নূর মুহাম্মদ তারাকি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নূর মুহাম্মদ তারাকি
نور محمد ترکۍ
বিপ্লবী কাউন্সিলের প্রেসিডিয়ামের চেয়ারম্যান
কাজের মেয়াদ
৩০ এপ্রিল ১৯৭৮ – ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯
পূর্বসূরীআবদুল কাদির
উত্তরসূরীহাফিজউল্লাহ আমিন
মন্ত্রিসভার চেয়ারম্যান
কাজের মেয়াদ
১ মে ১৯৭৮ – ২৭ মার্চ ১৯৭৯
পূর্বসূরীমুহাম্মদ মূসা শফিক
উত্তরসূরীহাফিজউল্লাহ আমিন
পিপল'স ডেমোক্রেটিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব
কাজের মেয়াদ
১ জানুয়ারি ১৯৬৫ – ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯
পূর্বসূরীদপ্তর স্থাপিত
উত্তরসূরীহাফিজউল্লাহ আমিন
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯১৭-০৭-১৫)১৫ জুলাই ১৯১৭
নাওয়া, গজনি প্রদেশ, আফগানিস্তান
মৃত্যু১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯(1979-09-14) (বয়স ৬২)
কাবুল, আফগানিস্তান
রাজনৈতিক দলপিপল'স ডেমোক্রেটিক পার্টি অব আফগানিস্তান (খালক গ্রুপ)
জীবিকারাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, লেখক

নূর মুহাম্মদ তারাকি (১৫ জুলাই ১৯১৭ – ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯) ছিলেন একজন আফগান রাজনীতিবিদ। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে পিপল'স ডেমোক্রেটিক পার্টি অব আফগানিস্তান (পিডিপিএ) গঠনের সময় তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। দলের প্রথম কংগ্রেসে তিনি মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬৫ সালের আফগান সংসদীয় নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হলেও জয়ী হতে পারেননি। ১৯৬৬ সালে তিনি দলের খবরের কাগজ খালকের প্রথম সংখ্যা প্রকাশ করেন। এর অল্পকাল পরে আফগান সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়। মীর আকবর খাইবারের হত্যাকান্ডের পর তারাকি, হাফিজউল্লাহ আমিনবাবরাক কারমাল সাওর বিপ্লবের সূত্রপাত করে আফগানিস্তানে কমিউনিস্ট শাসনের সূচনা করেন।

তারাকির রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি চালু করা ভূমি সংস্কার কার্যক্রমসহ অন্যান্য সংস্কার কার্যক্রম ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয় হয়। জনঅসন্তুষ্টির ফলে এক পর্যায়ে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ দেখা দেয়। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পরও শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নকে হস্তক্ষেপ করতে রাজি করাতে পারেননি।

তার শাসনের শুরুর দিকে সরকার দলের খালকপন্থি ও পারচামপন্থিদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তারাকি ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ খালকপন্থিদের নেতা। ১৯৭৮ সালে তিনি সরকার ও দলে নির্মূল কার্যক্রম শুরু করেন যার ফলে অনেক উচ্চপদস্থ পারচামপন্থিকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। শাসনকালে তার সাথে আমিনের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছিল। ১৯৭৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আমিনের নির্দেশে তারাকি নিহত হন।

প্রারম্ভিক ও কর্মজীবন[সম্পাদনা]

নূর মুহাম্মদ তারাকি ১৯১৭ সালের ১৫ জুলাই আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশের নাওয়া জেলার একটি গিলজি পশতুন কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার বাবা মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ছিলেন। তিনি নাওয়ায় গ্রামের স্কুলে পড়ালেখা করেছেন।[১] ১৯৩১ সালে ১৫ বছর বয়সে তিনি ভারতের বোম্বেতে কাজের জন্য চলে যান। এখানে তার সাথে কান্দাহারের একটি বণিক পরিবারের সাক্ষাৎ হয়। এই পরিবার তাকে পশতুন বাণিজ্য কোম্পানিতে কেরানি হিসেবে নিয়োগ দেয়। এখানে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের সাথে তার সাক্ষাৎ হয় এবং তিনি তাদের দ্বারা প্রভাবিত হন। এছাড়াও তার সাথে খান আবদুল গাফফার খানের সাক্ষাৎ হয়েছিল।[২]

১৯৩৭ সালে তিনি আফগান অর্থমন্ত্রী আবদুল মজিদ জাবুলির সাথে কাজ শুরু করেন। তার মাধ্যমে তারাকি বেশ কয়েকজন রুশের সাথে পরিচিত হন। পরে তিনি বাখতরার নিউজ এজেন্সির ডেপুটি প্রধান হন এবং লেখক ও কবি হিসেবে পরিচিতি পান। তার লেখা দে বাং মুসাফেরি বইয়ে আফগান আর্থসামাজিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।[২] সোভিয়েত ইউনিয়নে তার লেখা রুশ ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। সোভিয়েত সরকার তাকে আফগানিস্তানের মাক্সিম গোর্কি হিসেবে অভিহিত করত।[৩] সোভিয়েত ইউনিয়নে সফরের সময় কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান বরিস পোনোমারেভ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য কমিউনিস্ট সদস্যরা তার সাথে সাক্ষাৎ করেন।[৪]

মুহাম্মদ দাউদ খানের প্রধানমন্ত্রীত্বকালে দমনমূলক কার্যক্রম চালানো হলেও ভাষাগত দক্ষতার কারণে ১৯৫২ সালে তারাকিকে যুক্তরাষ্ট্রের আফগান দূতাবাসে প্রেরণ করা হয়। কয়েক মাস পর তিনি বাদশাহ মুহাম্মদ জহির শাহের অধীন আফগান সরকারকে স্বৈরাচারী হিসেবে অভিযোগ করেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান। বক্তব্যের কারণে তিনি চাকরি হারান এবং তাকে দেশে ফেরার আদেশ দেয়া হয়। পরে তিনি কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক মিশনে দোভাষী হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৫৮ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি নিজস্ব অনুবাদ কোম্পানি নূর ট্রান্সলেশন ব্যুরো গঠন করেন। চার বছর পর তিনি কাবুলের মার্কিন দূতাবাসে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে পিডিপিএ প্রতিষ্ঠার জন্য চাকরি ছেড়ে দেন।[৪]

পিডিপিএর প্রতিষ্ঠাকালীন কংগ্রেসের সময় ১৯৬৫ সালের ১ জানুয়ারি তিনি বাবরাক কারমালের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মহাসচিব হন।[৫] কারমাল দ্বিতীয় সচিব হন।[৬] ১৯৬৫ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।[৭] নির্বাচনের পর তিনি আফগানিস্তানের প্রথম প্রধান বামপন্থি পত্রিকা খালক প্রকাশ করেন। প্রকাশের একমাস পর পত্রিকাটি নিষিদ্ধ হয়। ১৯৬৭ সালে পিডিপিএ আদর্শিকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তারাকির নেতৃত্বে ছিল খালক গ্রুপ এবং কারমালের নেতৃত্বে ছিল পারচাম গ্রুপ।[৮]

১৯৭৮ সালের ১৯ এপ্রিল মীর আকবর খাইবার নিহত হন। এর ফলে কমিউনিস্ট অভ্যুত্থানের আশঙ্কায় মুহাম্মদ দাউদ খান পিডিপিএর কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন। তারাকি ও কারমালকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং হাফিজউল্লাহ আমিন ও অন্যান্য কিছু নেতাকে গৃহবন্দী করা হয়।[৯] ২৭ এপ্রিল সাওর বিপ্লব শুরু হওয়ার পর দাউদ খান সপরিবারে নিহত হন। ১ মে তারাকি বিপ্লবী কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হন। এরপর আফগানিস্তান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নামে রাষ্ট্রের নামকরণ করা হয়।[১০]

রাষ্ট্রপতি[সম্পাদনা]

ক্ষমতাপ্রাপ্তি[সম্পাদনা]

তারাকি বিপ্লবী কাউন্সিল ও মন্ত্রিসভা উভয়ের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন। একইসাথে তিনি পিডিপিএর মহাসচিবের পদেও ছিলেন। তার গঠিত সরকারে খালক ও পারচম উভয় গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব ছিল।[১১] কারমাল বিপ্লবী কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান[১২] এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন।[১১][১৩] তবে দ্রুত দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বেশ কয়েকজন প্রধান খালকপন্থি অভিযোগ করেন যে পারচামপন্থিরা তারাকি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এরপর পারচামপন্থিদেরকে বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে বিতাড়ন করা হয়। কারমান ও মুহাম্মদ নজিবউল্লাহ যথাক্রমে চেকোস্লোভাকিয়া ও ইরানে রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রেরিত হন। দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব ছাড়াও তারাকি ও আমিনের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে খালকপন্থিদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।[১১]

কারমালকে পরে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে হত্যাকান্ডের আশঙ্কায় তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তারাকি তার সকল দাপ্তরিক পদ বাতিল করে দেন।[১৪]

আর্থসামাজিক পরিবর্তন[সম্পাদনা]

ভূমি সংস্কার[সম্পাদনা]

১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি তারাকি সরকার ভূমি সংস্কার শুরু করে। এর আওতায় প্রতি পরিবার কতটুকু জমির মালিক হতে পারবে তা নির্ধারণ করার পরিকল্পনা করা হয়। সরকার নির্ধারিত পরিমাণের অতিরিক্ত জমির মালিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এই সংস্কার জনপ্রিয় হবে সরকারের এমন ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ায় আফগানদের মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা দেয়।[১৫] ফলে সরকার দ্রুত সংস্কার কার্যক্রম পরিত্যাগ করে।[১৬] তবে পরবর্তীতে কারমালের প্রশাসন ভূমি সংস্কার প্রবর্তন করেছিল।[১৭]

অন্যান্য সংস্কার[সম্পাদনা]

অভ্যুত্থানের পরের মাসগুলিতে সরকার আফগান ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক মার্ক্সবাদী নীতি প্রণয়ন করে। আফগানিস্তানে ইসলামি মূল্যবোধ প্রবল ছিল।[১৮] ফলে এসব সংস্কার জাতীয়ভাবে কার্যকর করা যায়নি। তারাকির নীতির কারণে দেশব্যপী অসন্তোষ দেখা দেয় এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণ সীমিত হয়ে পড়ে।[১৯] ফলশ্রুতিতে আফগান গৃহযুদ্ধ দেখা দেয়।[২০]

দাউদ খানের সরকার পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য ইউনেস্কো প্রণীত একটি শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করেছিল। তারাকি সরকার তা কমিয়ে চার বছর করে। তবে সীমিত শিক্ষক ও সরকারের সক্ষমতার অভাবের কারণে তা সম্ভব ছিল না। পরে এই সীমানা বৃদ্ধি করে সোভিয়েত হস্তক্ষেপের সময় ৭ বছর করা হয়। তারাকি কার্যক্রমের উপর ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক মনোযোগকে অনর্থক দাবি করে তার বদলে পিডিপিএর লিফলেট ও বামপন্থি পুস্তিকাকে মৌলিক পাঠ উপকরণ হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে রাজনৈতিক মনোভাব গঠন করতে চেয়েছিলেন।[১৯]

আফগান-সোভিয়েত সম্পর্ক[সম্পাদনা]

১৯৭৮ সালের ৫ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আফগানিস্তানের মধ্যে ২০ বছর মেয়াদী মৈত্রী চুক্তি হয়। ফলে সোভিয়েত সহায়তা অনেক বৃদ্ধি পায়।[২১] হেরাত বিদ্রোহের সময় আলেক্সেই কোসিগিনের কাছে তারাকি সহায়তা চেয়েছিলেন। কোসিগিন এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।[২২] এরপর তারাকি সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান লিওনিদ ব্রেজনেভের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনিও হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন পূর্ণ সোভিয়েত হস্তক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি আরো অবনতি হবে। তিনি তারাকিকে সংস্কার কার্যক্রমের গতি কমিয়ে সরকারের সমর্থন বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন।[২৩]

১৯৭৯ সালে তারাকি কিউবার হাভানায় অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সম্মেলনে অংশ নিয়ে ফেরার সময় ২০ মার্চ মস্কো আসেন এবং ব্রেজনেভ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই গ্রুমাইকো ও অন্যান্য সোভিয়েত কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসময় গুজব ছিল যে খালক ও পারচাম গ্রুপের মধ্যে সমঝোতার উদ্দেশ্যে কারমাল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।[২৪] বৈঠকে তারাকি সোভিয়েত সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন। দুইটি সোভিয়েত আর্মর্ড ডিভিশন মোতায়েন, ৫০০ সামরিক ও বেসামরিক উপদেষ্টা ও বিশেষজ্ঞ প্রেরণ এবং মূল দামের চেয়ে ২৫% কম দামে সোভিয়েত অস্ত্র জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়। তবে সমঝোতা সত্ত্বেও তারাকি ও পরবর্তী আমিন সরকারের সময় সোভিয়েতরা আফগান সীমান্তে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপে নিরুৎসাহ দেখিয়েছে।[২৫]

তারাকি-আমিন সম্পর্ক ভাঙ্গন[সম্পাদনা]

১৯৭৮ সালের এপ্রিলে বিল্পবের পর হাফিজউল্লাহ আমিন ও তারাকির মধ্যে সম্পর্কে ঘনিষ্ট ছিল।[২৬] তবে পরবর্তীতে তারাকি আমিনের পরামর্শ উপেক্ষা করতে থাকেন। ফলে দুইজনের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়।[২৬]

আমিনের সাথে সংঘাতে তারাকি চারজন গুরুত্বপূর্ণ সেনা অফিসারের সমর্থন পেয়েছিলেন। এরা হলেই আসলাম ওয়াতানজার, সাইয়েদ মুহাম্মদ গুলাবজই, শেরজান মাজদুরিয়ার ও আসাদউল্লাহ সারওয়ারি। আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার পুজানোভের সাথে তাদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। তিনি তাদেরকে আমিনের বিপক্ষে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালের ১৭ মার্চ হেরাতের বিদ্রোহের পর পিডিপিএর পলিটব্যুরো ও বিপ্লবী কাউন্সিল একটি উচ্চতর প্রতিরক্ষা কাউন্সিল গঠন করে। এতে তারাকি চেয়ারম্যান ও আমিন তার ডেপুটি হন। প্রায় একই সময়ে তারাকি মন্ত্রিসভার চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর আমিন সেই পদে বসেন। চেয়ারম্যান হিসেবে আমিন মন্ত্রিসভার সদস্য মনোনীত করতে পারলেও তাতে রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমোদন প্রয়োজন হত। ফলে আমিনের নতুন পদের ফলে তার প্রভাব বেশি বৃদ্ধি পায়নি। এর মাধ্যমে তারাকি আমিনের ক্ষমতা হ্রাস করেন।[২৭]

জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য কিউবা সফরের সময় উক্ত চার সেনা অফিসার গোয়েন্দা সংবাদ থেকে জানতে পারেন যে আমিন তারাকিকে গ্রেপ্তার বা হত্যার পরিকল্পনা করছেন।[২৭] এরপর আমিনকে হত্যার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়। সারওয়ারি তার ভাইপো আজিজ আকবরিকে এই দায়িত্ব দেন। আকবরি খবরটি সোভিয়েত দূতাবাসকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। দূতাবাস থেকে এরপর আমিনকে সতর্ক করা হয়। ফলে আমিন বেঁচে যান।[২৪]

ক্ষমতাচ্যুতি[সম্পাদনা]

কাবুলে ফেরার পর আমিন বিমানবন্দরে তারাকিকে অভ্যর্থনা জানান। ২:৩০ এ বিমান অবতরণের সময় নির্ধারিত হলেও সরকারের উপর নিজের কর্তৃত্ব প্রদর্শনের জন্য আমিন এক ঘণ্টা পর বিমান অবতরণ করতে বাধ্য করেন।[২৪] আমিনের প্রভাব হ্রাসের জন্য তারাকি তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রেরণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমিন প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তারাকির অব্যাহতি দাবি করেন। পরেরদিন তারাকি আমিন ও তার ঘনিষ্ঠ চার সেনা অফিসারকে কাবুলের রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে দুপুরের খাবারের দাওয়াত দেন। আমিন দাওয়াত গ্রহণ না করে তাদের পদত্যাগ করতে বলেন। সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত পুজানোভ পুলিশ প্রধান সাইয়েদ দাউদ তারুন এবং গোয়েন্দা অফিসার নওয়াব আলির সাথে আমিনকে প্রাসাদে যেতে রাজি করান। প্রাসাদে পৌছার পর অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ভবনের ভেতর থেকে তাদের উপর গুলি চালায়। এতে তারুন নিহত ও আলি আহত হলেও আমিন অক্ষত ছিলেন। পরে আমিন একদল সেনা অফিসারকে নিয়ে প্রাসাদে ফিরে এসে তারাকিকে গ্রেপ্তার করেন।[২৮]

তারাকিকে গ্রেপ্তারের পর করণীয় বিষয়ে আমিন ব্রেজনেভের সাথে আলোচনা করেন।[২৮] ব্রেজনেভ জবাব দেন যে এটি তার সিদ্ধান্ত। এরপর আমিনের নির্দেশে তারাকিকে হত্যা করা হয়।[২৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Reddy, L.R. (২০০২)। Inside Afghanistan: End of the Taliban Era?। APH Publishing। পৃষ্ঠা 79। আইএসবিএন 978-8176483193 
  2. Misdaq, Nabi (২০০৬)। Afghanistan: Political Frailty and External InterferenceTaylor & Francis। পৃষ্ঠা 107। আইএসবিএন 978-0415702058 
  3. Misdaq, Nabi (২০০৬)। Afghanistan: Political Frailty and External InterferenceTaylor & Francis। পৃষ্ঠা 107–108। আইএসবিএন 978-0415702058 
  4. Misdaq, Nabi (২০০৬)। Afghanistan: Political Frailty and External InterferenceTaylor & Francis। পৃষ্ঠা 108। আইএসবিএন 978-0415702058 
  5. Misdaq, Nabi (২০০৬)। Afghanistan: Political Frailty and External InterferenceTaylor & Francis। পৃষ্ঠা 103। আইএসবিএন 978-0415702058 
  6. Misdaq, Nabi (২০০৬)। Afghanistan: Political Frailty and External InterferenceTaylor & Francis। পৃষ্ঠা 101। আইএসবিএন 978-0415702058 
  7. Dorronsoro, Gilles (২০০৫)। Revolution Unending: Afghanistan, 1979 to the Present। C. Hurst & Co. Publishers। পৃষ্ঠা 74আইএসবিএন 978-0231136266 
  8. Gladstone, Cary (২০০১)। Afghanistan RevisitedNova Publishers। পৃষ্ঠা 113। আইএসবিএন 978-1590334218 
  9. Gladstone, Cary (২০০১)। Afghanistan RevisitedNova Publishers। পৃষ্ঠা 116। আইএসবিএন 978-1590334218 
  10. Gladstone, Cary (২০০১)। Afghanistan RevisitedNova Publishers। পৃষ্ঠা 116–117। আইএসবিএন 978-1590334218 
  11. Gladstone, Cary (২০০১)। Afghanistan RevisitedNova Publishers। পৃষ্ঠা 117আইএসবিএন 978-1590334218 
  12. Brecher, Michael; Wilkenfeld, Jonathan (১৯৯৭)। A Study of CrisisUniversity of Michigan Press। পৃষ্ঠা 356আইএসবিএন 978-0-472-10806-0 
  13. Asthana, N.C.; Nirmal, A. (২০০৯)। Urban Terrorism: Myths and Realities। Pointer Publishers। পৃষ্ঠা 219আইএসবিএন 978-81-7132-598-6 
  14. Misdaq, Nabi (২০০৬)। Afghanistan: Political Frailty and External InterferenceTaylor & Francis। পৃষ্ঠা 319। আইএসবিএন 978-0415702058 
  15. Amtstutz, J. Bruce (১৯৯৪)। Afghanistan: The First Five Years of Soviet Occupation। DIANE Publishing। পৃষ্ঠা 315। আইএসবিএন 978-0788111112 
  16. Amtstutz, J. Bruce (১৯৯৪)। Afghanistan: The First Five Years of Soviet Occupation। DIANE Publishing। পৃষ্ঠা 315–316। আইএসবিএন 978-0788111112 
  17. Amtstutz, J. Bruce (১৯৯৪)। Afghanistan: The First Five Years of Soviet Occupation। DIANE Publishing। পৃষ্ঠা 316। আইএসবিএন 978-0788111112 
  18. Ishiyama, John (মার্চ ২০০৫)। "The Sickle and the Minaret: Communist Successor Parties in Yemen and Afghanistan after the Cold War"19 (1)। Middle East Review of International Affairs। ২১ মার্চ ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০১১ 
  19. Amtstutz, J. Bruce (১৯৯৪)। Afghanistan: The First Five Years of Soviet Occupation। DIANE Publishing। পৃষ্ঠা 317। আইএসবিএন 978-0788111112 
  20. Brown, Archie (২০০৯)। The Rise & Fall of Communism। London: Bodley Head। পৃষ্ঠা 356আইএসবিএন 978-0-224-07879-5 
  21. Rubinstein, Alvin (১৯৯০)। Moscow's Third World StrategyPrinceton University Press। পৃষ্ঠা 134। আইএসবিএন 978-0-691-02332-8 
  22. Misdaq, Nabi (২০০৬)। Afghanistan: Political Frailty and External InterferenceTaylor & Francis। পৃষ্ঠা 134। আইএসবিএন 978-0415702058 
  23. Grigory, Paul (২০০৮)। Lenin's Brain and Other Tales from the Secret Soviet ArchivesHoover Press। পৃষ্ঠা 121। আইএসবিএন 978-0817948122 
  24. Misdaq, Nabi (২০০৬)। Afghanistan: Political Frailty and External InterferenceTaylor & Francis। পৃষ্ঠা 124। আইএসবিএন 978-0415702058 
  25. Rasanayagam, Angelo (২০০৫)। Afghanistan: A Modern HistoryI.B.Tauris। পৃষ্ঠা 86–88। আইএসবিএন 978-1850438571 
  26. Misdaq, Nabi (২০০৬)। Afghanistan: Political Frailty and External InterferenceTaylor & Francis। পৃষ্ঠা 122। আইএসবিএন 978-0415702058 
  27. Misdaq, Nabi (২০০৬)। Afghanistan: Political Frailty and External InterferenceTaylor & Francis। পৃষ্ঠা 123। আইএসবিএন 978-0415702058 
  28. Misdaq, Nabi (২০০৬)। Afghanistan: Political Frailty and External InterferenceTaylor & Francis। পৃষ্ঠা 125। আইএসবিএন 978-0415702058 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

পার্টির রাজনৈতিক কার্যালয়
পূর্বসূরী
দপ্তর স্থাপিত
পিপল'স ডেমোক্রেটিক পার্টি আফগানিস্তানের মহাসচিব
১ জানুয়ারি ১৯৬৫–১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯
উত্তরসূরী
হাফিজউল্লাহ আমিন
সরকারি দফতর
পূর্বসূরী
আবদুল কাদির
বিপ্লবী কাউন্সিলের চেয়ারম্যান
২০ এপ্রিল ১৯৭৮–১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯
উত্তরসূরী
হাফিজউল্লাহ আমিন
পূর্বসূরী
মুহাম্মদ মূসা শফিক
১৯৭২–১৯৭৩
মন্ত্রিসভার চেয়ারম্যান
১ মে ১৯৭৮–২৭ মার্চ ১৯৭৯
উত্তরসূরী
হাফিজউল্লাহ আমিন