. Sciolino, Elaine (আগস্ট ৩, ১৯৮৪)। "4 Soviet Deserters Tell Of Cruel Afghanistan War"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৭ 
  77. Shakib, Siba (২০১৫)। Afghanistan, Where God Only Comes To Weep। Random House। পৃষ্ঠা 16। আইএসবিএন 9781448183500 

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]

বহি:সংযোগ

[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:USSR conflicts

টেমপ্লেট:Soviet occupation টেমপ্লেট:Brezhnev era